রবির বিজ্ঞাপনে প্রার্থনাকে কলরেটের সঙ্গে তুলনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

মোবাইল ফোন, টেক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-18 10:29:22

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতিনিয়িত নিত্য-নতুন কোম্পানি তাদের পণ্য নিয়ে বাজারে আসছে, প্রচার করছে। এটা নিয়ে কোনো কথা নেই, সমস্যাও নেই। সমস্যা হয় তখন, যখন পণ্য খারাপ হয় কিংবা পণ্যের প্রচারে ভুল পন্থা অবলম্বন করা হয়। তেমনি বাংলাদেশের অন্যতম মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি তাদের বিজ্ঞাপনের ইসলাম ধর্মের শিক্ষার ভুল উপস্থাপনা করে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

ঈদ উপলক্ষে প্রচারিত রবির এক বিজ্ঞাপনের শুরুতে দেখা যায়, নামাজের ইকামত হচ্ছে- কাদকামাতিস সালাহ, কাদকামাতিস সালাহ। আল্লাহু আকবার- আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ওই সময় রবির ট্রেডমার্ক লাল পাঞ্জাবি গায়ে, টুপি মাথায়, হাতে জায়নামাজ নিয়ে মডেল মসজিদে ঢুকে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়ান। তখন একজন রিক্সাওয়ালা আসেন মসজিদে। কিন্তু রিক্সাওয়ালা নামাজে অংশ নেওয়ার জন্য মসজিদের গেটে এসে থমকে দাঁড়ায়। সে ভাবতে থাকে ভেতরে যাবে কি যাবে না, কিংবা ভেতরে যেয়ে সে কোথায় দাঁড়াবে? এমন সময় রবির মডেল তাকে তার পাশে, একই জায়নামাজে নামাজে দাঁড়ানোর জন্য ইশারা করে। রিক্সাওয়ালা খুশি মনে তার পাশে গিয়ে নামাজে দাঁড়ায়।

আর তখন স্ক্রিনে ভেসে উঠে ও বলতে শোনা যায়, ‘আপনার প্রার্থনার মতোই ভেদাভেদ নেই রবি কলরেটেও!’ রবিতে আসলেই সারাদেশে এক রেট, অফনেট অননেট যেকোনো নম্বরে মাত্র ৫০ পয়সা প্রতি মিনিট।

বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকে নানা মহল থেকে কথা উঠছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে অনেকে পত্রিকা অফিসে ফোনও করেছেন। ইবাতদকে কলরেটের সঙ্গে তুলনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষও।

রবির এই বিজ্ঞাপনের চিত্রায়ন, বক্তব্য ও তুলনা ইত্যাদি নিয়ে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে। এই বিজ্ঞাপনে মসজিদকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। দেখানো হয়েছে, মসজিদে নিম্ন আয়ের মানুষ যেতে ইতস্ততবোধ করছেন। যদিও বাস্তবতা ভিন্ন। ইসলামের শুরু থেকে মসজিদ সবার জন্য উন্মুক্ত। নামাজের জামাতে একইসঙ্গে আমির-গরিব, ছোট-বড়, কর্তা-কর্মচারী কাঁধে-কাঁধ মিলিয়ে নামাজ আদায় করেন। এটাই ইসলামের সৌন্দর্য্য। মুসলমান মাত্রই এটা জানেন, মানেন ও বিশ্বাস করেন। এটা ইসলামের রীতিও বটে। সেখানে দেখানো হলো- নিম্ন আয়ের এক রিক্সাওয়ালা নামাজ পড়তে ইচ্ছা করছেন, কিন্তু তিনি কোথায় দাঁড়াবেন- এটা নিয়ে ইতস্ততবোধ করছেন। এই ভুল ম্যাসেজ কেন?

ইসলামের দৃষ্টিতে মসজিদ- মসজিদ হওয়ার জন্য শর্তই হলো- এখানে সবার প্রবেশের, ব্যবহারের সমানাধিকার থাকা। এর ভিন্নতা ইসলাম স্বীকার করে না। এমনকি, মসজিদের কারো জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে রাখা, নামাজের জামাত শুরু করতে কারো জন্য অপেক্ষা করা নাজায়েজ। ইসলামের এই নান্দনিক আচরণ ও সার্বজনীনতাকে অস্বীকার করে এমন ভুল উপস্থাপনা কেন?

অন্যদিকে নামাজের মতো একটি ফরজ ইবাদতকে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা কতটা যৌক্তিক হয়েছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। রয়েছে ভাষা নিয়েও কথা। বলা হচ্ছে, ‘আপনার প্রার্থনার মতোই ভেদাভেদ নেই রবি কলরেটেও!’ কোথায় নামাজ আর প্রার্থনা আর কোথায় রবির কলরেট! এটা কী করে এক হলো?
রবির ফেসবুক পেইজে এটা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হচ্ছে, দাবী উঠেছে বিজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের। তাদের ফেসবুক পেইজে সেলিম রাজু নামের একজন লিখেছেন, ‘ইবাদতের সাথে তুলনা করলে, এটা কেমন মানসিকতা? ... এই প্রথম দেখলাম ইবাদতের সাথে ব্যবসাকে তুলনা করলো। হ্যাঁ, হালাল ব্যবসাও একটি ইবাদত বটে তবে এ ব্যবসাটা সে স্তরে পড়ে না।’

মীর আবু জুবায়ের (Mir Abu Zubair) নামের একজন লিখেছেন, ‘এ কেমন এড, কোথায় নামাজ আর কোথায় রবি। আমি কি বলতে চাইছি আশা করি- বুঝতে পেরেছেন। দয়া করে ভুলভাল এড দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন আশা করি।’

চাদনি মুন হাসান লিখেছেন, ‘বুঝলাম না তাই বলা, প্রার্থনার সাথে কলরেটের তুলনা! ইতরামির একটা সীমা থাকা দরকার। ধর্মকে খুব সহজেই ব্যাবসার কাজে লাগানো যায়, না?’

গোলাম মোস্তফা মাসুম লিখেছেন, ‘জাস্ট ফর ফান, এই রিকশাওয়ালা মনে হয় প্রথমবার মসজিদে গেছে। তা না হলে আমাদের ইসলামে মসজিদে সবাই সমান। লোকটি এমনভাবে অবাক হলো- যেন এটা অবাস্তব। সে জীবনে এমন ঘটনা দেখেনি। ইসলাম পৃথিবীর একমাত্র শান্তিময় পরিপূর্ণ ধর্ম।’

এভাবে এই বিজ্ঞাপনকে সস্তা কনসেপ্টের বিজ্ঞাপন আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবী করেছেন অনেকে। অনেকে এভাবে নামাজ, মসজিদ ও ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাণিজ্য না করার আহবান জানান।

আমরা আশা করি, শুধু রবি নয়; যেকোনো প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপনে এভাবে ধর্মকে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে। আর যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো তদারকি করবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর