পঙ্গুত্বকে জয় করে হয়েছেন প্রতিবন্ধীদের দিকনির্দেশক



এস এম জামাল, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

পাঁচ বছর থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত যে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধীদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন পান্না। প্রতিবন্ধীদের মানসিক বিকাশে শিক্ষার পাশাপাশি দিচ্ছেন নানা রকম দিক নির্দেশনাও। পুরো নাম আবু সালেহ মজনুল কবির পান্না।

তিনি কুষ্টিয়ারে দৌলতপুর উপজেলার রিফায়েতপুর ইউনিয়নের হরিণহাছি গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে। সহকারী আইনজীবীর পাশাপাশি ব্যবসায়ী ছিলেন পান্না। কিন্তু ২০০৮ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করেন তিনি। তখন থেকেই নিজের এ পঙ্গুত্ব জীবনকে উপলব্ধি করেত থাকেন অন্যসব পঙ্গু কিংবা প্রতিবন্ধীদের।

তাদের দুঃখ কষ্ট লাঘবের চিন্তাও করে ২০০৯ সালে দৌলতপুর উপজেলার চন্দনাপাড়া নিজ বাড়িতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ‘পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ শিক্ষালয়’ নামে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি বিদ্যালয় গড়ে তোলেন পান্না। পরে ২০১৫ সালের শুরুর দিকে ‘দৌলতপুর প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়’ নামে উপজেলার সোনাইকান্দিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধনকৃত ঊসদা সমাজকল্যাণ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সার্বিক সহযোগিতায় সাড়ে ১২ শতাংশ জমির ওপর গড়ে তোলা হয় বিদ্যালয়টি।

পান্নার এ কাজে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী মোছা. নাসরীন সুলতানা। তিনি দৌলতপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।

প্রথমে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এ বিদ্যালয়টি শুরু হলেও বর্তমানে ২২০ জনকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে সম্প্রতি তিনজন সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/25/1545720251602.jpg

স্থানীয়দের দান করা ভ্যানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় শতাধিক প্রতিবন্ধী এখানে শিক্ষা নিতে আসে। স্কুল থেকে ২০-৩০ মাইল দূর থেকেও ভ্যানে করে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসা এবং পৌঁছে দেওয়া হয় তাদের।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নামমাত্র ভর্তি ফি নেওয়া হলেও কোনো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসিক বা বাৎসরিক খরচ নেওয়া হয় না। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত স্কুল খোলা রেখে শিক্ষা ও সেবা দেয়া হয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, ছয়টি রুমের মধ্যে চারটি ক্লাস ও সেবা রুম, একটি অফিস কক্ষ ও একটি শিক্ষক মিলনায়তন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষকসহ ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন প্রধান শিক্ষক, পাঁচজন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক, ১২ জন সহকারী শিক্ষক, আটজন শিক্ষা সহকারী, একজন অফিস সহকারী, একজন এমএলএসএস ও একজন ভ্যান চালক এবং এক জন নৈশ প্রহরী রয়েছেন।

প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘দৌলতপুর প্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়’ বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। প্রতিষ্ঠানটির ওপর সরকারের দৃষ্টি না পড়ায় এখনো কোনো প্রকার সরকারি সহযোগিতা জোটেনি। বেতন-ভাতা ছাড়াই কাজ করছেন শিক্ষকরা। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক আবু সালেহ মজনুল কবির পান্নার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪ এর। তিনি বলেন, ‘আমি সহকারী আইনজীবী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০০৮ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণ করি। তখন থেকে নিজেকে পঙ্গুত্বের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে এবং তাদের (বিকলাঙ্গ/প্রতিবন্ধীদের) কথা মাথায় রেখে তাদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রতিবন্ধী স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার সময় থেকে এলাকাবাসীর ব্যাপক অনুপ্রেরণা এবং সহযোগিতা পেয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো বেতন-ভাতা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক ও কর্মচারীরা। তবে বেতন-ভাতা ছাড়া কত দিন এভাবে সেবা দিতে পারবো তা বলতে পারি না।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Dec/25/1545720276004.jpg

তবে সরকার থেকে সহযোগিতা পেলে আরও সুবিধা হতো বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আমাদের স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের আনা নেওয়ার জন্য মাইক্রোবাস, কম্পিউটার, প্রজেক্টর সাউন্ড সিস্টেম ও অনেক খেলনা প্রয়োজন। এছাড়া আরও ক্লাস রুমের দরকার। পর্যাপ্ত ক্লাস রুম না থাকায় অধিকাংশ সময় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হয়। বৃষ্টির সময় পাঠদানে তাদের ব্যাপক সমস্যা হয়।

অভিভাবকরা বার্তা২৪.কমকে জানান, স্কুলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের সন্তানদের আচরণ আগের থেকে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের ব্যবহার ও আচার আচরণ পরিবর্তন হওয়ায় আমরা খুশি।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার বার্তা২৪কে জানান, বিদ্যালয়ের সকল সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি করণের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

দৌলতপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরী বার্তা২৪কে জানান, উপজেলার মধ্যে একটিমাত্র প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এটি। এখানে যেভাবে প্রতিবন্ধীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিয়ে এনে শিক্ষাদান করানো হয় তাতে আমি অভিভূত। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

এছাড়া সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগ এবং বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

   

ব্যাঙের চিৎকার যে কারণে শুনতে পায় না মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাঙ অন্য প্রাণীদের মতো চিৎকার করলেও শ্রবণ শক্তির চেয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা শুনতে পায় না।

ব্রাজিলের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের এক দল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাজন জঙ্গলে ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। তারা দেখেন যে, স্মল লিফ লিটার ব্যাঙগুলি তাদের মাথা পিছনে ফেলে তাদের মুখ প্রশস্ত করে রেখেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা চিৎকার করছে। কিন্তু তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

যখন বিজ্ঞানীরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করে রেকর্ড করেছিল, তখন তারা উভচর প্রাণীদের ‘প্রতিরক্ষামূলক আল্ট্রাসাউন্ড’ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। 

যখন তারা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা দেখতে পান যে, এটির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ছিল ৭ কিলোহার্টজ থেকে ৪৪  কিলোহার্টজ। মানুষ ২০ কিলোহার্টজ এর বেশি ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে না।

এ গবেষক দলের মতে, ব্যাঙের চিৎকারটি শিকারিদের প্রতিক্রিয়া। শিকারিকে আক্রমণ করার জন্য বা অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি তাদের কৌশল হতে পারে।

দলের একজন গবেষক মারিয়ানা রেতুসি পন্টেস বলেছেন, তিনি ভিন্ন গবেষণা ট্রিপে ব্যাঙকে একই আচরণ প্রদর্শন করতে দেখেছেন, কিন্তু তার কাছে এ শব্দ রেকর্ড করার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ছিল না।

বাদুড়, তিমি, গন্ডার, কুকুর, কবুতর, কাটলফিশসহ সব ধরনের প্রাণী যোগাযোগের জন্য ইনফ্রাসোনিক এবং আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং মানুষ এর কিছুই শুনতে পায় না।

আপনি যখন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা উপভোগ করছেন, তখন হয়তো আপনার চারপাশে একটি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থাকতে পারে, যা আপনি শুনছেন না।

;

মাটির নিচে প্রাচীন দুর্গের সন্ধান, অর্থের অভাবে বন্ধ কাজ



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক এক একডালা দুর্গের সন্ধান মিলেছে। এর পর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় খনন কাজ। কিছুটা দৃশ্যমান হয় দুর্গ। তবে সরকারি অর্থায়ন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস খনন করে সামনে আসলে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তার দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।

দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে সেখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই খননকাজ শুরু করেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

এক সময় লোকমুখে গল্প শোনা যেত, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে রয়েছে ‘রানির বাড়ি’। সেই মধ্যযুগের ইতিহাস এতদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। বাস্তবে তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া গেছে। বহুদিনের চেষ্টায় একদল গবেষক ‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়া দুর্গ আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ আবিষ্কার মধ্যযুগের ইতিহাস মানুষের বাস্তবে দেখার বাসনা পূরণ হবে। আংশিক খনন করা দুর্গটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনের ভিড় করেছেন। তবে বর্তমানে অনুদানের অভাবে দুর্গটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়ায় সরজমিনে দেখা যায়, বালির বস্তা দিয়ে দুর্গের দুই পাস ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশে খোলা রয়েছে। দুর্গের চারপাশে মলি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখা রয়েছে। পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে।

পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অনেক দিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রেখে তারা চলে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে এসে দুর্গ থেকে ইটের গাঁথুনি থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে দুর্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে দুর্গের খননের অংশটুকুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুদ্দিন (৬০) বলেন, ছোট থেকে শুনে আসছি এই রানির ভিটার কথা৷ কিন্তু এটার সঠিক ইতিহাস জানতাম না। সবটুকু খনন করা হলে ইতিহাস উন্মোচন হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র টোক নগর ভেংগুরদী গ্রামের আশিক রব্বানী জিহান বলেন, এটি আমাদের কাপাসিয়ার জন্য বিশাল এক সম্পদ৷ এটি খনন করা হলে আগে কি ছিলো বা এখন কি আছে সেটা জানা যাবে৷ এটি দৃশ্যমান হলে গাজীপুর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থাপনা হতে পারে৷ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

 লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের সন্ধান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিজ খরচে খননকাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। তিনি ছিলেন বেনীয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। এই কৃষি জমির পাশে উঁচু অংশ খননের পর বর্তমানে দুর্গের কিছু অংশের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যতটুকু খনন করা হয়েছে তা নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ফান্ড পেলে খননকাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

 

;

বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে সিক্ত রাজধানী



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রুদ্র বৈশাখ তার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই সূর্যের পূর্ণ তাপে জ্বলছিল। ভরদুপুরে ঘরের বাইর হওয়াই দায়! মাথার উপর প্রচণ্ড উত্তাপ যেন ঘামের জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

‘দুপুরের ভেপসা গরম, ঘেমে শরীর তীর-ঘাম/তবু ধানকাটায় ব্যস্ত কৃষক, নেই কারো বিশ্রাম/এমন ক্ষণে ঈশান কোণে মেঘ-বিজলীর গর্জন/অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস নামলো প্রতিক্ষার বর্ষণ।’ অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র তাপদাহের পর কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর বুকে নামল ঝুম বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টিফোঁটায় সিক্ত হলো রাজধানীর মাটি।     


আর সেই সঙ্গে ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম বৃষ্টিতে উল্লাসে মেতে উঠল নগরবাসী। 

বৃষ্টির ঝুম ঝুম ফোঁটায় যেন এক অনন্য নূপুরধ্বনির তরঙ্গ তুলেছে প্রকৃতি। ঘাম, গরম, অস্বস্তি যে খরায় পুড়ছিল মানুষের মন, তাতে শান্তির অমৃতধারা নেমেছে সূদুর আকাশ থেকে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, সঙ্গে জোড় বেঁধেছে দমকা হাওয়া। বৈশাখের এক অনস্বীকার্য অংশ হলো কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখে আসন্ন সেই ঝড়ের ইঙ্গিতই বয়ে আনলো পাগলাটে বাতাস।


এর আগে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;