লুক্সেমবার্গ, লুক্সেমবার্গ সিটি থেকে: পশ্চিম ইউরোপের ছোট দেশ লুক্সেমবার্গ। দেশটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ৬ লাখ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ মাথাপিছু জিডিপি নিয়ে ল্যান্ডলকড লুক্সেমবার্গ ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ। যার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল দেশগুলোর মধ্যে লুক্সেমবার্গ অন্যতম একটি। দেশটির টেকসই উন্নয়ন বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার মন্ত্রণালয়ের ২০১৭ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, লুক্সেমবার্গটিতে প্রতি ১ হাজার জন মানুষের মধ্যে ৬৬২ টি গাড়ি রয়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে থাকেন। (সূত্রঃআন্দ্রেয়া লো,সিএনএন,১৫ জানুয়ারি-২০১৯)।
যার জন্য রাজধানী লুক্সেমবার্গ সিটিতে যানজট খুব প্রকট আকার ধারণ করেছে। লক্ষাধিক মানুষের এই শহরে প্রতিদিন কাজের জন্য আসেন আরও প্রায় চার লাখ মানুষ। এছাড়া প্রায় দুই লাখ মানুষ সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও জার্মানিতে যায় প্রতিদিন। ২০১৬ সালের একটি গবেষণা অনুসারে, এই বছরে লুক্সেমবার্গের চালকরা গড়ে ৩৩ ঘণ্টা যানজটের শিকার হয়। এর ফলে তৈরি হয় প্রচণ্ড যানজট।
পহেলা আগস্ট ২০১৮ থেকে ২০ বছরের কম বয়সী সকল নাগরিক, হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রী এবং ৩০ বছরের নিচের দেশি-বিদেশি সকল ছাত্রছাত্রীদের জন্য যাতায়াত ফ্রি করে দিয়েছিল লুক্সেমবার্গ সরকার।
ট্র্যাফিক জ্যামে অতিষ্ঠ হয়ে দেশটির সরকার এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ট্রেন, ট্রাম ও বাসে চড়লে কাউকে কোনও ভাড়া দিতে হবে না। (সূত্রঃআন্দ্রেয়া লো,সিএনএন,১৫ জানুয়ারি-২০১৯)।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সব গণপরিবহনের ভাড়া মওকুফ করে দিচ্ছে লুক্সেমবার্গের সরকার। এরকম সুবিধা এখন পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
লুক্সেমবার্গের চলাচল ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড্যানি ফ্যাঙ্ক বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি এই পদক্ষেপের কারণে রাস্তায় জ্যাম কমবে এবং পরিবেশগত সুবিধাও পাওয়া যাবে।’
মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশটির গণ পরিবহন ব্যবস্থা পুরো দেশজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং প্রতি বছর এজন্য ৫৬২ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়। তবে টিকেট বিক্রি করে প্রতি বছর আয় হয় ৪৬ মিলিয়ন ডলার।
ফ্রাঙ্ক বলেন, ‘সরকার এখন এই খাতে ভাড়া বিনামূল্যে করতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বর্তমান আর্থিক অবস্থা খুব ভালো অবস্থানে আছে। আমরা চাই জনগণ এই সচ্ছল অর্থনীতির সুফল পাক।’
নগর উন্নয়ন বিশ্লেষকদের ধারণা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ফ্রি করা হলে যানজট অনেকাংশেই হ্রাস পাবে সেই সাথে প্রচুর পরিমাণে পর্যটক বেড়ে যাবে দেশটিতে। যার ফলে সরকার সেই ব্যয় তুলে নিতে সক্ষম হবে বলে তাঁদের ধারণা।