মেঘপাহাড়ের ডাক-৩

শৈলতলে ঝরনার কলধ্বনি-লিভিং রুট ব্রিজ



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

শিলং যাওয়ার পথে মাওলিননং ভিলেজের অদূরেই লিভিং রুট ব্রিজ আরও একটি পর্যটন কেন্দ্র। নামটি শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব একটা আগ্রহী না হলেও ফেরার পথে হঠাৎ করেই চালক দারমেন রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে ফেলল। কয়েক মিনিটের ব্যাপার ভেবে গাড়ি থেকে নেমে অগত্যা পিঁপড়ের সারির মতো লোকজনকে অনুসরণ করলাম।

পাহাড়ি অলিগলিতে বেয়ে যেদিকে নেমে যাচ্ছে উৎসুক পর্যটক, সেদিকে আমরাও হাঁটতে লাগলাম। সাতজনের ভ্রমণদলের বেশিরভাগ আগে চলে গেছে। জলি স্যান্ডেল পায়ে আস্তে আস্তে হাঁটছে বলে আমিও ধীরে পা চালাই।

গভীর জঙ্গলাকীর্ণ পাহাড়ি উপত্যকায় অশ্বত্থ গাছের শেকড় নিচ দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি খালে সৃষ্ট ঝরনা অতিক্রম করে চমৎকার প্রাকৃতিক সেতু তৈরি করেছে, যার ওপর দিয়ে মানুষ হেঁটে খালটি পার হতে পারে। ব্রিজের নামে পর্যটন স্পটের নাম হলেও তা বিখ্যাত হয়তো প্রবহমান ঝরনা এবং এর চমৎকার ট্রেকের জন্য। এখান থেকে পাহাড়ের মধ্যে ট্রেকে গিয়ে আরও দর্শণীয় স্থান উপভোগ করতে পারে পেশাদার ট্রেকাররা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560181194945.jpg

এছাড়া এই শেকড়ের সেতু দেখে ওপরে ওঠার সময়ও ট্রেকাররা পাহাড়ে ওঠা-নামার আনন্দ পান। আমাদের ‌আগে আগে চলা অনেকের হাতে দেখছি ট্রেকের স্ট্যান্ড।

হাঁটছি তো হাঁটছি, লিভিং রুটের দেখা নেই। আমরা যখন সামনে এগোচ্ছি, বহু মানুষ তখন হাঁপাতে হাঁপাতে উল্টোপথে ফিরছে। ফিরনেওলাদের কাছে সামনে আগোয়ানদের প্রশ্ন কোথায় লিভিং রুট? সবার মুখে একটাই শব্দ-এই তো সামনে? সামনে রিওয়াই ভিলেজের সাইনবোর্ড। বোঝা যায়, এই স্পট ভিলেজটির সম্পদ।

পথের দু’পাশে সারি সারি দোকান। পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা আনারস, কলা, কাঁঠাল আর নানারকম খাবারের পসরা নিয়ে বসেছে খাসিয়ার মেয়েরা। যাওয়া-আসার পথের পথিকরা কিনছেও তা দেদারসে।

বেশ খানিকটা হাঁটার পর সরু পথটি নামতে শুরু করল খাড়া নিচের দিকে। এক সময়ের পাহাড়ি পথকে আজ ইট বিছিয়ে মোটামুটি সিঁড়ির আদল দেওয়া হয়েছে। আমরা সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলাম। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আবার খাড়া সিঁড়ি। এভাবে নামতে নামতে একসময় পানির অবিরাম কলধ্বনি কানে এলো, চোখে পড়ল না কিছু। লোকজন সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে পানির শব্দের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরাও কলধ্বনিমুখী পথিক। লাগছিল ভালোই। কিন্তু হঠাৎ পথ আটকাল বেরসিক কিছু লোক। এন্ট্রি ফি’র নামে ৪০ টাকা করে আদায় করছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560181220137.jpg

প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা সৌন্দর্যে অবলোকন করতে আবার প্রবেশ ফি কিসের! বুঝলাম পর্যটনমুখী মানুষের বিপুল আবেগকে নগদায়ন করছে গ্রামের লোকজন। এটি এখন তাদের সম্পদে পরিণত হয়েছে। ক্যামেরার জন্য বাড়তি আরও বিশ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। আমরা টিকিট নেওয়ার পর আরও খানিকটা নেমে অবশেষে পেলাম গন্তব্য, বাংলায় যাকে বলা হয় জীবন্ত শেকড় সেতু।

জলি থেমে থেমে শেকড় সেতু পর্যন্ত এলো ঠিকই, কিন্তু হাঁপিয়ে উঠেছে। আমার অবস্থাও কাহিল। ভ্রমণদলের কনিষ্ঠ সদস্য তুসু আর ইভানিশার অবস্থা কেবল স্বাভাবিক, অন্যরাও কমবেশি ক্লান্ত। নামতেই যখন এই অবস্থা, ফেরার সময় কি হবে ভেবে আঁতকে উঠলাম। হেঁটে সেতু পার হয়ে অপরপারে গেলাম। কবি কামরুল হাসান ততোক্ষণে আরও নিচে ঝরনার পানি ছুঁয়ে কবিতার লাইন আওড়াচ্ছেন।

এই কবিকে দেখছি, কবিতা লেখার আগে যিনি মাথায় আসা লাইনগুলো মুখস্থ করার মতো আওড়াতে থাকেন। প্রতিটি মানুষ কতো অভিনতুন ও ব্যতিক্রমী! স্ট্রিমলেট, বাখিয়ামন, ইভানিশা ছবি তোলায় ব্যস্ত। তুসু ঝরনার দিকে নিমিষে তাকিয়ে আছে।

আজকালরা ছেলে মেয়েদের অনেকে প্রযুক্তিমুখী, প্রকৃতি তাদের কতোটা টানে তা গবেষণার বিষয়। চারদিকে মানুষের কোলাহল, ক্যামেরার কিক্ল ক্লিক। আমি আর জলি এসে এই আনন্দযজ্ঞে যোগ দিলাম। দেখলাম, দূরপাহাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঝিরি ব্রিজের নিচে এসে আটকে থাকা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় তৈরি করেছে আশ্চর্য ঝরনাধারা। সেই ঝরনার কলধ্বনি আর সৌন্দর্য এমন এক আশ্চর্য অনভূতি তৈরি করে যা মুহূর্তে নামার ক্লান্তি আনন্দে পরিণত করে দেয়।

অন্য পর্যটকদের দেখাদেখি আমরাও ঝরনার কাছে গিয়ে ছবি তুলতে লাগলাম। পেছনে সেতু আর ঝরনাকে ব্যাকগ্রাউন্ড করে ছবি তোলার জন্য সিঁড়ি আর রেলিঙ তৈরি করা হয়েছে। সে রেলিঙে হেলান দিয়ে, ঝরনা পানি ছুঁয়ে পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গিতে ছবি তোলা হলো। আমি নিচে নেমে একটা জায়ান্ট পাথরখণ্ডের ওপর বসে ঝরনার পানিতে হাতমুখ ধুয়ে মনে মনে স্রষ্টাবন্দনায় নত হলাম। এক সময় দু’হাত অসীমা অজানার দিকে হাত উঁচিয়ে নিজেকে অসীমে সমর্পণ করলাম।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/10/1560181249733.jpg

আমাদের যতক্ষণ থাকার পরিকল্পনা ছিল, তারচেয়ে চারগুণ সময় সেখানে থাকলাম। অপার সৌন্দর্য আসলে মানুষের সময়কে অজান্তে খরচ করে ফেলে।

এবার ফেরার পালা। মাথায় বুদ্ধি এলো, যতো থেমে থেমেই ওপরে উঠি, গুনে গুনে উঠব। এক-দুই করে গুনে গুনে ছয়শ’র বেশি ধাপ গুনলাম। ধাপ ছাড়াও আঁকাবাঁকা পথে নানা চড়াই উৎরাই পেরোতে হয়। সবমিলিয়ে অন্তত তিনহাজার ফুট নিচে নামতে হয় জীবন্ত শেকড়ের সেতু দেখতে। ওঠার পথে মানুষের হাঁপিয়ে ওঠার হার আরও বেশি। এ জন্য পথপাশ্বের দোকানের বেঞ্চিতে বসে অনেকে নানা কিছু কিনে খায়, বিশ্রাম নেয়, আবার ওপরে উঠতে থাকে।

জলি আর আমি সবচেয়ে পরে গাড়ির কাছে এসে দেখি সবাই অপেক্ষা করছে। এবার যাত্রা শিলং। ডাউকি-শিলং সড়কে উঠে চালক দেরমান গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল। দ্রুতই আমাদের যেতে হবে শিলং। কারণ মেঘ সেখানে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

   

আমার হাতের পাখা যেন তাদের আরাম দিচ্ছে!



মৃত্যুঞ্জয় রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাতক্ষীরা
ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

ছবি: বার্তা২৪, তালপাতার পাখা বিক্রি করছে পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ

  • Font increase
  • Font Decrease

আবু বক্কর (৬২)। বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে তিনি এখন পাকা বিক্রেতা। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষ যখন ঠান্ডা বাতাসের প্রশান্তি খুঁজছে, তখন তিনি গ্রামে গ্রামে গিয়ে তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন।

আবু বক্কর বার্তা২৪.কমকে বলেন, স্ত্রীসহ ছয় মেয়ে নিয়ে আমার সংসার। তবে মেয়েদের বিয়ে দিতে পেরেছি। কিন্তু বয়সের ভারে ঠিকই আমরা একা থেকে গেলাম। শেষ বয়সে গ্রামে গ্রামে তালপাতা পাখা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। শুধু সংসার না, এই টাকায় আমার পায়ের শিরার ব্যথার ওষুধও কিনতে হয়। একবেলা ওষুধ না খেলে চলতে পারি না।

এদিকে, পুরনো ব্যবসার ঋণের বোঝা আর অন্যদিকে অসুস্থ হয়ে ওষুধসহ সংসারের খরচ। শেষ বয়সে তালপাতার পাখাই আমার একমাত্র জীবনসঙ্গী বলেন আবু বক্কর।

তালপাতার পাখা বিক্রি করছেন আবু বক্কর, ছবি- বার্তা২৪.কম

বুধবার (২৪ এপ্রিল) সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কলাগাছি গ্রামের কবিগানের অনুষ্ঠানে সরেজমিন দেখা যায়, একপাশে তালপাতার পাখা বিক্রি করতে ব্যস্ত ছোট্ট পাঁচ বছরের শিশু মাহমুদুল্লাহ। এই গরমে যখন তার ঘরে থাকার কথা, তখন সে নানা-নানীর সঙ্গে এসে তালপাতার পাখা বিক্রি করছে। কবিগানে বসে থাকা সব শ্রোতার কাছে গিয়ে বলছে, পাখা লাগবে, পাখা! কথা বলতে চাইলেও এ পাশ ওপাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, ক্রেতার কাছে।

এক ফাঁকে তাকে কাছে পেয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, এই বয়সে পাখা বিক্রি করছো কেন! এ প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে মাহমুদুল্লাহ বলে, প্রচণ্ড গরমে স্কুল ছুটি। তাই, নানা-নানীর সঙ্গে চলে এসেছি মেলায় পাখা বিক্রি করতে। মানুষজন আমার কাছ থেকে যেন বেশি পাখা কেনে (ক্রয়), তাই আমি মেলায় তাদের সঙ্গে এসেছি।

অনেক উৎসাহের সঙ্গে সে বলে, গরমে আমার হাতের পাখায় যেন তাদের আরাম দিচ্ছে! মেলা হলে আমি সেখানে চলে যাই পাখা বিক্রি করতে। ঘোরাঘুরিও হয় আর টাকা ইনকামও হয়। টাকার জন্য বের হয়ে পড়েছি। আমরা পাখা বিক্রি করে পেট চালাই। নানা-নানী বুড়ো হয়ে গেছে। তাই, আমি সঙ্গে এসে তাদের কষ্টটাকে একটু ভাগাভাগি করে নিচ্ছি।

যেখানে প্রচণ্ড তাপে মানুষজন নাজেহাল, সেখানে ছোট্ট মাহমুদুল্লাহ ছুটে চলেছে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাখা বিক্রি করতে। ছোট্ট শিশু হলেও গরম যেন তার কাছে কিছু না, পেটের তাগিদে!

আরেক পাখা বিক্রেতা তালা উপজেলার হরিণখোলা গ্রামের বাসিন্দা ভদ্রকান্ত সরকার (৭০)। ১২-১৪ বছর ধরে এই পেশায় আছেন তিনি।

চলছে তালপাতার পাখার বিকিকিনি, ছবি- বার্তা২৪.কম

শেষ বয়সে পাখা কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে বার্তা২৪.কমকে ভদ্রকান্ত বলেন, চাল কিনে খেতে হয়। খুব কষ্টের সংসার! ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তাদের মতো কাজ করে খায়। মা বাবার বয়স হয়ে গেলে ছেলে আর আমাদের থাকে না। আমরা বৃদ্ধ বয়সে কেমন আছি, সেটা জানার সুযোগ তাদের থাকে না। শেষজীবনটা এভাবে পাখা বিক্রি করে কাটিয়ে দেবো। কী আর করবো! কপালে যা আছে, শেষপর্যন্ত তাই হবে। কপালে ছিল, এমন বৃদ্ধ বয়সে গ্রামে গ্রামে পাখা বিক্রি করতে হবে!

;

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;