জীবনের শেষ ক্লাস



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
অধ্যাপক ড. ইরশাদ কামাল খান /ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপক ড. ইরশাদ কামাল খান /ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের চার তলার করিডোরে বুধবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে ধীর পায়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি। পাশে দুই সহকর্মী ড. আশরাফ (কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি) ও ড. আবুল হোসেন (সাবেক ডিন)। প্রকাশ্যে কোনো আবেগ তাকে স্পর্শ করছে না। তথাপি চোখ দুটো কিঞ্চিত লালাভ ও অব্যক্ত অশ্রুর ছোঁয়ায় টলটলে।

একজন মানুষের জীবনে ঘটনাটি ঐতিহাসিক। সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর শিক্ষকতা জীবনের অন্তে সর্বশেষ ক্লাশটি নিয়ে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। বনানীময় ক্যাম্পাসে তারুণ্যের আগুণে-দীপ্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাসে তিনি আর কখনোই আসবেন না। স্মৃতির পাহাড়ের মতো পেছনে থেকে যাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও তার প্রিয় অর্থনীতি বিভাগ। 

‘শেষ ক্লাস নিলাম আজ’ আমাকে সামনে পেয়ে হাত মেলাতে মেলাতে বললেন অর্থনীতি বিভাগের প্রথিতযশা শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইরশাদ কামাল খান। তাঁর উষ্ণ করতলের স্পর্শে আমার ভেতরেও তখন গোপনে বইছে স্মৃতির তুষারপাত। তার অতিক্রান্ত চল্লিশ বছরের প্রায় ত্রিশ বছর তিনি ছিলেন আমাদের নিত্যসঙ্গী, সিনিয়র সহকর্মী। 

নিজে গাড়ি চালিয়ে এসেছেন ক্যাম্পাসে। চমৎকার দুই কন্যাকে সঙ্গ দিয়েছেন। ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা-আলোচনায় মুগ্ধ করেছেন আমাদের মতো উৎসুক-তরুণ সহকর্মীদের। একটি আস্ত ক্যারিয়ার সাফল্যের সঙ্গে পাড়ি দিতে গিয়ে হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যিালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি, শিক্ষক সমিতির সম্পাদক, চট্টগ্রাম ইনডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

চট্টগ্রামের আদি ও অকৃত্রিম ভূমিপুত্র হয়েও তিনি ছিলেন বিশ্বায়নের সন্তান। শিক্ষা ও কর্মের সূত্রে ঘুরেছেন জগতময়। প্রাইমারি থেকেই ঢাকায় রেসিডেন্টসিয়াল মডেলে। তারপর ক্যাডেট কলেজ হয়ে পূর্ব ইউরোপে। তারও পর হংকং, মেকাও এমন অনেক জায়গায়।

বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে স্বাচ্ছন্দ তাঁর। পড়াশোনা করেছেন ইংরেজি মাধ্যমে। পঠন-পাঠনের মাধ্যমও ইংরেজি। বিক্রম শেঠ, অমিতাভ ঘোষের নতুন বই পড়লেই সাবলীল আলোচনা করেছেন আমাদের সঙ্গে। কলকাতা বা দিল্লি থেকে ফিরে এলে নতুন বই বা নতুন বিষয় নিয়ে অবধারিতভাবে কথা বলেছেন। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তথ্য ও উপাত্তের দিক থেকে সব সময় থেকেছেন আপ-টু-ডেট।

চট্টগ্রাম সম্পর্কে তাঁর রয়েছে প্রত্যক্ষ জ্ঞান। দক্ষিণ পটিয়ার এই জাতক আনোয়ারা-দিয়াঙ এলাকার খ্রিস্টান সমাজ ও সংস্কৃতির অনেক কিছুই জানতেন। সারা জীবন চট্টগ্রাম শহরে নাগরিক জীবন-যাপনের সুবাধে শৈশবের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান জনগোষ্ঠী, হারিয়ে যাওয়া চীনা সম্প্রদায়, গুজরাতি, আগা খানি ইত্যাদি জাতি সম্পর্কেও সরাসরি অর্জন করেন পরিচ্ছন্ন ধারণা।

চট্টগ্রাম শহর থেকে দূরের ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার বাসে, টিচার্স লাউঞ্জে, অফিস রুমের চেম্বারে, চট্টগ্রাম ক্লাবে, ইত্যাদি নানা জায়গায় তার সঙ্গে আলাপচারিতার অভিজ্ঞতাগুলো ছিল আনন্দ ও জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত। চট্টগ্রামের নেতৃস্থানীয় বাম-প্রগতিশীল-সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পিতা ডা. কামাল এ. খানের ঐতিহ্যের পথ ধরে তিনিও অসাম্প্রদায়িক, বহুত্ববাদী, সংস্কৃতিমনা আবহে নিজের জীবনকে যাপন করেছেন।

বলতে দ্বিধা নেই, তাকে ঘিরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নান্দনিক বৃত্ত গড়ে উঠেছিল, যেখানে অগ্রসর আলাপ-আলোচনা ও সংলাপের একটি প্রাণবন্ত ধারা প্রবহমান ছিল। সাধারণের ভীড়ে ক্ষয়িষ্ণু বিদ্যামুখীদের একটি ক্ষুদ্রমণ্ডলী গড়ে উঠেছিল তাঁকে ঘিরে। যেখানে সবার আসার ও অংশগ্রহণের সুযোগ ও সামর্থ্য ছিল না।

পিতৃকুলের আভিজাত্যের সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাতৃকুলের সুবাদে কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী পরিবারগুলোর শরাফত বহন করেছেন। যার শেকড় বিস্তৃত ছিল অবিভক্ত বাংলার রাজধানী কলকাতার রাজনীতি, সমাজ ও সাহিত্যে। বৈবাহিক সূত্রে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক সুষমা ছিল তার অধীত। মেয়েদের বসবাসের কারণে আটলান্টিকের উভয় তীরের জনপদগুলো তিনি ভ্রমণে ও যাপনে আত্মস্থ করেছেন।

ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার নানা প্রান্তের সৌরভের ভেতর তিনি বছরের অনেকটা সময় কাটিয়ে বিশ্বায়নের আভা মেখে চিরায়ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের যাপিত জীবনের একজন অগ্রগণ্য, অনবদ্য, উজ্জ্বল সদস্য হিসেবে জ্বলজ্বল করছেন। বয়স তাঁর তারুণ্যের কাছে এসে মাথা হেট করেছে। জ্ঞান ও প্রজ্ঞা তাঁর কাছে এসে প্রজ্বলিত হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি জীবনের শেষ ক্লাশটি সম্পন্ন করলেও বিলক্ষণ জানি, তাঁর মতো একজন সৃজনশীল শিক্ষক ও মননশীল মানুষের অধ্যয়ন, পড়াশোনা, ক্লাস নেওয়া ইত্যাদি বিদ্যায়নিক কাজ-কর্ম কখনোই শেষ হওয়ার নয়।

অধ্যাপক ড. ইরশাদ কামাল খান, ‘নেভার সে ইউ গুডবাই’। আপনাকে কখনোই বিদায় জানানো সম্ভব হবে না। আপনি আমাদের মাঝেই থাকবেন। নৈসর্গিক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাশ্বত প্রকৃতির পরতে পরতে আপনি থেকে যাবেন কাল থেকে কালান্তরে।

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;