ব্রিটেনে দাস প্রথা বন্ধের আন্দোলনে আঠারো’শ শতাব্দীতে দেশটিতে দাসদের উৎপাদিত পণ্য বয়কট করতে বলা হয়। তখন আন্দোলনে একত্ব প্রকাশ করতে তৎকালীন তিন লাখ ব্রিটিশ নাগরিক দাসদের উৎপাদিত চিনি কেনা বন্ধ করে দেয়। যা প্রকৃতপক্ষে কাজ করেছিল এবং আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিল।
তেমনি বর্তমান সময়ে নাগরিক অধিকার আদায়ে কাজ করে সংস্থাগুলো ফেসবুকের বিরুদ্ধে ‘স্টপ হেট ফর প্রোফিট’ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছে। সংস্থাগুলো দাবি করে, বর্ণবাদী ও ঘৃণাবাচক মন্তব্য ঠেকাতে ফেসবুক যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এদিকে নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের আহবানে সাড়া দিয়ে ৯০০’র বেশি কোম্পানি ফেসবুক ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইট তাদের ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রেখেছে। এ পর্যন্ত ফেসবুকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রেখেছে ৯৯০ টি কোম্পানি। এরমধ্যে ফোর্ড, মাইক্রোসফট, এডিডাস, এইচপি, কোকাকোলা, ইউনিলিভার, স্টারবার্ক, বেশকিছু কানাডিয়ান ব্যাংকসহ বিভিন্ন কোম্পানি তাদের বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
বিশ্বাস ভঙ্গ
কোম্পানিগুলোর ফেসবুকে ডিজিটাল প্রচারণা বন্ধের সিদ্ধান্তের পরে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে ফেসবুক কি ক্ষতি হবে? তাই এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হবে ‘হ্যাঁ’। কারণ ফেসবুকের আয়ের একটা বিশাল অংশই আসে বিজ্ঞাপন থেকে।
যুক্তরাজ্যের আভিভা বিনিয়োগের ডেভিড কামিং জানান, ফেসবুকের বর্তমান এই দুর্দশার জন্য প্রতিষ্ঠানটি নিজেই দায়ী। কারণ তারা মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, মানুষ এখন আর তাদের বিশ্বাস করে না। তাই নৈতিকতার বিচ্যুতি ঘটলে ব্যবসায় ধ্বস নামবে।
এদিকে ফেসবুকের শেয়ার মূল্য ৮ শতাংশ পড়ে গেছে। যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যদি এরকম হয় তাহলে ফেসবুকের জন্য একটি বড় হুমকি হবে।
তবে সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে এটিই প্রথম বয়কট নয়। এর আগে ২০১৭ সালে গুগলের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবকে বয়কট করেছিল বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানি। পরবর্তীতে গুগল কর্তৃপক্ষ তাদের নীতিমালায় সংশোধ করেছে। যা বর্তমানে অনেকেই এখন ভুলে গেছেন। তাই ধারনা করা হচ্ছে এরকম আরও অনেক কারণ আছে যা ফেসবুক বয়কটের ফলে প্রতিষ্ঠানটির তেমন প্রভাব নাও পড়তে পারে।
প্রথম, অধিকাংশ কোম্পানিই এক মাসের জন্য (শুধু জুলাই) ফেসবুকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন দেওয়া বন্ধ রাখবে।
দ্বিতীয়ত, উল্লেখযোগ্য ভাবে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের সিংহভাগই আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের থেকে। আর ফেসবুক বয়কটের জন্য বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি কোম্পানিগুলো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
বিজ্ঞাপন সংস্থা ডিজিটাল হুইসকির কৌশলী প্রধান ম্যাট মোরিসন জানান, অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফেসবুকে বিজ্ঞাপন না দিয়ে থাকতে পারবে না। কারণ টিভি থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দেওয়া অনেক সাশ্রয়ী এবং নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গোত্রের কাস্টমারদের কাছে পৌঁছানো যায়। আর আমাদের ব্যবসায়ের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নির্দিষ্ট ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো, যা গণমাধ্যমে সম্ভব নয়।
সূত্র: বিবিসি