‘কক্সবাজারকে পর্যটক বান্ধব করা যায়নি'



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
কর্মশালায় বক্তব্য দেন সচিব মো. মহিবুল হক / ছবি: বার্তা২৪

কর্মশালায় বক্তব্য দেন সচিব মো. মহিবুল হক / ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

কক্সবাজার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হলেও এটিকে পর্যটক বান্ধব করা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক।

তিনি বলেছেন, ‘এখনো পর্যন্ত কোনো পর্যটক কক্সবাজার বেড়াতে গেলে সমুদ্র দেখা ছাড়া তার আর কিছু করণীয় থাকে না। এই সমস্যা দূর করার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের সমস্ত অঞ্চলকে নিবিড় পর্যটন অঞ্চল ঘোষণা করেছে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে যথাযথ সহায়তা প্রদান করা হবে।’

বুধবার (০৩ এপ্রিল) সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কর্তৃক আয়োজিত ‘উন্নয়ন ভাবনায় পর্যটন’ শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

সচিব বলেন, ‘কক্সবাজারে আমাদের পর্যটকদের বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর মোহনায় দেশি এবং বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বিশেষ পর্যটন অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। সেখানে পর্যটকদের বিনোদনের সমস্ত সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।’

পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে সমস্ত পর্যটন স্পট আছে তা এখনো দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের কাছে পূর্ণরূপে তুলে ধরা যায়নি। আমাদের পর্যটন স্পটগুলোকে পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আমাদের সমস্ত স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে আমরা কাজ করছি। দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনকে নিয়ে আমরা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছি। সুন্দরবনের কাছে পর্যটন বিকাশে একটি নিবিড় পর্যটন অঞ্চল তৈরি করা হবে। তার উন্নয়নে মন্ত্রণালয় বেসরকারি সকল স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একত্রে কাজ করবে।’

মহিবুল হক বলেন, ‘বান্দরবান রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পর্যটন বিকাশে বিশেষ পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই তিন পাহাড়ি জেলাকে পর্যটনবান্ধব করার জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই জেলা তিনটির পাহাড়, নদী এবং লেকের যে সৌন্দর্য, তা পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সকলের কাছে আকর্ষণীয় উপজাতীয় সংস্কৃতিকে পর্যটকদের কাছে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার ব্যবস্থা থাকবে সেই পরিকল্পনায়।’

সচিব বলেন, ‘আমাদের ধর্মীয়, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক যেসব পর্যটন স্থাপনা রয়েছে তাতে পর্যটকদের সকল সুবিধা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমাদের যে সম্পদ রয়েছে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটন শিল্পের বিকাশে যথাযথ প্রচার নিশ্চিত করতে হবে। প্রচার ছাড়া আমাদের পর্যটন শিল্পকে দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের নিকট যথাযথভাবে উপস্থাপন সম্ভব নয়।’

তাই তিনি সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি সকল বেসরকারি সংস্থাকে ও পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আতিকুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডক্টর ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস।
এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক আবু তাহের মোহাম্মদ জাবের।

   

মেহেরপুরে কমছে না তাপমাত্রা, বাড়ছে রোদের তেজ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মেহেরপুর জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ। যার প্রভাবে অতিষ্ঠ এই জনপদের জনজীবন। বিরূপ প্রভাব পড়েছে শ্রমজীবী মানুষের আয় রোজগারে।

সকাল থেকে শুরু হচ্ছে রোদের তেজ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদ আর গরমের তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। গরম সহ্য করতে না পেরে গাছের ছায়ায় বসে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। আবার গরমের ক্লান্তি নিয়ে ইজিবাইকেই ঘুমিয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। দিনের সর্বোচ্চ সময়টুকু ইজিবাইক চালাতে না পারায় আয় রোজগার কমে যাচ্ছে এসব খেটে খাওয়া মানুষের।

এদিকে তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে ঘর থেকে বেরও হলেও স্বস্তি নেই কর্মজীবী মানুষের। চলার পথে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেওয়া আর শরবত পান করে শীতল হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালের সূর্যের তেজই বলে দেয় গরম আর রোদের তীব্রতা কমেনি। বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় দিনের সর্বোচ্চ ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

;

২৮৮ সেনা-বিজিপি সদস্যদের মিয়ানমারে পাঠাল বিজিবি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মিয়ানমারে চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষের ফলে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও সেনা সদস্যসহ ২৮৮ জনকে সে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে কক্সবাজারে বিআইডাব্লিউটিএ ঘাট থেকে তাদের ফেরত পাঠানো হয়।

বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বিজিপি সদস্য, চারজন সেনা সদস্য, ইমিগ্রেশন সদস্যসহ মোট ২৮৮ জনকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছে বিজিবি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন- বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম।

তিনি বলেন, আজ সকালে বিজিপি সদস্যদের হস্তান্তর উপলক্ষে কক্সবাজারে বিআইডাব্লিউটিএ ঘাট কাছে বিজিবির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। পরে কোস্টগার্ডের একটি জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজ চিন ডুইনের উদ্দেশ্যে কক্সবাজারে বিআইডাব্লিউটিএ ঘাট ত্যাগ করে।

তিনি আরও বলেন, আগে জাহাজে করে আগত মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ক্যাম্পে অবস্থানরত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের বিজিপি ও অন্যান্য সদস্যদের দ্রুত শনাক্তকরণ ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টেশন সম্পন্ন করে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে জাহাজে করে আগত বিজিপি সদস্যদের কাছে আশ্রয় প্রাপ্তদের হস্তান্তর করা হয়।’

;

যুদ্ধ কখনোই কোনো সমাধান দিতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

যুদ্ধ কখনো কোনো সমাধান দিতে পারে না। এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ইরান-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ইউএনএসকাপ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।

যুদ্ধের ভয়াবহতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন, ইসরাইল-ইরান-প্যালেস্টাইনের যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আমি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যুদ্ধের ভয়াবহতা আমি জানি। বাংলাদেশ কখনো যুদ্ধ চায় না। আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যারা এখনও বিভিন্নভাবে কষ্ট পাচ্ছেন যুদ্ধের কারণে তাদের দিকে দেখে বিশ্বনেতাদের যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেয়া উচিত।

এ ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা এবং মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ন্ত্রণে আসিয়ানকে ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

;

ভার পেয়ে মওকা খুঁজলেন মাউশির ডিজি, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে উকিল নোটিশ



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: মাউশির ডিজি প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী

ছবি: মাউশির ডিজি প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী

  • Font increase
  • Font Decrease

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)র মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে ভারপ্রাপ্ত হয়েছিলেন অধিদপ্তরের কলেজ প্রশাসনের পরিচালক প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী। এ সময়ে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে উচ্চতর পদটি পাওয়ার চেষ্টাই করার কথা ছিলো তার। কিন্তু সেটা না করে মওকা বুঝে অর্থ আত্মসাৎ করে নিয়েছেন এমন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে উকিল নোটিশ। বলা হচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বড় অংকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই অধ্যাপক।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বর্তমান সভাপতি ও অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর শাহেদুল খবির ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে গত দুই বছর ধরে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গত ছয় বছরে দুই পদে দায়িত্ব পালনের সময়ে সমিতির সাধারণ তহবিল ও বিশেষ তহবিল খাতের অর্থ জনতা ব্যাংকের দুটি ব্যাংক হিসাব থেকে তুলে বিভিন্ন কাজে ব্যয় করেন। যা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এছাড়া সারাদেশের বিভিন্ন কলেজ থেকে চাঁদা আদায়সহ সমিতির নানাখাতের আয় ও ব্যয়ের হিসাব নিয়ে সদস্যদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ফলে অনেকটা চাপের মুখে শাহেদুল খবিরের নিজের লোক হিসেবে পরিচিত প্রফেসর আ ন ম শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে অডিট কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি সমিতির ব্যাংক হিসাব ও আয়-ব্যয়ের অডিট করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকার গড়মিল খুঁজে পায়। 

আর সেই অডিটের সূত্র ধরে শাহেদুল খবিরকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সমিতির সাধারণ সদস্য খাগড়াছড়ি জেলার রামগর সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক।

এই শিক্ষকের পক্ষে আইনি নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট মো. শাহীন আলী।

এই নোটিশে শাহেদুল খবিরের পাশাপাশি তার সঙ্গে আর্থিক অনিয়মে জড়িত জড়িত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর খান রফিকুল ইসলাম, সমিতির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বর্তমানে ওএসডি হয়ে চট্টগ্রাম জেলার স্বন্দীপের হাজী আব্দুল বাতেন কলেজে সংযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক মো. শওকত হোসেন মোল্ল্যা, সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমানে ওএসডি হয়ে একই কলেজে সংযুক্ত ব্যাবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কামাল আহমেদকে একই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সমিতির একাধিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রফেসর নাসরিন বেগম ও আইকে সেমিলউল্লাহ খন্দকার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির দায়িত্বে ছিলেন। তাদের মেয়াদে এক কোটি ৯ লাখ টাকা পরবর্তী কমিটি অর্থাৎ ২০১৬ সালে নির্বাচিত সভাপতি আই কে সেলেমউল্লাহ খন্দকার ও মহাসচিব প্রফেসর শাহেদুল খবিরের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে যান। ২০১৬ সালের সমিতির ১২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির নির্বাচনে দুটি প্যানেল অংশগ্রহণ করে। একটি আই কে সেলেমউল্লাহ খন্দকারের প্যানেল, অন্যটি শাহেদুল খবিরের প্যানেল। এই নির্বাচনে সেলেমউল্লাহ খন্দকার সভাপতি নির্বাচিত হন। তার প্যানেলের আর কেউ নির্বাচিত হতে পারেন নি। বাকি ১২২ পদে শাহেদুল খবিরের প্যানেল নির্বাচিত হয়। ফলে কমিটিতে সেলেমউল্লাহ খন্দকার একা হয়ে যান। এই সুযোগে মহাসচিব হিসেবে শাহেদুল খবির ও তার প্যানেলের কোষাধক্ষ্য মুন্সিগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও নায়েমের সাবেক উপ-পরিচালক খান রফিকুল ইসলাম মিলে সভাপতিকে পাশকাটিয়ে সমিতির সকল ব্যাংক একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। এই সুযোগে ২০১৬ থেকে ২০১২২ সাল পর্যন্ত দুজনের স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। সারাদেশের কলেজগুলো থেকে গত ৬ বছর ধরে তারা চাঁদা তুলেছেন। এই সময়ে কোন কলেজ কতটাকা চাঁদা দিয়েছে। এই টাকা কি ভাবে খরচ করা হয়েছে। পূর্বের হিসাবের সঙ্গে বর্তমান হিসাবের কোনো ধারাবাহিকতা তারা রক্ষা করেন নি। 

এর ফলে সমিতির সাধারণ সদস্যদের মাঝে কমিটির নানা খাতের ব্যয় ও আয়ের বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানাভাবে সমিতির ক্ষমতাশীন নেতাদের এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানালে চলতি বছরের মার্চ মাসের ৭ তারিখ দুটি অডিট কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি ২৪ দিন পর গত ৩১ মার্চ অডিট প্রতিবেদন জমা দেয়। দুটি কমিটির প্রধান ছিলেন দুজন অধ্যাপক। তারা এই হিসাব ও ব্যাংক বিবারণ দেখে নিজেরাই বিব্রত। ফলে অনেকটা অনিচ্ছা সত্যেও সভাপতির নিজেদের লোকদের করা অডিটেও ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকার গরমিল উল্লেখ করা হয়।

সমিতির সদস্যদের আরও অভিযোগ, সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে নিজেদের ক্ষমতাধর ভেবে কমিটির সভাপতি ও তার নেতৃত্বাধীন নেতারা কোনো নিয়ম মানছেন না। এছাড়া বর্তমান কমিটির ভোটেও নয়-ছয়ের অভিযোগও করছেন অনেকে। 

অডিটে অংশ নেওয়া একাধিকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অডিট কমিটির কাছে উপস্থাপন করা বেশিরভাগ ভাউচারে কাটাকাটি করা হয়েছে। ব্যয়ের খাত উল্লেখ নেই। এমন কি লাখ লাখ টাকা খরচ করা হলেও তার খাত বা ভাউচার দেখাতে পারেন নি। ফলে বিসিএস ক্যাডারের পেশাজীবি একটি সংগঠনের সদস্যদের কোটি কোটি টাকার ব্যয়ের হিসাব রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্তদের বড় ধরনের অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। এতে অডিট কমিটির প্রধানসহ সবাই হতবাক হয়েছেন।   

এদিকে ২০২৩ সালের অক্টোবর ও সেপ্টেম্বর মাসে বিসিএস ক্যাডার–বৈষম্য, পদোন্নতিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানসহ বিভিন্ন দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারাদের প্রায় ১৫ দিন কর্মবিরতি পালন করেন। এই কর্মবিরতিতে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবিতে সারাদেশে শিক্ষকদের ১৫ দিন কর্মবিরতির নেপথ্যে ছিলেন শাহেদুল খবির। তিনি পদোন্নতি এনে দেওয়ার নামে অনেকটা চাপ প্রয়োগ করে বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ সময়ে নির্বাচনের আগে এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। যদিও পরবর্তীতে তার পদ নিয়ে টানাটানি শুরু হলে তিনি আন্দোলন থেকে সরে আসেন এবং শিক্ষকদের  আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে বলেন। সেই সময়ে আন্দোলনের বিষয়ে শাহেদুল খবির গণমাধ্যমে নানা বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিভিন্ন পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে খুঁজে যার সত্যতা পাওয়া যায়। 

এছাড়া শাহেদুল খবিরের অন্যতম সহযোগী শওকত হোসেন মোল্যার সন্দ্বীপ হাজী আব্দুল বাতেন কলেজে বদলি হলেও তিনি বিগত তিন বছর কলেজে যান না। কলেজে না যেয়েও কলেজ অধ্যক্ষের সহযোগিতায় বেতন তুলছেন। তিনি শাহেদুল খবির চৌধুরীর নিজের লোক হওয়ায় কর্মস্থলে দীর্ঘদিন না গেলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই শাহেদুল খবির চৌধুরীর যোগসাজশে নোয়াখালী সরকারি কলেজের যাবতীয় অনিয়ম দুর্নীতি শিক্ষক হয়রানি হচ্ছে। শিক্ষা সচিব নোয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ সালমা আক্তার ও উপাধ্যক্ষ লোকমান ভূঞাঁ এর বিরুদ্ধে পৃথক তদন্তের আদেশ দিলেও তদন্ত আটকে রেখেছেন শাহেদুল খবির চৌধুরী। সারাদেশে শিক্ষায় দুর্নীতিবাজদের গুরু শাহেদুল খবির চৌধুরী। কেউ অনিয়ম করে ধরা পড়লেও তার কারণে কোন তদন্ত হয় না। তদন্ত হলেও সেই প্রতিবেদনের কাগজ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় না। এমন কি কুমিল্লা বোর্ডের চিঠি জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনার তদন্তও আটকে আছে অদৃশ্যের বাধায়।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক অধিদফতরে চাকরি করে একই অধিদফতরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একজন সাধারণ সদস্য। সে হিসেবে এই সমিতির আর্থিক আয় ও ব্যয়ের হিসাব জানার অধিকার আমার আছে। কারো ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে নয় সমিতির সকল সদস্যদের মতো আমিও সমিতির আর্থিক হিসাব চাইতে পারি। সে জন্যই সম্প্রতি অডিটে উঠে আসা আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে জড়িতদের আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। সমিতির কোটি কোটি টাকা ক্ষমতার জোরে তারা আত্মসাৎ করেছেন। এমন কি জোর করে কোষাধ্যক্ষের কাছ থেকে চেকে স্বাক্ষর নেওয়ার কথাও আমরা ফেসবুকে দেখতে পাই। ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেওয়ার যৌক্তিকতা কোথায় আছে? একজন ক্যাডার সার্ভিসের কর্তকর্তা হিসেবে তারা এই কাজ করতে পারেন না। যদি আমার নোটিশের উপযুক্ত জবাব তারা দিতে না পারেন, বৈধ কাগজ না দেখাতে পারেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে। 

অধিদফতেরর মহাপরিচালককে আইনি নোটিশ পাঠানোর কারণে হয়রানির আশঙ্কা করছেন কি না জানতে চাইলে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, আমি ২০১৮ সাল থেকে হয়রানির শিকার। মাউশির ১০ স্কুল প্রকল্পের দূর্নীতি বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়। সেই সময়ে আমি অভিযোগ দিয়েছিলাম। সেই অভিযোগে ৯ জনের অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি জানতেল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি। অথচ আমাকে ওএসডি করে রাখা হয় দুই বছর। সেখান থেকে নোয়াখালী সরকারি কলেজে বদলি করা হয়। সেখানেও পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল, ফলাফল টেম্পারিং করে টাকা নেওয়া, শিক্ষার্থী ভর্তিতে ব্যাপক দূর্নীতি নিয়ে দুদক ও শিক্ষা সচিবের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। সেখানেও দূর্নীতির প্রমাণ পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং আমাকে খাগড়াছড়ি বদলি করা হয়। আমি এতেও ভীত নই। আমি জানি হয়রানির শিকার হবো। তবে আমি যতদিন বেঁচে আছি দূর্নীতির সঙ্গে আপষ করবো না। শুধু তাই নয় আমার এসিআরে বিরূপ মন্তব্য করে আমার পদোন্নতি আটকে দেওয়া হয়েছে। আমার জুনিয়রদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাই আমি থেমে যাবো না। তাদের বিচার না হলেও বরং মানুষ জানুক তারা কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

এ দিকে যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ সেই শাহেদুল খবিরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। টানা দুই দিন তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেন নি।

;