ইতিকাফ বিষয়ে ১৫টি মাসয়ালা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করছেন এক মুসল্লি, ছবি: সংগৃহীত

ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত করছেন এক মুসল্লি, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় যে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতসহকারে নিয়মিত আদায় করা হয়- এমন মসজিদে মহান আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে নিয়তসহকারে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ সহিহ-শুদ্ধভাবে পালনের জন্য মাসয়ালা জানা জরুরি। আজ থাকছে এমন জরুরি ১৫টি মাসয়ালা।  

খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে নিজের খাবার নিজে আনতে পারবেন
ইতিকাফকারীকে মসজিদে খাবার পৌঁছে দেওয়ার মতো কেউ না থাকলে খাবার আনার জন্য তিনি বাসায় যেতে পারবেন। এ কারণে ইতিকাফ ভাঙবে না। তবে খাবার আনার জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে অন্য কোনো কাজে বিলম্ব করা যাবে না। অন্য কাজে অল্প সময় ব্যয় করলেও ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য ঘটনাক্রমে খাবার প্রস্তুত না হলে সেজন্য অপেক্ষা করতে পারবেন। -আল বাহরুর রায়েক: ২/৩০৩

কোনো মসজিদে একজনও ইতিকাফ না করলে পুরো মহল্লাবসাী গোনাহগার হবেন
রমজান মাসের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। যদি কোনো মসজিদে এক জনও ইতিকাফে বসেন তাহলে এলাকাবাসী সুন্নত ছেড়ে দেওয়ার গোনাহ থেকে বেঁচে যাবেন। আর যদি একজনও ইতিকাফ না করে তাহলে ওই এলাকার সবাই গোনাহগার হবেন। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ১/২৬৭

ইতিকাফ বিনিময়যোগ্য ইবাদত নয়
ইতিকাফ একটি ইবাদত, যা বিনিময়যোগ্য নয়। তাই ইতিকাফের জন্য পারিশ্রমিক নেওয়া জায়েয নয়। কাউকে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ইতিকাফ করালে সে ইতিকাফ সহিহ হবে না। অতএব এ জাতীয় ইতিকাফ দ্বারা এলাকাবাসী দায়িত্বমুক্ত হতে পারবেন না। -ফাতহুল কাদির: ২/৩০৪

ইতিকাফরত ব্যক্তি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণে বাইরে গেলে কুশল বিনিময় করতে পারবেন
ইতিকাফরত ব্যক্তি পেশাব-পায়খানার জন্য মসজিদের বাইরে গেলে আসা-যাওয়ার পথে পথ চলতে চলতে সালাম আদান-প্রদান করতে পারবেন। তদ্রূপ এ সময় পথ চলতে চলতে কারও সঙ্গে অল্পস্বল্প কথাও বলতে পারবেন। এতে ইতিকাফের কোনো ক্ষতি হবে না। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফ অবস্থায় চলতে চলতে রোগীর কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কিন্তু এর জন্য রাস্তায় দাঁড়াতেন না। -সুনানে আবু দাউদ: ২৪৭২

তবে কারও সঙ্গে কথা বলা বা কুশলাদি জিজ্ঞাসার জন্য মসজিদের বাইরে অল্প সময়ও দাঁড়ানো জায়েজ হবে না।

মসজিদের বাথরুম না থাকলে বাসায় যেয়ে প্রয়োজন পূরণ করার সুযোগ আছে
প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন মেটাতে ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া জায়েজ। প্রয়োজনে এ জন্য বাসা-বাড়িতেও যাওয়া যাবে। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতিকাফরত অবস্থায় ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে প্রবেশ করতেন না। -সহিহ বোখারি: ১/২৭২

বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা ও করানো নাজায়েজ
বিনিময় নিয়ে ইতিকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েজ। কারণ ইতিকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া নাজায়েজ। এমন লোকের ইতিকাফ দ্বারা সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কেফায়া) এর দায়িত্ব আদায় হবে না। -সুনানে জামে তিরমিজি: ১/৫১

বুঝমান নাবালেগের ইতিকাফ সহিহ
বুঝমান নাবালেগের ইতিকাফ সহিহ। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্য থেকেই ইতিকাফে বসা উচিত। কেননা রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গুরুত্ব সহকারে আদায় করতেন। তাই এ ব্যাপারে উদাসীনতা মোটেই ভালো নয়। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/২৭৪

পুরুষের ইতিকাফ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মসজিদ হওয়া জরুরি
পুরুষের ইতিকাফ সহিহ হওয়ার জন্য শরঈ মসজিদ হওয়া জরুরি। নামাজঘরে ইতিকাফ সহিহ হবে না। তাই ইতিকাফে বসতে চাইলে মসজিদেই বসতে হবে। খানা আনা-নেওয়ার জন্য কেউ না থাকলে ইতিকাফ অবস্থায় খানা-নেওয়ার জন্য বাড়ি যেতে পারবেন। তবে খানা নিয়ে দ্রুত মসজিদে ফিরে যেতে হবে। বাইরে বিলম্ব করা যাবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১১

নারীর ইতিকাফের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা জরুরি
নারীর ইতিকাফ করার জন্য বাসার একটি কক্ষকে নামাজঘর হিসেবে নির্দিষ্ট করে নিতে হবে এবং ইতিকাফের পূর্ণ সময় এ ঘরেই অবস্থান করতে হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১১

কোনো অস্থায়ী মসজিদে ইতিকাফ শুদ্ধ হবে না
কোনো অস্থায়ী নামাজের ঘর যেহেতু ‘শরঈ মসজিদ’ নয় তাই তাতে ইতিকাফ সহিহ হবে না। ইতিকাফ সহিহ হওয়ার জন্য ‘শরঈ মসজিদ’ হওয়া জরুরি। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় তাদের (স্ত্রীদের) সঙ্গে মিলিত হয়ো না। -সূরা বাকারা: ১৮৭

ইমাম কুরতুবি (রহ.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মসজিদ ছাড়া অন্যস্থানে ইতিকাফ সহিহ হবে না। -ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ৩/৪৪২

ইতিকাফের কাজা আদায়ের পদ্ধতি
কেউ রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফে বসে অসুস্থতার দরুণ শেষ পর্যন্ত পূরণ করতে পারেনি। এক্ষেত্রে তাকে একদিনের ইতিকাফ কাজা করতে হবে। আর তা রমজানেও হতে পারে। এজন্য সে কোনো একদিন সূর্যাস্তের পর থেকে পরের দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত মসজিদে ইতিকাফ করবে। অবশ্য রমজানের বাইরে ইতিকাফটি কাজা করতে চাইলে দিনের বেলা নফল রোজা রাখতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৪-৪৪৫

ইতিকাফরত ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য বের হতে পারবে না
রমজান মাসের শেষ দশকের ইতিকাফরত ব্যক্তি সাধারণ গোসলের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে পারবেন না। বের হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে ফরজ গোসলের জন্য বের হতে পারবেন। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২১২

এক কথায়, অভ্যাসবশত দৈনিকের গোসলে জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, একান্তই যদি বেশি সমস্যা হয় তাহলে মলমূত্র ত্যাগ করে আসার সময় সুন্দরভাবে অজু করতে যে সময় লাগে ঠিক ওই সময়ের মধ্যে যদি তাড়াহুড়ো করে গোসল করা সম্ভব হয় তবে অজু না করে সময়ের এ শর্ত মেনে গোসল করা যেতে পারে। বিষয়টি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বটে। যা অত্যন্ত সতর্কতার দাবি রাখে।

আবার এর জন্য সহযোগীও দরকার যে আগে থেকেই পানির ব্যবস্থা করে রাখবে, গোসলের পরে কাপড় ধোঁয়ে দেবে। অজুখানায় শাওয়ার থাকলে বিষয়টি কিছুটা সহজ হয়।

ইতিকাফকারী জানাজার নামাজে শরিক হতে পারবেন না
জানাজার উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হলেও ইতিকাফ থাকে না। তাই ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদের বাইরের জানাজার নামাজে শরিক হওয়া যাবে না। বের হলে সুন্নত ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। -সুনানে আবু দাউদ: ২৪৬৫

নারী ইতিকাফ শুরুর পর তার স্রাব শুরু হলে করণীয়
কোনো নারী নিজ ঘরে সুন্নত ইতিকাফ শুরুর তিন দিন পর তার মাসিক শুরু হলে ইতিকাফ ভেঙ্গে যাবে। যে দিন মাসিক শুরু হয়েছে শুধু সেই একদিনের ইতিকাফ কাজা করে নেওয়া জরুরি। এই এক দিন কাজা করার নিয়ম হলো- একদিন সূর্যাস্তের আগে ইতিকাফ শুরু করতে হবে। পরবর্তী দিন রোজা থাকতে হবে। সূর্যাস্তের পর ইতিকাফ শেষ হবে। এভাবে একদিন রোজাসহ ইতিকাফ করলেই কাজা আদায় হয়ে যাবে। পুরো দশ দিনের ইতিকাফ কাজা করতে হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৭

সুন্নত ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজা ছাড়া ইতিকাফ হয় না। -সুনানে বায়হাকি: ৪/৩১৭

অন্য বর্ণনায় আছে, সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ইতিকাফকারীর জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৩০০

ইতিকাফের ফজিলতে অতিরঞ্জিত কথা কাম্য নয়
ইতিকাফের ফজিলত বলতে যেয়ে অনেকে অতিরঞ্জিত করে ফেলেন। কেউ কেউ বলেন, যে ব্যক্তি রমজানের দশদিন ইতিকাফ করল সে যেন দুই হজ ও দুই উমরা করলো। ইতিকাফের ফজিলত বলতে যেয়ে এসব বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই এগুলো মানুষের মাঝে বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তবে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ সুন্নত আমল। হজরত রাসূলুল্লাহ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা তা প্রমাণিত। এক রমজানে কোনো কারণে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি। তাই পরবর্তী বছর তিনি বিশদিন ইতিকাফ করেছেন। -সুনানে আবু দাউদ: ২৪৬৮

   

কোরবানির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দেড় কোটি পশু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মুসলমানরা ঈদুল আজহায় আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের নিমিত্তে পশু কোরবানি করে থাকেন, ছবি : সংগৃহীত

মুসলমানরা ঈদুল আজহায় আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের নিমিত্তে পশু কোরবানি করে থাকেন, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গতবারের চেয়ে এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেশি প্রস্তুত রয়েছে। খামারি ও প্রান্তিক চাষিরা জানিয়েছে, প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত। ফলে এবার বিদেশি পশুর ওপর নির্ভর করতে হবে না।

গত ৭ বছরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬১ লাখ ৪ হাজার ২৮১টি, সর্বাধিক পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। আর বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময় ২০২১ সালে সবচেয়ে কম পশু কোরবানি দেওয়া হয়। ওই বছর মাত্র ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি গবাদিপশু কোরবানি দেওয়া হয়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদুল আজহায় আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়ের নিমিত্তে পশু কোরবানি করে থাকেন। কোরবানিকৃত এসব পশুর বেশিরভাগই দেশের খামারিরা লালন-পালন করে বড় করেন।

এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৪৫ লাখের ওপরে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০২৩ সালে সারাদেশে ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। যদিও গতবছর সারা দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি।

২০২২ সালে কোরবানি দেওয়া গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। ২০২০ সালে ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৩টি। ২০১৯ সালে ১ কোটি ৬১ লাখ ৪ হাজার ২৮১টি। ২০১৮ সালে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৯ হাজার ৭০টি ও ২০১৭ সালে ১ কোটি ৪২ লাখ ১ হাজার ৯৫৬টি পশু কোরবানি করা হয়।

২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে ও ময়মনসিংহ বিভাগে সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭৭টি, রাজশাহী বিভাগে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৯টি, খুলনা বিভাগে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮১টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৩টি, সিলেট বিভাগে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯টি, রংপুর বিভাগে ১১ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৭টি ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯০২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে।

এর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০টি গরু, ১ লাখ ৭ হাজার ৮৭৫টি মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৮টি ছাগল, ৫ লাখ ২ হাজার ৩০৭টি ভেড়া ও ১ হাজার ২৪২টি অন্যান্য পশু।

অবশ্য এই হিসেবের বাইরে অনেকে নিজের পালিত গবাদি পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন, যা হিসেবে আসে না।

কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্যবান প্রত্যেক নারী-পুরুষের ওপর কোরবানি ওয়াজিব। কোরবানি দিতে হবে শরিয়ত যে ধরনের পশু পছন্দ করে। যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি দিয়ে। এ ধরনের পশুকে কোরআন মাজিদের ভাষায় বলা হয় ‘বাহিমাতুল আনআম অর্থাৎ অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু।’

ইসলামি স্কলারদের মতে, কোরবানির জন্য উটের বয়স পাঁচ বছর, গরু বা মহিষ দুই বছর, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এক বছরের হওয়া শর্ত। বয়স কম, কিন্তু দেখতে হৃষ্টপুষ্ট এমন পশু দিয়ে কোরবানি করা জায়েজ হওয়ার পক্ষে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

শরিয়তের পরামর্শ হলো, হৃষ্টপুষ্ট, বেশি গোশত, নিখুঁত এবং দেখতে সুন্দর পশু কোরবানি করা। কোরবানির পশু সব ধরনের দোষ-ত্রুটিমুক্ত হওয়া চাই। ভেড়া, দুম্বা, ছাগল এসব পশু একজন কোরবানি করতে পারবেন। উট, গরু, মহিষ সর্বোচ্চ সাতজন কোরবানি করতে পারবেন।

;

ব্রিটিশ সরকারের ঈদ পার্টি বয়কট করল মুসলিমরা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ব্রিটিশ সরকারের ঈদ পার্টি বয়কট করেছেন ব্রিটেনের মুসলিমরা, ছবি : সংগৃহীত

ব্রিটিশ সরকারের ঈদ পার্টি বয়কট করেছেন ব্রিটেনের মুসলিমরা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পূর্বঘোষণা মতে গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি হামলার প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেওয়ায় ব্রিটিশ সরকারের ঈদ পার্টি বয়কট করেছেন ব্রিটেনের মুসলিমরা। বয়কটকারী দলে রয়েছেন- ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিবিদসহ ব্যবসায়ী ও দাতব্য সংস্থার নেতারা।

রাীতি অনুযায়ী ঈদের পর মুসলিমদের জন্য প্রতি বছরই ডাউনিং স্ট্রিট ঈদ পার্টির আয়োজন করে। এবার সোমবার (১৫ এপ্রিল) ঈদ উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পূর্ব থেকে চলে আসা রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানে আগতদের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানান। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে বলা হয়েছে, হাউজ অব কমন্সে ইরান প্রশ্নে একটি বিবৃতি প্রস্তুত করতে তাকে ব্যস্ত থাকতে হবে। এ কারণে তিনি এই পার্টিতে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তার বদলে ব্রিটিশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিচেল মুসলিমদেরকে স্বাগত জানান।

সাধারণভাবে এ ধরনের পার্টিতে যত লোক উপস্থিত হয়, সোমবার তার প্রায় অর্ধেক উপস্থিত ছিলেন। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এতে উপস্থিত থাকার জন্য প্রকাশ্যে অনুরোধ করলেও তাতে সাড়া মেলেনি।

আবার যারা উপস্থিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকে ফিলিস্তিনি পতাকার ছোট ব্যাজ পরেছিলেন। কেউ কেউ আবার ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যবাহী স্কার্ফ কেফিয়েহ পরেছিলেন।

রক্ষণশীল নেতা ব্যারোনেস ওয়ার্সিসহ গুরুত্বপূর্ণ কেউই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না। উল্লেখ্য ওয়ার্সি হলেন ব্রিটিশ মন্ত্রিসভায় প্রথম নারী মুসলিম মন্ত্রী। তিনি গাজার লোকজনের দুঃখ-দুর্দশার প্রতি প্রকাশ্যে সহানুভূতি প্রকাশ করে থাকেন।

উপস্থিত ব্যক্তিরা জানান, অনুষ্ঠানে তারা কোনো এমপিকে দেখেননি। তবে এমপি প্রার্থীদের কেউ কেউ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজে বার্ষিক ইফতার মাহফিলও বয়কট করেছিল মুসলিমরা। সেখানেও ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতিবাদ করেছিল মুসলিমরা।

;

ফরজ হজ আদায় না করে উমরা করা ঠিক নয়



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

পবিত্র মক্কা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজ কারা করবেন, উমরা কারা করবেন- এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মনে রাখতে হবে, ইসলামের সমস্ত ইবাদত ফরজ হওয়ার জন্য মৌলিক কয়েকটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রথম শর্ত হচ্ছে, তাকে মুসলিম এবং মুমিন হতে হবে। কোনো ব্যক্তির যদি অন্তরের মধ্যে ইমান ও ইসলাম না থাকে এবং তিনি যদি মুসলিম না হয়ে থাকেন অথবা ইসলামের কথা ঘোষণা করে থাকেন এবং ইসলামের ব্যাপারে আন্তরিকভাবে কপটতা রয়েছে, তার ওপর হজ ফরজ না এবং তিনি যদি হজপালন করে থাকেন, তাহলে তিনি হজের ফজিলত পাবেন না।

দ্বিতীয় বিষয় হলো, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। এটা বলতে বোঝায় যে, ব্যক্তি দুটি জিনিসের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন এমন। এ ব্যাপারে মতভেদ থাকলেও যেটি বিশুদ্ধ অভিমত হজরত আবু দাউদ (রা.)-এর হাদিস দ্বারা বর্ণিত হয়েছে সে হচ্ছে- ১০ বছর। যদি কেউ এই বয়সে উন্নীত হয়ে থাকে, তাহলে সে হজপালন করে থাকে, তাহলে তার হজ গ্রহণযোগ্য হবে, যেহেতু সে এই বয়সের মধ্যে হজ করতে পেরেছে। এটা হচ্ছে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হলো, সমাজে অনেককেই দেখা যায়- ফরজ হজ আদায় করেননি কিন্তু উমরা পালন করতে যাচ্ছেন। এটা ভুল সিদ্ধান্ত। এখন প্রশ্ন জাগতে পারে ভুল কীভাবে? ভুল হলো, হজ মৌলিক ইবাদত। আগে হজ। যেহেতু তিনি আল্লাহর ঘরে যেতে পারবেন, তার সামর্থ্য আছে তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। হজের জন্য যাবেন আগে হজ করবেন এরপর উমরাপালন করবেন। এটাই নিয়ম। কিন্তু শুধুমাত্র উমরা করতে যাবেন অথচ হজ করলেন না এটা ঠিক নয়। তাহলে তিনি ইসলামের রুকুনের ব্যাপারে গুরুত্ব দেননি। অবজ্ঞা করেছেন। হজ এখানে ফরজ, উমরা ওয়াজিব। তাই আগে হজ। এরপর উমরা। চাইলে একসঙ্গেও করতে পারেন। এ ক্ষেত্রেও আগে হজ করে তারপর উমরা করবেন।

ইসলামের বিধানে হজ আর উমরার বিধান সম্পূর্ণ ভিন্ন। কোনো ব্যক্তি উমরা আদায় করার পর যদি তার কোনো শারীরিক অক্ষমতা দেখা দেয়, কিন্তু যদি হজ তার ওপর ফরজ হয়ে যায়, তাহলে তিনি তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করাবেন। হজ ফরজ হওয়ার যে বিধান আছে, সেটি যদি তার ওপর প্রযোজ্য হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই হজ করতে হবে।

কোনো ব্যক্তি উমরা আদায়ের পর তিনি যদি শারীরিক ও আর্থিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে যদি তার ওপর হজ ফরজ না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি উমরা করার জন্য সওয়াব পেয়ে যাবেন, তাকে হজ করতে হবে না।

উমরা করলেই হজ করতে হবে- এই কথা একেবারেই ভুল। উমরা করলে তিনি উমরার সওয়াব পাবেন। আর হজ যদি তার ওপর ফরজ হয়, তাহলে তিনি হজ আদায় করবেন। যদি এ সামর্থ্য তার কোনো কারণে হারিয়ে যায়, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ হবে না।

;

১৬ জুন হতে পারে কোরবানির ঈদ



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জুন মাসের ১৭ তারিখে, ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জুন মাসের ১৭ তারিখে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে উদযাপিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। বাংলাদেশের এক দিন আগে ১০ এপ্রিল সৌদি আরবে পালিত হয় ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল ফিতরের ঠিক দুই মাস দশ দিন পর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালনের নিয়ম। সে হিসেবে এবার ঈদুল আজহা হতে পারে ১৬ জুন।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী এবার (২০২৪ সালে) ১০ জিলহজ বা ঈদুল আজহা হতে পারে জুন মাসের ১৬ তারিখ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে বাংলাদেশে আরবি মাসের গণনা শুরু হলেও বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরব, কাতার, ওমান, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের পরের দিন ঈদুল ফিতরা কিংবা ঈদুল আজহা পালন করা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ পালিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে জুন মাসের ১৭ তারিখ। তবে চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে তারিখ পরিবর্তন হতে পারে।

ইসলামমতে, মহান আল্লাহ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) কে স্বপ্নে তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দেন। আদেশের পর তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) কে কোরবানি করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে আল্লাহতায়ালা খুশি হন এবং শিশু ইসমাইলের পরিবর্তে দুম্বা কোরবানি হয়।

এই ঘটনাকে স্মরণ করে সারা বিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনে হিজরি বর্ষপঞ্জি হিসাবে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ তারিখ পর্যন্ত পশু কোরবানি করেন। শেষনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনের আগে যুগে যুগে সব শরিয়তে কোরবানির বিধান চালু ছিল।

সামর্থ্যবান ব্যক্তির শর্তসাপেক্ষে কোরবানি করা ওয়াজিব। ১০ থেকে ১৩ জিলহজের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলে কোরবানি করা ওয়াজিব। অর্থাৎ এই সময় কারও কাছে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা থাকলে অথবা এর মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলে কোরবানি করতে হবে।

নবী কারিম (সা.) বলেছেন, কোরবানির দিনে কোরবানি করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত। কোরবানির জন্তুর শরীরের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কোরবানিদাতাকে একটি করে সওয়াব দান করা হবে। কোরবানির পশুর রক্ত জবাই করার সময় মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে যায়। -মেশকাত

কোরবানির বিনিময়ে সওয়াব পেতে হলে অবশ্যই কোরবানি হতে হবে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে।

;