সামনের দিনে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি যদি দেশে আরো জটিল হয় তখন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো যায় তার প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার (২০ মার্চ) ভিডিও কনফারেন্সিং করেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক।
কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ার সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক থেকে এই ইন্টারঅ্যাকক্টিভ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য প্রযুক্তি খাতের শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।
এ সময় পলক বলেন, এখনো করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এতোটা খারাপ নয়। তবে সামনের দিনে যদি অবস্থা খারাপের দিকে যায় সে জন্যে প্রস্তুতি নিতেই এই আয়োজন।
মতবিনিময়ে জন্য বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি করতেই এই আয়োজন করা হয় বলে জানান পলক।
দেশের অন্যতম প্রধান তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানি ডেটা সফটওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান বলেন, করোনা মোকাবিলায় একদিকে যেমন আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে আবার প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে সংযুক্ত থাকা যায় সেটিও সবাইকে দেখানো দরকার।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকে গেছে সেই আতঙ্ক দূর করতেও এই ধরণের আলোচনা দরকার যাতে সবাই বুঝতে পারে বিচ্ছিন্ন থাকলেও সব কিছু থেমে নেই।
ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে অংশ নিয়ে পাঠাও, সহজ এবং কয়েকটি স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যার্টআপ কোম্পানি করোনার মধ্যে ডেলিভারি ম্যানদের নিরাপত্তা এবং সচেতনতার ওপর জোর দেন।
তারা জানান দেশে এখন অন্তত দুই লাখ রাইডার এবং এক লাখ ডেলিভারিম্যান রয়েছে। এই মানুষগুলোই যেহেতু পণ্য এবং সেবা নিয়ে ঘরের দরজায় চলে যাবে সুতরাং তারা নিজেরা যেন আক্রান্ত না হন অন্যদিকে তারা যেন অন্য কাউকে আক্রান্ত করে না ফেলেন সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
অনলাইনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা এবং তথ্যের প্রবাহের ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেন বিশেষজ্ঞরা। তার জানান, জরুরি পরিস্থিতিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঔষধ পৌঁছে দিতে পাঠাও এবং উবার কাজ করবে বলে এর মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিন বড় মোবাইল ফোন অপারেটদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তারা জানান, তারা অনেক সেবাই ফ্রি করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের কর্মীদেরকে ঘরে বসে কাজ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তাছাড়া তারা করোনা রোগীদের তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবেন বলেও জানান।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়ার অ্যান্ড সার্ভিসেস (বেসিস) আলমাস কবীর বলেন, করোনার হাত থেকে বাঁচতে তিনি তার সদস্যদেরকে ‘হোম অফিস’ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে বার্তা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা সামনের জরুরি পরিস্থিতিতে বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান নিয়ে কাজ করছেন। সে জন্যে সরকারের সহযোগিতার প্রয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কলসেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং এর সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ বলেন, তাদের কাছে এই মুহূর্তে ৫০০ সিটের একটি কলসেন্টার আছে। এই কল সেন্টার ব্যবহার করে করোনার তথ্য প্রচার এবং তথ্যের বিষয়ে মানুষের সহায়তায় তারা সহজেই পাশে দাঁড়াতে পারেন।
ভিডিও কনফারেন্সে ইউনিসেফ প্রতিনিধি ইন্টারনেট বিনাপয়সায় করার প্রস্তাব করেন। টেন মিনিটস স্কুলের সিইও আয়মান সাদিক জানান, তারা স্কুল বন্ধের এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনার মধ্যে থাকে তার জন্যে প্রতিদিন ১৪টি লাইভ ক্লাস নিচ্ছেন। শিক্ষকরা নিজ নিজ ঘরে বসেই প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ক্লাস নিচ্ছেন।
এ সময় অনেকেই করোনার এই পরিস্থিতিতে গুগল এবং ফেসবুকের অনেকগুলো সেবা ফ্রি করে দেওয়ার বিষয়টি জানান। এগুলো ব্যবহার করে কয়েকশ মানুষের ক্লাসও নেওয়া সম্ভব বলে জানান একজন।
তিন ঘণ্টা ১০ মিনিটের কনফারেন্সে চারটি প্রেজেন্টেশান উপস্থাপনের পাশাপাশি অসংখ্য মতামত দেন বিভিন্ন পেশার মানুষেরা।
ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে সাংবাদিকরাও করোনা ভাইসরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষার জন্যে সরকারের অন্যান্য দফতরকেও অনলাইন প্রযুক্তিতে একই প্রক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজনের আহবান জানান।