‘দয়া করে আমাদের এখানে ইফতার করে যান’



কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক, অতিথি লেখক, ইসলাম
মিসরের রাস্তায় ইফতারের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

মিসরের রাস্তায় ইফতারের দৃশ্য, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পিরামিড, নীল নদ আর তুর পর্বতের দেশ মিসর। দেশটিতে ফানুস দিয়ে পবিত্র রমজান মাস বরণ করা হয়। রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বাড়িঘর- সবখানে জ্বলে রঙিন কাঁচের লণ্ঠন, ওরা বলে ফানুস। রমজানের সময় ছেলেপুলেরা মোমবাতি দিয়ে ফানুস বা লণ্ঠন জ্বালায় এবং তারা রাস্তায় রাস্তায় প্রদক্ষিণ করে। আনন্দ করে।এসময় তারা আল্লাহর নামে গানও করে।

যেমন ‘যদি রমজান না আসতো, আমরা আসতাম না।’ ‘হাঁটতে হাঁটতে আমাদের পা ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে, হে দয়ালু আল্লাহ...’। অন্য গানে আছে- ‘ও সুলতানের কন্যা ইয়াহা! তোমার সুন্দর জালওয়া, মাথার ঝলকানো টিকলি মুসাফিরকে আর আকৃষ্ট করবে না। রমজান এসেছে দ্বারে এসো আল্লাহর ইবাদতে শামিল হই!’

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মিসরের মানুষ রমজানে প্রথম ফানুস ব্যবহার শুরু করে ৩৫৮ হিজরির (২৪ জুলাই ৯৬৮) ৫ রমজান তারিখে। এই তারিখে ফাতেমি খলিফা আল মুয়িজ রাতে কায়রো প্রবেশ করে। স্থানীয়রা টর্চ, বাতি, মোমবাতি- এ সব নিয়ে তাকে স্বাগত জানায়। মোমবাতিগুলো যাতে বাতাসের বেগে নিভে না যায় সেজন্য তারা মোমবাতিকে কাঠের ফ্রেমে রেখে কয়েকটি দিক বন্ধ করে দেয় পাম পাতা ও চামড়ার টুকরা দিয়ে। সেই থেকে শুরু। এখন তা রমজান ঐতিহ্য হিসেবে পরিগণিত।

মিসরের রমজান চিত্র, ছবি: সংগৃহীত
Caption

মিসরীয় শিশুদের কাছে রমজান মাসটি সবচেয়ে বেশি আনন্দময়। তারা এ সময় আমাদের দেশের বাচ্চাদের মতো পিতামাতার কাছে রোজা রাখার জন্য দাবী জানায়। মিডিয়ার তথ্য মতে মিসরের মোট জনসংখ্যার ৫-১০% খ্রিস্টান (৫০ লাখের মতো)। তারা রমজান মাসের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখে প্রকাশ্যে ধুমপান ও খাদ্যগ্রহণ করেন না। অনেক উদারপন্থি খ্রিস্টান জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখতে এ মাসে উপবাস করেন। মিসরের নারীরা বাংলাদেশের মতো হিজাব ও ননহিজাবে বিভক্ত হলেও রমজানে তারা পর্দার ব্যাপারে বেশ যত্নবান থাকেন।


আমরা যেমন ঈদের আগে-পরে পরিচিত কাউকে দেখলে বা কারও সঙ্গে কথা হলেই ‘ঈদ মোবারক’ বলি, ওরা তেমনই পুরো রোজার মাস চালিয়ে যায় বিভিন্ন ধরণের সম্ভাষণ। তার মধ্যে রয়েছে-‘রামাদ্বান কারীম’। এর উত্তরে বলা হয়, ‘আল্লাহু আকরাম’। আরও বলা হয়- ‘কুল্লু সানা ওয়া আনতুম তাইয়্যিব’ অর্থাৎ সারা বছর তুমি ভালো থেকো।


মিসরের রাজধানী কায়রো। জোহরের নামাজের পর থেকে ‘বাজারের শহর’নামে খ্যাত কায়রো শহরের অলিগলিতে ঢাকার চকবাজারের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ে হরেক রকম ইফতারের আয়োজন। মিসরীয় মুসলিমরা সাধারণত হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করে পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভেঙে থাকে।

মিসরে অধ্যয়নরত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আশরাফ মাহদি বলেন, তামার হিন্দের শরবত ছাড়া মিসরিদের ইফতার হয় না বললেই চলে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে এই শরবত বিক্রির জন্য রমজান উপলক্ষে অস্থায়ী দোকানও বসতে দেখা যায়। তামার হিন্দ তেঁতুলকে বলা হলেও এই শরবতে তেঁতুলের স্বাদ না থাকায় এটাকে তেঁতুলের শরবত বলতে কষ্ট হয়।

মিসরিদের অভিজাত খাবারের মধ্যে একটি হচ্ছে মাহশি। মূলতঃ উসমানি খেলাফতকালে তুর্কিরাই মিসরে এ শাহি খাবারের প্রচলন ঘটিয়েছিল। রেসিপিটা হচ্ছে, প্রথমে বিশেষ মসলার মাধ্যমে ভাত ও সেদ্ধ গোশতের মিশেলে ভেতরের উপকরণ তৈরি করা হবে। এরপর সেটার ওপর কোনো সবজি জাতীয় খাদ্য অথবা আঙ্গুরের পাতার আবরণ দেওয়া হবে। কিছু কিছু দস্তরখান থাকে বাঁধাকপিতে মোড়ানো, বেগুনে মোড়ানো ও ক্যাপ্সিক্যামে মোড়ানো মাহশি। শুধু এই এক মাহশির জন্যেই প্রায় বিশের অধিক রেসিপি এপ্লাই করে থাকেন মিসরি ললনারা। ঘরোয়া পদ্ধতি এই খাদ্য তৈরি করতে বেশ মেহনতেরও প্রয়োজন। ইফতারের আইটেমে স্যুপ থাকাটা মিসরিদের জন্য বাধ্যতামূলক। তম্মধ্যে অন্যতম হলো- লিসানে উসফুর, মুলুখিয়্যা ও গরুর গোশতের স্যুপ।

লিসানে উসফুর হচ্ছে এক ধরণের শস্য। যার ধরণ অনেকটা চড়ুই পাখির জিভের মত। সে কারণেই হয়তো এই নাম রাখা হয়েছে। ইফতারির আরেকটি আইটেম হচ্ছে, শারিয়্যা দিয়ে রুজ। যা অনেকটা পোলাওয়ের বিকল্প বলা যায়। এ ছাড়া আছে, টমেটো দিয়ে মিসরিয় স্টাইলে বানানো আলুর দম।
মিসরের রমজান চিত্র, ছবি: সংগৃহীত


রোজাদারদের ইফতার করানোর লক্ষ্যে কায়রোর রাস্তায় বিকেল থেকেই টেবিল সাজানোর কাজ শুরু হয়। কোনো কোনো ব্লকে অসংখ্য টেবিল বসে। শত শত চেয়ার সাজানো হয়। আর এত টেবিলে কেবল গরিবরা বসেন তা নয়। নানা কাজে রাস্তায় থাকা লোকজনও আনায়াসে শামিল হয়ে যান এতে। এ ছাড়া মিসরিরা ইফতারের সময় রাস্তায় কোনো গাড়ি চলাচল করলে তা আটকে দিয়ে গাড়ির আরোহীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করেন।


মিসরের আকাশে ভাসে কোরআনের সুর। চারদিকের কোরআন তেলাওয়াত শুনে আপনার মনে হবে, একজন আরেকজনের চেয়ে সুন্দর করে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। হয়তো বা সে জন্যই বলা হয়- ‘কোরআন নাজিল হয়েছে সৌদিতে, পড়া হয় মিসরে এবং লেখা হয় তুরস্কে।’ এ জন্যই আপনি সর্বত্র বেশি শুনতে পাবেন মিসরের বিখ্যাত কারিদের তেলাওয়াত। যেমন- শায়খ আবদুল বাসেত আবদুস সামাদ, শায়খ মুহাম্মদ সাদিক মুনশাভি, শায়খ মাহমুদ খলিল হাসরি, শায়খ মুস্তফা ইসমাইল প্রমুখ।

আমাদের দেশে বিশ রাকাত তারাবি আদায় করতে যে সময় লাগে, মিসরে ৮ রাকাত নামাজ আদায় করতে প্রায় তার তিন গুণ বেশি সময় লাগে। দেশটিতে সুরা তারাবি নাই বললেই চলে। মিসরে সাধারণত ৮ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। কিছু কিছু মসজিদে ২০ রাকাতও আদায় করা হয়। আর এই পার্থক্যের কারণ খুবই স্পষ্ট। কারণ আমাদের দেশে ইমাম আবু হানিফার মাজহাব এবং মিসরে ইমাম শাফেয়ির মাজহাব অনুসরণ করা হয়।

   

যে গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার কেউ নেই



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

গ্রামের মানুষের মাঝে ছাগল বিতরণ করা হচ্ছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সম্মিলিত ও সুপরিকল্পিত উদ্যোগে বদলে গেছে প্রত্যন্ত একটি গ্রামের চিত্র। গ্রামটির সকল পরিবার হয়েছে সচ্ছল। ওই গ্রামে এখন আর ফেতরা কিংবা জাকাত নেওয়ার মানুষ নেই। সবাই স্বাবলম্বী।

কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের চাঁদের হাসি গ্রাম। এই চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের এমন উদ্যোগের ফলে বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপট।

সংগঠনটি নিজ গ্রামের গন্ডি পেরিয়ে এখন পার্শ্ববর্তী গ্রামের মানুষদের স্বাবলম্বী করতে উদ্যোগ নিয়েছে। এমন প্রশংসনীয় কাজ করা সংগঠনটির নেই নিবন্ধন, নেই বাহারি অফিস। তারা প্রচারে নয়, কাজে বিশ্বাসী। যার প্রমাণ, ফাউন্ডেশনের জনকল্যাণমূলক নানা কাজ।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে চাঁদের হাসি গ্রামের প্রয়াত মাওলানা হেলান উদ্দিনের প্রচেষ্টায় দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে গ্রামে সকল পরিবারের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে অসহায়-গরীব মানুষের মাঝে বিতরণ করে আসছে। এভাবে দীর্ঘ ২১ বছরে এই কার্যক্রমের ফলে চাঁদের হাসি গ্রামে এখন আর ফেতরা ও জাকাত নেওয়া মতো মানুষ নেই। ইতোমধ্যে সংগঠনটি গ্রামের ৮০ জন অসহায় গরীব মানুষকে ঘর তৈরি করে দিয়েছে।

২ বছর আগে চাঁদের হাসি গ্রামের দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর পেয়েছেন ওহেদ আলী। তিনি জানান, ঘর পেয়ে মাথা গুজার ঠাঁই হয়েছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভালোভাবেই চলছে তার সংসার।

মাহমুদ বেগম নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী জানান, তার পরিবার দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহায়তা ঘর ও সেলাই মেশিন পেয়েছেন। তার বাবা নেই মা ও ছোট বোনকে নিয়ে ঘরে বসবাস করছেন। সেলাই মেশিনের মাধ্যমে মানুষের জামা কাপড় সেলাই করে নিজেও স্বাবলম্বী হয়েছেন।

চাঁদের হাসি দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ আলম জানান, ২০০৩ সালে আমাদের সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এলাকার চলনশীল মানুষের ফেতরা ও জাকাত একসঙ্গে করে আমরা কাজ করে থাকি। এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করার পর থেকে ইসলামের বিধি মোতাবেক যে ৮টি খাত রয়েছে সে হিসাবে বর্তমানে আমাদের গ্রামে জাকাত-ফেতরা নেওয়ার মতো কোনো মানুষ নেই।

সংগঠনটি গ্রামের অসহায় ও গরীব মানুষকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সহায়তাও দিয়ে আসছে। গ্রামের বেকারত্ব ঘোচাতে অসহায় ও গরীব মানুষের মাঝে গরু, ছাগল, সেলাই মেশিন, অটোরিকশা ও ভ্যান গাড়ি বিতরণ করেছে।

;

রাজধানীতে শীতল পানি বিতরণ করল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট সংকটে দেশব্যাপী শীতল পানি ও শরবত বিতরণ কর্মসূচী পালন করছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন জেলা, থানা, ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভ্রাম্যমাণ ভ্যান নিয়ে পথচারী, দিনমজুর, রিকশাচালকসহ তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে ঠান্ডা পানি বিতরণ করেছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এছাড়া খাবার স্যালাইন ও পকেট রুমাল বিতরণ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৬৬ ও ৬৭ নম্বর ওয়ার্ডে শ্রমজীবী ও পথচারীদের মাঝে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পূর্বের ডেমরা থানা শাখার উদ্যোগে বিশুদ্ধ শীতল পানি, স্যালাইন ও ওয়ালেট টিস্যু বিতরণ কর্মসূচি পালন করা হয়।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পূর্ব শাখার সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ মাইনুল ইসলাম, ডেমরা থানা শাখার সভাপতি শাহাদাত হোসেন মৃধা, সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাফিইন বিন আমজাদ, কফিল উদ্দিনসহ থানা ও ওয়ার্ড নেতৃবৃন্দ।

এ সময় প্রধান অতিথি শেখ মুহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার ভরাট ও অবাধে বৃক্ষ নিধনের ফলেই অসহনীয় তাপদাহে নগরে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সাময়িক স্বস্তির জন্য আমরা শীতল পানির বিতরণ কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই সমাধানের জন্য নগরকে সবুজায়ন ও বসবাসের উপযোগী করতে রাষ্ট্রকেই যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।

নগর সহ-সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, যতদিন তীব্র তাপদাহ থাকবে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর পূর্বের উদ্যোগে নগরজুড়ে বিশুদ্ধ শীতল পানি বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

;

দুনিয়ার জীবনের বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে যে আয়াতে



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন মাজিদ, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসজুড়ে দেখা গেছে, মানুষ সবসময়ই তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কারণ মানুষ প্রকৃতিগতভাবে অভাব নিয়েই দুনিয়ায় এসেছে। দুইভাবে মানুষ বিপদগ্রস্ত হচ্ছে কিংবা বিপদে পড়ছে। এক. মানুষের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো ঠিকমতো চিহ্নিত না করা। দুই. ভুল পথে চাহিদা মেটানোর প্রবণতা।

এই দুই বিপদজনক পথ সঠিকভাবে অতিক্রমের জন্যই আল্লাহতায়ালা যুগে যুগে নবী-রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী নবীরা মানুষকে শিক্ষা দিতেন। যেমন কোরআনের বক্তব্য যদি মানুষ বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তাহলে তার শক্তিসামর্থ্য যেমন বাড়বে তেমনি পরিত্রাণ পাবে এবং যেকোনো বিপদ বা ভুল পথে পরিচালিত হওয়া থেকে নাজাত পাবে।

কোরআন মাজিদের সুরা হাদিদের ২০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা জেনে রাখো যে, দুনিয়ার জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, শোভা-সৌন্দর্য, তোমাদের পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে আধিক্যের প্রতিযোগিতা মাত্র।

এর উপমা হলো- বৃষ্টির মতো, যার উৎপন্ন ফসল কৃষকদের আনন্দ দেয়, তারপর তা শুকিয়ে যায়, তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও, তারপর তা খড়-কুটায় পরিণত হয়। আর আখেরাতে আছে কঠিন আজাব এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবনটা তো ধোকার সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।’

বর্ণিত আয়াতটি আমাদের কাছে জীবনের বাস্তবতা তুলে ধরেছে এভাবে-
ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া মোটেই ভরসা করার যোগ্য নয়। পার্থিব জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা কিছু হয় এবং যাতে দুনিয়াদার ব্যক্তি মগ্ন ও আনন্দিত থাকে, প্রথমে সেগুলো ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে পার্থিব জীবনের মোটামুটি বিষয়গুলো যথাক্রমে এই- প্রথমে ক্রীড়া, এরপর কৌতুক, এরপর সাজ-সজ্জা, এরপর পারস্পরিক অহমিকা, এরপর ধন ও জনের প্রাচুর্য নিয়ে পারস্পরিক গর্ববোধ।

উল্লেখিত ধারাবাহিকতায় প্রতিটি অর্থেই মানুষ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু কোরআন মাজিদ বলে যে, এ সবই হচ্ছে সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী।

প্রকৃতপক্ষে, কোরআন মাজিদের এই আয়াতে বলা হচ্ছে, ‘মানুষ যখন শিশু থাকে তখন সে খেলা করে, সে তার যৌবনকে উদ্দেশ্যহীনভাবে অতিবাহিত করে, তার যৌবনে সে পৃথিবীর সাজসজ্জা ও সৌন্দর্যে মগ্ন থাকে এবং তার মধ্য বয়সে ও বার্ধক্যে সে অহংকার এবং সম্পদ ও সন্তানদের নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়!’

তাই পৃথিবীটা একটা খেলা। এমতাবস্থায় খেয়াল রাখা, কোনোভাবেই ধোঁকায় না পড়া। আমরা যদি কোনো উচ্চ অবস্থানে পৌঁছি তাহলে অহংকারী না হওয়া, যদি পতন ঘটে কিংবা অবস্থা নীচের দিকে চলে যায়- তাহলেও নিরাশ না হওয়া।

আয়াতে বর্ণিত পাঁচটি বিশেষ শব্দ দিয়ে মানবজাতির জন্য তাদের বাস্তবতাকে এভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে বোঝানো হয়েছে এর প্রতিটিই হচ্ছে একেকটি ফাঁদ এবং মানুষ এসবে জড়িয়ে পড়ে।

;

৯ বছর পর উমরার সুযোগ পেলেন ইরানিরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল উমরা পালনের জন্য সৌদি আরব যাচ্ছেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

দীর্ঘ ৯ বছরের বিরতির পর পশ্চিম এশিয়ার দেশ ইরানের নাগরিকরা পবিত্র উমরা পালনের জন্য তেহরান থেকে পবিত্র মক্কা নগরীর উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। সোমবার (২২ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৯ বছরের মধ্যে ইরানি উমরাযাত্রীদের প্রথম দল সোমবার পবিত্র উমরা পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে যাত্রা করেছে বলে ইরানের সরকারি বার্তাসংস্থা জানিয়েছে। মূলত সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই শক্তিশালী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘদিন দূরে থাকার পর গত বছরের মার্চ মাসে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরায় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয় মধ্যপ্রাচ্যের দুই দেশ ইরান ও সৌদি আরব। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশের মধ্যে আবারও সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়। আর উভয় দেশের সম্পর্কের অগ্রগতির পেছনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ছিল চীন।

২০১৬ সাল থেকে থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই বড় দেশের মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না। ওই বছর সৌদি আরব সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের দায়ে শিয়া ধর্মীয় নেতা শেখ নিমর আল নিমরসহ ৪৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। আর তারপর দুই দেশের সম্পর্কে অবনতি ঘটে।

মূলত ইরানি বিক্ষোভকারীরা তেহরানে সৌদি দূতাবাসে হামলার পর ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারপর থেকে সুন্নি এবং শিয়া-নেতৃত্বাধীন এই প্রতিবেশীদের মধ্যে উত্তেজনা প্রায়ই জারি ছিল। এই দুই দেশ একে অপরকে নিজের আঞ্চলিক আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচনা করে থাকে।

এ ছাড়া সিরিয়া এবং ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সংঘাতে ইরান ও সৌদি একে অপরের বিরোধী পক্ষ হয়ে কার্যত পরোক্ষ লড়াইয়ে নিয়োজিত ছিল। আর তাই সুন্নি-সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের মধ্যে উত্তেজনা ছিল প্রায়ই অনেক বেশি।

গত বছর সম্পর্ক পুনরায় শুরু হওয়ার আগে ইরানিরা শুধুমাত্র হজপালন করতে সৌদি আরব যেতে পারত।

রয়টার্স বলছে, তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে ৮৫ জন উমরাযাত্রীর বিদায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইরানে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ বিন সৌদ আল আনজি।

;