কোরবানির গোশতের সামাজিক বণ্টন নিয়ে কিছু কথা



মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম
কোরবানির গোশত মুসলিম সমাজে বিলি-বণ্টন করা ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ, ছবি: সংগৃহীত

কোরবানির গোশত মুসলিম সমাজে বিলি-বণ্টন করা ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ, ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কোরবানির গোশত কোরবানিদাতার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিলি-বণ্টন করা ঐতিহ্যবাহী রেওয়াজ। ইসলামের শুরু থেকেই এভাবে চলে আসছে। সামাজিকভাবে সমাজপতিদের নেতৃত্বে কোরবানির গোশত বণ্টনের কোনো দৃষ্টান্ত অনুসরণীয় প্রথম তিন যুগে পাওয়া যায় না। তার পরও নতুন চালু হওয়া এ সামাজিক বণ্টন প্রথা বেশদ্রুত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে।

প্রচলিত সামাজিক বণ্টনের ধরণ, স্থানভেদে সামান্য ভিন্নতার সঙ্গে অনেকটাই এমন- প্রত্যেক কোরবানিদাতা তার কোরবানির গোশতের এক তৃতীয়াংশ মসজিদে দিয়ে আসেন। মসজিদ কমিটির নেতৃত্বে সবার জমাকৃত গোশত সমাজের সবার মাঝে সমান করে বণ্টন করা হয়।

এ পদ্ধতির একটাই মাত্র সুবিধা, তা হলো- কোরবানিদাতার বাড়িতে ভিক্ষুকদের ভিড় থাকে না এবং কোরবানিদাতাকে গোশতের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি বাড়ি যেতে হয় না। এ সুবিধার কারণেই মূলত কোরবানিদাতাদের অনেকেই এ পদ্ধতিকে পছন্দ করে থাকেন। কিন্তু এ পদ্ধতির বেশ কিছু শরয়ি সমস্যা রয়েছে। সেগুলোর অন্যতম হলো-

১. ইসলামের প্রথম তিন যুগের অনুসৃত পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে।
২. কোরবানি একটি ব্যক্তিগত ইবাদত, দলবদ্ধ ইবাদত নয়। কিন্তু প্রচলিত গোশত বণ্টন পদ্ধতির জেরে কোরবানি দলবদ্ধ ইবাদতের রূপ পরিগ্রহ করছে।

৩. কোরবানির গোশত আদৌ বিতরণ করা হবে কি-না, বিতরণ করা হলে কতটুকু অংশ বিতরণ করা হবে তা সম্পূর্ণ কোরবানিদাতার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। শরিয়ত তাকে কোনো কিছুতেই বাধ্য করেনি। কিন্তু প্রচলিত সামাজিক বণ্টন পদ্ধতিতে সমাজপতিরা কোরবানিদাতার এ ঐচ্ছিক অধিকার হরণ করে। গোশতের নির্ধারিত একটি অংশ সামাজের জন্য দিতে তাকে বাধ্য করা হয়। কোথাও কোথাও তো গোশত না দিলে সমাজচ্যুত করার হুমকিও দেওয়া হয়। আবার কোথাও জোরাল কোনো হুমকি না থাকলে সমাজের লোকদের বাঁকাদৃষ্টি ও তীর্যক মন্তব্যের ভয়ে সমাজপতিদের নির্ধারিত অংশ দিতে কোরবানিদাতা বাধ্যবাধকতা অনুভব করেন। যা আল্লাহতায়ালা বাধ্য করেননি, আল্লাহ যা ঐচ্ছিক রেখেছেন সমাজ ও সমাজপতিরা তা বাধ্য করার অধিকার কিভাবে পায়?

৪. মসজিদের মাসিক চাঁদা, মুষ্ঠির চাল না দিলে কোরবানির গোশতের ভাগ না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অপরদিকে যারা মসজিদের মাসিক চাঁদা, মুষ্ঠির চাল ইত্যাদি দিয়ে আসছেন তারা এ সূত্র ধরে গোশতের ভাগকে নিজের প্রাপ্য অধিকার জ্ঞান করে।
দ্বি-পাক্ষিক বস্তু আদান-প্রদানে যখন একটি অপরটির ওপর নির্ভরশীল থাকে- তখন স্পষ্টই তা বেচাকেনা। অতএব, প্রচলিত সামাজিক বণ্টনে সারা বছরের মাসিক চাঁদা ও মুষ্ঠির চালের বিনিময়ে কোরবানির গোশত বিক্রি করা হচ্ছে।
অথচ এ মাসয়ালা সবাই জানে যে, কোরবানির গোশত বিক্রি করা নাজায়েয। না জেনে বিক্রি করে থাকলে তার মূল্য অথবা সেই পরিমাণ গোশত কোরবানির বাইরে থেকে গরিবদের মাঝে দান করা ওয়াজিব।

৫. অন্য সমাজের মসজিদে নামাজ পড়লে কোরবানির গোশতের ভাগ না দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয় কোথাও কোথাও।
অথচ কোরবানির গোশত প্রদানে ইসলাম কোনো শর্ত রাখেনি। এমনকি অমুসলিমদেরও কোরবানির গোশত দেওয়ার অনুমতি ইসলামে আছে। ইসলাম যা নিঃশর্তে প্রদান করতে বলেছে, তা প্রদানের জন্য নিজেদের মসজিদে নামাজ পড়ার শর্ত দেওয়ার অধিকার সমাজপতিরা কোথায় পায়?

৬. প্রচলিত বণ্টন পদ্ধতিতে সমাজের সবাইকে গোশতের ভাগ দেওয়া হয়। যারা কোরবানি করেনি তাদেরকে দেওয়া হয়, আবার যারা কোরবানি করেছেন তাদেরও দেওয়া হয়। ফল দাঁড়াচ্ছে, সমাজের জন্য গোশত দিয়ে দেওয়ার পর তার কিছু অংশ কোরবানি দাতারা ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়া একটি ঘৃণিত কাজ, নিকৃষ্ট স্বভাব। হাদিসে এর উপমা দেওয়া হয়েছে নিজের বমি নিজেই খাওয়া। সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘দেওয়ার পর ফিরিয়ে নেওয়া কোনো মানুষের জন্য হালাল নয়। এর দৃষ্টান্ত হলো- কুকুরের মতো। কুকুরের যখন খেতে খেতে তৃপ্তি মিটে যায়, তখন সে বমি করে। কিছুক্ষণ পরে নিজেই আবার নিজের সেই বমি চেটে চেটে খায়।’ -মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ২২১৩১

৭. যদিও কোরবানির গোশত বিলি করা ওয়াজিব না, সবটুকু গোশত নিজের পরিবারের লোকদের খাওয়ানো জায়েয আছে কিন্তু মুস্তাহাব হলো তিন ভাগের দুই ভাগ বিলি করা। এক ভাগ গরিবদের মাঝে বিলি করা, আরেক ভাগ আত্মীয়, পড়শি ও বন্ধুদের মাঝে বিলি করা।
প্রচলিত সামাজিক বণ্টনে যারা কোরবানির গোশত জমা দেয় তারা কিন্তু গরিবের ভাগটাই এখানে জমা দেয়। যার জন্য বাড়িতে কোনো গরিব, মিসকিন, ভিক্ষুক আসলে তাদের সোজা বলে দেয়, গরিবের ভাগ মসজিদে দিয়ে দিছি। অথচ মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও সমাজপতিরা কোরবানির গোশতের এ গরিবের ভাগ সমাজের ধনি, গরিব, স্বচ্ছল, অস্বচ্ছল নির্বিশেষে সবাইকে দেয়। এটা চরম লজ্জাকর একটি কাজ।

৮. সাধারণত প্রান্তিক গ্রামাঞ্চলে অনেক পাড়া, মহল্লা এমন থাকে যেখানের কেউই কোরবানি দেয় না। মহল্লাবাসী সবাই দরিদ্র, দিনমজুর। কিন্তু পাশের মহল্লায়, গ্রামে অনেকেই কোরবানি দেয়।
আগে এ ধরণের পাড়ার দরিদ্ররা কোরবানির দিন আশ-পাশের পাড়া-মহল্লার কোরবানিদাতাদের বাড়িতে যেত। সবার থেকে কিছু কিছু গোশত পেত। যাতে তাদের দু’এক দিন অনায়েসেই চলে যেত। তৃপ্ত করে গোশত খেত।
কিন্তু সামাজিক বণ্টন প্রথার রেওয়াজ তাদের গোশত খাওয়ার এ সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন তারা পাশের মহল্লার কোরবানিদাতাদের বাড়িতে গেলে গোশত পায় না। কোরবানিদাতা উত্তর দেয়, গরিবের ভাগ মসজিদে দিছি। তোমরা মসজিদে যাও। আর মসজিদে গেলে সমাজপতিরা তাদের উত্তর দেয়, খাতায় তোমার নাম নেই। তুমি এ সমাজের না। তোমাকে আমরা গোশত দিতে পারব না।

বাড়ি থেকে গোশত বিলি করার অসুবিধার কারণে যদি একান্তই দলবদ্ধভাবে গোশত বিলি করার উদ্যোগ নিতে হয় তবে নিম্নলিখিত শর্তগুলো নিশ্চিত করতে হবে। যথা-

১. গোশত বিতরণে এ দিকে আদৌ ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না যে, কে মসজিদে চাঁদা দেয় আর কে দেয় না। মসজিদ বা কোনো প্রতিষ্ঠানের দানের সঙ্গে কোরবানির গোশতকে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত করা যাবে না।

২. সামাজিক সীমানাকে গুরুত্ব দেওয়া যাবে না।

৩. সামাজিক আয়োজনে গোশত জমা দিতে বা গোশতের নির্দিষ্ট পরিমাণ জমা দিতে কোরবানিদাতাদের বাধ্য করা যাবে না। এমনকি কোনো কোরবানিদাতা সমাজে গোশত জমা না দিয়ে নিজে ব্যক্তিগতভাবে গরিবদের মাঝে বিলি করলে তার সমালোচনা করা যাবে না, তার নিন্দা করা যাবে না, তাকে সমাজচ্যুত করা যাবে না। গোশত জমাদানকে সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক রাখতে হবে।

৪. গোশতের ভাগ বিতরণের জন্য মুসলমান, নামাজি, পরহেজগার ইত্যাদি কোনো শর্তারোপ করা যাবে না।

৫. যারা কোরবানি দিয়েছে এবং যারা সমাজে ধনি হিসেবে খ্যাত তাদেরকে সম্মিলিত গোশতের ভাগ দেওয়া যাবে না।
সমাজের কোরবানিদাতাদের এবং ধনিদের গোশত দিতে হলে বাড়িতে কোরবানি দাতারা তিনের যে দু’ভাগ গোশত রেখে দিয়েছে তার দ্বিতীয় ভাগ থেকে নিজ উদ্যোগে দিবে। কেননা, এ দ্বিতীয় ভাগ আত্মীয়, পড়শি ও বন্ধুদের জন্য।

৬. সামজের বাইরের ভাসমান দরিদ্রদের জন্য এবং অন্যান্য দরিদ্র সমাজগুলোর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গোশতের বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
এটা দু’ভাবে হতে পারে। হয়তো কোরবানিদাতারা গোশতের একটা অংশ বাড়িতে রেখে দিবে। সমাজের বাইরে থেকে আগত ভিক্ষুকদের মাঝে নিজ হাতে দিবে। অথবা হয়তো দলবদ্ধ গোশত নিজ সমাজের দরিদ্রদের মাঝে বণ্টনের আগেই উল্লেখযোগ্য একটা অংশ আলাদা করে ফেলবে। যা নিজ সমাজের বাইরের গরিবদের মাঝে ও দূরদূরান্ত থেকে আগত ভিক্ষুকদের মাঝে বিতরণ করবে।

পরিশেষে বলব, ইসলাম যা ব্যক্তিগত রেখেছে তা ব্যক্তিগত রাখাই অধিকতর কল্যাণকর। তাকে দলবদ্ধ বা সমাজবদ্ধ রূপ দেওয়া অনুচিত। তাই কোরবানির গোশত বিতরণে সামাজিক বণ্টনের দিকে পারতপক্ষে না যাওয়াই শ্রেয়। আর সে দিকে যেতে হলে উদ্ভুত শরয়ি সমস্যাগুলোর সুষ্ঠু সমাধান করে, সকল শর্ত যথাযথভাবে পালন করে তবেই সামাজিক বণ্টনের উদ্যোগ নেওয়া। কেননা, সামাজিক বণ্টনের প্রচলিত ধরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

   

রিজিক বৃদ্ধির ৪ আমল



ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করেন যে, তার আয়-উপার্জন, জীবন-মৃত্যু এবং সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য ইত্যাদি র্নিধারণ হয়ে যায়; যখন তিনি মায়ের উদরে থাকেন। আর এসব তিনি লাভ করেন তার জন্য বরাদ্দ উপায়-উপকরণগুলোর মাধ্যমে। তাই আমাদের কর্তব্য হলো- হাত গুটিয়ে বসে না থেকে এর জন্য র্নিধারিত উপায়-উপকরণ সংগ্রহে চেষ্টা করা। যেমন চাষাবাদ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিল্প-চারু, চাকরি-বাকরি বা অন্য কিছু।

আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তিনিই তো তোমাদের জন্য জমিনকে সুগম করে দিয়েছেন, কাজেই তোমরা এর পথে প্রান্তরে বিচরণ করো এবং তার রিজিক থেকে তোমরা আহার করো। আর তার নিকটই পুনরুত্থান।’ -সুরা আল মুলক : ১৫

কোরআন-হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির বিভিন্ন আমল ও উপায়ের কথা বর্ণিত হয়েছে। সেখান থেকে ৪টি আমলের কথা উল্লেখ করা হলো-

তওবা-ইস্তেগফার : তওবা-ইস্তিগফার করার মাধ্যমে বান্দার রিজিক বাড়ে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের বাগবাগিচা এবং নদীনালা দান করবেন।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লাগাতার তওবা-ইস্তেগফার করবে; আল্লাহতায়ালা সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।’ -সুনানে আবু দাউদ : ১৫১৮

পরহেজগারি অবলম্বন এবং আল্লার ওপর ভরসা : যেসব আমলে রিজিকে প্রবৃদ্ধি ঘটে, তার মধ্যে তাকওয়া-পরহেজগারি অবলম্বন এবং তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা অন্যতম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে আল্লাহর তাকওয়া অর্জন করবে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেবেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যার কল্পনাও সে করতে পারবে না।’ -সুরা সাদ : ৩৫

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথার্থভাবে ভরসা রাখো। তিনি তোমাদের সেভাবে রিজিক দান করবেন, যেভাবে তিনি পাখিদের দান করে থাকেন। পাখিরা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় (খালি পেটে) বাসা থেকে বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে বাসায় ফেরে।’ -জামে তিরমিজি : ২৩৪৪

সময়মতো নামাজ আদায় এবং ইবাদতের জন্য নিজেকে মুক্ত করা : সময়মতো দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করলে রিজিক বাড়ে। নামাজ আদায় করার ফাঁকে ফাঁকে কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করতে হবে; কাজ ও ব্যবসা–বাণিজ্য করার ফাঁকে ফাঁকে নামাজ নয়। একই সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত পালনে নিজেকে ঝামেলামুক্ত করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আপনি পরিবার-পরিজনকে নামাজ আদায়ের আদেশ দিন এবং নিজেও তার ওপর অটল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো রিজিক চাই না। আমিই আপনাকে রিজিক দিই। আর মুত্তাকিদের জন্যই শুভ পরিণাম।’ -সুরা ত্বহা : ১৩২

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি তোমার অন্তরকে খালি করো। আমি তোমার অন্তরকে অভাবমুক্ত হিসেবে পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার দরিদ্র্যের পথ দূর করে দেব। আর যদি তা না করো, আমি তোমার হাত (দুনিয়ার) ব্যস্ততায় পূর্ণ করে দেবো এবং তোমার অভাব মেটাব না।’ -জামে তিরমিজি : ২৪৬৬

রিজিক অর্জনের চেষ্টায় থাকা : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে (জমিনে) ছড়িয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) সন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ -সুরা জুমা : ১০

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে সকালবেলা পাহাড়ের দিকে বের হয়। এরপর লাকড়ি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং দানও করে। মানুষের কাছে হাত পাতার চেয়ে তার জন্য এটা উত্তম।’ -সহিহ বোখারি : ১৪৮০

;

গরমে মুমিনের আমল



মুফতি উমর ফারুক আশিকী
গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

গরমে পশুপাখির প্রতি সদয় আচরণ কাম্য, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলে, হে রব! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। আল্লাহতায়ালা তখন তাকে দুইটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি দেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে আরেকটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাকো।’ -সহিহ বোখারি : ৩২৬০

মুমিন বান্দারা দয়াময় আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী হয়ে গ্রীষ্মের এই গরম সময়ে অফুরন্ত সওয়াব লাভের জন্য বেশ কিছু আমল করতে পারেন। আশা করা যায়, মহান আল্লাহর দয়ায় পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে- ইনশাআল্লাহ।

তওবা করা : মানুষের পাপের কারণে মানুষের ওপর নানা ধরনের বিপদাপদ আসে, তাই প্রতিকূল অবস্থাকে অনুকূলে আনতে মহান আল্লাহর কাছে তওবা করার কোনো বিকল্প নেই।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ নিজেই বলেছেন, ‘আর বলেছি, তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা।’ -সুরা নুহ : ১০-১২

ইবাদতে গাফিলতি না করা : গরমের কারণে ইবাদত-বন্দেগিতে গাফিলতি না করা। কারণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়ার গরমের চেয়ে বহুগুণে উত্তপ্ত। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘পেছনে থাকা লোকগুলো আল্লাহর রাসুলের বিপক্ষে বসে থাকতে পেরে খুশি হলো। আর তারা অপছন্দ করল তাদের মাল ও জান নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করতে এবং তারা বলল, ‘তোমরা গরমের মধ্যে বের হয়ো না।’ বলো, জাহান্নামের আগুন অধিকতর গরম, যদি তারা বুঝত।’ -সুরা তওবা : ৮১

পিপাসার্তকে পানি পান করানো : হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত সাদ ইবনে উবাদা (রা.) বলেন, (এক দিন) আমি (নবীজিকে) বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কোন সদকা উত্তম? তিনি বলেন, পানি পান করানো। -সুনানে নাসায়ি : ৩৬৬৫

চলমান গরমের সময় শহরেরে বিভিন্ন স্থানে পথচারীদের জন্য ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রাখা হয় বিভিন্ন অফিস, দাতব্য সংগঠন কিংবা ব্যক্তি উদ্যোগে। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ, সওয়াবের কাজ।

কেউ পানি চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানাতে নিষেধ করেছেন নবী কারিম (সা.)। ইরশাদ হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এমন কী জিনিস আছে, যা কেউ চাইলে না দিয়ে তাকে বিদায় দেওয়াটা ঠিক নয়?

তিনি বলেন, পানি, লবণ ও আগুন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই পানি সম্পর্কে তো আমরা জানি, কিন্তু লবণ ও আগুনের ব্যাপারে কেন বাধা দেওয়া যাবে না? তিনি বলেন, হে হুমায়রা! যে ব্যক্তি আগুন দান করল, সে যেন ওই আগুন দিয়ে রান্না করা যাবতীয় খাদ্যই দান করল।
যে ব্যক্তি লবণ দান করল, ওই লবণে খাদ্য যতটা সুস্বাদু হলো তা সবই যেন সে দান করল। যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা সহজলভ্য, সে যেন একটি গোলামকে দাসত্বমুক্ত করল এবং যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে এমন স্থানে পানি পান করালো, যেখানে তা দুষ্প্রাপ্য, সে যেন তাকে জীবন দান করল। -সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৪৭৪

অন্যের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো : তীব্র গরমে অনেক সময় মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। বয়োবৃদ্ধরা তাদের প্রয়োজনীয় কাজের জন্য বাইরে যেতে পারেন না, তখন তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে সদকার সওয়াব মেলে।

হজরত আবু জার (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমার হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার সৎকাজের আদেশ এবং তোমার অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথহারা লোককে পথের সন্ধান দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ, স্বল্প দৃষ্টিসম্পন্ন লোককে সঠিক দৃষ্টি দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। পথ থেকে পাথর, কাঁটা ও হাড় সরানো তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। তোমার বালতি দিয়ে পানি তুলে তোমার ভাইয়ের বালতিতে ঢেলে দেওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ। -জামে তিরমিজি : ১৯৫৬

পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া : গরমে মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিও কষ্টে পড়ে। তাই মানুষের উচিত তাদের পশুপাখির প্রতি সদয় হওয়া।

হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়; সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল, কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, পানির পিপাসা কুকুরটাকে মুমূর্ষ করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ হতে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করালো), এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো। -সহিহ বোখারি : ৩৩২১

গরমের কারণে দুনিয়ার এই হাহাকার পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে, মহান রবের সন্তুষ্টি পেতে বর্ণিত আমলগুলো বেশি বেশি করা জরুরি।

 

;

আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট: ধর্মমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ অনুসারে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে হজ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত যে পোর্টালটি রয়েছে সেখানে আমরা নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করছি। আগামী দিনে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা হবে বিশ্বের মধ্যে অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে ঢাকা হজ অফিসের সম্মেলন কক্ষে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ ২০২৪ ’র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ধর্মমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ফরিদুল হক খান বলেন, আপনারা সকলেই যাতে সহী-শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে পারেন সেজন্যই মূলত আজকের এই প্রশিক্ষণ। আমরা প্রশিক্ষণের জন্য অত্যন্ত দক্ষ প্রশিক্ষক নির্বাচন করেছি। আপনারা যদি প্রশিক্ষণের প্রতি মনযোগী হতে পারেন তাহলে আপনারা হজের নিয়ম-কানুন, হুকুম-আহকাম, ধারাবাহিক আনুষ্ঠানিকতা- সবকিছু আয়ত্তে আনতে পারবেন।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষেরই প্রবণতা হলো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হজ পালন করা। হজ অনেক পরিশ্রমসাধ্য ইবাদত, এর জন্য শারীরিক সামর্থ্য থাকা বাঞ্চনীয়। অনেকেরই সেই শারীরিক সামর্থ্য থাকে না। যার কারণে তাদের পক্ষে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদন করা অনেক কষ্টকর হয়ে যায়।

তিনি বলেন, অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জমানো সঞ্চয় দিয়েই হজব্রত পালন করতে যান। এদেশের অধিকাংশ মানুষেরই দ্বিতীয় বার হজ করার মতো আর্থিক সঙ্গতি থাকে না। সে কারণে আপনার পরিশ্রম ও অর্থ যেন বিফলে না যায় সেজন্য অবশ্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)’র নির্দেশিত পথ অনুসরণ করে হজ সম্পাদন করতে হবে। সহী ও শুদ্ধভাবে হজব্রত পালন করতে হবে।

ফরিদুল হক খান বলেন, সৌদি আরবে আপনার পরিচয় শুধু একজন হজযাত্রী নয়, আপনার পরিচয়-আপনি একজন বাংলাদেশি। আপনার আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চালচলনের মাধ্যমেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রকাশ পাবে।

তিনি সৌদি আরবের আইন-কানুন, নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিপালনে কোনরূপ বিচ্যুতি না ঘটে সেদিকে যত্নবান থাকার আহ্বান জানান।

এছাড়া, কারো জন্য দেশের ভাবমূর্তি ও সম্মান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে বিশেষভাবে সর্তক থাকার জন্য হজযাত্রীদেরকে অনুরোধ জানান তিনি।

ধর্মসচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, যুগ্মসচিব ড. মো. মঞ্জরুল হক ও ঢাকা হজ অফিসের পরিচালক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

প্রশিক্ষণে সরকারি মাধ্যমে নিবন্ধিত ঢাকার হজযাত্রীরা অংশগ্রহণ করছেন।

;

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আশঙ্কা এজেন্সি মালিকদের



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন হজ এজেন্সির মালিকেরা। তাই সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে দ্রুত সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন এজেন্সি মালিকেরা।

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান অপারেটিং হজ এজেন্সির মালিকরা।

সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে হাবিবুল্লাহ মুহাম্মদ কুতুবুদ্দীন লিখিত বক্তব্যে বলেন, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধতন কর্মকর্তা এবং মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তাদের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে হজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ ১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়- আগামী ২৯ এপ্রিল হজ যাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে।

চিঠিতে আরও জানানো হয়, ২৯ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সীর অবহেলার কারণে হজযাত্রীদের হজে গমন অনিশ্চিত হলে সে এজেন্সীর বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন ২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে, গত ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে জানানো হয়, সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের আবাসন, ক্যাটারিং সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সকল প্রকার অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহান, ইত্যাদি) সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এখনো অনেক এজেন্সির ৮০ শতাংশ কার্যক্রম বাকি।

এমন অবস্থায় সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এবং সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে হজ এজেন্সি মালিকেরা অনুরোধ করেন।

এছাড়াও কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেন তারা। সেগুলো হলো- দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করে ই হজ সিস্টেম আপডেট করতে হবে। ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও সকল এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হবে। মোয়াজ্জেমদের জন্য বারকোড ভিসার বিষয়টি নিশ্চিত করা। যাদের সৌদি একাউন্টে এখনো রিয়াল জমা হয়নি তাদের একাউন্টে দ্রুত রিয়াল জমার ব্যবস্থা করা।

তারা বলেন, বর্তমানে সৌদি একাউন্টে টাকা ঢুকতে দেড় মাস সময় লাগে। যদি কারো একাউন্টে ১ পয়সাও কম থাকে তাহলে তার হজে যাওয়া সম্ভব হবে না। এবং বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন চার্জ একবারে হিসাব করে পাঠানো অনেকটা অসম্ভব। এছাড়া যাদের এখনো মেননজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা হয়নি তাদের জন্য দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করতে হবে।

এছাড়াও ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখার দাবি জানান তারা। আরও বলেন, অতীতে দেখা গেছে অনেকে হজ করতে যাওয়ার ইচ্ছে করলেও সকল প্রস্তুতির পর মারা গেছেন। আবার কেউ মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে যেতে পারেন না। তাই সেই হজযাত্রীর পরিবর্তে তার পরিবারের অন্য কোন সদস্যদের যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতো তাহলে জমাকৃত টাকা গচ্চা যেতো না। বর্তমানে যে অবস্থা আছে তাতে ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে অহেতুক প্রচুর টাকা সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের ক্ষতি হবে। যদি বিষয়টি সৌদি সরকারকে বুঝাতে আমরা সক্ষম হই তাহলে আমাদের বিশ্বাস সৌদি সরকার বাস্তবতা বুঝে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

;