মেঘপাহাড়ের ডাক-২

মাওলিননংয়ের পথে....



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
মেঘপাহাড়ের ডাক/ ছবি: বার্তা২৪.কম

মেঘপাহাড়ের ডাক/ ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

উমগট বিধৌত ডাউকি সীমান্ত অতিক্রম করতেই ‘খুবলেই’ ‘খুবলেই’ সমস্বরধ্বণি। প্রথমপ্রহর থেকে এতোক্ষণ ভ্রমণঘোরের মধ্যে ছিলাম। সম্বিত ফিরতে বুঝতে পারি পৌঁছে গেছি খাসি গারো জৈন্তাদের মেঘ-পাহাড়ের রাজ্য মেঘালয়। স্বাগত জানাতে তিনঘন্টা ড্রাইভ করে ছুটে এসেছেন খাসি মেজবান স্ট্রেমলেট ডেখার, বাখিয়া মন, ইভানিশা পাথাও। এই ট্রিপের অন্তত তিনদিন থাকবো স্ট্রিমলেটের বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউসে, তাঁর সরাসরি আতিথ্যে।

এর আগে সাতসকালে বিমানের ফ্লাইট বিজি জিরো সিক্স ফাইভ আমাদের ঠিকঠাক মতোই নামিয়ে দিয়েছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিমানবন্দর থেকে আমাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে সিলেটের পাকা ড্রাইভার দীপক দেবনাথ সাতসকালে পৌঁছে দিয়েছে তামাবিল। নানা ঝক্কি করে দু’পারের ইমিগ্রেশন-কাস্টমস অতিক্রম করেই পেয়ে গেছি মেজবান গ্রুপ ডেখার গংকে। খয়েরি রঙের টাটা সুমো ও দক্ষ গারো গাড়ি চালক দামরেন সাংমাকে নিয়ে তারা সময়মতো হাজির। জীবনে প্রথম ভ্রমণযাত্রা শুরু বিমানে, সীমান্ত অতিক্রম হেঁটে, গন্তব্য গাড়িতে। শানে নুযুল হচ্ছে, ভ্রমণ রুট ঢাকা-সিলেট-তামাবিল-ডাউকি-শিলং। মোড অব ট্রান্সপোর্ট উড়োজাহাজ, মাইক্রোবাস, টাটা সুমো।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/09/1560062721306.jpg

মেঘের বাড়ি মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের পথে আমাদের প্রথম যাওয়ার কথা এশিয়ার সবচে’ পরিচ্ছন্ন গ্রাম ‘মাওলিননংয়ে’। ডাউকিতনয়া উমগট পাড়ি দিয়ে পাহাড়ি পথে যেতে হবে মাউলিননং। যাওয়ার পথে দ্রষ্টব্যটি স্পর্শ করে গেলে ভ্রমণের হাফ পয়সা উসুল। কারণ বাংলাদেশ-ভারতে সোস্যাল মিডিয়াভিত্তিক যতোগুলো ভ্রমণ গ্রুপ আছে ডাউকিতে তাঁদের অন্যতম গন্তব্য এই গ্রাম। গুগলের ভ্রমণ রিভিউয়ে ক্লিক করলেই মাউলিননং আর মাউলিননং। সে মতে, শিলংয়ের পথে এখন ছুটে চলেছি গ্রামটি এক্সপ্লোরে। ভ্রমণসঙ্গীরা রাতের প্রথমপ্রহর থেকে যাত্রার ধকলে এখন অনেকটা ক্লান্ত। পাহাড়ি রাস্তার ঝাঁকুনিতে তাদের চোখ ঘুম ঢুলুঢুলু। গুরুবাক্য শিরোধার্য করে জোর করে হলেও নির্নিমেষ তাকিয়ে আছি। আমার ভ্রমণ ও ভ্রমণগদ্য আইডল সৈয়দ মুজতবা আলী বা হালের বুদ্ধদেব গুহ বলেছেন, ক্যামেরার লেন্সে দুনিয়া না দেখে চোখের ক্যামেরায় দেখতে। চোখের থ্রি পয়েন্ট ফাইভ লেন্সে সব জায়গার ছবি তুলে মস্তিষ্কের ডার্করুমে রেখে দাও। যখন খুশি সেই ছবি ডেভেলপ করে নাও। পাহাড়-মেঘ-ঝর্ণার সৌন্দর্য দু’চোখের ক্যামেরায় ধরে রাখতে আমি আর কবি কামরুল হাসান তাকিয়ে আছি। এটা, ওটা দেখে ওই ওই বলে চেঁচিয়ে উঠছি। হাতের মোবাইল ক্যামেরাও সচল হচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।

মাউলিননং ভিলেজ এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসাবে তকমা পেয়েছে। এ ধরণের তকমার মাপকাঠি বা তকমাদাতা নিয়ে খুব বেশি জানা না গেলেও গ্রামের এই পরিচিতিতে পর্যটকরা ছুটে আসছে, গ্রামের মানুষও সন্তুষ্টচিত্তে এক অভিনব গ্রাম্যসমাজের আওতায় গ্রাম পরিচালনা করছে, পরিচ্ছন্নতাই যার মূল কথা। নিজস্ব উদ্যোগেই এই গ্রামসমাজের সদস্যরা নিয়মিত গ্রাম পরিস্কার করে আবর্জনা নির্দ্দিষ্ট ডাস্টবিনে ফেলে। এ গ্রামে কিছু ঘরবাড়ি, হোমস্টে, রিসোর্ট, কিছু দোকানপাট আছে। প্রতিমুহুর্তে পরিব্রাজক-পর্যটকের স্রোত গ্রাম পর্যটনে আসছে। পর্যটনশিল্প গ্রামবাসীর আয়ের অন্যতম উৎস হয়ে উঠেছে। এর মাঝে গ্রামের জীবনযাত্রা হারিয়ে গিয়ে মাউলিননং হয়ে উঠেছে ব্যবসাবাণিজ্যের কেন্দ্র। গ্রামের আঁকা বাঁকা প্রতিটি রাস্তার পাশে চমৎকার বাহারি ফুলগাছে। বাড়িতে বাড়িতে নানা পসার নিয়ে বসেছে স্থানীয়রা। মাউলিননং এখন গ্রাম কি গ্রাম না, এ নিয়ে ভাবার সময় পরিব্রাজকদের কারও নেই। তারা এই গ্রামটির নানা আঁকাবাঁকা পথে ছবি সেলফি তুলে, বাঁশ দিয়ে বানানো ভিউপয়েন্টে উঠে এবং নানারকম হস্তজাত সামগ্রীতে ব্যাগ পুরে পাহাড়ি দৌড়াচ্ছে আরেক গন্তব্যে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/09/1560062741768.jpg

ডাউকি থেকে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আমরা মাউলিননংয়ে পৌঁছেছি। মেজবানগণ এখানে যাতায়াতে আগে থেকেই অভ্যস্থ। সৌন্দর্যের আঁধারের মধ্যেই তাঁদের বসবাস, তাই পরিচ্ছন্ন গ্রামে পৌঁছে তাঁদের প্রতিক্রিয়া বোঝা গেল না। ভ্রমণসঙ্গী গৃহবন্ধু জলি, সদ্য কিশোরউত্তীর্ণ তুসু গাড়ি থেকে নেমেই ওয়াও, ওয়াও করতে লাগলো। গ্রামের ভেতরের কোন রেস্টুরেন্টে বসে আমরা চা-কফির বিরতি নিতে চাইলাম। লাস্যময়ী কিশোরী জেস্টারওয়েলের পৈত্রিক রেস্টুরেন্ট বসলাম। রেস্টুরেন্টের নাম কিউ শাপরাঙ। স্থানীয় ভ্রমণসঙ্গী কাম গাইড স্ট্রিমলেট ডেখার জেস্টারওয়েলের কাছে জানেত চাইলেন, এখানে বাইরের খাবার এলাউড কি না। হ্যাঁ সূচক জবাব আসতেই আমাদের অবাক করে দিয়ে তারা তাদের ব্যাকপ্যাক থেকে একের পর এক খাবার বের করতে লাগলেন। দেখলাম,তারা পুরো সকালে নাস্তার জোগারজন্তু করে নিয়ে এসেছেন। স্ট্রিমলেট ওয়ানটাইম প্লেট একেক করে সবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে একের পর এক বের করলেন রুটি, আলু ভাজি, ডিম সেদ্ধ ও আচার। কিছুক্ষণের মধ্যে অমৃতসম একপেয়ালা করে চা এনে হাজির করলো কিশোরী জেস্টারওয়েল। আমরা খেয়ে রীতিমতো, পরিতৃপ্ত। কিশোরীর নামটি বিশেষভাবে উল্লেখ হচ্ছে এই কারণে যে, সে শুধু দর্শনধারীই নয়। গরীবঘরের মেয়ে হয়েও নিজেকে সুশ্রী রাখতে নিজের প্রয়োজনীয় যত্ন যে নেয় তা তার চেহারা দেখে বোঝা যায়। এই পাহাড়ের দেশে সে কোথায় বিউটিশিয়ান পায় তা ভেবে অবাক হতে হয়।

আমরা নাস্তা করে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে চাইলাম। চারদিকে পর্যটকরা হৈ হৈ করছে। গ্রামের পার্কিংয়ে লটে অনেকগুলো দোকানে বসেছে গারো খাসিদের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের মেলা। সেই সম্ভার থেকে আগ্রহীরা কিনছে পছন্দের জিনিসপত্র। আমাদের কয়েকজন সেদিকে মনোযোগী। কবি কামরুল হাসান আর আমি মনযোগ দিলাম গ্রামের অন্দর-বাহিরের তত্ত্বানুসন্ধানে। ভ্রমণবিদরাই বলেছেন, ভ্রমণে সব ভ্রামণিকের আগ্রহ এক নয়। আমরা যখন নোটবুকে তথ্য লিখতে ব্যস্ত, আমাদের অন্যসঙ্গীরা তখন ব্যস্ত কেনাকাটায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/09/1560062759057.jpg

মাওলিননং থেকে শিলং যাওয়ার আগে আরও বেশ কয়েকটি পর্যটনস্পট দেখে যাওয়া যায়। অনেকে ট্যাক্সি নিয়ে এগুলো দেখে সন্ধ্যা বা রাতের দিকে শিলংয়ে গিয়ে হোটেলে ওঠে। অনেক ডাউকি হয়ে চেরাপুঞ্জির হোটেল-রিসোর্টকে কেন্দ্র বানিয়ে পরে শিলংয়ে যায়। সরাসরি শিলং পৌঁছালে চেরাপুঞ্জি, ডাউকির স্পটে আসতে উল্টো আসার প্রয়োজন পড়ে। আমরা চেরাপুঞ্জি থাকছি না, আবার ভোররাতে পথে বের হওয়ার ধকলে আগেভাগেই শিলং পৌঁছানোর পরিকল্পনা করেছিলাম। সে পরিকল্পনা কেড়ে নিল মাউলিননংয়ের অদূরেই লিভিং রুট সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত নজরকাড়া জলঝর্ণা। হাজার ফুট ওপর থেকে যে ঝর্ণার অবিরাম কলধ্বণি, কাছেই টানে, দূরে যেতে দেয় না।

   

ব্যাঙের চিৎকার যে কারণে শুনতে পায় না মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাঙ অন্য প্রাণীদের মতো চিৎকার করলেও শ্রবণ শক্তির চেয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা শুনতে পায় না।

ব্রাজিলের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের এক দল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাজন জঙ্গলে ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। তারা দেখেন যে, স্মল লিফ লিটার ব্যাঙগুলি তাদের মাথা পিছনে ফেলে তাদের মুখ প্রশস্ত করে রেখেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা চিৎকার করছে। কিন্তু তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

যখন বিজ্ঞানীরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করে রেকর্ড করেছিল, তখন তারা উভচর প্রাণীদের ‘প্রতিরক্ষামূলক আল্ট্রাসাউন্ড’ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। 

যখন তারা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা দেখতে পান যে, এটির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ছিল ৭ কিলোহার্টজ থেকে ৪৪  কিলোহার্টজ। মানুষ ২০ কিলোহার্টজ এর বেশি ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে না।

এ গবেষক দলের মতে, ব্যাঙের চিৎকারটি শিকারিদের প্রতিক্রিয়া। শিকারিকে আক্রমণ করার জন্য বা অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি তাদের কৌশল হতে পারে।

দলের একজন গবেষক মারিয়ানা রেতুসি পন্টেস বলেছেন, তিনি ভিন্ন গবেষণা ট্রিপে ব্যাঙকে একই আচরণ প্রদর্শন করতে দেখেছেন, কিন্তু তার কাছে এ শব্দ রেকর্ড করার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ছিল না।

বাদুড়, তিমি, গন্ডার, কুকুর, কবুতর, কাটলফিশসহ সব ধরনের প্রাণী যোগাযোগের জন্য ইনফ্রাসোনিক এবং আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং মানুষ এর কিছুই শুনতে পায় না।

আপনি যখন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা উপভোগ করছেন, তখন হয়তো আপনার চারপাশে একটি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থাকতে পারে, যা আপনি শুনছেন না।

;

মাটির নিচে প্রাচীন দুর্গের সন্ধান, অর্থের অভাবে বন্ধ কাজ



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক এক একডালা দুর্গের সন্ধান মিলেছে। এর পর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় খনন কাজ। কিছুটা দৃশ্যমান হয় দুর্গ। তবে সরকারি অর্থায়ন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস খনন করে সামনে আসলে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তার দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।

দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে সেখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই খননকাজ শুরু করেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

এক সময় লোকমুখে গল্প শোনা যেত, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে রয়েছে ‘রানির বাড়ি’। সেই মধ্যযুগের ইতিহাস এতদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। বাস্তবে তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া গেছে। বহুদিনের চেষ্টায় একদল গবেষক ‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়া দুর্গ আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ আবিষ্কার মধ্যযুগের ইতিহাস মানুষের বাস্তবে দেখার বাসনা পূরণ হবে। আংশিক খনন করা দুর্গটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনের ভিড় করেছেন। তবে বর্তমানে অনুদানের অভাবে দুর্গটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়ায় সরজমিনে দেখা যায়, বালির বস্তা দিয়ে দুর্গের দুই পাস ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশে খোলা রয়েছে। দুর্গের চারপাশে মলি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখা রয়েছে। পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে।

পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অনেক দিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রেখে তারা চলে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে এসে দুর্গ থেকে ইটের গাঁথুনি থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে দুর্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে দুর্গের খননের অংশটুকুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুদ্দিন (৬০) বলেন, ছোট থেকে শুনে আসছি এই রানির ভিটার কথা৷ কিন্তু এটার সঠিক ইতিহাস জানতাম না। সবটুকু খনন করা হলে ইতিহাস উন্মোচন হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র টোক নগর ভেংগুরদী গ্রামের আশিক রব্বানী জিহান বলেন, এটি আমাদের কাপাসিয়ার জন্য বিশাল এক সম্পদ৷ এটি খনন করা হলে আগে কি ছিলো বা এখন কি আছে সেটা জানা যাবে৷ এটি দৃশ্যমান হলে গাজীপুর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থাপনা হতে পারে৷ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

 লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের সন্ধান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিজ খরচে খননকাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। তিনি ছিলেন বেনীয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। এই কৃষি জমির পাশে উঁচু অংশ খননের পর বর্তমানে দুর্গের কিছু অংশের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যতটুকু খনন করা হয়েছে তা নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ফান্ড পেলে খননকাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

 

;

বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে সিক্ত রাজধানী



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রুদ্র বৈশাখ তার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই সূর্যের পূর্ণ তাপে জ্বলছিল। ভরদুপুরে ঘরের বাইর হওয়াই দায়! মাথার উপর প্রচণ্ড উত্তাপ যেন ঘামের জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

‘দুপুরের ভেপসা গরম, ঘেমে শরীর তীর-ঘাম/তবু ধানকাটায় ব্যস্ত কৃষক, নেই কারো বিশ্রাম/এমন ক্ষণে ঈশান কোণে মেঘ-বিজলীর গর্জন/অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস নামলো প্রতিক্ষার বর্ষণ।’ অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র তাপদাহের পর কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর বুকে নামল ঝুম বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টিফোঁটায় সিক্ত হলো রাজধানীর মাটি।     


আর সেই সঙ্গে ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম বৃষ্টিতে উল্লাসে মেতে উঠল নগরবাসী। 

বৃষ্টির ঝুম ঝুম ফোঁটায় যেন এক অনন্য নূপুরধ্বনির তরঙ্গ তুলেছে প্রকৃতি। ঘাম, গরম, অস্বস্তি যে খরায় পুড়ছিল মানুষের মন, তাতে শান্তির অমৃতধারা নেমেছে সূদুর আকাশ থেকে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, সঙ্গে জোড় বেঁধেছে দমকা হাওয়া। বৈশাখের এক অনস্বীকার্য অংশ হলো কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখে আসন্ন সেই ঝড়ের ইঙ্গিতই বয়ে আনলো পাগলাটে বাতাস।


এর আগে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;