ভারত মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের ২১ কোটি টাকা স্কলারশিপ দিয়েছে



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের স্কলারশিপের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ছবি: বার্তা২৪

মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের স্কলারশিপের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা, ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

মুক্তিযোদ্ধা স্কলারশিপ প্রকল্পের আওতায় ১২ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রীকে ২১ কোটি টাকার স্কলারশিপ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এই সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সিলেটে ভারতীয় হাইকমিশনের উদ্যোগে সিলেট বিভাগ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ২ হাজার ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের হাতে স্কলারশিপের চেক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান।

হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্পের চেক বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। সিলেট হযরত শাহজালালের পবিত্র ভূমি। এই সুন্দর সিলেট অঞ্চলে আমি অনেকবার ভ্রমণ করেছি। সিলেটের চা বাগান আমার নিজ শহর দার্জিলিংয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের দুই দেশের এক পবিত্র বন্ধন। এই মহান জাতির পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় চরম কষ্ট সহ্য করেছেন। বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্ম তাদের অবদানের প্রতি চিরঋণী।

ভারত সরকার এই ভূমির বীর ‘পুত্র-কন্যাদের’ আত্মদানকে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্মরণে এবং দেশের একটি উন্নত ভবিষ্যতের লক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের অমূল্য অবদানকে সম্মান জানাতে কয়েকটি কল্যাণমূলক উদ্যোগ এবং প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল মুক্তিযোদ্ধার জন্য পাঁচ বছরের মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা, অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতে সশস্ত্র বাহিনীর হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা, নতুন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বৃত্তি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড আয়োজিত বিজয় দিবস উদযাপনে অংশগ্রহণের জন্য প্রত্যেক বছর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রতিনিধিদলকে কলকাতায় আমন্ত্রণ জানানো হয়।

তিনি বলেন, ভারত সরকার ২০০৬ সালে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা বৃত্তি প্রকল্পটি চালু করেছিল এবং ২০১৭ সালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন প্রকল্পের ঘোষণা দেন। এই প্রকল্পগুলো একত্রিত হলে, ভারত সরকারের মোট ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় করবে। ভারত সরকার স্নাতক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে অধ্যয়নরত মুক্তিযোদ্ধা উত্তরাধিকারীদের শিক্ষা সহায়তা হিসেবে বৃত্তি প্রদান করে। এ বৃত্তি প্রকল্প থেকে ২১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী সরাসরি উপকৃত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ভারতের সরকারের ‘ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’ এবং 'প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা' ও ‘ডিজিটাল ভারত’-এর মতো কিছু ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প অনুযায়ী এই বৃত্তি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ভারতের সরকারের এই প্রকল্পগুলোর মতো পরের বছর হতে বৃত্তির পরিমাণ শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি হস্তান্তর করা হবে। এই প্রকল্পসমূহের লক্ষ্য সুবিধাভোগীদের শ্রম লাঘব ও এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে ভারত সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। গত কয়েক বছরে আমাদের দুই মহান দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে।

২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের পর যে উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছিটমহল সমস্যাসহ দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত স্থল ও সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি, মহাকাশ, তথ্য প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক্স, সাইবার নিরাপত্তা এবং বেসামরিক পারমাণবিক শক্তির মতো উচ্চতর প্রযুক্তি ক্ষেত্রসহ ৯০টিরও বেশি চুক্তি সম্পাদন, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২৮.৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত, ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, গত বছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ১১৫% বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত, ভারতীয় বিনিয়োগ ৩ বিলিয়ন থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি (আসন্ন বিনিয়োগসহ), বর্তমানে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণচুক্তি বাস্তবায়ন) ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভৈরব ও তিতাস সেতু নির্মাণ, অতিরিক্ত ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ, আখাউড়া-আগরতলা রেললাইনসহ ১৬টি উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্পের উদ্বোধন, নির্মাণাধীন ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মকর্তার ভারতে প্রশিক্ষণ, ১ হাজার ৫শ’ বাংলাদেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রদান তিনগুণ বৃদ্ধি (২০১৫ সালে ৫ লাখ থেকে ২০১৭ সালে ১৪ লাখে উন্নীত) মুক্তিযোদ্ধা, জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও মহিলা আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা, ২০১৭ সালে ঢাকা-খুলনা-কলকাতা বাস সার্ভিস ও খুলনা-কলকাতা বন্ধন এক্সপ্রেস চালু, ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস-এর প্রান্তিক কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন সেবা।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দু’দেশের সম্পর্কের বর্তমান সময়কে ‘সোনালী অধ্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন বলে জানান তিনি।

ভারত ও বাংলাদেশ যৌথভাবে যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নিয়েছে সেগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, এর আগে এই সপ্তাহের ১০ সেপ্টেম্বর, ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে কুলাউড়া-শাহবাজপুর বিভাগের রেলপথের পুনঃনির্মাণে কাজের উদ্বোধন করেন। এই রেলপথ পুনঃস্থাপনে আসামের করিমগঞ্জ জেলার সঙ্গে এবং ভারতের অন্যান্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে সরাসরি সংযুক্ত করবে।

এসময় তিনি সিলেটে সহকারী হাইকমিশন অফিস চালুর কথা উল্লেখ করে বলেন,  আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে সহকারী হাইকমিশনের কাজ শুরু হবে। এতে সিলেটবাসীকে দ্রুত ভিসা প্রদান করা সম্ভব হবে।

এসময় তিনি বৃত্তিপ্রাপ্তদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে তাদের সফল শিক্ষাজীবন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কামনা করেন।

   

বন বিভাগের গেটের দেওয়ালে চাপা পড়ে শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ায় বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে জুরাইন আহমেদ (৪) নামে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে খোকসা উপজেলা বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে এ ঘটনা ঘটে।

জুরাইন আহমেদ খোকসা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাঠপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জলের ছেলে।

নিহত শিশুর চাচা আজিজুল ইসলাম জানান, শিশুরা খেলছিলো আবার কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। এসময় অসাবধানতাবশত গেটের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে নিহত হয়।

বন কর্মকর্তার অফিসটি সব সময় অরক্ষিত থাকে। কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় জুবায়েরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

উপজেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে কুষ্টিয়ার এক ঠিকাদার গেট নির্মাণ করেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। গেট নির্মাণে ত্রুটি থাকতে পারে। ঠিকাদার গেটের পিলার এমনভাবে তৈরি করেছেন, মনে হচ্ছে পিলার দুটি মাটির ওপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাড়া দিলেই নড়ছে। বন কর্মকর্তার গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

বাঘা শরীফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে দুই গুরুর ত্যাগ!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাবা-মায়ের দেওয়া নাম মোহাম্মদ শরীফ। কিন্তু বলীখেলার রিংয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপের কারণে সেই আসল নামটিই এখন বলতে গেলে হাওয়া। সবার মুখে মুখে রটে তাঁর নামটাই হয়ে গেছে ‘বাঘা শরীফ’। কুমিল্লার হোমনার এই ডানপিটে হৃষ্টপুষ্ট শরীরের তরুণ এবার প্রথমবার অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলায়। পরেরটাতো ইতিহাস। একে একে চ্যালেঞ্জ রাউন্ড, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিতে ইতিহাসের পাতায় যেন নিজের নামটা খুঁদাই করে গেলেন কুমিল্লার মানুষের ‘প্রিয় বলী’ বাঘা শরীফ। গল্পটা যেন সেই পুরনো প্রবাদের মতো-আসিলাম, দেখিলাম, জয় করিলাম!

অথচ বাঘা শরীফের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথাও ছিল না। বলীখেলায় অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে এলেও চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে তাঁকে রাখেনি আয়োজক কমিটি। তাতে মন খারাপ হয়ে যায় শরীফের। সেটি দেখে বাঘা শরীফকে সুযোগ দিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী নিজের নামও প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তাতেও আয়োজকদের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীও বাঘা শরীফকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রত্যাহার করে নেন নিজের নাম। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে শাহজালালের অনুরোধ রাখে আয়োজক কমিটি। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় বাঘা শরীফের। চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলতে নেমেই কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলীকে হারিয়ে বাঘা শরীফ উঠে যান সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে একইভাবে হারান সীতাকুণ্ডের রাসেল বলীকে।

ফাইনাল শুরু হতেই রিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বাঘা শরীফকে নানা দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন শাহজালাল বলী। অদূরে দাঁড়িয়ে জীবন বলীও সমর্থন জানান শরীফকে। আর এতেই কিনা দ্বিগুণ উৎসাহে রাশেদকে চাপে রাখেন শরীফ। অবশ্য রাশেদও কয়েকবার চেষ্টা করেন ‘মরণকামড়’ দেওয়ার। কিন্তু শরীফের বলের কাছে পরাস্থ হন বারবার। এভাবে ১১ মিনিট ধরে চলতে থাকে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। কিন্তু থামতে যে হবেই! শেষ পর্যন্ত রাশেদ পারলেন না আর, মেনে নেন হার। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক এই বলীখেলা পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।

শরীফ বলী জিততেই আনন্দে ফেটে পড়েন শাহজালাল ও জীবন বলী। জানতে চাইলে জীবন বলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে আসার আগে শরীফ আমাকে ফোন করেছিলেন। তার খেলার খুব আগ্রহ ছিল, সেটি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। আর সে খুব ভালো বলীও। কুমিল্লায় তাঁকে এক নামে চেনেন সবাই। কিন্তু তাঁকে সুযোগ দিচ্ছিল না আয়োজক কমিটি। মূলত তাঁকে সুযোগ করে দিতে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করি নিই। কিন্তু এরপরও সুযোগ না দেওয়ায় শাহজালাল বলীও তাঁর জন্য নাম প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের মুখ উজ্জ্বল করল শরীফ। আর আয়োজক কমিটিকেও দেখিয়ে দিল সে কত বড় বলী।’

ছবি: জীবন বলী ও শাহজালাল বলী

প্রায় একই কথা বললেন শাহাজালাল বলীও। তিনি বলেন, ‘বাঘা শরীফ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সে খুব আশা নিয়ে খেলতে এসেছিল। কিন্তু আয়োজক কমিটি সুযোগ দিচ্ছিল না। সেজন্য আমি নিজে না খেলে তাঁকে খেলাতে অনুরোধ জানাই। ভাগ্যিস কমিটি সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছিল।’

দুই সিনিয়র বলীর কাছে শ্রদ্ধায় যেন নুইয়ে পড়লেন বাঘা শরীফ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহজালাল ভাই আমার কাছে বড় ভাইয়ের মতো। বলীখেলায় তিনি আমার গুরুতুল্য। জীবন ভাইও তেমন। তাঁদের দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাঘা শরীফ ট্রফির সঙ্গে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকার সম্মানীও। এই টাকায় কি করবেন এমন প্রশ্নে বাঘা শরীফ বললেন, ‘স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবে বেশিরভাগ টাকা। আর কিছু টাকায় আমার দুই বছরের মেয়ে মিমের জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যাব। মেয়েকে বলে এসেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব। সে বুঝতে না পারলেও হেসেছিল। এখন নিশ্চয় আরও বেশি খুশি হবে।’

এবারের বলীখেলাটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুই বলীর ‘ত্যাগের’ জন্যও। খেলায় অংশ নিলে শাহজালাল আর জীবন বলীর মধ্যেই হয়তো হতো ফাইনালের লড়াই, যেটা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু একজন জুনিয়রকে সুযোগ করে দিতে দুজন যেভাবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, সেটি ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। দর্শকেরা তাই বললেন, এমন ত্যাগও হয়!

আর বাঘা শরীফ তো বলেই দিলেন, ‘এই ট্রফি, এই সম্মানি আমার একার নয়, এই অর্জনের পেছনে পুরো কৃতীত্ব শাহাজালাল ভাই আর জীবন ভাই। তাদের ত্যাগই আমাকে এনে দিল চ্যাম্পিয়নের সম্মান।’

নাম প্রত্যাহার করে শুধু বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটাই করে দিলেন না জীবন আর শাহজালাল। জানিয়ে গেলেন-লড়াই না করেও জেতা যায়!

;

গরমে জানটা শ্যাষ হয়া গেইল!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের সাহেব আলী। এই অইদের (রোদ) ঠ্যালায় জানটা ব্যার হয়া যাবার নাগছে বাহে! গরীম মানুষ বাঁচে কেমন করি। জারের (শীত) সমায় (সময়) কনকনা ঠান্ডা আর গরমের সমায় গরম। হামরা ঘর থাকি ব্যার হওয়া যায় না। জানটা শ্যাষ (শেষ) হয়া গেইল।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রবাহে সৃষ্ট দাবদাহে অতিষ্ট লালমনিরহাটের জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ক্রমশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আগুন ঝরা বাতাসে নারী-শিশুসহ কর্মজীবী মানুষ দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কম, জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় হাতীবান্ধা উপজেলার ভ্যানচালক নুরআলম সাথে, তিনি বলেন, বৈশাখের চনচনা অইদোত রোদে মাল নিয়া ভ্যান চালাইতে কষ্ট হয়। গরমের ঠ্যালায় কইলজা ফাটি যায়। ওই জন্যে ঠান্ডাত (গাছের ছায়া) একনা দম নিবার নাগছি।

তিনি আরো বলেন, কোথাও ঠান্ডার আভাস নাই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো। পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে পড়বে। রিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে আয় রোজগার কমে গেছে। বেলা সাড়ে ১০-১১টার পর রাস্তায় আর কোনো যাত্রী থাকে না।

বাসচালক আকবর আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, গরমের কারণে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ (বিটুমিন) উঠে গাড়ির চাকার সাথে লেগে যায়। এতে খুব সতর্ক অবস্থায় গাড়ী চালাতে হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে শিশু রোগী ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ, যথাসম্ভব বাহিরে বের না হওয়া, সাথে খাবার পানি রাখা, ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটে তাপমাত্রা ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাট জেলা তথ্য অফিসার শাহজাহান আলী (অতিরিক্ত দায়ত্বি) বার্তা২৪.কমকে জানান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

;

কুয়াকাটায় জেলের জালে ২৬ কেজির কোরাল



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (কলাপাড়া-পটুয়াখালী)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালির কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগরে রাসেল মাঝি (৩৫) নামের এক জেলের জালে ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ওজনের একটি কোরাল মাছ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১.৩০ মিনিটে কুয়াকাটা মেয়র মৎস্য মার্কেটের মনি ফিস আড়তে মাছটি নিয়ে আসা হয়। এসময় মাছটি এক নজর দেখতে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। পরে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী বিক্রম চন্দ্র নিলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বঙ্গোপসাগরের বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় মাছটি ধরা পড়ে।

মাছ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল মাঝি বলেন, প্রতিদিনের মত গত সোমবার (২২ এপ্রিল) ধুলাস্বার ইউনিয়নের বাবলাতলা বাজার থেকে (মায়ের দোয়া) নামের ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে যাই। পরে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় জাল ফেলার পর অন্যান্য মাছের সঙ্গে এ কোরাল মাছটি ধরা পড়ে। মাছটির ওজন বেশি হওয়ায় আমাদের ট্রলারে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এর আগেও আমার জালে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের কোরাল মাছ ধরা পড়েছিলো। তবে আমার জালে ধরা এটিই সবচেয়ে বেশি ওজনের কোরাল। মাছটি খুব ভাল দামে বিক্রি করেছি। এত বড় মাছ পেয়ে আমার ট্রলারে থাকা জেলেসহ আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

মাছটি ক্রয় করা ব্যবসায়ী বিক্রম চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মাছের ব্যবসা করি, এত বড় কোরাল আসলে সব সময় পাওয়া যায় না। মাছটি দেখেই আমার পছন্দ হয়েছে। তাই নিলামে আমিই বেশি দাম হেঁকে এ মাছটি ক্রয় করেছি। মাছটি বিক্রির জন্য আজই ঢাকায় পাঠাবো। আশা করছি আমি ভালো মানের লাভ করতে পারব।

কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কোরাল মাছ খুবই সুস্বাদু। শিশুদের মানসিক বিকাশে কোরাল মাছ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি বৃষ্টি হলে জেলেদের জালে ইলিশের পাশাপাশি আরও বড় বড় মাছ ধরা পড়বে।

;