হত্যার দায় স্বীকারের ৫ বছর পর জানা গেল ভিকটিম জীবিত
নির্যাতন সইতে না পেরে আর মিথ্যা হত্যা মামলা থেকে বাবাকে বাঁচাতে উপায়ন্তর না দেখে হত্যার দায় স্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেন। তিন বছর জেলও খেটেছেন। পাঁচ বছর ধরে মিথ্যা মামলায় লড়াই করে চলেছেন। এ মামলার রায় আর ক’দিন পরই। এমন সময় জানতে পারলেন, যে আবু সাঈদ (১০) হত্যা মামলায় তারা নির্যাতন সইলেন, জেল খাটলেন, সে আবু সাঈদ বেঁচে আছে।
২০১৪ সালে জনৈক আজম তার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে আবু সাঈদ হারিয়ে গেছে মর্মে রাজধানীর হাজারীবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ছেলেকে পাননি উল্লেখ করে পরে তিনি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও মুক্তিপণের মামলা দায়ের করেন।
আজম বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের বাসিন্দা। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে তিনি রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন বটতলা মাজার রোডে বসবাস করতেন।
এ মামলায় ছয় মাস জেলখাটা আসামি সোনিয়া আক্তার (২৫) সাংবাদিকদের জানান, ভিকটিম আবু সাঈদকে তারা চেনেন না। অথচ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রুহুল আমিন তাকে, তার ভাই আফজাল, বাবা এবং প্রতিবেশী সাইফুলকে এক সঙ্গে গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে আনেন।
তার দাবি, ঢাকার ডিবি কার্যালয়ে প্রায় আট দিন আটক রেখে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বাবার সামনে তাদের নির্যাতন করা হয়। হত্যার কথা স্বীকার না করলে তার বাবাকে এ মামলায় জড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়। অকথ্য নির্যাতন সইতে না পেরে ও বাবাকে বাঁচাতে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ মামলায় বিভিন্ন সময় গ্রেফতার করা হয় আসগর আলী, মিলন, মো. সাইফুল ইসলাম হাওলাদার, সোনিয়া আক্তার, আফজাল হোসেন ও মো. শাহীনকে। তারা কেউ ছয় মাস, কেউ দুই বছর আবার কেউ তিন বছর জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেয়ে গত পাঁচ বছর ধরে মামলা লড়ছেন।
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে সাইফুল বলেছিলেন, ‘ভিকটিম আবু সাঈদকে তারা অপহরণ করে হত্যার পর মরদেহ বরিশালগামী লঞ্চ থেকে নদীতে ফেলে দেন।’
২০১৫ সালের ১৫ জুন আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সেই সময়ের এসআই রুহুল আমিন। আসগর আলী ও মিলনকে বাদ দিয়ে অপর চারজনের নামে চার্জশিট দাখিল করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৫ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্কের পর্যায়ে রয়েছে। যুক্তিতর্ক শেষেই সাধারণত রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়।
সোনিয়া জানান, মামলার এ পর্যায়ে আসামিরা লোকমুখে জানতে পারেন যে ভিকটিম আবু সাঈদ বেঁচে আছে। কিন্তু আবু সাঈদের ঠিকানা জানা যাচ্ছিল না। তারা মামলার বাদী আজমের সঙ্গে আপোষ মীমাংসার ফাঁদ পাতেন। বাদীকে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
ঢাকার পল্লবী থানাধীন এক বাসায় ভিকটিম আবু সাঈদকে এনে কাগজে স্বাক্ষর করে আরও দুই লাখ টাকা নিয়ে যেতে বলা হয় আজমকে। এত টাকার লোভ সামলাতে পারেননি আজম। গত ২৯ আগস্ট রাতে তিনি ছেলে (ভিকটিম) আবু সাঈদ, স্ত্রী মাহিনুর বেগম ও ভগ্নিপতি আব্দুল জব্বারকে নিয়ে ঢাকা এলে তাদের পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয়।
জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের বিষয়টি জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিনের মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানান, জোর করে বা নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়নি। আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা দোষ স্বীকার করেন এবং আদালতেও একইভাবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।