'বার্ষিক শিক্ষাসফর' শব্দটার সাথে ছোট থেকেই পরিচিত। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বয়স, পরিবর্তন হয়েছে শিক্ষার স্তর। তবুও পরিবর্তন হয়নি অতীতে শব্দটার সাথে কাটানো কৌতূহল। ক্লাস প্রতিনিধির কাছে বার্ষিক সফরের কথাটা শুনতেই মনটা নেচে উঠলো এক পরিচিত আনন্দে। তাই দেরি না করেই চাঁদা জমা দিয়ে নিশ্চিত করলাম নিজের আসনটি।
প্রতিক্ষিত দিনটি চলে এলো। পূবের সূর্যিমামার স্বরুপ ধারণের আগেই শেষ হলো প্রস্তুতি। ভোর ছয়টায় চলে এলাম স্পটে। সাথে বন্ধু, বড় ভাই ও বোন মিলে সর্বমোট ২২০ জন। এবং আরও আছেন ডিপার্টমেন্টের বশির আহমেদ স্যার ও সৈয়দ তৌহিদুল ইসলাম স্যার।
পাহাড় ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে এক সারিতে চারটি গাড়ি ছুটে চলছে বিরামহীনভাবে। গন্তব্য তার ইতিহাস ঐতিহ্যে মোড়ানো কুমিল্লার শালবহন বিহার ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)।
বাস চালু হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিভিন্ন গান ও বন্ধুদের নাচে সৃষ্টি হলো এক আনন্দ মুখর পরিবেশ। আমাদের মাঝে প্রশিক্ষিত কোন ড্যান্সার না থাকলেও আজ সকলে নেচে গেয়ে উপভোগ করছেন দিনটি। কেউবা হাতের ফোনটি দিয়ে মুহূর্তটুকু স্মরণীয় করে রাখতে তুলে রাখছেন কিছু ছবি। এভাবে নেচে গেয়ে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে যেন খুব দ্রুতই বার্ডের গেটে পৌঁছালাম আমরা।
বাস থেকে নেমে বার্ডের মুখে একটা গ্রুপ ফটো তুললাম। এ সময় শোভা পাচ্ছিল সকলের গায়ে একই রঙের টি-শার্ট। যেন মনে হচ্ছে কোন মায়ের জমজ সন্তান!
সবুজ গাছ গাছালি ও নিপুণ স্থাপত্য শৈলির সংমিশ্রণে শান্ত অথচ অসম্ভব সুন্দর বার্ড এলাকাটি। ধুলো-ধুঁয়োর শহর ছেড়ে স্বস্তির বাতাস নিতে আসা যে কারোর জায়গাটি ভালো লাগবে। আমরা কয়েজন বন্ধু মিলে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফিরে দেখলাম আর ছবি তুললাম। এর মধ্যেই দুপুরের খাবারের সময় হয়ে গেলো তাই দেরি না করে চললাম বার্ডের ক্যাফেটেরিয়াতে। এখানে পূর্ব অর্ডার অনুযায়ী খাবার পরিবেশন করা হলো। খাবারের পর্বটি শেষ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। গন্তব্য এবার শালবন বিহার!
শালবনে পৌঁছে প্রথমেই ঢুকলাম ময়নামতি জাদুঘর। এর পর গেলাম শালবন বিহারে। দেখতে পেলাম শত শত প্রাচীন স্থাপনা। যেগুলো এতদিন বইয়ের পাতায় কিংবা মোবাইলের স্ক্রিনে দেখেছি তা আজ চোখের সামনে দেখতে পেয়ে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো।
শালবন বিহারটি বাংলার প্রাচীন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। জানা যায়, প্রায় ১২শ বছর আগে বৌদ্ধরা এটি নির্মাণ করে। সারি সারি কক্ষ ও শক্তিশালী পাচীর গুলো দেখে সে সময়ের স্থাপত্যশৈলী কতটা উন্নত ছিল তা সহজেই অনুমেয়। আর আমরাও ইতিহাসের শিক্ষার্থী হওয়ায় খুটে খুটে সব দেখছিলাম, যেন ফিরে গেছি নয়শত শতাব্দির বৌদ্ধ রাজাদের আমলে।
এভাবে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ মাহবুব ভাইয়ার বাশিঁর সুর কানে আসল তার মানে সবাইকে একত্রিত হতে হবে। এবার পালা ফটোসেশন ও র্যাফেল ড্র। আনন্দপূর্ণ ভাবে পর্বটা শেষ হতে না হতেই দেখি সূর্যিমামা জানান দিচ্ছে সে আর বেশিক্ষণ ধরণীতে থাকবে না। তাই আমাদেরও আর বেশিক্ষণ থাকা হলো না। রওনা দিলাম বাসের দিকে। নিজর সিটট খুঁজে ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দিলাম সিটের মধ্যে। চালু হলো বাস! এভাবে ইতিহাস ঐতিহ্যে ঢাকা কুমিল্লা শালবন বিহারকে পেছনে ফেলে ক্ষণিকের সফর শেষে এগিয়ে চললাম নীড়ের উদ্দেশ্যে।