মাস্টারকার্ড, ইস্টার্ন ব্যাংক, পেপারফ্লাই আনল ‘ক্যাশলেস পে'

, টেক

সাব্বিন হাসান, আইসিটি এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:35:22

অনলাইনে ক্রেতাদের পছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে কেনাকাটা করার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে দেশি হোম ডেলিভারি নেটওয়ার্ক পেপারফ্লাই, মাস্টারকার্ড ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) সাথে যৌথ উদ্যোগে ডিজিটাল পেমেন্ট অন ডেলিভারি সল্যুশন 'ক্যাশলেস পে' সেবা চালু করেছে।

অনলাইন ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য পেতে পেপারফ্লাই’র নতুন এ ডিজিটাল পেমেন্ট সেবায় এখন থেকে পণ্য গ্রহণের সময় নগদ অর্থ (ক্যাশ অন ডেলিভারি-সিওডি) না দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। সারা দেশই এ সেবার অন্তর্ভুক্ত।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রধান অতিথি হিসেবে ডিজিটাল পেমেন্ট অন ডেলিভারি সিস্টেম ‘ক্যাশলেস পে’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে বলেন, আন্তঃ লেনদেন সুবিধা নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে লেনদেনের পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানো সম্ভব।

পরিবর্তিতে নতুন সময়ে ভার্চুয়াল বিনিময়ের দিকে মনোযোগী হতে হবে। বিটকয়েনের মতো মুদ্রাকে অনুমোদন না দিলেও এ বিষয়ে ভাবতে হবে। বিষয়টি নিয়ে নীতিনির্ধারণী আলোচনা করতে হবে। তা না হলে পিছিয়ে পড়তে হবে। সাইবার সিকিউরিটির দিকে নজর দিয়েই ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তুলতে হবে।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির, বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির এবং ই-ক্যাবের সভাপতি শমী কায়সার।

মূলত 'ক্যাশলেস পে' সেবা হচ্ছে একটি প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সমাধান। ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) মাধ্যমে মাস্টারকার্ডের পেমেন্ট টেকনোলজির সহযোগীতায় সেবাটি নিশ্চিত করবে পেপারফ্লাই। ক্যাশলেস পেমেন্টের ক্ষেত্রে দেশে এটি প্রথম সেবা, যার জন্য কোনো পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) মেশিনের প্রয়োজন নেই। ক্রেতারা পেপারফ্লাইয়ের সরবরাহ করা পণ্যের দাম পরিশোধ করতে নিজেদের স্মার্টফোন ব্রাউজার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই সহজে ক্যাশলেস পে মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন।

ই-কমার্স তথা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ক্রেতাদের ঘরে বসেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিরাপদে, স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিশ্চিন্তে  নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার সুযোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

মাস্টারকার্ডের গবেষণা সূত্র বলছে, সারা বিশ্বে ক্রেতারা এখন সশরীরে দোকানে বা সুপারশপে যাওয়ার চেয়ে ঘরে বসে ই-কমার্স বা অনলাইনে পণ্য কেনাকাটার দিকে ঝুঁকছেন। করোনা সময়ে বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৬ জন বলছেন, পণ্য ক্রয়ে গতানুগতিক ধারা ছেড়ে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন করছেন। করোনার পরেও স্থায়ীভাবে এ পদ্ধতিতে কেনাকাটা করতে চান। আবার প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মানুষ জানিয়েছেন, তাঁরা করোনার পরে নগদ অর্থ ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশে অনলাইন কেনাকাটায় দাম পরিশোধে ৯৫ শতাংশই হয় ক্যাশ-অন-ডেলিভারি (সিওডি) অর্থাৎ ক্রেতার পণ্য পেয়ে নগদে অর্থ দিয়ে থাকেন। করোনা মানুষকে নগদ অর্থ বিনিময়ের পরিবর্তে ডিজিটাল পেমেন্টর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক নোট বা নগদ টাকা স্পর্শ করাও এখন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। এমন আশঙ্কা থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে ক্যাশলেস লেনদেনে ঝুঁকে পড়ছেন।

নতুন এ সেবার প্রসঙ্গে পেপারফ্লাই চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) রাহাত আহমেদ বলেন, নতুন এ উদ্যোগ ই-কমার্সের ইকো-সিস্টেমের জন্য ইতিবাচক। ফলে এখন থেকে ক্রেতাদের সামনে যেমন ক্যাশলেস পদ্ধতিতে পণ্যমূল্য পরিশোধের নতুন বিকল্প এসে গেছে, তেমনি অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং অনলাইনে পণ্য বিক্রেতাদের জন্যও দ্রুত নগদ অর্থ প্রবাহের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রচলিত ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে একসঙ্গে এভাবে ক্রেতা-ভোক্তা উভয়ের জন্যই পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থের মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। কারণ তা সময়সাপেক্ষ। নতুন সেবা চালুর সুবাদে পুরো অনলাইন ইকো-সিস্টেমে নগদ অর্থের লেনদেন প্রচলিত ব্যবস্থার চেয়ে সুদক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হবে। এখন থেকে অনলাইনে পণ্য বিক্রেতারা আরও বেশি পরিমাণে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। যা ই-কমার্সের বিকাশে সহায়ক।

ইস্টা র্ব্যাংক লিমিটেডের (ইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ইবিএল সব সময়ই তার গ্রাহকের নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার সময় থেকেই আমরা বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করে আসছি।

পেপারফ্লাই’র সঙ্গে ক্রেতা-ভোক্তাদের জন্য অনলাইনে পণ্যের অর্ডার দিয়ে ক্যাশলেস পদ্ধতিতে মূল্য পরিশোধের এমন সময়োপযোগী সেবায় যুক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। ডিজিটাল পেমেন্ট বা প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার মাধ্যমে লেনদেন করার বিষয়ে দেশের ভোক্তাদের বিশ্বাস বাড়ছে। এভাবে নতুন এ ‘ক্যাশলেস পে’ সেবার গুরুত্ব বাড়বে। এ সেবা চালুর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে বলে মনে করেন আলী রেজা ইফতেখার।

মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, নতুন ‘ক্যাশলেস পে’ সেবা চালুর ফলে ভোক্তা-গ্রাহকেরা নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দে লেনদেন করতে পারবেন। অনলাইনে অর্ডার করা পণ্যের ডেলিভারি বা পণ্য হাতে আসার পরে মাস্টারকার্ডের ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ড এবং মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন।

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে মাস্টারকার্ড তার সহযোগীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে।ফলে নিত্যনতুন ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা সহজলভ্য করা সম্ভব হচ্ছে।

করোনার  দুঃসময়ে ই-কমার্স ও ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন নগদ অর্থে লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেনের দিকে ঝুঁকছেন। করোনাকালের পরেও এ ডিজিটাল লেনদেনের জনপ্রিয়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর