জলবায়ু মোকাবেলায় বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় বাজেটে একটি নিদিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রতিবছর জলবায়ু বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে একশনএইড বাংলাদেশ এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভলপমেন্ট এর যৌথ আয়োজনে ‘জাতীয় বাজেট ২০১৯-২০: জলবায়ু রেজিলিয়েন্স অর্জনের পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ফারাহ্ কবির বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা বৃদ্ধি না হলে কাঙ্খিত এই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিনিয়োগ এখনো ৯ শতাংশের নিচে এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় বরাদ্দ অনেক কম। বাংলাদেশের মত দুর্যোগপ্রবণ দেশে এই বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। প্রতিবছর বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে সমন্বয়হীনতা একটি বড় সমস্যা। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ৮০-৮৫ শতাংশ। তারা জলবায়ু পরিবর্তনে কি প্রভাব ফেলছে তা দেখতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের দেশের অভিবাসিদের এই অভিবাসনকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষতা বৃদ্ধি পেলেও অভ্যন্তরীণ অভিবাসন নিয়ে সরকারকে অবশ্যই সুচিন্তিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এসডিজি লক্ষ্য পূরণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভলপমেন্ট এর পরিচালক ড. সলিমুল হক বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ ও দুর্যোগ মোকাবেলায়, বাংলাদেশকে ২০৩০ এর মধ্যে রেজিলিয়েন্ট দেশ করতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা এবং বৃহত্তর বিনিয়োগ প্রয়োজন। সেজন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ও শিক্ষাখাতে আরো বিনিয়োগ করতে হবে। বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার জরুরি।
মুল প্রবন্ধে বলা হয়, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলাফল ইতোমধ্যেই চরম আবহাওয়া প্যাটার্ন ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ১.৫ এবং ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে পৃথিবীতে যে জীবন বিপর্যয় ঘটবে তার তুলনা তুলে ধরে বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি নিয়ে আইপিসিসি’র বিশেষ রিপোর্টটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা তাই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা পৃথিবীর সামনে একটি চ্যালেঞ্জ। তাই একদিকে যেমন কৃষি, জ্বালানি, যানবাহন এবং কলকারখানাসহ বিভিন্ন খাতে তাই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন তেমনি নীতিমালা এবং উন্নয়ন কাঠামোতে জলবায়ু উদ্যোগ অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক মিজানুর রহমান বিজয়, ব্র্যাক-এর ইমাজের্ন্সি প্রিপায়েরডনেস এন্ড রেসপন্স প্রোগ্রামের প্রধান শশাঙ্ক সাদী। মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন একশনএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দা লামিয়া হোসেন।
উল্লেখ্য, জলবায়ু সংবেদনশীল বাজেট এর ২য় রিপোর্ট ২০টি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের জলবায়ু প্রাসঙ্গিকতাকে নির্দেশ করে। এই ২০টি মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের ক্রমবর্ধমান বাজেট বরাদ্দ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মোট জাতীয় বাজেটের ৪৫.৮৪ শতাংশ, এবং এই বরাদ্দের ৮.৮২ শতাংশ জলবায়ু সম্পর্কিত। অর্থের দিক থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জলবায়ু সম্পর্কিত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০,১১৩.৩৯ কোটি টাকা থেকে ১৮,৯৪৮.৭৬ কোটি টাকা।