শুরু হলেও শেষ হয় না স্টেশন অফিসারদের দায়িত্ব!
কোথাও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে একজন স্টেশন অফিসারের নেতৃত্বে জীবন বাজি রেখে ছুটে যান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ফলে প্রশ্ন উঠতেই পারে একটি স্টেশনে কতজন স্টেশন অফিসার থাকেন? তাকে কতটুকু সময় দায়িত্ব পালন করতে হয়? বিনিময়ে তারা কেমন সুযোগ-সুবিধা পান? এসব বিষয় জানতে সরেজমিন অনুসন্ধান করেছে বার্তা২৪.কম। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একজন স্টেশন অফিসারকে মূলত ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্ব পালন করতে হয়। যার মূল কারণ জনবল সংকট।
রাজধানীর মিরপুর, পলাশী, লালবাগ, কাকরাইল, সদরঘাটসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন অফিসারের পাশাপাশি একজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার থাকার কথা থাকলেও তাদের আসনটি খালি পড়ে আছে। ফলে স্টেশন অফিসার দিয়েই চলছে অধিকাংশ ফায়ার সার্ভিস অফিস।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে রাজধানীর একটি ফায়ার সার্ভিস অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা জানান, কাগজে-কলমে প্রতিদিন সকাল ৬টায় দ্বায়িত্ব শুরু হয়। কিন্ত বাস্তবতা হলো তার ডিউটি শুরু হলেও শেষ হয় না। কারণ, স্টেশনে সার্বক্ষণিক একজন সিনিয়র অফিসার থাকার কথা থাকলেও তাকে সংযুক্তি হিসাবে অন্য স্টেশনের দ্বায়িত্বও পালন করতে হয়। ফলে সিনিয়ররা সব সময় থাকতে পারেন না। এজন্য স্টেশন অফিসারকে ২৪ ঘণ্টার জন্য সতর্ক থাকতে হয়।
তিনি আরো জানান, সব সময় অফিসে থাকার কারণে পরিবারকে সময় দেয়া সম্ভব হয় না। এমনকি প্রতিটা মুহূর্ত দায়িত্ব পালনের জন্য তটস্থ থাকতে হয়। অফিসের ফোন বেজে উঠলেই বুকের ভেতরে কেঁপে ওঠে। মনে হয় আবার কোথাও আগুন লাগলো।
তবে এসব বিষয়ে একমত নন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ। তিনি বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘প্রতিটি এ ক্লাস ফায়ার স্টেশনে একজন করে সিনিয়র ও একজন স্টেশন অফিসার থাকেন। বি ক্লাসে একজন স্টেশন অফিসার থাকেন এবং সি ক্লাসে একজন করে লিডার থাকেন। প্রত্যেককে অন্যদের অবর্তমানে দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের জনবল সংকট আছে। তার ওপর আমাদের কাজের পরিধিও বেড়েছে। এখন বিড়াল উদ্ধার করতেও ফায়ার সার্ভিসকে ডাকে মানুষ। কারণ কোনো জীবনই অবহেলার নয়। পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়া হলে আর সমস্যা থাকবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘একজন স্টেশন অফিসারকে অফিসের পাশে কোয়ার্টার দেওয়া হয়। যেখানে সব সুবিধা থাকে। ফলে তাকে অন্য চিন্তা করতে হয় না।’
জনবল নিয়োগের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) দিলীপ কুমার ঘোষ বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ‘আমাদের অর্গানোগ্রাম পাকিস্তান আমলের। ফলে এটা পরিবর্তনে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন করলে জনবল সংকট আর থাকবে না।’
ফায়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, ‘যারা এই পেশায় আসেন তাদের সবার ত্যাগের মানসিকতা থাকতে হবে। আগে আমরা যেসব প্রতিকূলতার মধ্যেও মানুষকে সেবা দিয়েছি এখন সেটা নেই। তবে জীবনের ঝুঁকি জেনেও এই মহান পেশায় আসেন অনেকে। এ জন্য আমি অভিভূত।’
প্রসঙ্গত, সারা দেশে ৩০২টি ফায়ার স্টেশনে বর্তমানে কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৩০০ জন। ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বাড়াতে সরকার বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন করেছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে স্টেশন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৫৪৯টি এবং জনবল ১৫ হাজারের বেশি। সেবার মান বাড়াতে চীনের অনুদানে ১৭৪ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনা হবে। যার মধ্যে ২২ হাজার লিটারের স্পেশাল ওয়াটার টেন্ডার, ১২ হাজার লিটারের ফোম টেন্ডার, ১০০টি টোয়িং ভেহিক্যাল, ১৫০টি টু-হুইলার ওয়াটার মিস্ট, ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স।