সম্প্রতি এক প্রাণোচ্ছল ভ্রমণপিপাসু দম্পতি পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াতে পৌঁছান। ‘প্রতিটি প্রাণ মূল্যবান, আত্মহত্যা নয়- বাঁচতে শিখি’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলতি বছরের গত ২৮ জুন পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে ভ্রমণ শুরুর পর শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্টে ভ্রমণ শেষ করেন তারা।
ব্যাংকার শারাবান তহুরা শান্তা এবং আর্কিটেক্ট আল ইমরান শাওন তাদের পেশাগত ব্যস্ততার মাঝেও এই সময় বের করে আত্মহত্যা নয় বাঁচতে শেখার প্রতিপাদ্যকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। দম্পতির ভাষ্যমতে তাদের এই ভ্রমণে তারা প্রচুর মানুষের সাথে বিশেষ করে তরুণ তরুণী এবং স্কুলের বাচ্চাদের সাথে কথা বলেছেন, দেশকে দেশের মানুষকে নতুন করে চিনেছেন এবং অনেককে নতুনভাবে চিনতে সাহায্য করেছেন ও সচেতন করেছেন। চলার এই পথে তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। নতুন কিছু শিখতে, মানুষকে জীবন সম্পর্কে জানাতে ও সচেতন করার অভিপ্রায় তাদের পিছু হটতে দেয়নি।
বার্তা২৪ কে শান্তা বলেন, বিগত ২৮ জুন আমরা হাঁটা শুরু করি টেকনাফের শাহীপরীর দ্বীপ থেকে। প্রথমদিন প্রায় ২৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে বড়ডিলের মরিসবুনিয়া স্কুলের নৈশপ্রহরীর বাড়িতে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা হয়। সেদিন রাতে আমাদের সাথে একটা ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে। মাঝরাতের দিকে হাতির পাল আমাদের থাকার ঘরে আক্রমণ করে বসে। নৈশ প্রহরীর পরিবারের সাথে দৌড় দিয়ে স্কুল ঘরে গিয়ে উঠি এবং বাকি রাতটা আমাদের সেখানেই কাটে। দ্বিতীয় দিন ছিল ঈদের দিন, সেদিন প্রায় ৩৬ কিলোমিটার হেঁটে থেকে ইনানী বিচ পর্যন্ত যাই। ঈদের ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ১০ দিনে ৪০০ কিলোমিটার কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত পৌঁছাই। পরের সপ্তাহে দাউদকান্দি থেকে হেঁটে ঢাকার রামপুরা পর্যন্ত আসি। অতঃপর মায়ের অসুস্থতা, পারিবারিক সমস্যা এবং অফিসের ব্যস্ততার কারণে কয়েক সপ্তাহ বিরতি নিয়ে পুনরায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে হাঁটা শুরু করি। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আরিচা হয়ে ট্রলারে যমুনা পাড়ি দিয়ে কখনো হাইওয়ে ধরে আবার কখনো লোকাল রাস্তা দিয়ে হেঁটে উত্তরের সীমান্ত তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছে ভ্রমণ শেষ করি।
পুরো ভ্রমণে কোনো সমস্যায় পরতে হয়েছিল কিনা তার জবাবে শান্তা জানান। ফেনী ক্রস করার পর আমার স্বামী আমাকে ফেলে বেশ খানিকটা এগিয়ে যাওয়ায় ৫/৬ জন বখাটে আমাকে ঘিরে ধারে নানানভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং অনৈতিক কথা বলতে থাকে। সেসময় আমি সাহস নিয়ে প্রতিবাদ করায় এবং উপস্থিত বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওদের ভয় দেখানোতে ওরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনা ছাড়া তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে আমাদের দেশে পাবলিক টয়লেট না থাকে চলতি পথে ভ্রামনিকদের খানিকটা সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের দেশের মানুষজন খুব ভাল এবং সাহায্যপরায়ণ।
শাওন বার্তা২৪ কে বলেন, আমরা ঐকান্তিক চেষ্টা ছিল দেশব্যাপী পায়ে হেঁটে ঘোরার এবং মানুষের মধ্যে জীবনের বানী পৌঁছে দেবার এবং শত বাধার পরেও আমরা চেষ্টা করে গেছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং মূল প্রতিবাদ্যকে মাথায় রেখে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভ্রমণ করার ইচ্ছে আছে আমাদের। আমি বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাই এবং আউটডোর বিডি এর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি এই ভ্রমণে বিভিন্ন ভাবে পরামর্শ ও সহায়তা দেবার জন্য।
আউটডোর বিডির ফাউন্ডার জুয়েল রানা বার্তা২৪ কে বলেন, আমি নিজে একজন ভ্রমণপাগল মানুষ। আউটডোর বিডি’র উদ্দেশ্যেই হলো একজন পরিব্রাজক বা ভ্রমণকারী যাতে হাতের কাছেই সহজলভ্যে সকল ভ্রমণ সামগ্রী পান। শান্তা ও শাওন দম্পতি এই ভ্রমণ সম্পন্ন করায় আমরা খুশি এবং তাদের এই ভ্রমণ দেখে আরও মানুষ উদ্বুদ্ধ হোক আমরা সেটাই চাই।