অর্কিড চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বাড়ছে পাহাড়ে



আলাউদ্দিন শাহরিয়ার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বান্দরবান, বার্তা২৪.কম
অর্কিড বাগান / ছবি: বার্তা২৪.কম

অর্কিড বাগান / ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পাহাড়ে বাড়ছে ভালোবাসা, আভিজাত্য এবং সৌন্দর্যের প্রতীক অর্কিড চাষের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। অর্কিড চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং গাছ-ফুল রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও ব্যাপক সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়িতে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামেও অর্কিড সংরক্ষণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেকেই।

কৃষি বিভাগ ও অর্কিড বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়ায় অর্কিড চাষ বেশ উপযোগী। দেশের মধ্যে পার্বত্য জেলা বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং খাগড়াছড়ি ছাড়াও সিলেটের পাহাড়ী অঞ্চলে অর্কিড পাওয়া যায়। তবে পাহাড়ে অপরিকল্পিত জুম চাষ, বনাঞ্চল উজাড় এবং পরিবেশ ধ্বংসের কারণে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান অর্কিড।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/03/1554279042094.jpg

বিশ্বে বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। এর মধ্যে ক্রাইটোক্সাম, ডেন ফার্মেরি, ডেন এগ্রাগেটাম, ডেন ক্রিপিডেটাম, পিয়ারাড্ডি, ডেন প্রিমুলিনাম, বাল্বোফাইলামসহ প্রায় ৪৯ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে বান্দরবানে শিক্ষক আমির হোসেন নয়নের অর্কিড সংরক্ষণাগারে। ২০১৬ সালে শখের বসে বাড়ির আঙ্গিনায় গড়ে তোলা অর্কিড বাগানটি বর্তমানে সংরক্ষণাগারে পরিণত হয়েছে। জেলা শহরের কালাঘাটা ফ্রেন্সিঘোনায় ছয় শতক জমিতে গড়ে তোলা অর্কিড বাগানটির মাধ্যমে পার্বত্যাঞ্চলে অর্কিডের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রতিদিনই অর্কিডপ্রেমী শিক্ষকের ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলা বাগান দেখতে ভিড় জমাচ্ছে উৎসুক লোকজন। ঘুরে দেখার পর কিনে নিয়ে যাচ্ছে অর্কিড গাছও। শিক্ষকের দেখাদেখি আরও অনেকে বাড়ির আঙ্গিনায় এবং ছাদে অর্কিডের চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।

দর্শনার্থী ছাদ বাগান চাষি ফাতেমা বিনতে আলম ও চিনো দেওয়ান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আকর্ষণীয় রং, বিভিন্ন ধরনের গড়ন, ঔষধি গুণাগুণ, সুগন্ধি, দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল বৈশিষ্টগুলোর কারণে অর্কিডের জনপ্রিয়তা বাড়ছে বাংলাদেশেও। আমাদের ছাদ বাগানেও বিভিন্ন ধরনের ফল-ফুলের গাছ রয়েছে। কিন্তু অর্কিডের সংখ্যাটা খুবই কম। ফেসবুক পেইজের অর্কিড বাগানটির খবর পেয়ে দেখতে এলাম। ছোট্ট পরিসরে হলেও সংরক্ষণাগার দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তাই নিজেদের বাগানের জন্য কিছু অর্কিড গাছ সংগ্রহ করলাম। অর্কিড চাষ সর্ম্পকে কিছুটা ধারণাও নিলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/03/1554279072122.jpg

অর্কিড চাষি শিক্ষক আমির হোসেন নয়ন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘জুম চাষ, বনাঞ্চল উজাড়সহ পরিবেশ বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান অর্কিড। পাহাড়ের মানুষেরা অর্কিড সর্ম্পকে সচেতন নয়, পরগাছা আর আগাছা ভেবে মূল্যবান অর্কিডগুলো নষ্ট করে ফেলছে। অর্কিডের প্রতি আমার দুর্বলতা রয়েছে। তাই কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে বিভিন্ন স্থান থেকে অর্কিড সংগ্রহ করে নিয়ে আসতাম। পরবর্তীতে বাড়ির আঙ্গিনায় টবে এবং গাছের ঢালে লাগিয়ে পরিচর্যা করতাম। উৎসাহ দেখে আমার স্ত্রী এবং দুই সন্তান অর্কিড সংরক্ষণে আমায় সহযোগিতা করেছে। মূলত তাদের সহযোগিতায় ২০১৬ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এ দু’বছরে অর্কিড বাগানটি দাঁড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাহিদা তৈরি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে পাহাড়ে অর্কিড চাষের সম্ভাবনাও বেড়েছে। এখন দেশেও অর্কিড ফুল গাছ সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে গাছের ছবি এবং ফুল দেখে পাহাড়ের অর্কিড বাগান থেকে অর্কিড সংগ্রহে যোগাযোগ করছে বিদেশি চাষিরাও। আমি নিজেও মিয়ানমার এবং ভারতের মিজোরাম থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্কিড গাছ সংগ্রহ করেছি। দেশের মধ্যেও বাড়ির ছাদে, বারান্দায় এবং ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভালোবাসা, আভিজাত্য এবং সৌন্দর্যের প্রতীক অর্কিড ফুল গাছ সংরক্ষণে আগ্রহী হয়ে উঠেছে অনেকে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/03/1554279100549.jpg

আমির হোসেন নয়ন বলেন, ‘বাগানের পরিসর বাড়াতে এবং খরচ মেটাতে চাহিদা অনুপাতে আগ্রহীদের কাছে কিছুকিছু অকির্ড গাছ বিক্রি করা হচ্ছে। বাগানে ৪৯ প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছি। অর্কিড চাষের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং গাছ-ফুল বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা।’

আমির হোসনের স্ত্রী মনোয়ারা রুবি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘মাত্র ছয় শতক জমিতে স্বামীর প্রচেষ্টায় ছোট্ট পরিসরে অর্কিড বাগানটি গড়ে তোলা সম্ভব হয়। স্বামী সরকারি স্কুলের একজন শিক্ষক হওয়ায় শুক্রবার ছাড়া অন্যান্য দিন বাগানে সময় দিতে পারে না। তাকে (স্বামীকে) সহযোগিতা করতে অর্কিড বাগানের প্রতি আমারও ভাললাগা জন্মায়। গাছে নিয়মিত পানি দেয়া এবং স্প্রে করাসহ সকল রক্ষণা-বেক্ষণের কাজগুলো আমিই করি। বাগানটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কর্মচারীও রয়েছে।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/03/1554279124806.jpg

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে কয়েক হাজার কোটি ডলারের অর্কিড বাণিজ্য হয়। যার মধ্যে সিংহভাগ দখল করে আছে থাইল্যান্ড। এ জন্য থাইল্যান্ডকে অর্কিডের রাণী বলা হয়। জাতভেদে সারাবছরই অর্কিডের ফুল ফোটে। তবে মার্চ এবং মে মাসে দেশীয় অর্কিড সর্বাধিক পাওয়া যায়। আবার কিছু কিছু অর্কিড বছরে দু-তিনবার ফোটে। প্রতিটি গাছে জাতভেদে দু-চারটি স্টিক পাওয়া যায়। দেশের মধ্যে পাহাড়ে অর্কিড চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। শিক্ষক নয়নের মতো আরো অনেকে এগিয়ে এসেছে অর্কিড চাষে।’

বাণিজ্যিকভাবে অর্কিড চাষ করা গেলে এ অঞ্চলে কর্মসংস্থান তৈরি এবং বিদেশে অর্কিড রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;