রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক। আঁকাবাঁকা উঁচুনিচু পথ; যেখানে মেঘ-পাহাড়ের গভীর মিতালি। প্রথম দেখাতেই মন কেড়ে নেবে যেকোনো ভ্রমণপিয়াসী মানুষের। এখানে পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমান মেঘ-পাহাড়ের রহস্যময় খেলায় মেতে উঠতে। আর ঈদের ছুটি হওয়ায় পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে আকর্ষণীয় এ পর্যটনকেন্দ্র।
স্থানীয় ও পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পরদিন থেকে সাজেকে আসা শুরু করেছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। ঈদের চতুর্থ দিন শনিবারও (৮ জুন) সাজেকে ঢল নেমেছে পর্যটকদের।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চান্দের গাড়ি ও ব্যক্তিগত গাড়িতে সওয়ার হয়ে পর্যটকরা এসেছেন এখানে। বেড়াতে আসা পর্যকটরা সাজেকের অপরূপ প্রকৃতি দেখে নিজেদের মুগ্ধতার কথা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর মো. ইউসুফ সপরিবারে সাজেক এসেছেন। কংলাক পাড়ার পাহাড় থেকে সবাইকে নিয়ে প্রকৃতি উপভোগের সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশে যেসব দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো সাজেক। এত আঁকাবাঁকা পথ আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কারোর মন কেড়ে নিতে বাধ্য।
ঈদের ছুটিতে বন্ধুদের নিয়ে সাজেক এসেছেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী খালিদ হাসান মুন্না। তিনি বলেন, ১২ বন্ধু মিলে ছুটিটা উপভোগ করতে চলে এসেছি। অনেক দিন ধরেই আসবো আসবো করে আসা হচ্ছিলো না। সাজেকের সৌন্দর্য এতদিন শুধু ছবিতেই দেখেছি। এবার নিজের চোখে দেখতে চলে এলাম।
সাজেকের প্রেমে পড়ে এ নিয়ে সাতবার এখানে এসেছেন প্রকৃতিপ্রেমী মমিনুর রহমান প্লাবন। তিনি বলেন, সাজেকের অপরূপ সৌন্দর্যই আমাকে বারবার টেনে আনে এখানে। সাজেক ক্ষণে ক্ষণে তার রূপ বদলায়। সকালে একরকম, বিকেলে অন্যরকম আবার রাতের সৌন্দর্য আরেকরকম। সাজেকের ঈর্ষণীয় রূপ আমাকে মুগ্ধ করে। তাই সুযোগ পেলেই ছুটে আসি নয়নাভিরাম সাজেকে।
এক বছর আগে সাজেক ঘুরে গিয়েছিলেন ময়মনসিংহের সানোয়ার হোসেন। এবার সঙ্গে এনেছেন স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের। তিনি বলেন, সাজেক এতই সুন্দর যে, আমি একবার এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ফের মনোমুগ্ধকর সাজেকের সৌন্দর্য উপযোগ করবো।
এদিকে ঈদ উপলক্ষে অসংখ্য পর্যটক সাজেকে আসায় ঠাঁই মিলছে না স্থানীয় রুইলুই পাড়ায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবকাশ কেন্দ্রে।
সাজেকের হিলভিউ রিসোর্টের মালিক ইন্দ্রজিৎ চাকমা বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুরো রিসোর্ট এক মাস আগ থেকেই বুকিং। নতুন করে যেসব পর্যটক আসছেন তাদের রুম দিতে পারছি না। যারা আসছেন তাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।
রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাংগা লুসাই জানান, সাজেকের প্রতিটি জায়গায় পর্যটকে ঠাসা। গত দুই দিনে কমপক্ষে সাত হাজার পর্যটক এসেছেন সাজেকে। রিসোর্টে জায়গা না পেয়ে অনেককে স্থান দিতে হয়েছে বিভিন্ন বাসায়। আমার বাসাতেও একটা দলকে জায়গা দিতে হয়েছে। ঈদের কারণেই এমন বিপুল লোকসমাগম।
জাহাঙ্গীর আলম নামে চান্দের গাড়ির চালক জানান, সাধারণত শুক্র ও শনিবার প্রচুর পর্যটক আসে এখানে। এসব দিনে ৪০-৫০টি গাড়ি ঢোকে সাজেকে। কিন্তু এখন ঈদের সময় হওয়ায় দুই দিনে কমপক্ষে ৫০০ গাড়ি প্রবেশ করেছে সাজেকে।