কলকাতামুখী ঈদ বাজার, লোকসানের আশঙ্কায় খুলনার ব্যবসায়ীরা
বছর জুড়ে ঈদের জন্য অপেক্ষা করেন ব্যবসায়ীরা। রমজান আসার আগে থেকে প্রস্তুতিও শুরু হয় জোরেশোরে। এসময়ে সারা বছরের ঘাটতি পুষিয়ে ক্রেতাদের কাছে পোশাক বিক্রি করাই ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য। কিন্তু ব্যবসায়ীদের হতাশ করে এবার খুলনার ঈদবাজার কলকাতামুখী। আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন খুলনা থেকে বেনাপোলগামী দু’টি ট্রেনে চেপে খুলনার মানুষ কলকাতার দিকে ছুটছেন। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে একদিন খুলনা থেকে সরাসরি কলকাতাগামী ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ এ ট্রেনের চাপ বেড়েছে যাত্রীদের।
খুলনা রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মানিক চন্দ্র সরকার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘রোজায় বেনাপোলগামী ট্রেনে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন ভোর ৬ টা ও বেলা ১২ টায় দু’টি কমিউটার ট্রেনেই যাত্রীদের চাপে তিল ধারণের জায়গা থাকেনা। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ট্রেন যাতায়াত করছে। বন্ধন এক্সপ্রেসেও কিছুটা যাত্রীর চাপ বেড়েছে।’
খুলনার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘খুলনা রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার যাত্রী কলকাতায় যাচ্ছেন।’
খুলনা নিউ মার্কেটের জামদানি হাউজের স্বত্বাধিকারী আব্দুল হালিম মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘গত ৩ বছর যাবত খুলনার বেচাকেনায় ভাটা পরেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে কলকাতার ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো ব্যবসা হচ্ছে। আরেকদিকে আমরা লোকসানের মুখে আছি।’
খুলনা নিউ মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গাফফার বিশ্বাস বার্তা২৪. কমকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ঈদকে কেন্দ্র করে নতুন পোশাক এনে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু সে অনুযায়ী বিক্রি নেই। ব্যবসায়ীরা সঠিক নিয়মে রাজস্ব দিয়ে পণ্য এনে বিক্রি করছেন, কিন্তু ক্রেতারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কেনাকাটা করে আনছে। দেশের ঈদ বাজার এভাবে কলকাতামুখী হয়ে গেলে ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পরবে।’
তবে ভিন্ন সুর শোনা গেল কলকাতামূখী যাত্রীদের কাছে। তারা বলেছেন, অন্যান্য দেশে ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাক বা সবধরনের পণ্যের মূল্য কমানো হয়। আর আমাদের দেশে রোজা শুরুর আগে থেকেই সবকিছুর দাম বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যে কারণে কলকাতায় স্বল্প খরচে ঈদের বাজার কেনাকাটা করা যায়।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী খালিশপুরের বাসিন্দা আইরীন পারভীন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এ নিয়ে দু’বছর ধরে কলকাতায় কেনাকাটা করতে যাচ্ছি। আমাদের এখানের সব কিছুর দাম বেশি। কলকাতায় গেলে অন্য দেশে ঘোরাও হয়, আবার কেনাকাটাও হয়। কেন ৩ গুণ বেশি দামে পণ্য কেনাকাটা করব।’
কলকাতা থেকে কেনাকাটা করে ফেরত আসা জাকারিয়া হোসাইন শাওন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে কলকাতায় শপিং করেছি। দু’দিন ছিলাম ওখানে। তাতে যা খরচ হয়েছে তাতে দেশে কেনাকাটা হতোনা।’
বেনাপোল চেকপোস্টের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যাওয়া আসা করে।