বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা বাংলা



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
অমর একুশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

অমর একুশ, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease
শুধু নিজের ভাষা বলেই নয়, তথ্য-পরিসংখ্যান বলছে বাংলা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা। সংখ্যা ও গুণের দিক থেকে এবং অন্যবিধ কারণে বাংলা বিশ্বসভায় সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত।
 
কয়েক বছর আগে প্রকাশিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক’-এর তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে বাংলাভাষী জনসংখ্যা ছিল সাতাশ কোটির কাছাকাছি। চলতি ২০১৯ সালে সংখ্যাটি আরো অনেক বেড়েছে। মনে করা হয়, বর্তমানে পুরো দুনিয়ায় তিরিশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলেন, যার অর্ধেক বাংলাদেশে আর বাকী মানুষ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা ও বিশ্বের নানা স্থানে বসবাসকারী বাঙালি।
 
সংখ্যাটি বিশ্ব ও এশিয়া মহাদেশের বিবেচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভাষাগত ও জনগোষ্ঠীর এই সংখ্যাগত বিশালত্ব এশিয়া মহাদেশে বাংলাকে দ্বিতীয় বৃহত্তম ভাষিক-জাতিগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং এশিয়া মহাদেশের ৭০০০ ভাষার মধ্যে মাতৃভাষার অবস্থানে বাংলাকে স্থান করে দিয়েছে দ্বিতীয় আসনে। এই সম্মান বাংলা অর্জন করেছে নিজস্ব যোগ্যতায়।
 
লক্ষ্যণীয় তথ্য হচ্ছে, আমাদের বাংলাভাষা বাংলাদেশের জাতীয় ভাষা। সেই সঙ্গে ভারতের আঠারোটি অফিসিয়াল ভাষার মধ্যে অন্যতম। এখানেই শেষ নয়, বাংলা ভাষায় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত আর জাতীয় স্তোত্র রচিত। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ১৯৫২-এর দুর্বার ভাষা আন্দোলনের সংগ্রামদীপ্ত আন্দোলনের ঘটনাকে সশ্রদ্ধ মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হয়েছে আন্তর্জাতিক ‘মাতৃভাষা দিবস’ রূপে। বিশ্বের ১৮৮টি দেশের মানব জাতি এই দিনটিকে ‘মাতৃভাষা দিবস’ রূপে উদযাপন করে চলেছেন শ্রদ্ধার ডালি এবং ভালোবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করে, যার কৃতিত্ব বাংলা ভাষা ও বাঙালির। 
 
সম্মানজনক তথ্য আরো আছে। ‘এথনোলগ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপের কথা প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়। ‘এথনোলগ’ হলো একটি ওয়েব-বেসড ক্যাটালগ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এখানে জরিপের মাধ্যমে পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন জনগোষ্ঠীর ভাষাসমূহ সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। তাদের জরিপ অনুযায়ী, বাংলা ভাষিক জনসংখ্যার গরিষ্ঠতা বিচারে বিশ্বের দশটি প্রধানতম ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার স্থান পঞ্চমে।
 
পর্যায়ক্রমে এর আগের চারটি ভাষা হলো, ম্যান্ডারিন চায়নিজ, স্প্যানিশ, ইংলিশ ও হিন্দি। পরের পাঁচটি ভাষা হলো: আরবি, রাশিয়ান, পর্তুগিজ, জার্মান, ফ্রেঞ্চ। অর্থাৎ, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতির তালিকায় সামনের কাতারে অবস্থান করছে বাংলা ভাষা, যা আমাদেরকে বিশ্ব-সংসারে অগ্রবর্তী হওয়ার জন্য নিত্য প্রাণিত করছে।
 
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমানে অস্তিত্বমান ৭০০০ ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার এই আসনটি নির্ণীত হয়েছে বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাভাষী জনসংখ্যার সংখ্যাতত্ত্বগত আধিক্যের ভিত্তিতে। কিন্তু দেশের বাইরে প্রবাসের বিরূপ সামাজিক আবহাওয়ার বাস্তব প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের বাংলা ভাষার চর্চা নানাবিধ সংকুলতায় পূর্ণ। তথাপি অনেকেই স্ব-উদ্যোগে সন্তান ও পরিবারের মধ্যে বাংলাকে ধরে রেখেছেন। একটি বৈশ্বিক পরিমণ্ডলের নানা ভাষা ও সংস্কৃতির স্রোতকে ঠেলে ঠেলে সেটা সম্ভব করেছেন বাংলা-প্রিয় বাঙালিরা।
 
অতএব বাংলা ভাষা আমাদের এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙালির, যার মূল কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ। যদি প্রবাসের বাংলা ভাষিক জনগোষ্ঠীকে বাংলা ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে যে বিশাল সংখ্যার জোরে আমরা বাংলা ভাষাকে নিয়ের বুক ফুলিয়ে চলি, সেটা সম্ভব হবে না। 
 
কারণ, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মোট বাংলা ভাষিক জনগোষ্ঠীর এক-তৃতীয়াংশই প্রবাসী। বিশ্বব্যাপী প্রসারিত বাংলা ভাষার দিগন্তকে নির্বিঘ্ন রাখতে হলে প্রবাসীদের মাতৃভাষা চর্চায় মনোযোগ ও গুরুত্ব দিতেই হবে। সে কারণেই বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী অবস্থিত বাঙালির মধ্যে ভাষিক ও সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধ মজবুত হওয়া দরকার। সকলের সাংস্কৃতিক ঐক্যের শক্তিতে বাংলা হবে মজবুত ও আরো মহীয়ান।
   
বাংলা ভাষাকে ঘিরে সাংস্কৃতিক বন্ধন এ কারণেই জরুরি যে, সবাই মিলে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য নিবেদিত না হলে সভ্যতার আন্তর্জাতিক প্রবাহ থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব। এমন একটি শঙ্কার কথা প্রচ্ছন্নভাবে পাশ্চাত্যের ভাষাবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এশিয়া মহাদেশের ৫৫টি, আফ্রিকার ৩৭টি, ইউরোপের ৭টি, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিশেষত অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের ১৫৭টি এবং দুই আমেরিকার ১৬১টি ভাষা ইতোমধ্যেই বিলুপ্তির পথে। কারণ এই ভাষাগুলোয় যারা এখনো কমিউনিকেট করছেন তারা সকলেই হয় বৃদ্ধ, নয়তো প্রায়-বৃদ্ধ। ৯০০ কোটি মানুষের পৃথিবীতে এই লুপ্তপ্রায় ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০০০ সংখ্যার নিচে। 
 
অতএব প্রবাসী বাঙালিদের অবশ্যই নিজেদের সন্তানদের বাংলায় দক্ষ করতে হবে, যারা এই রক্তরাঙা ভাষাকে এগিয়ে নেবে প্রজন্ম ও পরম্পরায়। হারিয়ে যেতে দেবে না মায়ের ভাষাকে। শত বিরূপতাতেও ধরে রাখবেন ভাষার বৃক্ষ ও সংস্কৃতির শেকড়।
 
আরেকটি তথ্যও বেশ উদ্বেগের। বর্তমানে অস্তিত্বময় ভাষাপ্রবাহের গতিপ্রকৃতির বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে ভাষাবিজ্ঞানের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ শেষে এমন ভবিষ্যৎ সতর্ক বাণী উচ্চারিত হচ্ছে যে, একবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বর্তমান বিশ্বের ৭০০০ অস্তিত্বমান ভাষার প্রায় নব্বই শতাংশই বিলুপ্ত হয়ে যাবে অথবা অবলুপ্তির সম্মুখীন হয়ে পড়বে। যেভাবে নতুন জন্ম নেয়া জনপ্রিয় ভাষাগুলোর শক্তিশালী অভিঘাতে ক্রমে ক্রমে অব্যবহৃত হয়ে গেছে, ওল্ড চার্চ স্লাভেনিক, ক্লাসিক্যাল আর্মেনিয়ান, অ্যাভিস্টান, বিবলিক্যাল হিব্রু, কপটিক, নিউ টেস্টামেন্ট গ্রিক, গীজ, অর্ধমাগধী (মাগধী প্রাকৃত ও মাগধী অপভ্রংশ, যা বাংলা এবং উপমহাদেশীয় বহু ভাষার জননী), পালি, সংস্কৃত, ল্যাটিন প্রভৃতি।
 
ফলে এতিহ্যবাহী, সমৃদ্ধ, শক্তিশালী ও মহৎ একটি ভাষা থাকলেই হচ্ছে না, তাকে সঞ্জীবিত রাখারও দরকার পড়ছে। বিশেষত বিশ্বায়নের এই যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে মাইগ্রেটেড জেনারেশনের একটা অংশ তাদের পরের প্রজন্মের জন্য মাতৃভাষা চর্চার বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করলেও উত্তর-পুরুষদের বেশিরভাগেরই পূর্ব-পুরুষদের ভাষার সঙ্গে আন্তরিক কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠছে না। কারণ শৈশব থেকে যে সুনির্দিষ্ট দেশের অফিসিয়াল ও স্থানীয় ভাষার মাধ্যমে তাদের প্রাত্যহিক শিক্ষা অর্জন ও জীবন-যাপন করতে হয় (স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি প্রভৃতিতে শিক্ষালাভের ফলে), তার সমাজ-সংস্কৃতির পারিপার্শ্বিকতা আর বন্ধু সংসর্গের বাস্তবতাকে তাদের পক্ষে অগ্রাহ্য করা বাস্তবেই সম্ভব নয়। এই বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করেই বিদেশে বসবাসরত বাংলাভাষী মানুষের মুখে ও চর্চায় বাংলা ভাষাকে টিকে থাকতে হচ্ছে এবং অবশ্যই টিকিয়ে রাখতেও হবে।
 
এক্ষেত্রে বাংলাভাষী মানুষের সদিচ্ছা ও সম্মিলিত প্রয়াস অতীব জরুরি। বাংলা ভাষার বিশ্বময় ঐক্য ও মেলবন্ধন আমাদের মায়ের ভাষা বাংলার প্রচার ও প্রসার বাড়াবে, ভিত্তিকে বিশ্বময় দৃঢ় করবে এবং যে কোনো বিপদ ও সঙ্কট কাটাতে সাহায্য করবে। এজন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষা বাংলাকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল রাখতে বিশ্বের সকল বাঙালিকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। ভাষাশহিদদের রক্ত ও ভাষা সংগ্রামীদের ত্যাগের পথ বেয়ে অর্জিত বাংলা প্রেম ও বাংলা চর্চার ধারা বিশ্বের সকল বাংলাভাষী অঞ্চলে অব্যাহত রাখার মাধ্যমেই এই ভাষাকে চির সজীব ও সদা জীবন্ত রাখা সম্ভব হবে।
   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;