বাজারের শীর্ষ অপারেটর হয়েও গ্রামীণফোন নানান কায়দা কানুনের মাধ্যমে এককভাবে বাজার দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছে রবি।
সোমবার (১১ মে) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে একটি সংবাদ সম্মেলনে অপারেটরটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এবং ব্যস্থাপনা পরিচালক মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “তারা (গ্রামীণফোন) এমন আচরণ করছে যাতে আর কোনো অপারেটর বাজারে টিকতে না পারে।”
“সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজের নামে তারা আসলে বাজার দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয়টি খেয়াল করার দরকার”, বলেন মাহতাব উদ্দিন।
বাজারের শীর্ষ অপারেটরের আগ্রাসী পদক্ষেপের হাত থেকে ছোট প্রতিযোগীদের রক্ষা করতে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন রবি সিইও।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মার্কেট লিডার (জিপি) তাদের বাজার-ভিত্তিক পদক্ষেপকে সিএসআর-এর মোড়কে উপস্থাপন করায় প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
গেল শুক্রবার গ্রামীণফোন গ্রাহকদের ১০ কোটি মিনিট ভয়েস কল ফ্রি দেওয়ার পাশাপাশি ডাক্তারদের এক টাকায় ৩০ জিবি ডাটা দেয়ার ঘোষণা দেয়।
শুধু রবি নয়, অন্য দুই অপারেটর বাংলালিংক ও টেলিটক আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না বললেও তারাও গ্রামীণফোনের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলছে, মানবিকতার নামে বাজার দখলে নিতে নেমেছে গ্রামীণফোন।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের মতো সামর্থ্যবান গ্রাহকদের জন্য মার্কেট লিডারের মাত্র এক টাকায় ৩০ জিবি ডাটা প্রদানের মতো অফারগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দেয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেন রবির সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
তিনি অভিযোগ করেন, মার্কেট লিডার কোভিড-১৯-এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার কুক্ষিগত করছে। মার্কেট লিডারের দেয়া ওই অফারটিকে মূল্য যুদ্ধের প্রকৃষ্ট উদাহণ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
রবি সিইও বলেন, মার্কেট লিডারের অফারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য তাদেরও গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন অফার আনতে হচ্ছে।
“এমন অফারের মধ্যে রয়েছে- যারা নিয়মিত রিচার্জ করতেন কিন্তু করোনা সংকটের কারণে করতে পারছেন না, তাদের জন্য বিনামূল্যে ১০ মিনিট টকটাইম ও ৫০ এমবি ডাটা দিচ্ছি আমরা। এছাড়া বিক্রয় ও পরিবেশন কর্মীদের জন্য খাবার সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা ও স্বাস্থ্য বিমাসহ সার্বিক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে”, বলেন তিনি।
মাহতাব আরও বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি মার্কেট লিডারকে সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তবে তারা কোভিড-১৯ সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবে। যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকার এটা মনে না করে যে, দেশের স্বার্থে একটি অপারেটরই যথেষ্ট তবে এখনই তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ, মার্কেট লিডার যদি এসএমপি বিধিমালা মেনে না চলে তবে আমরা আর ব্যবসা টিকিয়ে রাকতে পারব না।”
চলমান করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সমাজের সবার পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে রবি বলছে, বাজারমুখী পদক্ষেপ আর কর্পোরেট দায়বদ্ধতা সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপকে এক করে ফেলার সুযোগ নেই।
যদিও দুটি বিষয়ই করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে; কিন্তু দুটি বিষয় দুই ধারায় কার্যকর বলে কোম্পানি একে এক করে দেখতে রাজি নয়। বাজার সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের সাথে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের বিষয়টি জড়িয়ে আছে। কিন্তু টেকসই পদক্ষেপগুলো শুধুই সমাজের দিকে তাকিয়ে নেয়া হয়, বলেন বরি সিইও।
সংবাদ সম্মেলনে রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমসহ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রবির সিইও মাহতাব জানান, এখন দৈনিক তাদের চার কোটি টাকার আয় কম হচ্ছে। নির্দিষ্ট প্যাকগুলোতে ডাটা প্রাইস ৬০ শতাংশের মতো কমিয়ে আনায় এমন হয়েছে; ভয়েসের মূল্যও কমানো হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বর্তমানে ব্যয় ও মূল্যের অনুপাতে বাজারে সেরা অফার মূল্য দিচ্ছে রবি।
রবি সিইও আরো জানান, বাজার ও টেকসই পদক্ষেপ মিলিয়ে করোনা মেকাবিলায় রবির ব্যয় ইতোমধ্যে ১৭০ কোটি টাকা (৯০ কোটি টাকা পুরোপুরি সিএসআর ও টেকসই পদেক্ষেপে এবং বাকি ৮০ কোটি টাকা বিপণন সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপে) ছাড়িয়ে গেছে।