অভিযোজনের প্রবল শক্তিতে দীপ্ত বাংলা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
বাংলা কেবল বাংলাভাষী মানুষের মাতৃভাষা নয়, বিশ্বের বহু দেশে ব্যবহারিক জীবনে কাজের ভাষায় পরিণত হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে দৈনন্দিন কাজ-কর্মে বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোজনের প্রবল শক্তিতে দীপ্ত বাংলা বিভিন্ন ভাষার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ও মিলেমিশে টিকে থেকে সামনে এগিয়ে চলার প্রমাণ দিচ্ছে। 
 
আশাবাদী একটি খবরের বিবরণে জানা যাচ্ছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ভাষা হিসাবে বাংলা শেখার দরকার পড়ছে সেদেশে নাগরিকদের। ক্রমবর্ধমান বাংলাভাষী মানুষের কারণেই এমনটি প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চল, এমনকি, ইংল্যান্ড বা কানাডার কিছু এলাকার প্রধান ভাষা বাংলা। আফ্রিকার একটি দেশে বাংলা সম্মানের ভাষা। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলোর হাসপাতাল পাড়ায় বাংলাদেশিদের প্রচণ্ড ভিড়ে বাংলা জানা কর্মচারীদের শুধু কাজের ক্ষেত্রই বাড়েনি, কণ্নড়, তামিল, তেলেগু ভাষার মানুষও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজনে অল্প-বিস্তর বাংলা শিখছেন।
 
দেখা যাচ্ছে, বাংলাভাষী মানুষ বিশ্বায়নের এ যুগে যেখানেই সমাজবদ্ধ হয়েছেন, সেখানেই মুখরিত হয়েছে রক্ত আর আবেগ মথিত বাংলায়। এভাবেই অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলা ভাষা। বাংলাদেশে ও বাংলাভাষী অঞ্চলের বাইরেও প্রয়োজনের ভাষা হিসাবে ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। 
  
লক্ষ করে এটাও দেখা গেছে যে, প্রবাসের মাটিতে বাংলা ভাষার চর্চা কেবল বাঙালি নরগোষ্ঠীর মানুষ নন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাহচর্যে ও বাণিজ্যিক প্রয়োজনে পশ্চিমা বিশ্বের অথবা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য ভাষাভাষীর অবাঙালিরাও অতীতকাল থেকে করে চলেছেন। কলকাতা বা ঢাকার মাড়োয়ারির মুখে বাংলা শুনে কে বলবে যে, লোকটির মাতৃভাষা বাংলা নয়। বাংলাদেশে বা বাংলাভাষী অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে ঠিকই তারা সূচারু রূপে বাংলাকে রপ্ত করেছেন।
 
ব্যবহারিক প্রয়োজন বা বাণিজ্যিক কারণে বাংলা শেখার প্রবণতা বিদেশিদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে, এ খুবই আশার কথা। বেঙ্গালুরের হাসপাতালে দক্ষিণ বা উত্তর ভারতের কর্মীরা দিব্যি বাংলা বলছেন এজন্য যে, তাদের রোগিদের সিংহভাগই বাংলাদেশি। শহরের হোটেল, দোকান, বাজারেও টুকটাক বাংলা জানা লোকের দেখা পাওয়া গেছে। আরব দেশে এতো বেশি বাংলাদেশি থাকেন যে, সেখানে ভাষাটি বেশ ছড়িয়ে গেছে। কাজের মতো বাংলা অনেককেই বলতে শুনেছি। ভারতীয় বা পাকিস্তানি ড্রাইভার বা দোকানিরা তো বেশ বাংলা বলতে পারেন।
 
তবে দুঃখে বিষয় হলো, বরং প্রমিত মাতৃভাষা শিক্ষার প্রতি প্রবাসী ইমিগ্রান্ট বাংলাভাষীদের আগ্রহ তুলনামূলক কম। তারা নিজেদের আঞ্চলিক কথ্যভাষাটিকেই চর্চা করতে পছন্দ করেন, যা তাদের নিজস্ব জেলার বাইরের মানুষের কাছে অনেক সময় বোধগম্যও হয় না। বিলেতে ও মধ্যপ্রাচ্যে এমন অনেকেই আছেন, যারা সমগ্র বাংলাভাষীদের সঙ্গে যোগাযোগের সমস্যায় আক্রান্ত। 
 
একইভাবে অনেকেই পুরনো ধ্যান-ধারণায় নিজেদের উত্তরাধিকারদের বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের উৎসাহ ও আন্তরিকতা দেখাতে পারেন না। তারা বরং চেষ্টা করেন, আঞ্চলিক ভাষাটিকেই চর্চার অংশ হিসেবে ধরে রাখতে। একই ভাষার অঞ্চলে অঞ্চলে প্রভেদ থাকবেই এবং সেটাকে ঘুচিয়ে ফেলাও সম্ভব নয়। এই বৈচিত্র্য বজায় রেখেই প্রমিত বা মান্য ভাষাটিতে আয়ত্ত করারও যে দরকার আছে, এই বোধোদয় সৃষ্টি হওয়া খুবই জরুরি। 
 
এতো কিছুর পরেও আশার কথা হলো প্রবাসে বাংলা চর্চার গণ্ডি বাড়ছে। প্রবাসীদের মধ্যে মাতৃভাষা বাংলা চর্চার বিদগ্ধ চেতনা তখন থেকেই সক্রিয় হতে শুরু করে যখন বিশ্বায়ন যুগের সভ্যতায় বিপুল ও বিশাল সংখ্যক বাংলাভাষী মানবগোষ্ঠী পৃথিবীর নানা প্রান্তে জড়ো হন এবং আধুনিক প্রযুক্তি সেই সভ্যতার সঙ্গে নিজের সংযুক্তিসাধন সম্পন্ন করে।
 
এমনই বাস্তব প্রেক্ষিতে প্রবাসে নানা অঞ্চলের বাংলাভাষীর মধ্যে যোগসূত্র রচনার জন্য প্রমিক বাংলার গুরুত্ব বাড়তে থাকে।  কারণ, মাতৃভাষা চর্চার প্রয়োজনে দরকার হয় এমন একটি সুষ্ঠু পারিপার্শ্বিকতা, যার প্রভাবে ভাষা চর্চার আবহ তৈরি হয়। একুশ শতকের প্রযুক্তি-সভ্যতা এবং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন সৃষ্টি করে দিয়েছে এমনই আবহ ও প্রয়োজনীয়তা। 
 
পণ্ডিতরা জানিয়েছেন যে, পৃথিবী জুড়ে বিস্তীর্ণ বিশ্বায়ন ও হাইটেক সভ্যতা প্রসারিত হওয়ার সহস্র বছর পূর্বেও প্রবাসে মাতৃভাষা চর্চা ছিল। নানা পরিস্থিতির কারণেই তা চলছিল। যদিও প্রতিটি মাতৃভাষার জন্ম সুনির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমানা ও সাংস্কৃতিক অঙনে, তথাপি সে ভাষার একটি গতিশীলতা আছে। মাতৃভূমির বাইরে যেখানেই কোনও ভাষা গোষ্ঠীর মানুষ একত্রিত হন, সেখানেই ভাষাটি একটি ভাষিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল রচনা করতে সক্ষম হয়।
 
অতএব দেশে বা প্রবাসে, যেখানেই মানবশিশু জন্মগ্রহণ করুক না কেন, মাতৃভাষার মাধ্যমেই তার সেতুসংযোগ রচিত হয় নিজস্ব মানুষ, যথা পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজন, সমাজসংস্কৃতি, ব্যবহারিক জীবনের বিবিধ রীতিনীতি ও ধর্মাচারের সঙ্গে।  মানসিক গঠনেও সেই ভাষিক ঐতিহ্য আজীবন বজায় থাকে তার মধ্যে। এ কারণেই মানুষ প্রবাস জীবনের কঠিন পরিস্থিতিতেও মাতৃভাষা পরিত্যাগ করতে চায় না। চাপের পরেও ব্যক্তিগত জীবনে হলেও ভাষাটিকে ধরে রাখে। 
 
অতীতে রাজভাষা গ্রহণ করার একটি বাধ্যবাদকতা ছিল বিজিত জাতির মানুষের জন্য। এভাবেই বাংলাদেশ অঞ্চল সংস্কৃত, ফারসি, ইংরেজিকে পেয়েছে। রাজশক্তির জোরে ভাষিক আধিপত্যের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রয়োজনে বাণিজ্য উপলক্ষে দেশান্তরে গিয়ে বণিক সওদাগররাও করেছেন সেটা। আবার ধর্ম প্রচারকরাও করেছেন ধর্ম প্রচারের প্রয়োজন সূত্রে। এভাবেই এক ভাষার শব্দ আরেক ভাষায় ঠাঁই পেয়েছে। ভাষা ছড়িয়ে গেছে ভাষাভাষী মানুষের মাধ্যমে এবং আদি ভাষাটি মুছে যায় নি। 
 
ইতিহাস বলছে, অপ্রতিরোধ্য বাংলা ভাষা অতীতে নানা ভাষার আগ্রসনে মুছে যায়নি। বিশ্বায়নের তাণ্ডবেও বিপথগামী হবে না। বরং অতীতে যেমন সংস্কৃত, আরবি, ফার্সি, ইংরেজি, তুর্কি শব্দ গ্রহণ করেছে নিজের কাঠামোতে, বর্তমানেও বহু শব্দ গ্রহণ করবে। কিন্তু নিজের মৌলিক সত্ত্বা ও স্বাতন্ত্র্য মোটেও নষ্ট করবে না। বরং যেখানেই বাঙালি যাবে, সেখানেই ছড়িয়ে দেবে বাংলা ভাষার অম্লান বর্ণমালা। এখানেই নিহিত রয়েছে বাংলা ভাষার অপ্রতিরোধ্য শক্তিমত্তা ও আত্মনির্ভরশীলতা, যা এ ভাষাকে বেঁচে থাকতে ও ক্রমবর্ধিষ্ণু হতে নিত্য প্রাণিত করছে।
   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;