২৫ বছরের সঙ্গী এই চেয়ার-ক্ষুর
সিলেট:‘দালাল বলেছিল চুল সাঁটানোর কাজে বিদেশে কদর বেশি, এর জন্য সেই কাজ শিখেছিলাম। বিদেশ যেতে পারিনি, তবে ২৫ বছর ধরে সেই কাজ করে খাই, ছেলেমেয়েকে পড়াই।’
এই কথাগুলো সিলেট নগরীর খ্রিস্টান গির্জার পাশে ফুটপাতের দেয়াল ঘেঁষে বসা ‘নরসুন্দর’ মোশররফ হোসেনের।
সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা গ্রামে মূল বাড়ি ছিল মোশররফ হোসেনের। চুল সাঁটানোর কাজ পঞ্চাশোর্ধ মোশররফের বংশ পরম্পরায় প্রাপ্ত নয়। ৯০ এর দশকে বাহরাইন যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ওই সময় দালালরা বলেছিল, বিদেশে গেলে তাকে চুল সাঁটানোর কাজ করতে হবে। এর জন্য একই এলাকার মেরু বাবুর কাছে চুল সাঁটানোর কাজ শেখেন মোশররফ। মেরু বাবু আজ নেই, তবে তার সেখানো কাজ করেই আজ জীবনযুদ্ধে লড়ছেন তিনি।
মোশররফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, যে স্বপ্ন নিয়ে কাজ শিখেছিলেন, দালালদের খপ্পরে পড়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বিদেশ যাওয়া হয়নি তার, উল্টো ভিটে মাটি হারিয়ে ২৫ বছর ধরে সিলেটে একটি কলোনিতে ভাড়া থাকেন।
মোশররফ হোসেন জানান, ভিটে বিক্রি করে ৫০ হাজার এবং বিভিন্নজনের কাছ থেকে সুদে এনে আরও ৫০ হাজার টাকা দালালদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তবে দালালদের প্রতারণায় আজ তিনি নিঃস্ব। সেই থেকে মোশররফের ঠিকানা নগরীর নয়াসড়কের খ্রিস্টান গির্জার পাশের ফুটপাতে।
বার্তা২৪.কমের প্রতিবেদকের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল মোশররফের, তখন রিকশা থামালেন হারিছ আলী। রিকশার হাতল ছেড়ে দ্রুত চেয়ারে বসলেন। সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে গেলেন মোশররফ। কাজ করতে করেত জানালেন, এভাবে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি কাজ পান। প্রতিদিন ১৫০ থেকে কখনো ৫০০ টাকাও আয় হয় তার। ২৫ বছর ধরে এই একটি চেয়ার, একটি ক্ষুর, ব্রাশ ও স্যাভলন ক্রিমসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি তার একমাত্র সঙ্গী।
রিকশা চালক হারিছ আলী বলেন, ‘এসির নিচে বসে চুল কাটার সামর্থ্য আমাদের নেই, মোশররফ ভাই আমাদের ভরসা। সেভ করলে ২০ টাকা এবং চুল কাটলে ৩০ টাকা দিতে হয় তাকে।’
মোশররফ জানালেন, বালুচর এলাকার একটি কলোনিতে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন তিনি। স্ত্রী পারুল বিবিও মানুষের বাসায় বাসায় কাজ করেন। ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, মেয়ে পড়ছে ক্লাস ফাইভে। সন্তানদের মানুষ করতে হবে।
মোশররফ বলেন,‘লেখাপড়া জানি না বলেই দালাল আমার সঙ্গে প্রতারণা করতে পেরেছে। বাপের ভিটে মাটি হারিয়েও বিদেশ যেতে পারিনি। ফুটপাতে বসে কাজ করি, তাতে দুঃখ নেই। তবে দুই সন্তানকে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষ করে রেখে যেতে চাই।’