নওগাঁয় মাংস ব্যবসায়ীর কারসাজিতে ঠকছেন ক্রেতা
নওগাঁ পৌর মাংস বাজারে দোকানে ঝুঁলানো তালিকায় লেখা রয়েছে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৬৫ টাকা। যৌক্তিক দাম বেঁধে দেয়া হলেও এই দামে মাংস কিনলে কেজিতে চর্বি মিলছে প্রায় ২৫০ গ্রাম। তবে চর্বি না থাকার শর্তে ৭৫০ টাকা প্রতি কেজি দরে আলাদাভাবেও চলছে মাংস বিক্রি। ব্যবসায়ীদের এমন কারসাজিতে ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়ীদের প্রতিনিয়ত তর্ক বাড়ছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা বলছেন কেজিতে তাদের ৮৫ থেকে ১০০ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সরেজমিনে শনিবার (৩০ মার্চ) নওগাঁ শহরের গোস্তাহাটির মোড়ে পৌর মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ৬৬৫ টাকায় চর্বিযুক্ত এবং ৭৫০ টাকায় চর্বি ছাড়া মাংস বিষয়ে ক্রেতাদের সাথে ব্যবসায়িদের দরকষাকষি চলছিল। মাংস ব্যবসায়ীরা সাংবাদকর্মী পরিচয় জানতে পেরে মুহুর্তের মধ্যে ক্রেতাকে ৬৬৫ টাকায় চর্বি ছাড়া মাংস দেন। আবার কাউকে ৬৮০ টাকাতেও চর্বি ছাড়া মাংস দেয়া হয়েছে। মাংস ব্যবসায়ীদের এমন কাণ্ডে ক্ষুদ্ধ ভোক্তারা। বিষয়টি প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে ১০ জন ব্যবসায়ী প্রতিদিন ১০টি করে গরু জবাই করছে। প্রতিজন ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই ৩-৪ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। কিন্তু তারপরও ব্যবসা চালু রাখতে হচ্ছে। ব্যবসা বন্ধ রাখলে পরবর্তীতে ওই ক্রেতারা আর দোকানে আসবে না। তাই বাধ্য হয়ে লোকসান করেই ব্যবসা চালু রাখতে হচ্ছে।
নওগাঁ শহরের চকদেবপাড়া এলাকার বাসিন্দা ডা. আহমেদ হোসেন খান বলেন,প্রথমে মাংস কিনতে আসলে দোকানি বলেন এক কেজি কিনলে ২৫০ গ্রাম চর্বি নিতে হবে আর চর্বি ছাড়া ভাল মাংস নিতে হলে ৭৫০ টাকা দিতে হবে। এসময় সাংবাদিক উপস্থিত থাকায় ৬৬৫ টাকায় ভাল মাংস দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এটা তো নিয়ম না। বিষয়টি প্রশাসনের তদারকি করার দরকার।
মাংস কিনতে আসা ক্রেতা গৃহবধু বলেন, ‘বাড়িতে অনুষ্ঠান হবে বলে মাংস কিনতে আসা। শুরুতে ভাল মাংস দিবে বলে ব্যবসায়ীরা ৭৫০ টাকা কেজি চায়। পরে সাংবাদিক আসার পর ৬৮০ টাকা কেজি হিসেবে ৮ কেজি মাংস কিনেছি। কিন্তু তারপরও চর্বি ও হাড়ের পরিমাণ বেশি দিয়েছে, এটা ঠিক না।’
মাংস ব্যবসায়ী মিজানুর বলেন, সোমবার ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকায় ষাঁড় গরু কিনে মাংস বিক্রি করা হয়। যেখানে ৩ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। অনেক ক্রেতা চর্বি নিতে চাচ্ছেন না তারা ভাল মাংস নিতে চান। যারা ভাল মাংস নিতে চান তাদের জন্য ৭৫০ টাকা। আর যারা চর্বিসহ নিতে চান তাদের জন্য ৬৬৫ টাকা। প্রতি কেজিতে প্রায় ২০০-২৫০ গ্রাম চর্বি থাকবে। চর্বিতো আর আলাদা করে বিক্রি করা সম্ভব না। এজন্য মাংসের সাথে চর্বি বিক্রি করতে বাধ্য হতে হচ্ছে। আমরা যেভাবে মাংস বিক্রি করছি এতে করে কেজিতে ১০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ পৌর মাংস বাজার সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এভাবে লোকসান করে মাংস বিক্রি করতে হবে। প্রতিদিনই আমাদের লোকসান হচ্ছে। একসময় দেখা যাবে দোকান থাকবে কিন্তু আমরা থাকবো না। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সাথে বসবো।’
নওগাঁর বাইপাস-আমতলী রাস্তার কাজ শুরু, খুশি এলাকাবাসী
প্রায় এক যুগ ধরে নওগাঁ সদর উপজেলার বাইপাস হতে আমতলী রাস্তা নিয়ে ভোগান্তিতে থাকা কয়েকটি গ্রামের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল রাস্তা দ্রুত সংস্কারের। রাস্তার দাবি পূরণ হতেই এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে খুশির আমেজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেশিনের সাহায্যে রাস্তা চটিয়ে ফেলা হচ্ছে তারপর রাস্তার দুপাশে ইট সারিবদ্ধভাবে লাইন করে মাটিতে পুতে ফেলে তার উপর দিয়ে ইটের খোয়া দেওয়া হচ্ছে, এরপর আবার মেশিন দিয়ে সমান করে বালি দিয়ে চাপ দিয়ে রাস্তাটি সমান্তরাল করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল জানান, রাস্তাটি শেষ মেরামত হয়েছিল অনেক বছর আগে এরপর থেকে এভাবেই পরে ছিল রাস্তাটি তবে কয়েকদিন আগে যখন রাস্তার কাজ পূনরায় শুরু হলো প্রথমে আমার বিশ্বাস-ই হয়নি, এতো খুশি লেগেছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
মাহমুদুল হক বলেন, এখানে আমাদের ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান আছে অনেক বছর ধরে কিন্তু রাস্তার বেহাল ধরার কারনে যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখানে বহু বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী হাট বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। অনেক বছর পরে রাস্তাটির সংস্কার কাজ চলছে দেখে খুব ভালো লাগলো তবে এ রাস্তা দিয়ে ভারি যানবহন ও ট্রাক্টর এর দৌরাত্ম্য কমানো গেলে রাস্তা সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না কারণ এর আগে যতবার রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে ট্রাক্টর এর অবাধ যাতায়াতের জন্য দ্রুত রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। আমি মনে করি প্রধান সড়ক ছাড়া ট্রাক্টর এই সড়কে চলতে দেয়া ঠিক না।
বক্তারপুর গ্রামের মোঃ নূর মোহাম্মদ (৮৫) বলেন, শিবপুর হাটে বাবা ও দাদার সাথে অনেকবার গিয়েছি অনেক বছর আগে, হাটের বয়স ১০০ বছরের বেশি কিন্তু রাস্তার কারনে দিন দিন বিলুপ্ত হয়েছে। বক্তারপুর, চাকলা, হালঘোষপাড়া মুরাদপুর ইত্যাদি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করেন এই রাস্তা দিয়ে। রাস্তার কাজ শুরু হওয়ার পেছনে যারা শ্রম দিয়েছে তাদেরকে অনেক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
স্থানীয় যুবক সুমন বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই দেখি রাস্তার বেহাল দশা, রাস্তা কোনোমতে চলাচলের উপযুক্ত করা হলেও বেশিদিন টিকেনি কারণ ট্রাক্টর প্রচুর পরিমানে যাতায়াত করে মাটি ও ইট নিয়ে এতে করে রাস্তার খুব-ই ক্ষতি হয়। রাস্তার কাজ চলছে তাই মনটা খুবই ভালো তবে প্রশাসনের মাধ্যমে যদি ট্রাক্টর গুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে রাস্তা দীর্ঘদিন টিকসই হবে বলে আমি মনে করি।
ভাঙ্গা-যশোর প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত প্রথম ধাপের পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে আসা পাথর বোঝাই ট্রেনটি ১০টা ৩৫ মিনিটে রূপদিয়া স্টেশনে পৌছায়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন নাগাদ এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়াতে রেলওয়ে জংশন থাকছে। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লোহাগড়া, নড়াইল এবং যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়াতে রেলস্টেশন হয়েছে। কাজের অংশ হিসেবে আজ ও আগামীকাল রোববার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।
ট্রায়ালে অংশ নেয়া রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরি জানান, ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৮৪ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দিয়েছেন তারা। পথে কোথাও কোন সমস্যার সম্মুখীন হননি। ১৫ মিনিট অবস্থানের পর ট্রেনটি আবার ভাঙ্গার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আশা করা যাচ্ছে এ রুটে আগামী জুনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
এদিকে পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাদের দাবি এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র মতে, এ প্রকল্প শেষের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালে। ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটির অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পের ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
বিএসএফের গুলিতে ফের বাংলাদেশি নিহত ১, আহত ২
লালমনিরহাটের বুড়িরহাট সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলিতে মুরুলী চন্দ্র (৪৩) নামে একজন বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২ জন।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) দিনগত মধ্যরাতে কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট সীমান্তের ৯১৩ নম্বর পিলারের একশত গজ ভারতের অভ্যন্তরে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রাখাল মুরুলী চন্দ্র কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের উত্তর বালাপাড়া গ্রামের সুশীল চন্দ্রের ছেলে। আহতরাও একই এলাকার চন্দ্রপুর গ্রামের আজিমুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩) ও নুর ইসলামের ছেলে লিটন মিয়া (৪৩)।
সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মত শুক্রবার রাতে ৪/৫ জনের একটি পাচারকারী চক্র ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সহায়তায় গরু পাচার করতে বুড়িরহাট সীমান্তের ৯১৩ নং পিলার এলাকা দিয়ে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে।
গরুর রাখালরা ভারতীয় গরু নিয়ে ওই সীমান্ত দিয়ে ফেরার পথে ভারতের একশত গজ অভ্যন্তরে কোচবিহার জেলার সিতাই থানার ৭৫ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের চিত্রাকোট ক্যাম্পের টহল দল তাদেরকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি করে। এতে ৩ জন বাংলাদেশি রাখাল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। বাকি রাখালরা আহতদের টেনে হেচড়ে বাংলাদেশ নিয়ে আসলে তাদের পরিবার তাদের হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় আহত মুরুলী চন্দ্রকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুরে নেয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ নিহত রাখাল মুরুলী চন্দ্রের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। বাকি ২ জনকে তাদের পরিবার গোপনে বে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
কালীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) ইমতিয়াজ কবির বলেন, সীমান্ত এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মুরলী চন্দ্র নামে একজনের মরদেহ আমরা উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মোফাজ্জল হোসেনকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।