ঢাকা: এ যেনো এক রূপকথার গল্প। বুদাপেস্টের উপরিভাগে এক সবুজ পাহাড়ের ঘন বনভূমির মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে গেছে একটি রেললাইন। এটি যে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী রেল সার্ভিস এমন নয়, তবে অন্যতম আকর্ষণীয় এটা বলাই যায়।
অন্যসব রেলওয়ের মতো টিকেট ঘর, ডিজেল লোকোমোটিভ, সিগন্যাল, গার্ড, সময়সূচী প্রভৃতি সবই রয়েছে— ব্যতিক্রম হলো, এটি সম্পূর্ণ বাচ্চাদের হাতে পরিচালিত।
গাইয়ারমেকইয়াসুত (শিশুদের) রেলওয়ের এই খুদে কর্মীরা তাদের লাল, নীল ও সাদা ইউনিফর্মের মধ্য দিয়ে এই সালে ৭০ বছর পূর্তি উদযাপন করতে চলেছে। দীর্ঘ এতোগুলো বছর তারা খুব দক্ষতার সঙ্গেই টিকিট বিক্রি ও চেক করে এসেছে এবং করছে। একদম বড়দের মতোই ট্রেন ছেড়ে যেতে নির্দেশ করছে পতাকা নাড়িয়ে। অথচ কারও মুখ এতোটুকু ভার নেই, উল্টো সবাই বেশ মজায়।
হাঙ্গেরির নীল আকাশের নীচে ছোট্ট এই পুরনো রেলওয়েটি যেনো ওয়েস অ্যান্ডারসনের সিনেমা থেকে উঠে আসা। ব্যাপারটি কিন্তু তাইই, কমিউনিজমের দিনে হাঙ্গেরি যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের স্যাটেলাইট স্টেট ছিলো, তখন থেকেই বাচ্চাদের টিমওয়ার্ক ও দায়িত্ববোধ শেখাতে এই রেলওয়ে অগ্রগামী ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে প্রকৌশলী ও চালকরা বড়। এরকম আরও বড়রা দূর থেকে খেয়াল রাখেন যেনো কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।
সেই আদিকাল থেকেই একই দর্শন নিয়ে রেল চলেছে কু ঝিঁক ঝিঁক। স্থানীয় শিশুরা মাসে ১৫ দিন স্কুল আর বাকি ১৫ দিন রেলকর্মী হয়ে কাটায়। এইভাবে দাঁড়িয়ে গেছে ৭০ বছরের লেগ্যাসি। কাজেই অনেকে বলে, নস্টালজিয়া ট্রেন। আর হবেই বা না কেন, লাখো-কোটি শিশুর শৈশব যে এই ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে!
রোজ শতশত বড়-বুড়ো দেখতে আসেন তাদের শৈশব স্মৃতিময় রেল। তেমনই এক প্রবীণা এখানে এসে ফিরে গেলেন হারানো শৈশবে। ১৯৬০ সালে এক মাস এখানে কর্মী ছিলেন।
সেইময়ে ফিরে গিয়ে জানালেন, সবকিছু এখনও আগের মতোই। রেললাইনের দুধারের সবুজের ছড়াছড়ি অবিকল একই। এজন্য এই রেললাইনকে বলা হয়, সৌন্দর্যের পথ।
এই নৈসর্গিক সুন্দর উপভোগ করতে প্রথমে আপনাকে ধরতে হবে ৫৬ বা ৬১ নম্বর ট্রাম এবং সেটি জেল কালমান বা মরিজ জিগমন্ড কর্টার থেকে। এদের শেষ গন্তব্য হলো হুভোস্ভোলগি। অন্য লাইন ধরতে নেমে যেতে হবে ভারোস্মাজোরে এবং নিতে হবে কগহুইল রেলওয়ে (লাইন ৬০), এর শেষ গন্তব্য শেচেনাই-হেগি। এখান থেকে একটি প্যাচানো সিঁড়ি আপনাকে পৌঁছে দেবে শিশুদের রেলওয়ে।
যারা এখানকার কর্মী ছিলেন না, এমনি সাধারণ পর্যটক হয়ে বেশকয়েকবার এখানে ট্রেনে চড়ে গেছেন তাদেরই জোর দাবি, কোনো সংশয় ছাড়াই সবগুলো রুট সুন্দর। তবে লাইনের শেষ অব্দি না গেলে জীবন বৃথা।
টিকিট এমন কিছু না, মাত্র দুই-তিন ডলার। তাও নিচ্ছেন এক খুদে টিকিটকর্মীর হাত থেকে। আবার কোনো কারণে স্টেশনেই সময় কাটাতে চান, এরও রয়েছে ব্যবস্থা। সেই শুরুর দিনগুলোর অনেক জিনিসপত্রসহ একটি মিউজিয়াম। রয়েছে- কমিউনিস্ট রেলিক্স, পুরনো ইউনিফর্ম, অনেক বড় একটি টিকিট মেশিন ইত্যাদি।
কেটে ফেলুন হাঙ্গেরির টিকিট আর চড়ে বসুন শিশুদের ট্রেনে। এরপর দেখুন ট্রেন আপনাকে কোথায় নিয়ে যায়…