ফেসবুক-টুইটারের যুগে বাংলা ভাষা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

এ যুগ ফেসবুক, টুইটারের। যার অন্য নাম তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ববিপ্লব। বলা হয়, এটাই বিশ্বায়নের আসল চেহারা।

যোগাযোগের বিশ্বায়ন শুধু যে পুরো পৃথিবীকে কাছে নিয়ে এসেছে, তা-ই নয়। বিশ্বায়ন তথ্য-প্রযুক্তির বৈপ্লবিক বিকাশের পথে সমগ্র জগতকে নিবিড়ভাবে কাছে নিয়ে এসেছে। দেশ-মহাদেশকে অদৃশ্য তথ্য প্রবাহের বিদ্যুতে সংযুক্ত করেছে।

এমন প্রবল স্রোতে কান পাতলেই এখন বিশ্বায়নের হাওয়ায় হাওয়ায় বাংলা ভাষার রক্তাস্নাত স্বর আর ব্যাঞ্জণ বর্ণগুলোতে গুঞ্জরিত হতে শোনা যায়। ফেসবুক, টুইটার, গুগুলের দেয়ালে অম্লান ফুটে আছে আ মরি বাংলা ভাষা।

কে না জানে যে, সমকালীন সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা ফেসবুক আর টুইটারও হয়ে উঠছে দ্রুততম উপায়ে স্বদেশ অথবা বিদেশের বহু দূর-দূরান্তের সুহৃদ মহলের সঙ্গে সামাজিকভাবে আলাপচারিতার এক নির্ভরযোগ্য সংযোগ মাধ্যম। যারা পঞ্চাশ, ষাট অথবা সত্তরের দশকে স্বপ্নের প্রবাস জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চেয়ে বিদেশবাসী হয়েছিলেন, তাদের পক্ষে একবিংশ শতকের এই উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে স্বদেশের সঙ্গে, নিজস্ব সংস্কৃতির সঙ্গে, মাতৃভাষার সঙ্গে যোগাযোগ সংরক্ষণ সম্ভবপর ছিল না বলেই সন্তান সন্ততিদের নিয়ে নিজেরাও বিদেশি সংস্কৃতি এবং বিদেশি ভাষাকে গ্রহণ করতে তৎপর হয়েছিলেন। আজ প্রযুক্তি সংকট কাটিয়ে দিয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি এখন বৈশ্বিক বাঙালিকে দিচ্ছে শেকড়ের সন্ধান।

ভাষা, সংস্কৃতি, গান, বাজনা, তথ্য, উপাত্ত, ইতিহাস, ঐতিহ্য সুদূর প্রবাসের একাকী ও নিঃসঙ্গ বাঙালিকে বিরূপ পরিবেশেও সমৃদ্ধ করছে। বিশ্বায়ন আর তথ্য-প্রযুক্তি একদিকে যেমন সুযোগ বাড়িয়েছে। অন্যদিকে কিছু ভাবনার বিষয়ও সামনে নিয়ে এসেছে।

কারণ, বিদ্যমান সুযোগকে কাজে লাগানোর জন্যেও সৃজনশীল ভাবনার দরকার আছে। ইন্টারনেট আসার আগেও এমনটি অনেকেই ভেবেছেন। যেমন, ইন্টারনেট অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগ শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই কোনো কোনো বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য ল্যাঙ্গুয়েজেস এন্ড কালচারস অব সাউথ এশিয়া ফ্যাকাল্টি’তে সংস্কৃত, উর্দু, তামিল, পাঞ্জাবি প্রভৃতি দক্ষিণ এশীয় ভাষাগুলোর পাশাপাশি বাংলা ভাষায় শিক্ষালাভের ব্যবস্থাও প্রচলিত ছিল এবং এখনও সেটা রয়েছে ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে। বিদেশের এলিমেন্টারি ক্লাসগুলোর সিলেবাসে বাংলা বর্ণমালা, বাংলা শব্দ তালিকার বেসিক শব্দাবলি আর অতি প্রয়োজনীয় ব্যাকরণ বিষয়ক কোর্স সংযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। যারা ইন্টারমিডিয়েট অথবা আরো অ্যাডভান্সড ডিগ্রি অর্জন করতে উৎসুক, তাদের সিলেবাস কমপ্লিট করার জন্য রয়েছে উনিশ ও কুড়ি শতকের বাংলা ক্লাসিক সাহিত্যের সঙ্গে সমসাময়িক বিষয়ের ওপরে বিভিন্ন গবেষণামূলক কোর্স। ক্লাসিক সাহিত্য রচয়িতাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, বিভূতিভূষণ, তারাশংকর, শরৎচন্দ্রসহ স্বল্প পরিচিত কিন্তু উন্নতমানের কিছুসংখ্যক কবিসাহিত্যিকরা।

ইউরোপ, আমেরিকার আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলা ভাষা শিক্ষালাভে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের যে সীমিত সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতি সেসব প্রতিষ্ঠানে লক্ষ্য করা যায়, দুঃখের কথা হলো, তাদের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অবাঙালি। প্রবাসী বাঙালির দ্বিতীয় কিংবা পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে পূর্বপুরুষদের ভাষার প্রতি অতীত কিংবা বর্তমানে সেভাবে কখনই সশ্রদ্ধ ঔৎসুক্য অথবা আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়নি, এমন নয়। তবে যে হারে সেটা হওয়া উচিত ছিল, সেটা হয় নি। ইন্টারনেট ও সাইবার জগতেও প্রবাসী প্রজন্ম ভাষা-সংস্কৃতির জন্য জোর কদমে এগিয়ে আসছে না। বরং ঢাকা, কলকাতা থেকেই বাংলাকে নিয়ে কিছু কিছু কাজ হচ্ছে ভার্চুয়াল লাইফে।

সাইবার স্পেসের বাইরে তাকালে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপ-আমেরিকার যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘ডিপার্টমেন্ট অফ দ্য ল্যাঙ্গুয়েজেস এন্ড কালচারস অফ সাউথ এশিয়া ফ্যাকাল্টি’ রয়েছে, তারা বিশ্বখ্যাত। যেমন, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো, ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ উইসকন্সিন (যুক্তরাষ্ট্র)। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, ভ্যাংকুভার (কানাডা)। ইউনিভার্সিট অফ লন্ডন, ইউনিভার্সিটি অফ কেম্ব্রিজ, ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড, স্কুল অব আফ্রিকান অ্যান্ড ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ-সোয়াস (যুক্তরাজ্য)। জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াতেও ক্রমবর্ধমান হারে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সেন্টার হচ্ছে। কোথাও কোথাও বাংলাদেশ স্টাডিজ চালু হওয়ার কথাও জানা যাচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে বাঙালির চেয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বের হচ্ছে বেশি।

ফলে বাংলাদেশের সমাজ, রাজনীতি, নৃতত্ত্ব, ভাষা, সংস্কৃতিসহ সমুদয় বিষয়ই চর্চা ও গবেষণা হওয়ার সুযোগ ঘটেছে, যা স্বল্প সংখ্যক বিদেশি কাজে লাগালেও প্রবাসী বাঙালি প্রজন্ম পুরোপুরি গ্রহণ করছে না। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রবাসীর অংশগ্রহণ আসলেই আশাব্যাঞ্জক নয়।

পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকৃষ্ট নিদর্শন বিদেশি ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বাইরে বিভিন্ন ব্যক্তিগত ও সংস্থার মাধ্যমে তথ্য-যোগাযোগ ব্যবস্থার নানাবিধ সুযোগ সাইবার জগতে বাংলা সংক্রান্ত তথ্যের বিশাল ভাণ্ডার সাজিয়ে দিচ্ছে। এতো কিছু হলেও সেখানে প্রবাসী বাংলা ভাষীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বাড়ছে না।

বাংলা ভাষীদের অংশগ্রহণ ও সংযুক্তি না বাড়লে বিশ্বায়নের বিরাট বড় দুনিয়ায় বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে কে? বিশ্বের মোট বাঙালির যে ২০-৩০% ভাগ সদস্য প্রবাসে জীবন-যাপন করেন, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রশ্নে তারা নিশ্চুপ ও নিস্পৃহ হলে তা কেবল বেদনাবহই নয়, চরম দুঃখজনকও বটে।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;