মাকামে ইবরাহিমের মর্যাদা



ইসলাম ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
মাকামে ইবরাহিম, যে পাথর খণ্ডে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পায়ের চিহ্ন রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

মাকামে ইবরাহিম, যে পাথর খণ্ডে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পায়ের চিহ্ন রয়েছে, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মক্কা (সৌদি আরব) থেকে: পবিত্র কাবা ঘর থেকে ১০ বা ১১ মিটার পূর্ব দিকে সাফা-মারওয়া অভিমুখে অবস্থিত একটি সোনালী রংয়ের মিনার দৃষ্টি কাড়ে সবার। এটাই মাকামে ইবরাহিম। এর ভেতরে একটি পাথর খণ্ড রয়েছে, যে পাথর খণ্ডে দু'টো পায়ের ছাপ বিদ্যমান।

এই পাথরটি নরম প্রকৃতির পাথর, কঠিন শিলা খণ্ড নয়। এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা প্রায় পঞ্চাশ সেন্টিমিটার। প্রায় চৌকোণ বিশিষ্ট। পাথরটি আগে উন্মুক্ত ছিল, যে কেউ হাত দ্বারা স্পর্শ করতে পারত। কিন্তু পরবর্তীতে তা সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে অত্যন্ত সুদর্শন ও মজবুত লোহা ও কাঁচের বেষ্টনীর ভেতর একটি ক্রিস্টালের বাক্সে রাখা হয়েছে। এটা ধরা, স্পর্শ করা, চুমো খাওয়া, তাতে কোনো কাপড় মুছে আনার কোনো আলাদা উপকারিতা নেই। তারপরও অনেক তাওয়াফকারী কাজগুলো করে থাকেন। এগুলো ভুল কাজ। ইসলামি শরিয়ত এসব করার অনুমতি দেয় না।

মাকামে ইবরাহিম। অর্থ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দাঁড়ানোর স্থান। এটি একটি জান্নাতের অতি মূল্যবান ইয়াকুত পাথর। এ বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি; হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম জান্নাতের দু'টো ইয়াকুত পাথর। আল্লাহতায়ালা এই দু'টির আলোকপ্রভা নিষ্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দু'টির প্রভা যদি তিনি নিষ্প্রভ না করতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত। -তিরমিজি: ৮৭৮

এ পাথরটি আল্লাহতায়ালার অন্যতম নিদর্শন। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্যে নির্ধারিত হয়েছে, সেটাই হচ্ছে এ ঘর। যা মক্কায় অবস্থিত এবং সমগ্র জগতের মানুষের জন্য বরকতময় ও পথ নির্দেশ (হেদায়েত)। এতে রয়েছে মাকামে ইবরাহিমের মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন। -সূরা আলে ইমরান: ৯৬ ও ৯৭।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/23/1566569071755.jpg

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ‌মাকামে ইবরাহিম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- যে পাথরে তার পদযুগলের চিহ্ন রয়েছে।

আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের দুই জায়গায় মাকামে ইবরাহিমের কথা উল্লেখ করেছেন। ওই দুই স্থান হলো- সূরা বাকারা ১২৫ ও সূরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াত।

হজরত ইবরাহিম (আ.) এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেছেন। তার পুত্র হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম পাথর সংগ্রহ করে এনে এগিয়ে দিতেন। আর তিনি এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কাবা ঘরের দেয়াল নির্মাণ করতেন। এ প্রসঙ্গে বোখারির হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর ইবরাহিম (আ.) বললেন, হে ইসমাইল! আল্লাহ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত ইসমাইল (আ.) বললেন, আপনার রব! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, তুমি আমাকে সাহায্য করবে কি? হজরত ইসমাইল (আ.) বললেন, আমি আপনাকে সাহায্য করবো।

হজরত ইবরাহিম (আ.) বললেন, আল্লাহ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

এই বলে তিনি উঁচু টিলাটির দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে। তখন তারা উভয়ে কাবা ঘরের দেয়াল তুলতে লেগে গেলেন। হজরত ইসমাইল (আ.) পাথর আনতেন, আর হজরত ইবরাহিম (আ.) নির্মাণ করতেন।

পরিশেষে যখন দেয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন হজরত ইসমাইল (আ.) (মাকামে ইবরাহিম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) তার ওপর দাড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর হজরত ইসমাইল (আ.) তাকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে এ দোয়া করতে থাকলেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/23/1566569991338.jpg

তারা উভয়ে আবার কাবা ঘর তৈরি করতে থাকেন এবং কাবা ঘরের চারদিকে ঘুরে ঘুরে দোয়া করতে থাকেন, হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানের। -সূরা আল বাকারা: ১২৭, -সহিহ বোখারি: ৩১২২

আল্লাহতায়ালা হজ ও উমরাকারীদের মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কা এলেন সাতবার বায়তুল্লাহর তওয়াফ করলেন। তখন তাকে আমি পাঠ করতে শুনেছি, তোমরা মাকামে ইবরাহিমকে নামাজের স্থান হিসেবে গ্রহণ করো।' -সূরা বাকারা: ১২৫

তারপর তিনি মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ আদায় করলেন। -সুনানে তিরমিজি

এই পাথরের ওপরে যে দু'টি পদচিহ্নের মতো গর্ত আছে, সেগুলো ইবরাহিম (আ.)-এর পদচিহ্ন কিনা, এ প্রসঙ্গে উল্লেখিত আয়াতের তাফসির প্রসঙ্গে ইবনে জারির কাতাদা (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহতায়ালা এ পাথরের নিকটে লোকদের নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন; হাত দ্বারা মাসেহ করতে বলেননি। কিন্তু এই উম্মত নিজেদের ওপর এমন কিছু কাজ চাপিয়ে নিয়েছে যা পূর্ববর্তী উম্মতগণ করেননি। যাহোক, যারা ওই পাথরের ওপর হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পায়ের গোড়ালি ও আঙ্গুলের চিহ্ন দেখেছেন, তারা আমাদের কাছে বিবরণ দিয়েছেন। কিন্তু উম্মতের লোকেরা হাত দ্বারা স্পর্শ করতে করতে সেই পাথরের আলোকপ্রভা নিষ্প্রভ হয়ে গেছে এবং শেষ অবধি সেই চিহ্ন মুছে গেছে। -তাফসিরে ইবনে কাসির: ১/১১৭

আর আল্লামা উসমাইমিন (রহ.) বলেন, মাকামে ইবরাহিম সুপ্রমাণিত। এতে কোনও সন্দেহ নাই। এই যে কাচে ঘেরা স্থাপনাটি সেটি মাকামে ইবরাহিম। কিন্তু তার মধ্যে যে গর্তটি রয়েছে তা দেখে মনে হয় না যে, এটি ইবরাহিম (আ.)-এর পদযুগলের চিহ্ন। কেননা এটি ঐতিহাসিকভাবে স্বতঃসিদ্ধ যে, দীর্ঘ কালপরিক্রমায় পদচিহ্ন মুছে গেছে এবং এটি সেখানে গর্ত করা হয়েছে বা কেবল চিহ্নিত করার জন্য বসানো হয়েছে। এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না যে, এ গর্তটিই হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর পা রাখার স্থান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/23/1566569176595.jpg

এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম (আ.) হজের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে ফাকেহি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে করেন, হজরত ইবরাহিম (আ.) কাবা ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করলে আল্লাহ তাকে হজের ঘোষণা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। অত:পর তিনি মাকামে ইবরাহিমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন, হে লোকেরা! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য একটি ঘর নির্মাণ করেছেন। অতঃএব তোমরা তাতে হজ করো।

তখন পুরুষদের পৃষ্ঠদেশ ও নারীদের গর্ভাশয় থেকে মানুষ তার জবাব দিয়ে বলল, আমরা সাড়া দিলাম, আমরা সাড়া দিলাম। আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, হে আল্লাহ! তোমার দরবারে উপস্থিত। তিনি বলেন, সুতরাং বর্তমানে যত মানুষ হজ করে তারা ওই সব লোক যারা সেদিন ইবরাহিম (আ.)-এর ডাকে সাড়া দিয়েছিল।

পাথরটি হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর যুগ, তারপরে জাহেলি যুগ, রাসূল (সা.)-এর যুগ এবং সর্বশেষ হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে কাবা ঘরের সঙ্গে লাগানো অবস্থায় ছিলো। পরবর্তীতে উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) একটিকে কাবা থেকে কিছুটা দূরে স্থাপন করেন।

ইমাম বায়হাকি সহিহ সনদে হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, মাকামটি রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হজরত আবু বকর (রা.)-এর যুগে কাবা ঘরের সঙ্গে লাগানো ছিল। অত:পর হজরত উমর (রা.) সেটিকে পেছনে নিয়ে আসেন।

এর উদ্দেশ্য ছিল, যেহেতু মাকামে ইবরাহিমের পেছনে নামাজ আদায়ের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে, সেহেতু সেটিকে এমন স্থানে স্থানান্তরিত করা প্রয়োজন যেন, লোকজন সুবিধাজনকভাবে নামাজ আদায় করতে পারে এবং তওয়াফকারীগণও বাধাগ্রস্ত না হয়। ইবনে হাজার আসকালানি (বহ.) বলেন, উমর (রা.)-এর কাজে কোনও সাহাবি প্রতিবাদ করেননি। সুতরাং এটি সাহাবিদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হিসেবে পরিগণিত।

   

ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা কী?



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

ঈমানের স্বাদ সবাই আস্বাদন করতে পারে না, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, এবার আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন, রাসুল (সা.) বললেন, ‘ঈমান হলো, তুমি ঈমান রাখবে আল্লাহর প্রতি, তার (আল্লাহর) ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলদের প্রতি এবং শেষ দিবসের (কেয়ামত) প্রতি। (এবং) তুমি ঈমান রাখবে তাককিরের ভালো-মন্দের প্রতি।’ হজরত জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। -সহিহ মুসলিম : ৮

ঈমানের স্বাদ
হজরত আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি নবী কারিম (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহকে রবরূপে, ইসলামকে দ্বীনরূপে এবং মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুলরূপে সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করবে। -সহিহ মুসলিম : ৩৪

সুস্বাদু খাদ্যের স্বাদ সেই বুঝতে পারে যার জিহ্বায় স্বাদ আছে। রোগ-ব্যাধির কারণে নষ্ট হয়ে যায়নি। তদ্রূপ ঈমান ও যাবতীয় আমলের স্বাদও ওই খোশনসিব ব্যক্তিই অনুভব করে, যে সম্পূর্ণ সন্তুষ্টিচিত্তে ও সর্বান্তকরণে আল্লাহকে রব ও পরওয়ারদিগার এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে রাসুল ও আদর্শ এবং ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে।

আল্লাহতায়ালা, নবী মুহাম্মদ (সা.) ও ইসলামের সঙ্গে যার সম্পর্ক কেবলই বংশগত ও প্রথাগত বা কেবলই চিন্তাগত ও বুদ্ধিগত পর্যায়েই নয় বরং সে আল্লাহর বন্দেগি, মুহাম্মদ (সা.)-এর আনুগত্য এবং ইসলামের অনুসরণকে মনেপ্রাণে নিজের জীবনে গ্রহণ করে নেবে। সেই ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারবে। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

ঈমানের মিষ্টতা
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকবে সে ঈমানের মিষ্টতা অনুভব করবে। আল্লাহ ও তার রাসুল তার কাছে সবকিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহরই জন্য ভালোবাসা, আর কুফুরিতে ফিরে যাওয়াকে এমন ঘৃণা করা, যেমন সে ঘৃণা করে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে। -সহিহ বোখারি : ১৬

এই হাদিসের বিষয়বস্তুও আগের হাদিসের বিষয়বস্তুর প্রায় কাছাকাছি। উপস্থাপনায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। এই হাদিসে বলা হচ্ছে, ঈমানের মিষ্টতা ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারবে, যে আল্লাহ ও তার রাসুলের ভালোবাসায় পরিপূর্ণ সমর্পিত থাকবে; আল্লাহ ও তার রাসুলকে জগতের সবকিছু থেকে বেশি ভালোবাসবে। অন্য কারও প্রতি যদি তার ভালোবাসা হয়, তা হবে সম্পূর্ণ এই ভালোবাসার অধীন। আর ইসলাম তার এতই প্রিয় যে, ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়া, কুফুরিতে লিপ্ত হওয়া তার কাছে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সমতুল্য। -মাআরিফুল হাদিস : ১/৯১

;

মসজিদ নির্মাণ করবে দাউদ কিম

কোরিয়ার প্রতিটি গলি থেকে ভেসে আসবে আজানের সুর



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

জমি কেনার দলিল হাতে দাউদ কিম, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কয়েক বছর আগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী দক্ষিণ কোরিয়ান ইউটিউবার দাউদ কিম মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এরই মধ্যে মসজিদের জন্য জমিও কিনেছেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে ওই জমি ও তার দলিলের ছবি শেয়ার করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক এই নওমুসলিম। তিনি দেশটির ইঞ্চোন শহরে মসজিদটি নির্মাণ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কিম লিখেছেন, ‘অবশেষে আপনাদের সাহায্যে আমি ইঞ্চোনে মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয়ের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি। খুব শিগগিরই জায়গাটিতে মসজিদ নির্মিত হবে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমার এই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লেখেন, ‘ওই জমিতে মসজিদের পাশাপাশি একটি ইসলামিক পডকাস্ট স্টুডিও তৈরির ইচ্ছা আমার। সত্যি এটি একটি দুঃসাহসিক পদক্ষেপ, এতে বহু সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- আমি এগুলো সম্পন্ন করতে সক্ষম হব।’

দাউদ কিম আশাবাদ ব্যক্ত করে লিখেছেন যে, ‘এমন একটি দিন আসবে, যেদিন কোরিয়ার প্রতিটি গলি আজানের সুমধুর ধ্বনিতে ভরে উঠবে। এ জন্য আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

কিম ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেন। এরপর ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তিনি সারাবিশ্বে বিখ্যাত বনে যান। জনপ্রিয় এই ইউটিউবার তার নিয়মিত ব্লগে ইসলামিক বিভিন্ন কনটেন্ট, নামাজ পড়ার ভিডিওসহ নানা কিছুই পোস্ট করে থাকেন। ২০২২ সালে কিম বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশ ঘুরে তিনি পবিত্র উমরা পালন করতে সৌদি আরব যান।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই গায়ক ইউটিউবিং করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ান। ঘুরতে ঘুরতে তিনি ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও তিউনিশিয়া যান। দেশগুলোতে গিয়ে ইসলাম ধর্মকে কাছ থেকে দেখে ও বুঝে তিনি আকৃষ্ট হন। ইসলামের জীবনবিধান দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে পুরোপুরি মুসলমান হয়ে যান।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ। যা কোরিয় উপদ্বীপের দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত। সিউল দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। সিউল বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ধনী শহরের তালিকায় থাকা একটি শহর।

দক্ষিণ কোরিয়ায় ইসলামের উপস্থিতি খুবই সামান্য। ২০০৫ সালেও দেশটির আদমশুমারিতে মুসলিমদের কোনো বিভাগের সদস্য হিসেবে ধরা হত না। বর্তমানে দেশটিতে ২ লাখ মুসলিম রয়েছে, যাদের বেশিরভাগ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকে আসা অভিবাসী এবং কিছু ধর্মান্তরিত বাসিন্দা। দেশটিতে ২১টি মসজিদ, ১৩টি ইসলামিক সেন্টার ও ১৪০টির মতো নামাজের স্থান রয়েছে।

১৯৬৯ সালে কোরিয়ান সরকার প্রদত্ত জমিতে গড়ে ওঠে সিউল কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার। সিউল সেন্ট্রাল মসজিদ দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম মসজিদ। যা হেনামডং সিউলে অবস্থিত। মসজিদটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অনন্য সুন্দর মসজিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

;

তীব্র গরম মুমিনকে যা শিক্ষা দেয়



মাওলানা ফখরুল ইসলাম, অতিথি লেখক, ইসলাম
গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

গরম থেকে বাঁচতে ফুটপাতের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মাথায় পানি দিচ্ছেন, ছবি : রাজু আহমেদ

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে এখন চলছে গ্রীষ্মকাল। ফলে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। বস্তুত শীত, গরম, রোদ, বৃষ্টি সবই আল্লাহর দেওয়া। তীব্র শীত আর প্রচণ্ড গরমে রয়েছে মুমিনে জন্য শিক্ষা। জনজীবন অতিষ্ট হওয়া গরম আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আজাবের কথা। তাই তীব্র তাপদাহের সময় দয়াময় আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করা জরুরি।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে মানবতার কল্যাণ সাধনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। ফলে তীব্র গরমের সময় ইবাদত-বন্দেগি সহজ করেছে ইসলাম। হজরত আবু জার (রা.) বলেন, এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম।
এক সময় মোয়াজ্জিন জোহরের আজান দিতে চেয়েছিল। তখন নবী কারিম (সা.) বলেন, গরম কমতে দাও। কিছুক্ষণ পর আবার মোয়াজ্জিন আজান দিতে চাইলে নবী কারিম (সা.) পুনরায় বলেন, গরম কমতে দাও।
এভাবে তিনি (নামাজ আদায়ে) এত বিলম্ব করলেন যে, আমরা টিলাগুলোর ছায়া দেখতে পেলাম।
এরপর নবী কারিম (সা.) বলেন, গরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ হতে। কাজেই গরম প্রচণ্ড হলে উত্তাপ কমার পর নামাজ আদায় করো। -সহিহ বোখারি : ৫৩৯
বর্ণিত হাদিসের আলোকে বিধান হলো, অতীব গরমের সময় কিছুটা বিলম্ব করে জোহরের নামাজ আদায় করা সুন্নত।

গরমের সময় এমন কিছু আমল রয়েছে, যেগুলোর সওয়াব অনেক। একজন মুমিন সেসব আমল করে সহজেই আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন। ওই সব আমলের কয়েকটি হলো-

নফল রোজা
গরমের রোজা শীতের থেকে বেশি কষ্টকর। গরমের কষ্ট উপেক্ষা করে যদি নফল রোজা রাখা যায়, তাহলে আল্লাহতায়ালা বেশি নেকি দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম ও পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বেশি সওয়াবের আশায় গরমকালে রোজা রাখতেন।

পিপাসার্তকে পানি পান করানো
পিপাসার্তকে পানি পান করানো একটি উত্তম কাজ। আর যদি প্রচণ্ড গরমে কাউকে ঠাণ্ডা পানি পান করানো হয়, তাহলে তো কাজটি আরও উত্তম হবে। এক ব্যক্তি হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন দান উত্তম? তিনি বললেন, ‘পানি পান করানো।’ -সুনানে নাসাই : ৫৪৫৬
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা নিবারণ সর্বোত্তম মহৎ কাজের একটি।’
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সদকা বা দান জাহান্নামের আগুন নির্বাপণ করে। আর পানি পান করানো উত্তম সদকা।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৭৪৩৫

নফল নামাজ
অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস, তাই জাহান্নামের ভয়ে বেশি করে এবং লম্বা লম্বা সুরা দিয়ে নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন গরম বেশি পড়বে, তখন বেশি নামাজ আদায় করো। কারণ অতিরিক্ত গরম হলো- জাহান্নামের নিশ্বাস।’ -মেশকাত : ৫৯১

গরম থেকে শিক্ষা
গরমের তীব্রতা থেকে মুমিনের জন্য রয়েছে শিক্ষা। কেননা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ পৃথিবীর আগুনের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি। তাই এ গরম থেকে জাহান্নামের তীব্রতা অনুমান করে গোনাহ থেকে মুক্ত থাকা। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জাহান্নাম তার প্রতিপালকের কাছে এ বলে নালিশ করেছিল, হে আমার প্রতিপালক! (দহনের প্রচণ্ডতায়) আমার এক অংশ আরেক অংশকে গ্রাস করে ফেলছে। ফলে আল্লাহ তাকে দুইটি শ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি শীতকালে অপরটি গ্রীষ্মকালে। আর তাই তোমরা গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠাণ্ডা অনুভব করো।’ -সহিহ বোখারি : ৫৪৫৫

গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা
আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে, গরিবদের মাঝে সুমিষ্ট ফল বিতরণ করা। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা। ঘামে ভেজা শরীরে জনসমাগমে গমন না করা। গরমের সময় প্রবাহিত ঘামের গন্ধ যেন অন্যের কষ্টের কারণ না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা। গ্রীষ্মকালকে গালমন্দ না করা বিষয়টিও খেয়াল রাখার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

বৃষ্টির জন্য নামাজ
প্রচণ্ড গরমে একপশলা বৃষ্টির জন্য মুমিনরা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। শস্য ফলানোসহ পশুপাখির খাবারের জন্য যেমন বৃষ্টি দরকার, তেমনি তীব্র তাপদাহে সৃষ্ট নানা জটিলতা ও কষ্ট থেকে মুক্তি পেতেও আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এমন পরিস্থিতিতে দয়াময় আল্লাহতায়ালার দরবারে বৃষ্টি কামনা করে নামাজ পড়া ও দোয়া করা সুন্নত। পরিভাষায় এই নামাজের নাম ‘ইসতিসকা’ বা বৃষ্টির নামাজ।

ইসলামের শিক্ষা হলো- সর্বাবস্থায় বান্দা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। প্রচণ্ড গরমের সময়ও এর ব্যতিক্রম নয়। তীব্র তাপদাহের সময় মানুষের উচিৎ জাহান্নামের গরমের কথা স্মরণ করা। জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে আত্মনিয়োগ করা।

একটু শান্তির জন্য দুনিয়ার জীবনে গরমের কষ্ট ও তীব্রতা থেকে বাঁচার জন্য যদি আমরা সম্ভবপর সব উপায় অবলম্বন করতে পারি, তাহলে আখেরাতের আজাব ও ভয়াবহতা থেকে বাঁচার জন্য আমলদার এবং সাধনাকারী হওয়া জরুরি।

;

৪০ বছর ধরে মদিনায় বিনামূল্যে চা-কফি খাওয়ানো বৃদ্ধের মৃত্যু



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

চা-কফি নিয়ে বসে আছেন শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

পবিত্র মদিনা জিয়ারতকারীদের অনেকের কাছে পরিচিত নাম শায়খ ইসমাইল আল-জাইম আবু আল-সাবা। গত ৪০ বছর ধরে তিনি পবিত্র হজ-উমরা পালনকারীদের মাঝে বিনামূল্যে চা, কফি, রুটি ও খেজুর বিতরণ করেছেন। অনেক বাংলাদেশি হাজি তার হাতে চা-কফি পান করেছেন।

সদাহাস্য সিরিয়ান এই নাগরিক মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ৯৬ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হারামাইনের খবর সরবরাহকারী ভেরিফায়েড পেইজ ‘ইনসাইড দ্য হারামাইন’ এই খবর জানিয়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে।

জানা যায়, প্রতিদিন ৪০টি ফ্লাস্কে করে চা-কফি আনতেন তিনি। এ জন্য একটি বিশেষ ট্রলি ব্যবহার করতেন, মসজিদে নববিতে যাওয়া অন্যতম পথ জায়েদিয়া এলাকায় বসতেন তিনি। সবুজ চা, লাল চাসহ নানা স্বাদের চা বানিয়ে আনতেন। থাকত চিনিযুক্ত, চিনিমুক্ত চা-কফি। এছাড়া এলাচযুক্ত চা, পুদিনা চা, বিভিন্নরকমের মশলাযুক্ত চা আনতেন।

তিনি রাস্তার পাশে বসে পথচারীদের মধ্যে চা, কফি, খেজুর, রুটি ও বিস্কুট বিনামূল্যে বিতরণ করতেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করতেন ছেলেরা। কেউ কিছু দিতে চাইলে বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখান করতেন।

গত বছর সৌদি আরবের প্রভাবশালী পত্রিকা আল আরাবিয়া তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সিরিয়ার নাগরিক শায়খ ইসমাইল প্রায় ৪০ বছর ধরে মদিনায় বসবাস করে আসছিলেন। মদিনার কুবা এভিনিউতে একটি সাধারণ বাড়িতে বসবাস করলেও নিজের সম্পদ পুরোটাই উৎসর্গ করেছিলেন হজ ও উমরা যাত্রীদের খেদমতে।

টানা চার দশক ধরে অনন্য এই সেবার কারণে সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হন। তার মৃত্যুতে মদিনায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বাংলাদেশের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্মৃতিচারণের পাশাপাশি শোকপ্রকাশ করে তার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।

;