নয়নাভিরাম নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল

বিবিধ, ট্রাভেল

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 07:30:29

ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়। শরতের শুরু হলেও বর্ষার রেশ তখনও কাটেনি। ফেইসবুক ভিত্তিক গ্রুপগুলোর কাছে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল পুরোপুরি ভাইরাল। কোন চিন্তা না করেই বুকিং দিয়ে দিলাম। কেননা নাপিত্তাছড়া এর আগে কখনও যাওয়া হয়নি।

আমরা যেদিন ট্রেইল শুরু করবো সেদিন রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। এর আগে রাতের গাড়িতে আমরা চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ড পৌঁছাই। অন্যান্য স্পট ঘুরে নাপিত্তাছড়ার উদ্দেশ্যে মিরেরসরাইয়ের নয়দুয়ারীতে থেকে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল শুরু করি বেলা তিনটায়।

ট্রেইল শুরুর আগে কিছু প্রস্তুতি দরকার হয়। প্রথম যে জিনিসটি দরকার তা হচ্ছে পাথুরে পিচ্ছিল কিংবা পিচ্ছিল কাদামাটি পথ পাড়ি দিতে আপনাকে অবশ্যই এ্যাংলেট অথবা মোজা পরে নিতে হবে। পতন এড়ানো কিংবা পানির গভীরতা মাপতে একটি লাঠি নিতে হবে। দুটোই নয় দুয়ারী বাজারে ট্রেইল শুরুর আগেই কিনতে পাওয়া যায়। এ্যাংলেট ৪০ টাকা ও বাঁশের লাঠি ২০ টাকা নিবে।

barta24

জনপ্রতি ১ লিটার পানি ও দ্রুত শক্তি যোগাবে এমন কিছু শুকনো খাবার, বাড়তি একসেট জামাকাপড় ছাড়া আর কিছুর সাথে না রাখা ভাল। এতে কষ্ট অনেক কমে যায়।

নয় দুয়ারী বাজার থেকে ৪০-৫০ মিনিট হেঁটে এই ট্রেইল শুরু করতে হয়। কাঁচা রাস্তা আর স্থানে স্থানে প্যাঁক কাদার কারনে এ রাস্তায় কোন যানবাহন চলে না। তবে মাঝে মাঝে দুএকটা অটো রিক্সা চোখে পড়ে। তাতে রেললাইন পর্যন্ত অর্ধেকটা পথ যাওয়া-আসা যায়। তবে এর আশায় না থাকায় ভাল।

barta24

পুরো ট্রেইল হেঁটে দেখতে ৪-৫ ঘন্টা লাগে, তাই সকালের দিকেই এ ট্রেইলে যাওয়া ভাল। আমাদের ফিরতে রাত হয়ে গিয়েছিল। পাহাড় জঙ্গলের রাত নামে খুব তাড়াতাড়ি। আর তা হয় ভয়ঙ্কর।

৪০-৫০ মিনিট হাঁটার পর টিকেট কাউন্টার পাওয়া যায়। নাপিত্তাছড়ায় প্রবেশ করতে ২০ টাকার টিকেট কাটতে হয়। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের কাছে পুরো ট্রেইলটি খুবই আকর্ষণীয়। পাথুরে ঝিরি,ট্রেইলের দুপাশে দুর্গম পাহাড়, ঝিরির স্বচ্ছ পানি মনে প্রশান্তি এনে দেয়।

barta24

আমার সাথে ছিলেন সাভার থেকে আসা তাপসদা, ইপিলয়ন গ্রুপে চাকুরী করেন জোবায়ের ও মামুন, ভোলা জেলা থেকে আসা ইব্রাহিম। তাপসদা, জোবায়ের ও ইব্রাহিম ছিলেন শারীরিকভাবে খুবই শক্তিশালী ও হেল্পফুল। মামুন অতটা শক্তিধর না হলেও আগ্রহের অভাব ছিল না।

নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা যাওয়ার ট্রেইলটি অপেক্ষাকৃত সহজ ও নিরাপদ। তবে নতুনদের জন্য এর ২/৩ টি স্থান ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। ট্রেইলটির কোন কোন স্থানে সূর্যের আলো ভয়ঙ্কররকম কমে যায়। গা ছমছম করে ওঠে। দিনের আলো থাকতেই ট্রেইলটি পার হয়ে আসা উচিত।

ঝিরি ও পাহাড়ি পথ ট্রেকিং করে কিছুদূর যাওয়ার পর প্রথমে এই ট্রেইলের টিপরা ঝর্ণার দেখা পাওয়া যায়। এর পানি কিছুটা ঘোলা। এখানেই অনেকে গোসল করেন। আর অন্য ঝর্ণাগুলো দেখতে একটু কষ্টসাধ্য হওয়ায় এখান থেকেই ফিরে নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা দেখার গল্প করেন।

টিপরা ঝর্ণার উপরেই কুপিকাটা ঝর্ণা। টিপরার বাম পাশ দিয়ে এটিতে উঠতে হয়। এটি বেশ গভীর। সাঁতার না জানলে দুর থেকে এর সৌন্দর্য দেখুন। নামার চিন্তাও করবেন না। কুপিকাটা ঝর্ণার ডান পাশ দিয়ে পাহাড়ে উঠে আবার ঝিরিতে নামতে একটি পিচ্ছিল পাহাড়ি পথ পড়বে।

খুব সাবধানে এটি পার হতে হয়। ট্রেকিংয়ের সময় প্রত্যেক কদমই আপনাকে আত্মবিশ্বাসের সাথে ফেলতে হবে। এখানে ভুলের কোন ক্ষমা নাই। অনেক সময় চড়া মূল্য দিতে হয়।

এ ঝিরি পথ ধরে আরও সামনে গেলে ইংরেজি বর্ণমালার Y বর্ণের মতো দুদিকে দুটো ঝিরি ভাগ হয়ে গেছে। হাতের বামে ঝিরি ধরে ৩০ মিনিটের মত গেলে ঝিরির শেষ মাথায় বাঘ বিয়ানী ঝর্ণা দেখতে পাবেন। অনেক সুন্দর এ ঝর্ণা।

এ ঝর্ণা দেখে আবার পিছনে এসে Y জাংশনের মাথা থেকে ডান দিকে গেলে ঝিরি পথে পড়ে কিছু অনিন্দসুন্দর ক্যাসকেড। এ ঝিরি ধরে ১০ মিনিট সামনের এগিয়ে গেলে ঝিরির শেষে দেখা মিলবে নয়নাভিরাম বান্দর খুম ঝর্ণার। এই বান্দরখুম ঝর্ণাই এই ট্রেইলের সবচেয়ে সুন্দরতম ঝর্ণা। এ ঝর্ণাই নাপিত্তা ছড়া ঝর্ণা নামে পরিচিত।

কোন সময় যাবেন

বর্ষাকাল ঝর্ণায় যাবার সবচেয়ে ভাল সময়। তখন ঝর্ণা গুলোকে যৌবনবতী সুন্দরী নারীর চেয়েও আকর্ষণীয় মনে হয়। ঝর্ণায় বেশ পানি থাকে।এছাড়া বছরের যে কোন সময়ই যেতে পারবেন।

কিভাবে যাবেন

এই ট্রেইল শুরর হয় চট্টগ্রামের মিরসরাই এর নয় দুয়ারী বাজার থেকে। তাই দেশের যে কোন স্থান থেকে বাসে মীরেরসরাই অথবা ট্রেনে চট্টগ্রাম এসে এ ট্রেইল শুরু করতে হয়। সিতাকুণ্ড থেকেও মীরেরসরাই আসা যায়। শুরুতেই ঐ এলাকার মানুষজন আপনাকে গাইডের কথা বলবে। একদম অনভিজ্ঞ হলে গাইড নিয়ে যাওয়া ভাল। এছাড়া প্রতিদিনই বহু মানুষ নাপিত্তাছড়ায় যায়। তাদের কোন এক দলকে অনুসরণ করলেই হবে।

কোথায় খাবেন

নয়দুয়ারী বাজারে ভাল খাবার হোটেল নাই। সিতাকুণ্ড কিংবা মিরেরসরাইয়ে ভাল খাবার হোটেল পাবেন। কোন গ্রুপের সাথে গেলে তারাই খাবার ব্যবস্থা করবে।

কোথায় থাকবেন

এটি একটি ডে ট্যুর। তাই থাকার কোন দরকার হয় না। তবে অন্যান্য স্পট ঘুরে দেখার কারণে থাকতে হলে সিতাকুণ্ড গিয়ে থাকতে পারবেন। ওখানে ৪শ থেকে ১৮শ এর মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর