রিশার কথা উঠলেই কেঁদে ওঠেন বাবা-মা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা
সুরাইয়া আক্তার রিশা, ছবি: সংগৃহীত

সুরাইয়া আক্তার রিশা, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

‘রিশা (১৪) অনেক লক্ষ্মী মেয়ে ছিল আমার। লেখাপড়ায়ও খুব ভালো ছিল। তার হাতের লেখা ও ড্রইং খুব সুন্দর ছিল। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করত। মেয়ে আমার বড় হয়ে ডাক্তার হতে চেয়েছিল। কিন্তু খুনি আমার মেয়েকে বাঁচতে দিল না। আমার মেয়েতো আর ফিরে পাব না। কিন্তু খুনির ফাঁসি চাই। যাতে আর কারও মাকে-বাবাকে সন্তান হারাতে না হয়।’

বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন রিশার মা তানিয়া হোসেন। মেয়ে রিশা হত্যা মামলার বাদী তিনি।

তানিয়া হোসেন বলেন, ‘যে দোকানে আমরা জামাকাপড় বানাতাম, সে দোকানে কাজ করত ওবায়দুল। দোকানের মানি রিসিট থেকে মোবাইল ফোন নম্বর নিয়ে একদিন ফোন দেয় ওবায়দুল। আমার মেয়ে ফোন ধরলে তাকে সে ভালোবাসার কথা বলে। আমার মেয়ে তা সরাসরি প্রত্যাখান করে। এরপরই সে আমার মেয়েকে খুনের পরিকল্পনা করে। আমি ওই খুনি ওবায়দুলের ফাঁসি চাই।’

রিশার বাবা রমজান হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘প্রতিদিন কাজ শেষে বাসায় ফিরলে রিশা এখন আর বাবা বলে দৌড়ে আসে না। তার কথা মনে হলে বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। আমার মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই। তার বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।’

তিনিও বার্তাটোয়েন্টিফোরের সঙ্গে আলাপচারিতায় কেঁদে ফেলেন।

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ছিল সুরাইয়া আক্তার রিশা। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিল সে। তার ছোট বোনের নাম রোদেলা আক্তার তিশা। সে বর্তমানে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। আর ভাইটি তৌহিদুল হোসেন রনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে।

২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট দুপুর সোয়া ১২টায় কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে ফুট ওভারব্রিজের ওপর পেটে ছুরিকাঘাত করা হয় রিশাকে। ২৮ আগস্ট সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিক্যেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সে।

ছুরিকাঘাতের দিনই রিশার মা তানিয়া হোসেন বাদী হয়ে রাজধানীর রমনা থানায় ওবায়দুল হককে আসামি করে হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। ১ সেপ্টেম্বর আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলায় যা আছে:

তানিয়া হোসেন মামলায় উল্লেখ করেন, হত্যাকাণ্ডের পাঁচ/ছয় মাস আগে ইস্টার্ন মল্লিকা মার্কেটের বৈশাখী টেইলার্সে আমার মেয়ের পোশাক বানাতে দেই। সেখান থেকে ফোন নম্বর নিয়ে ওবায়দুল আমার মেয়েকে বিরক্ত করত। আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করত। আমার মেয়ে প্রেমে রাজি না হওয়ায় স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনের ‍ফুট ওভারব্রিজের ওপর আমার মেয়েকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে ওবায়দুল।

প্রথমে মামলাটি হত্যা চেষ্টার মামলা হিসাবে রেকর্ড হয়। কিন্তু রিশা ২৮ আগস্ট মারা গেলে তা হত্যা মামলায় রূপ নেয়।

মারা যাবার আগে রিশা ২৫ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের চিকিৎসকের কাছে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি (Dying Declaration) দিয়েছিল।

তদন্ত:

মামলার পরপরই ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রমনা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোশারফ হোসেনকে। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি মামলার আলামত হিসেবে ভিকটিমের রক্তমাখা কাপড়-চোপড় সংগ্রহ করেন, মামলার বাদী ও একজন সাক্ষির জবানবন্দি নেন এবং রিশার মৃত্যুকালীন জবানবন্দি সংগ্রহ করেন। এছাড়া আসামির কর্মস্থল বৈশাখী টেইলার্স থেকে তার জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন এবং স্থায়ী ঠিকানা মোতাবেক অভিযান চালিয়ে আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। এরপর ২৮ আগস্ট রিশা হাসপাতালে মারা গেলে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন।

রিশা মারা যাবার পর হত্যা চেষ্টা মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নিলে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় রমনা থানার পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আলী হোসেনকে।

তিনি মামলার সাক্ষিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। আসামি ওবায়দুলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন। আসামির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি জব্দ করেন। দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নিতে আসামিকে আদালতে পাঠান। এরপর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করে ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর ওবায়দুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

আসামি স্বীকারোক্তিতে যা বলেছিলেন:

২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর আসামি ওবায়দুল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. আহসান হাবীবের কাছে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির সার সংক্ষেপ এ রকম-

‘দোকানের টাকার রশিদ থেকে নম্বর নিয়ে রিশাকে প্রেমের প্রস্তাব দেই। এরপর রিশা আমার ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। রিশাকে ফোন দিলে তার আম্মা ফোন ধরে। রিশাকে ভালোবাসার কথা তাকে আমি বলি। তিনি আমাকে গালিগালাজ করেন। এরপর তারা আমার মোবাইল নম্বর ব্লক করে দেন।’

ওবায়দুল বলেন, ‘রিশার সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে বেশ কয়েকবার তার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের সামনে যাই। কিন্তু কথা বলতে ব্যর্থ হই। এর মধ্যে একদিন তার সঙ্গে জোর করে কথা বলতে চাইলে রিশা আমাকে প্রত্যাখান করে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি যে অন্য একটি ছেলের সঙ্গে রিশার সম্পর্ক আছে। এ কথা জানার পর আমার ক্ষোভ হয়।’

তার না হলে রিশাকে কারও হতে দেবে না এমন পরিকল্পনায় তাকে খুনের পরিকল্পনা করেন ওবায়দুল।

ওবায়দুল জবানবন্দিতে বলেন, ‘রিশা যাতে অন্য কোনো ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করতে না পারে, সেজন্য আমি তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করি। গত ২২ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার সময় আমি বাংলাদেশ হার্ডওয়্যার অ্যান্ড পেইন্ট সাপ্লাই নামক দোকান থেকে ১২০ টাকা দিয়ে একটি ছুরি কিনি। রিশাকে মারার জন্য গত ২৪ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টার সময় আমি ছুরিসহ কাকরাইলের উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। বেলা আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে রিশা কয়েকজন সহপাঠীসহ স্কুল থেকে বের হয়ে ফুটওভার ব্রিজের ওপর উঠলে আমিও উঠি।’

আক্রমণের বর্ণনা দিয়ে ওবায়দুল বলেন, ‘এরপর আমি রিশার কাছে গিয়ে আমার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে রিশার পেটের বাম পাশে সজোরে আঘাত করে ছুরিসহ ফুটওভার ব্রিজের নিচে নেমে দৌড়ে ব্যাটারি গলি দিয়ে সেগুনবাগিচা রাজস্ব ভবনের সামনে যাই। রাজস্ব ভবনের সামনে রাস্তার ফুটপাতে ইট-সুরকি ও ময়লার মধ্যে ছুরিটি ফেলে দিয়ে পল্টন হয়ে গুলিস্তান যাই। সেখান থেকে সদরঘাট গিয়ে নদী পার হয়ে কেরানীগঞ্জে চাচাতো ভাই জসিমের কাছে যাই। ওই দিন বিকেলে কেরাণীগঞ্জ থেকে কোনাপাড়ায় আমার পরিচিত টেইলার মাস্টার সুনীল ও গৌর হরিদের কাছে গিয়ে এক হাজার টাকা নেই। তারপর আমি শ্যামলী গিয়ে হানিফ পরিবহনে করে বাড়িতে যাই। এরপর টিভিতে রিশা মারা যাবার খবর শুনে আমি নীলফামারীতে আমার বেয়াই খুশবুলের কাছে যাই। পরে রমনা থানা পুলিশ গিয়ে আমাকে গ্রেফতার করে রমনা থানায় নিয়ে আসে।’

আইনজীবীর বক্তব্য:

মামলাটি বর্তমানে কোন অবস্থায় আছে জানতে চাইলে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফাহমিদা আক্তার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়েছে। চার্জশিটের ২৬ জন সাক্ষির মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তিতর্ক শুনবেন আদালত। এরপর রায়ের জন্য দিন ঠিক করবেন। আমরা বাদিপক্ষ মনে করি আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতের রায়ে আমরা ন্যায় বিচার পাব।’

আসামি ওবায়দুলের আইনজীবী ফারুক আহমেদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আসামির সঙ্গে রিশার সম্পর্ক থাকার কথা বাদীপক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। মামলায় জব্দ করা আসামির মোবাইল ফোন আমরা তদন্ত কর্মকর্তার কাছে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি দেননি। যুক্তিতর্কের দিন আমরা ফৌজদারি কার্যবিধির ৯৪ ধারায় বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মাধ্যমে আসামির সঙ্গে ভিকটিমের এসএমএস যোগাযোগের কপি চাইব। আশা করছি, এতে আসামির ন্যায় বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে।’

   

সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরত বৃদ্ধা হত্যা: ১ জনের মৃত্যুদণ্ড



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরত বৃদ্ধা হত্যা: ১ জনের মৃত্যুদণ্ড

সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরত বৃদ্ধা হত্যা: ১ জনের মৃত্যুদণ্ড

  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটের ওসমানীনগরে যুক্তরাজ্য ফেরত বৃদ্ধা রহিমা বেগম ওরফে আমিনা বেগম (৬০) হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা প্রথম আদালতের বিচারক জজ মো.ইব্রাহিম মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল জলিল ওরফে কালু একই উপজেলার নগরীকাপন গ্রামের মৃত আব্দুল কাছিমের ছেলে। পাশাপাশি রায়ে আসামিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন- সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন ।

মামলার সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার এক বছর আগে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন রহিমা বেগম ওরফে আমিনা বেগম। সন্তানরা যুক্তরাজ্যে বসবাস করায় তিনি ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজার নিজ বাসায় একা থাকতেন। তার ভাই মামলার বাদী আব্দুল কাদির ও আব্দুল খালিক বোনের দেখাশোনা করতেন। ২০২০ সালের ২৮ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে রহিমা বেগম ওরফে আমিনা বেগমের সঙ্গে সর্বশেষ ফোনে কথা বলেন তার ভাই আব্দুল কাদির। এরপর ফোন বন্ধ পেয়ে ৩০ জুলাই বাদীর ছোট ভাই আব্দুল খালিক তার ছেলে আব্দুস সামাদকে পাঠালে ঘরের কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ দেখে বাড়িতে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে না পেয়ে ফের রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় গিয়ে কলিং বেল দিলেও কোনো সাড়া শব্দ মেলেনি। ঘটনাটি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ছেলেমেয়েদের জানানোর হয়। এরপর থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে বাসার ভেতরে ডাইনিং রুমের বাথরুমে গলাকাটা ও মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় রহিমা বেগম ওরফে আমিনা বেগমের মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশের ধারণা, ওই বছরের ২৮ জুলাই থেকে বিকেল ৩টা থেকে ৩০ জুলাই সকাল সাড়ে ১১টার মধ্যে যেকোনো সময় তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই ওসমানীনগরের ছোট বিরাই গ্রামের মৃত মন্তাজ উল্লাহর ছেলে আব্দুল কাদির বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে এক আগস্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্তকালে পুলিশ নিহতের পার্শ্ববর্তী বাসার জলিল ওরফে কালু মিয়াকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী নারীর লুণ্ঠিত মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে গ্রেফতার করে। পরে স্বেচ্ছায় তিনি আদালতে হত্যায় নিজেকে জড়িয়ে জবানবন্দি দেয়। তার দেখানো মতে, বসতঘর থেকে হত্যার আলামত সংগ্রহ করে পুলিশ।

এ ঘটনায় জলিল ওরফে কালুকে অভিযুক্ত করে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম।

মামলাটি এই আদালতে বিচারের জন্য ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করে আসামির নামে বিচারক কার্য শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানিতে ২১ সাক্ষীর ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন।

;

যৌন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মালিককে খুন, যুবকের ৬ বছর কারাদণ্ড



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁওয়ে যৌন নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে মালিককে খুনের ঘটনায় কর্মচারীকে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামের চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঁঞা এ রায় দেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ।

দণ্ডিত মো. ইউনুছ (৩৫) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মধ্যম সরফভাটা গ্রামের বাসিন্দা।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১২ জুন নগরীর চান্দগাঁও বহদ্দারহাট এলাকায় হক মার্কেটে নিজের সেলাই মেশিন ওয়ার্কশপে খুন হন কামাল উদ্দিন। পরদিন সকালে কামালের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কামাল উদ্দিনের ছেলে মো. সাদেক চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে কর্মচারী ইউনুছকে গ্রেফতার করে। ইউনুছ খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে ইউনুছ জানান, মালিক কামাল তাকে নিয়মিত যৌন নির্যাতন করতেন। ১২ জুন রাতে কামাল তাকে ওয়ার্কশপে নিয়ে তিনবার যৌন নির্যাতন করেন। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে ইউনুছ কামালকে ধাক্কা দেন। কামাল আবার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে তার গায়ে সেলাই মেশিন ছুড়ে মারেন। কিন্তু সেটা ইউনুছের শরীরে লাগেনি। এরপর তিনি ইউনুছকে গলাটিপে খুন করতে চান। পরে ইউনুছ কামালের গালে কামড় দেন এবং গলা চেপে ধরলে শ্বাসরোধ হয়ে কামাল মারা যান।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ জানান, মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতে ২০১০ সালের ৩ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউনুছের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্য নিয়ে আদালত দণ্ডবিধির ৩০২ থেকে ৩০৪ ধারায় রূপান্তর করে এ রায় দেন। আসামি ইউনুছ জামিনে গিয়ে পলাতক আছেন। তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

;

ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাদকসেবীর কারাদণ্ড



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুরের তারাগঞ্জে মাদক সেবনের অভিযোগে নুর হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫শ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল রানা এ কারাদণ্ড প্রদান করেন।

মাদকসেবী নুর হোসেন উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের জিগাতলা এলাকার কপার উদ্দীনের ছেলে।

ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের জিগাতলা এলাকার অভিযান চালায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা। এসময় নিজ বাড়িতে মাদক সেবনের সময় হাতেনাতে নুর হোসেনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে কাছে সোপর্দ করে তারা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে নুর হোসেনকে ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫শ টাকা জরিমানা করা হয়।

এলাকাবাসী অভিযোগ নুর হোসেন প্রতিনিয়ত মাদক সেবন করে এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে এবং যুবসমাজকে নষ্ট করছে। এর আগেও মাদক কারবারির দায়ে সে কারাগারে যায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনও রুবেল রানা বলেন, আটক ব্যক্তিকে মাদক সেবনের দায়ে কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হয়েছে। মাদক প্রতিরোধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

;

বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশিত হয়ে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করেছেন।’

মো. আশফাকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৩ সালে জেলা আদালত ও ১৯৮৫ সালে হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। পরে ২০০৩ সালের ২৭ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৭ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

আশফাকুল ইসলাম ১৯৫৯ সালের ১৫ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা এ কে এম নুরুল ইসলাম ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আর মাতা জাহানারা আরজু একুশে পদক প্রাপ্ত কবি ও সাহিত্যিক।

;