নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব ময়মনসিংহের বাজার!
নগরীর সানকিপাড়া রেলক্রসিং কাঁচাবাজার। বিকেলেও সরগরম বাজার। একটি সবজির দোকান থেকে সবজি কিনছিলেন আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী সুরাইয়া আক্তার। শাক, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পর দোকানি তা তুলে দিলেন পলিথিন ব্যাগে।
এ ছবি ক্যামেরায় ধারণের পর সবজি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম হাঁক দিলেন, 'ভাই নিয়ম জানি। কিন্তু কী আর করার? দোহানে যে পলিথিন আছে হেইড্যা তো শেষ করতো অইবো। কতা দিলাম এরপর আর বেচুম না।'
দোকানির কথা শুনে ঠোঁটের কোণে হাসি রেখে ওই তরুণী বললেন, 'নিয়ম সবার জন্যই সমান। আমরা নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। পরিবেশের জন্য হুমকি পলিথিন আমরা বর্জন করব। এখন থেকে বাড়ি থেকে ব্যাগ নিয়েই বাজারে আসব।'
এ চিত্রটি রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেলের। অথচ এর মাত্র ঘণ্টা কয়েক আগে বেশ ঘটা করেই ময়মনসিংহকে পলিথিনমুক্ত ঘোষণা করেছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান। নিজেই শোভাযাত্রার নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করেছেন।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, 'দায়িত্ব নিয়েই ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রশংসিত হয়েছেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান। তার এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে নগরী পলিথিনের রাহুমুক্ত হবে। কথিত শক্তিশালী পলিথিন সিন্ডিকেটের রমরমা ব্যবসার অবসান হবে।'
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার ঘোষণা দিয়েছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগে পলিথিনমুক্ত করার। বলেছিলেন, সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে রোববার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে। অতঃপর এদিন বিভাগীয় কমিশনার নিজেই মাঠে নেমেছেন।
এতকিছুর পরেও বাজারমুক্ত হলো না নিষিদ্ধ পলিথিন থেকে। ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার দিব্যি করে যাচ্ছেন সাধারণ ক্রেতারা। দোকানিরাও বলছেন, স্টক শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কিছুই করার নেই।
শুধু সানকিপাড়া রেলক্রসিং কাঁচাবাজারই নয়। নগরীর নতুন বাজার, সানকিপাড়া শেষ মোড়, কলেজরোড, কাচিঝুলিসহ বেশকিছু স্থান ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে দেদারছে ব্যবহার করা হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, 'ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। ময়মনসিংহে কোনো পলিথিন থাকবে না। আমরা এ নির্দেশ অবশ্যই বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে পরিবেশকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করব।'
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিবেশ রক্ষার্থে সরকার ২০০২ সালের ৮ এপ্রিল থেকে পলিথিন শপিং ব্যাগ/ঠোঙার উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ফলে এর ব্যবহার পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৬ (ক) ধারা লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উক্ত আইনে শাস্তির বিধান পলিথিন শপিং ব্যাগ/ঠোঙা উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত করলে ন্যূনতম দুই বছর, অনধিক ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা ন্যূনতম দুই লাখ টাকা, অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয়। একইসঙ্গে পলিথিন শপিং ব্যাগ/ঠোঙা বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ বা বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশে ব্যবহার/পরিবহন করলে অনধিক এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার আইন রয়েছে।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে 'পলিথিন শপিং ব্যাগ/ঠোঙা বর্জন করুন, পরিবেশ সুরক্ষা করুণ' শীর্ষক এক প্রচার-প্রচারণাপত্রে বলা হয়েছে- 'পলিথিন ব্যাগ পচনশীল নয়। তাই এটি মাটির সঙ্গেও মিশে যায় না। ফলে যত্রতত্র পড়ে থাকা পলিথিন ও পলিথিন ব্যাগ মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত করে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। পলিথিনে খাদ্যদ্রব্য রাখলে দ্রুত রাসায়নিক বিক্রিয়া সৃষ্টি করে ক্যানসারসহ মারাত্মক রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি দেখা দেয়। এছাড়া এটি পোড়ালেও বিষাক্ত হাইড্রোজেন সায়ানাইড গ্যাস নির্গত হয়, যা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।'