সাবেক মন্ত্রী গৌর চন্দ্র বালার মৃত্যুবার্ষিকী আজ
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, যুক্তফ্রন্ট সরকারের বন ও খাদ্য মন্ত্রী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম রচয়িতা, অ্যাডভোকেট গৌর চন্দ্র বালার চতুর্দশতম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (১৮ জুন)।
গৌর চন্দ্র বালার মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে তার ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিস্থ বাস ভবনে গীতা পাঠ, পূজা-অর্চনা, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
এছাড়া গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাদী ইউনিয়নের উল্লাবাড়ীতে প্রয়াতের সমাধি মন্দিরে প্রার্থনাসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মূলত এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ছিলেন গৌর চন্দ্র বালা। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ক্ষমতাশীন মুসলিম লীগের মন্ত্রী দ্বারকানাথ বাড়–রীর জামানত বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদে প্রথমে বন ও পরে খাদ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত স্বৈরাচারী আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ৭০-এর নির্বাচনে ফরিদপুর-১ আসন থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
গৌরচন্দ্র বালা জলিলপাড় পাঠশালা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন খালিয়া রাজারাম ইনস্টিটিউটে। এখান থেকে ১৯৪৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৪৫ সালে খুলনার দৌলতপুর হিন্দু একাডেমি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। ১৯৪৭ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৪৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (বাংলা) পাশ করেন। ১৯৫২ সালে কলকাতা ল কলেজ থেকে আইন বিষয়ে প্রিলিমিনারি এবং ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন।
নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিক গৌরচন্দ্র বালা ১৯২৩ সালে মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নের উল্লাবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রাজমোহন বালা পেশায় একজন কৃষক ছিলেন। মা নারায়ণী বালা গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
২০০৫ সালের এই দিনে গৌর চন্দ্র বালা ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিস্থ বাসভবনে ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
গৌর চন্দ্র বালার পরিবারের প্রতিটি মানুষ স্ব স্ব অবস্থানে সাফল্যের সঙ্গে মেধার পরিচয় দিয়েছেন। স্ত্রী অঞ্জলী বালা শিশু সংগঠন ফুলকীর ফরিদপুরের সভানেত্রী। তার বড় ছেলে ড. বিপ্লব বালা নাট্যতত্ত্ব বিষয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশের বিশিষ্ট নাট্য গবেষক। মেঝ ছেলে ডা. প্রণব বালা। তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ। বর্তমানে ইংল্যান্ডে একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে পান্না বালা। তিনি দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার ফরিদপুর অফিস প্রধান। বড় মেয়ে তন্দ্রা বালা অর্থনীতিতে মাস্টার্স করে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে কানাডা প্রবাসী। ছোট মেয়ে ডা. তৃপ্তি বালা। তিনি ঢাকা বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পদে কর্মরত আছেন।