সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অটোচালক সুমনের প্রচেষ্টা
‘ড্রাইভার হোক অভিজ্ঞ, পথচারী হোক সচেতন, সকলের সমন্বয়ে সড়ক দুর্ঘটনার অবসান’ এই স্লোগানের মাধ্যমে চালক ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন অটোশ্রমিক আব্দুল্লাহ-আল-সুমন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রংপুর মহানগরীসহ আশপাশের বিভিন্ন মহাসড়কে ট্রাফিক আইন মেনে চলাসহ সচেতনতা মূলক তথ্য সম্বলিত লিফলেট বিলি করেন তিনি।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অটোচালক সুমনের এই প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। অন্যদিকে সচেতন মহলও বলছেন, সকলেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন জানুন এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলুন।
শুক্রবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে রংপুরের ব্যস্ততম সড়ক জাহাজ কোম্পানির মোড় এলাকায় লিফলেট বিতরণ করতে দেখা যায় সুমনকে। পথচারীদের মাঝে বিলি করা ওই লিফলেটে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ৫০টির বেশি পরামর্শমূলক মতামত তুলে ধরা হয়েছে।
এ ধরনের প্রচারণার ব্যাপারে অটোচালক আব্দুল্লাহ-আল-সুমন জানান, এক বছর আগে সে দুটি সড়ক দুর্ঘটনা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। এর মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় রাস্তা পারাপারের সময় এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা গেছে। আর অন্য দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল চালকের ঘুমানোর কারণে। ওই দুর্ঘটনায় তার পরিচিত একজন পঙ্গু হয়ে যায়। এ দুটি ঘটনা তাকে মর্মাহত করে। সচেতনতার অভাব ও ট্রাফিক আইন না মেনে চলায় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন সুমন। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নিজের সাধ্যমতো সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনেরহাট এলাকার মৃত মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ-আল-সুমন। পাঁচ ভাই এক বোনের পরিবারে মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। অষ্টম শ্রেণিতেই থামতে হয় তাকে। অটো চালানোর ফাঁকে ফাঁকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন এক বছর ধরে।
সুমন বলেন, ‘সমাজের সবাই সচেতন হলে, অনেক দুর্ঘটনাই রোধ করা সম্ভব। আমার লিফলেটে ৫০টির বেশি মতামত রয়েছে। এগুলো মানলে সড়ক দুর্ঘটনা জিরোতে মেনে আসবে।’
সুমন তার এই প্রচারণা পত্রে মানুষকে সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টার সঙ্গে কিছু দাবি তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো হল: সড়ক জুড়ে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, ভাঙা সড়ক দ্রুত মেরামত করা। সড়কের পাশে ও মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং স্প্রিড ব্রেকার থাকলে সংকেতের ব্যবস্থা করা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে টিভিতে, পত্রিকায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাটে বাজারে প্রচারণা এবং ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ।
সচেতনতামূলক লিফলেটে ড্রাইভারদের উদ্দেশে বলা হয়েছে- গাড়ি সড়কে নামানোর আগে ব্রেক, হর্ন, সাইডলাইট, হেড লাইট, লুকিং গ্লাস দেখে নেয়া। চোখে ঘুম নিয়ে গাড়ি না চালানো। বিভিন্ন মোড় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে গাড়ি ধীরে চালানো। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং না করা। মেনে চলতে হবে ট্রাফিক আইন। ওভারটেকিং না করা। চলন্ত অবস্থায় মোবাইলে কথা না বলা।
ছাত্রছাত্রী ও পথচারীদের উদ্দেশে বলা হয়- গল্প করতে করতে সড়ক পার না হওয়া ও সড়কে ইটের টুকরাসহ বিপদজনক কিছু পড়ে থাকলে তা ফেলে দেয়া। এয়ারফোন কানে দিয়ে সড়কে না হাঁটা। ছোট ছেলে মেয়ে, প্রতিবন্ধী এবং অন্ধ ব্যক্তিকে সড়ক পারাপারে সহযোগিতা করা। ওভারব্রিজ থাকলে তা ব্যবহার করা।
যাত্রীদের উদ্দেশে বলা হয়- গাড়িতে ওঠার পর কাপড় দেখে নিতে হবে যাতে চাকায় না আটকায়। অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষকে বসার সুযোগ করে দেয়া। চলন্ত অবস্থায় ড্রাইভারের সঙ্গে কথা না বলা। ড্রাইভার বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালালে সতর্ক করা। গাড়িতে ধুমপান না করা।
এদিকে অটোচালক সুমনের এমন প্রচারণাকে স্বাগত জানিয়ে তরুণ সংগঠক তানভীর হোসেন আশরাফী বলেন, একজন অটো চালক সামান্য আয় করে। সারাদিন যাত্রী ওঠা-নামা করাতে তাকে কষ্ট করতে হয়। তারপরও যে এই প্রচারণা চালাচ্ছেন, এর জন্য তাকে অভিনন্দন।
অন্যদিকে ‘নো হেলমেট-নো পেট্রল’ কার্যক্রমের উদ্যোক্তা রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ জানান, মানুষ সচেতন হচ্ছে, এটি তারই অংশ। সুমনের মতো সবাই সচেতন হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।