গ্র্যান্ড মদিনা মসজিদ

মেঘপাহাড়ের ডাক-৬



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

অন্ধকারের ঘোর কাটিয়ে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় শিলং পৌঁছে ভ্রামণিকদল পুলকিত। চারদিকের দৃশ্যে যেমন নয়ন জুড়ায়, তেমনি জলহাওয়ার শীতলতা অনুভূতিকে প্রশান্ত করে দেয়।

কবি নজরুল বলেছেন, ‘আমার নয়নে নয়ন রাখিয়া প্রাণ করিতে চাও কোন অমিয়...’ আমরা যেন প্রকৃতির এক অমিয়সুধা পান করছি। এই পরিভ্রমণরত মেঘদলে ঢেকে যাচ্ছে অদূরের পাহাড়, তো পরক্ষণেই রোদের ঝিলিক। সৃষ্টির এই অবারিত বৈভব দেখে অজান্তে এর স্থপতির প্রতি মাথা নুয়ে আসে। সেই মাথাকে আরও নত করে দিতে আমাদের অন্যতম ভ্রমণগাইড খাসিভাষার কবি ও কলেজশিক্ষক বাখিয়ামুন রিনজারে গাইডেন্সে গাড়ি ছুটে চলে লাবান এলাকায়। সেখানে শিলংয়ের নতুন বিস্ময় গ্র্যান্ড মদিনা মসজিদ বা গ্লাস মসজিদ। ভারতের একমাত্র গ্লাস এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের বৃহত্তম মসজিদ।

ব্লগ ও ভ্রমণ গাইডে শিলংয়ের প্রচুর দর্শনীয় স্থানের মধ্যে গ্লাস মসজিদের উল্লেখ পাওয়া যায় না বললেই চলে। আগ্রহ আকুল পর্যটকই কেবল পাহাড়ি সরু রাস্তা পেরিয়ে লাবানে ছুটে যায় মসজিদ পরিদর্শনে। আমাদের ভ্রমণ লিস্টের ওপরের দিকেই রয়েছে গ্র্যান্ড মদিনা মসজিদ। সেই আগ্রহের কারণও বাখিয়ামুন। কারণ ‘ভ্রমণগদ্য শিলং ট্রিপ’ গ্রুপে সে-ই একটা ভিডিও পোস্ট করেছিল, যা দেখার পর ভ্রমণসূচিতে সেটি না রেখে পারিনি। মনে হলো শিলং ভ্রমণটি নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু হলে খুব খারাপ হবে না।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/13/1560440766978.jpg

ভ্রামণিকদলের সবাই উৎফুল্ল, খাসি গোস্টগণ আমাদের মসজিদ দেখাতে পেরে, আমরা দেখতে পেরে। তারা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হলেও অন্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম ও মুসলমিদের সঙ্গে সাজুয্যবোধ করে বলে আগেই জানিয়েছে।

বাখিয়ামুন বললো, ‘আই থিঙ্ক দ্য মস্ক অফার টু প্রেয়ার সার্ভিসেস এভরি ডে, মর্নিং অ্যান্ড ইভেনিং টাইম। ইউ উইল গেট ইভেনিং প্রেয়ার।’ বললাম, ‘ওহ নো, দেয়ার আর প্রেয়ারস ফর ফাইভ টাইমস অ্যা ডে।’

পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে গাড়ি লাবান এলাকা পৌঁছাল। একটি সরু গলি দিয়ে নিচে নামতেই ডানদিকে তিনতলা ভবন। ভবনের নিচ দিয়ে ভেতরে প্রবেশের রাস্তা। সামনে ঘাসে ছাওয়া প্রশস্ত প্রাঙ্গণ। প্রাঙ্গণে ঢুকলে চোখ জুড়ানো বহু বর্ণিল ফোয়ারা আগন্তুককে স্বাগত জানায়। সামনে তাকিয়ে দেখি, অপূর্ব স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত বহুতলবিশিষ্ট গ্র্যান্ড মসজিদ চোখের সামনে চকচক করছে। মসজিদের একটি গম্বুজ, চারটি মিনার। পুরো মসজিদ সবুজাভ কাঁচে মোড়ানো বলে এর আরেক নাম গ্লাস মসজিদ। পূর্ব প্রান্তের চত্বর দিয়ে ঢুকে মসজিদের ডানদিক বা উত্তরে মেয়েদের ওজুঘর।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/13/1560440839885.jpg

ভেতরে ডানদিকে ঘেরা জায়গায়তাদের নামাজের ব্যবস্থা। মসজিদ ও সংলগ্ন ঈদগাহ মিলে আট হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারে। মসজিদের ধারণক্ষমতা দু্ই হাজার। উইকি তথ্য দিচ্ছে, শিলং শহরে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ৫ শতাংশ বা সাত হাজারের মতো।

বাম দিকে পুরুষ ওজুখানা। ভ্রমণদলের দু’দল দু’দিকে ওজুর জন্য ছুটলাম। ওজুখানায় বসার জায়গা থাকলেও বুঝতে পারলাম এ্রখানে সবাই দাঁড়িয়ে ওজু করে। আমি তসু ও কবি কামরুল হাসান ওজু করে নিলাম। ওজুখানার প্রবেশপথের বামদিকে একটি ব্ল্যাকবোর্ডে চক দিয়ে ৩১ মে জুম্মা কালেকশনের পরিমাণ লেখা। মনে হলো, গোটা মাসে জুম্মা নামাজের সময় মসজিদ তহবিলে যে অর্থ আদায় হয়, তার পরিমাণ লেখা হয় বোর্ডটিতে। ৩১ মে পর্যন্ত জুম্মা কালেকশনের পরিমাণ ১০ হাজার ১১০ টাকা। ভাবলাম, গ্লাস মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর স্বচ্ছতার মতোই স্বচ্ছ এর হিসাব-নিকাশও।

ওজুখানা থেকে দক্ষিণ দিকের দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। দিনমানের ভ্রমণক্লান্তি নিমেষে উধাও। একটি পবিত্রতার বেষ্টনীর মধ্যে ঢুকে গেলাম। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের মেঘালয় রাজ্য গারো ও খাসি প্রধান। এদের প্রাচীন ধর্ম অনেকটাই লুপ্ত। বেশিরভাগ এখন খ্রিষ্ট ধর্মদীক্ষিত। এমন একটি রাজ্যের রাজধানীর প্রধান মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারায় ভিন্ন অনুভূতিতে তৃপ্ত হচ্ছে মন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jun/13/1560440882264.jpg

ঘড়িতে ছটার কিছু বেশি বাজে। আজান হয়ে গেছে। নামাজ শুরু হতে যাচ্ছে। দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম কোন নামাজের নিয়ত করবো? আকাশ তখনও পরিষ্কার। ভারতের সময় আধাঘণ্টা এগিয়ে। মাথার মধ্যে তখন মাগরিবের সময়টা আসেনি। মনে হলো, তাড়াতাড়ি মাগরিব? নামাজে দাঁড়ানোর পর দেখি, ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে পড়া শুরু করেছেন-‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আররাহমানির রাহিম’.... নিয়ত করলাম মাগরিবের।

নামাজ শেষ করে দেখি প্রশস্থ মসজিদের পেছনের একটি সারিতে কবি কামরুল হাসান নামাজে দাঁড়িয়েছেন। জামাতে ফরজ শেষ করে সুন্নত পড়ছেন। জানা মতে, ব্যবস্থাপনার এই প্রফেসরকে ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে আগ্রহাকুল দেখেছি বলে মনে পড়ে না। বরং ধর্ম-বিশ্বাস এসব নিয়ে আলাপচারিতায় তিনি বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ তোলেন। এখানকার ভাবগাম্ভীর্যময় পরিবেশ ও পবিত্রতার বেষ্টনী সেই মানুষকেও নামাজিদের কাতারে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। ব্যতিক্রমী মসজিদটি থেকে শুধু দেখার স্মৃতি নিয়েই তিনি ফিরতে চান না, নামাজের মধ্য দিয়ে নিজেকে সঙ্গে সংযুক্ত করার স্মৃতিটিও রেখে যেতে চান।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের শৈল অবকাশ শিলং

নামাজ শেষে বাইরে বেরিয়ে দেখি সামনের চত্বরের ফোয়ারাটি ইতোমধ্যে বিদ্যুতের বহুবর্ণিল আলোয় ঝলমল করছে। গম্বুজ ও চারমিনার ও মুল মসজিদ থেকে সবুভ আলো ঠিকরে বের হচ্ছে। চত্বরে দাঁড়িয়ে আমরা নানা কৌণিকে মসজিদকে পেছনের রেখে ছবি তুলে যাচ্ছি। নামাজে শামিল হওয়া ত্রিশ জনের মতো মুসল্লি তখন চত্বর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

কবি কামরুল হাসান আলাপী মানুষ, নিরন্তর নেটওয়ার্কিংয়ের বিশ্বাসী, দেখি একজনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন। শিক্ষিত, মার্জিত শ্রুশ্মমন্ডিত যুবক। আমিও যোগ দিই। জানা গেল তার নাম ডা. জামাল সিদ্দিক। ডেন্টাল বিশেষজ্ঞ। মসজিদের নিয়মিত মুসল্লি। তিনি জানালেন, বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজে মুসল্লি খুব বেশি হোক বা না হোক, শুক্রবার জুম্মার নামাজে পাঁচ শতাধিক মুসল্লির জমায়েত হয়। আলাপের সময় ইমাম সাহেব বের হয়ে যাচ্ছিলেন।

বেরিয়ে আসার সময় মনে হলো, এ অঞ্চলের ঝরনা, জাদুঘর, মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশনসহ বহু দর্শনীয় স্থানের কথা ভ্রামণিকদের লেখালেখিতে এন্তার পাওয়া যাচ্ছে। নয়ানাভিরাম মসজিদটি রয়েছে এখনো অনাবিষ্কৃত। এ রচনার ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টিতে পড়লে গ্র্যান্ড মদিনা মসজিদ হয়ে উঠতে পারে ধর্মীয় পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণীয় কেন্দ্র।

   

সুন্দরবনের জল-জঙ্গলের রূপকথা



স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ান/ছবি: নূর এ আলম

  • Font increase
  • Font Decrease

ওপাড়ে ঘন বন জঙ্গল, মাঝখানে শিবসা নদী আর এপাড়ে বাঁধের ধারের জমিতে সারিবদ্ধ ঝুলন্ত বাড়ি। জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায় চিত্রা হরিণ, নদীর ডাঙ্গায় দেখা মেলে ভোঁদরের। সবুজভাব নদীতে ডিঙি নৌকায় জীবিকার সন্ধানে মাছ ধরে ঝুলন্ত বাড়ির বাসিন্দা। সবমিলে যেন জল-জঙ্গলের রূপকথা।

দৃশ্যটি খুলনার দাকোপ উপজেলার সুন্দরবন ঘেঁষা গ্রাম নলিয়ানের। এখানে জল-জঙ্গলের সঙ্গে মানুষের বসবাস। সুন্দরবনের সৌন্দর্য ও উপকূ্লের তাণ্ডব সহ্য করা নলিয়ানকে ক্যামেরাবন্দি করেছেন বার্তা২৪.কম-এর ফটো এডিটর নূর এ আলম।

শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


শিবসা নদীর বাঁধের পাশে নলিয়ান। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখানকার মানুষের জীবন চলে ঝুঁকি নিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার প্রলয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়া এখনকার বাসিন্দারা এখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি।

জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর/ছবি: নূর এ আলম


নিজের বসতভিটা হারানোর পর ঠাঁই হয়েছে বাঁধের ধারের জমিতে। সেখানেও ঘর বানানোর মতো আর মাটি অবশিষ্ট নেই। ফলে জোয়ারের পানির সমান উঁচু খুঁটির ওপর মাচা পেতে বানানো হয়েছে ঘর।

এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে/ছবি: নূর এ আলম


তাই এক একটি ঘর দাঁড়িয়ে আছে নড়বড়ে খুঁটির ওপরে। মোটামুটি মাঝারি ঝড় হলেই ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়।

নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানবাসীর দিনতিপাত করেন মাছ ধরে এবং সুন্দরবনে জীবিকার সন্ধান করে। সুন্দরবনে জেলেরা দিনে রাতে মাছ ধরে, তারা দিন-রাতের হিসাব করে না।

 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরছেন জেলে/ছবি: নূর এ আলম


 শিবসায় ঝাঁপি জাল ফেলে মাছ ধরেন তারা। কিনারা দিয়ে কাদায় হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে/ছবি: নূর এ আলম


এরপরও নারীরাও মাছ ধরতে সুন্দরবনের কাঁদামাটিতে নেমে যান ঠ্যালা জাল নিয়ে। অনেক জেলে ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন।

জেলেরা ডিঙি নৌকায় করে শিবসায় ঘুরে মাছ শিকার করেন/ছবি: নূর এ আলম


বর্ষায় শিবসার জলে ডুবে থাকা নলিয়ানের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়ার জন্য এই ডিঙি নৌকাগুলো ব্যবহার করা হয়।

শিবসা নদী/নূর এ আলম


নলিয়ানে উপকূলের বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করা চিত্র শুধু নয়, রয়েছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক প্রকৃতি। শিবসার অপার সৌন্দর্য।

গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি/ছবি: নূর এ আলম


নদীর পাড়ে চোখে পড়ে ঘন গাছপালার সবুজ বন। যাতে চোখ জুড়িয়ে আসে।

হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ/ছবি: নূর এ আলম


যেখানে রয়েছে হোগলা পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দ। গাছে গাছে সাদা বকের উড়াউড়ি, ভেসে আসে পাখির কিচিরমিচির। 

নলিয়ান পর্যটন কেন্দ্রে জঙ্গলের ভেতরে লোহার ব্রিজ/ছবি: নূর এ আলম


পর্যটকদের জন্য জঙ্গল ভেদ করে তৈরি করা লোহার ব্রিজ। পর্যটকরা সুন্দরবনে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হলে এই ব্রিজে হেলেন দিয়ে প্রকৃতির গন্ধ মেখে নেয়।

জঙ্গলে হরিণ খুনশুটিতে ব্যস্ত/ছবি: নূর এ আলম


সুন্দরবনের প্যাঁচেপ্যাঁচে কাঁদায় হেঁটে যেতে যেতে হঠাৎ দেখা মিলে হরিণের দলের সঙ্গে। জঙ্গলে তারা তখন নিজেদের মধ্যে খুনশুটিতে ব্যস্ত।

মায়াবী চোখে তাকিয়ে হরিণ/ছবি: নূর এ আলম


এরই ফাঁকে মায়াবী চোখ নিয়ে তাকিয়ে দেখে দু’পা বিশিষ্ট মানুষের দিকে। আড় চোখে তাকায় গাছের ডালে ঝুলে থাকা বানরের দলও। তারা সারাদিন বনে দৌড়ঝাঁপ করে।

বানরের দৌঁড়ঝাপ/ছবি: নূর এ আলম


নলিয়ানের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে।

নদীর তীরে দেখা মেলে বিলুপ্তিপ্রায় প্রাণী ভোঁদরের/ছবি: নূর এ আলম


জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়।

 শিবসা নদীতে কুমিরও ভেসে ওঠে। জনশ্রুতি আছে, কুমির আর মানুষের মধ্যে মাঝে মাঝে যুদ্ধও হয়/ছবি: নূর এ আলম

বড় বড় ঘূর্ণিঝড় যারা মোকাবিলা করা নলিয়ানের কাছে কুমির আর এমন কি! সব কিছু তোয়াক্কা করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকাটাই বড় বিষয় তাদের কাছে!

;

ইতিহাসে ২৮ মার্চ: বর্ণবাদের প্রতিবাদে কিংয়ের পক্ষে ২৫ হাজার মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মিছিলে নামেন মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র

  • Font increase
  • Font Decrease

মানব ইতিহাস আমাদের অতীতের কথা বলে। আজ যা কিছু বর্তমান তার ভিত্তি তৈরি হয়েছিল আমাদের অতীতের কারণেই। সেই অতীতের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো ছাপ রেখে যায় ইতিহাসের পাতায়।  

আজ ২৮ মার্চ, ২০২৪। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখঅ যাবে, আজকে ঘটেছিল নানা ঐতিহাসিক ঘটনা। জেনে নেয়া যাক, কি ঘটেছিল আজকের তারিখে!

*মার্টিন লুথার কিং ছিলেন বর্ণবাদের বিপরীত আন্দোলনকারী আফ্রিকান নেতা। ১৯৬৫ সালে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন। সেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাকে সমর্থন করে মিছিলে নেমেছিলেন আজকের তারিখে। এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে আলাবামায় জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সমান অধিকার তৈরিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।    

*যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ায় থ্রি মাইল আইল্যান্ড পারমাণবিক কেন্দ্রে ১৯৭৯ সালে পানির পাম্প ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে চারপাশে তেজস্ক্রিয় বাষ্প এবং আয়োডিন ছড়াতে শুরু করে। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত ৫০০ জন কর্মী এই বাষোপর সংস্পর্শে আসায় শারীরিক সমস্যার আশঙ্কায় ছিল। আমেরিকার জনগণ এই ঘটনায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে।  

*১৯৮৬ সালে অ্যাচেসন এবং লিলিয়েনথাল পারমারবিক শক্তি সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন। সেখানে আন্তর্জাতিকভাবে পারমাণবিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা উল্লেখ করেন তারা। ২৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট তাদের সেই রিপোর্টটি প্রকাশ করে।

*হিলসবোরো দুর্ঘটনায় প্রায় ১শ লোকের প্রায় গিয়েছিল ১৯৯১ সালে। শেফিল্ডে পিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল ফুটবল সমর্থক নিহত হন। এছাড়া আরও দেড় শতাধিক ভক্ত আহত হন। এই বিপর্যয়ে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট ছিল নিহতদের পরিবার। তাই, আজকের তারিখে তারা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল।

*১৯৩৬ সালে শুরু হওয়া স্পেনের গৃহযুদ্ধ ১৯৩৯ সালের ২৮ মার্চ শেষ হয়েছিল।

;

তালপাতার পাখায় ঘোরে সংসারের চাকা



মাহবুবা পারভীন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বগুড়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

আঁকাবাঁকা রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি তালগাছ। যা দেখে মনে পড়ে যায় রবী ঠাকুরের কবিতা ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ বলছি বগুড়ার কাহালু উপজেলার আড়োলা গ্রামের কথা। বর্তমানে গ্রামটি তাল পাখার গ্রাম নামে পরিচিত। এই গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় নারী-পুরুষ সবাই তালপাতা দিয়ে পাখা বানানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। গরমে তালপাতার পাখার বাতাস গা জুড়িয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম। একটির নাম যোগীরভবন, অপরটি আড়োলা আতালপাড়া। ইতোমধ্যে গ্রাম দুটি পাখার গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, দুটি গ্রামে একেক পাড়ায় একেক ধরনের পাখা তৈরি হয়। যোগীরভবন গ্রামে নারীরা তৈরি করেন হাতলপাখা বা ডাঁটপাখা। আর আড়োলা আতালপাড়ায় তৈরি হয় ঘোরানো পাখা বা ঘুন্নী পাখা আর পকেট পাখা। পাখা তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন দুটি গ্রামের সব নারী। শীতের শেষে বসন্তকালে, অর্থাৎ ফাল্গুন মাস থেকে পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়।

পাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারী

গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাড়ির উঠানে রং তুলির আঁচড়ে ঘুরানো পাখা রাঙিয়ে তুলছেন সখিনা বেগম। রাঙানো পাখা বাঁধায় করছেন গোলজার। বাঁধা হয়ে গেলে পাখাটি বিক্রি করবেন তিনি।

হাতপাখার গ্রামে এবার ২০ লাখ পাখা বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এই পাখা চৈত্র মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বিক্রি হবে।

গ্রামের নারী-পুরুষ, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা অবসর সময়ে পাখা তৈরির কাজ করেন। বংশ পরম্পরায় এই দুই গ্রামের মানুষ তালপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন বলে জানান গ্রামের বাসিন্দারা। গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দিন দিন বাড়ছে পাখার চাহিদা, সেই সঙ্গে বাড়ছে পাখা তৈরির কাজের পরিধি।

আড়োলা গ্রামের খন্দকার বলেন, দাদার আমল থেকে তারা তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ করে আসছেন। কৃষি কাজের পাশাপাশি তালপাখা তৈরির কাজ করেন তিনি। তার স্ত্রীও সংসারের কাজের ফাঁকে রঙের আচর দিয়ে তাল পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির কাজ করে থাকেন। আকরাম আকন্দ বলেন, গত বছর তিনি পাখা বিক্রি করে সংসার খরচ বাদে এক লাখ টাকা সঞ্চয় করেছেন। তার মতে গত বছর দুই গ্রাম থেকে ১৫ লাখ তালপাখা বিক্রি হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার চাহিদা বাড়ায় ২০ লাখ পাখা বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, তালগাছের পাতা (স্থানীয় ভাষায় তালের ডাগুর) দিয়ে তিন ধরনের পাখা তৈরি হয়। স্থানীয়ভাবে নাম দেয়া হয়েছে- পকেট পাখা, ঘুরানী পাখা এবং ডাগুর পাখা।

পাখা তৈরিতে তালের পাতা ছাড়াও বাঁশ, সুতা এবং লোহার তার প্রয়োজন হয়। পাখা তৈরির পর বিভিন্ন রঙের আচর দিয়ে সৌন্দর্য বাড়ানো হয়। ১০ টাকায় কেনা তাল গাছের একটি পাতা বা ডাগুড় দিয়ে তৈরি হয় বড় পাখা বা ডাগুর পাখা ২টি, ঘুরানী পাখা ৪টি এবং পকেট পাখা ৬টি।

তালপাতার পাখা

পাখা তৈরির কারিগর জানান, বছরের আশ্বিন মাস থেকে শুরু হয় বাঁশ এবং তালপাতা সংগ্রহের কাজ। এরপর বাঁশ ছোট ছোট আকারে কাটতে হয়। তালপাতাও কেটে পাখা তৈরির উপযোগী করা হয়। ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে পাখা তৈরির কাজ। চৈত্র মাসের শুরু থেকে পাখার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাহারি রঙ করে বিক্রয় উপযোগী করা হয়।

রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারি থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যাপারীরা আসেন তালপাখা কিনতে।

যোগীর ভবন গ্রামের মামুনুর রশিদ বলেন, তিনি প্রতি বছর ১৭ থেকে ১৮ হাজার ডাগুর পাখা তৈরি করেন। এই পাখাগুলো বরিশাল, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাখার চাহিদা বেশি বলে জানান মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, একটি তাল পাতা বা ডাগুরের দাম ১০ টাকা হলেও বাঁশ ও রঙের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে খরচ বেড়ে গেছে।

আতাইল পাড়া গ্রামের পারভীন, মর্জিনা, সাবিনা, বেবি, সুমি জানান, তারা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০টি হাত পাখা তৈরি করে বিক্রি করেন। বছরের ছয় মাস সংসারের কাজের ফাঁকে হাতপাখা তৈরির কাজ করে তারা বাড়তি আয় করছেন। এইসব নারীরা তাদের সৌখিন জিনিস কিনে থাকেন নিজের টাকায়।

পকেট পাখা ১১ টাকা, ঘুরানী পাখা ২০ টাকা এবং ডাগুর পাখা ৩০ টাকা দরে ব্যাপারীরা পাইকারি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা আবার বিভিন্ন মেলা কিংবা হাটে বাজারে খুচরা বিক্রেতার কাছে বিক্রি করছেন।

গরমের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণে হাতপাখার চাহিদা বাড়ছে বলে পাখা কিনতে আসা ব্যাপারী করিম জানান। শহর এবং গ্রামে তীব্র গরম থেকে একটু প্রশান্তি পেতে ধনী-গরিব সবাই হাত পাখার ব্যবহার করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

;

ইতিহাসে ২৭ মার্চ:স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

স্পেনে জোড়া বিমান সংঘর্ষে নিহত ৫৮৩

  • Font increase
  • Font Decrease

সময় এবং নদীর স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের সাথে বছরের পর বছর কেটে যায়। বর্তমান হয় অতীত। তার সাথেই তৈরি হয় ইতিহাসের। মানব সভ্যতায় ঘটে যাওয়া ইতিহাস হয়ে থাকে জাতির কাছে স্মরণীয়। প্রতি বছর যখন ক্যালেন্ডারে একই তারিখগুলো ফিরে আসে, মানুষ পুরনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে।

আজ ২৭ মার্চ, ২০২৪। বিগত বছরগুলোতে এই তারিখে ঘটা অনেক ঘটনা হয়েছে স্মৃতিতে অমলিন। ইতিহাসের পাতায় জুড়ে গেছে নতুন নতুন ঘটনা। চলুন জেনে নিই,আজকের তারিখে কি ঘটেছিল!    

১৯৭৭ সালে স্পেনে টেনেরিফ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। ডাচ এয়ারলাইনের সেই দুর্ঘটনায় কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রানওয়েতে দু’টো জেট বিমানের সংঘর্ষে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে উৎপন্ন বিধ্বংসী দাবানলে সর্বমোট ৫৮৩ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

বিশাল এক ঢেউয়ের আঘাতে ১৯৮০ সালে উত্তর সাগরের প্ল্যাটফর্ম ধসে পড়ে। রিগটি ডান্ডি থেকে ২৩৫ মাইল পূর্বে সেই আবাসন প্ল্যাটফর্ম দুর্ঘটনায় ১২৩ জন শ্রমিক মারা যান।

১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই নির্বাচনে কমিউনিটি পার্টির অনেক রাশিয়ান উচ্চতর কর্মকর্তা পরাজিত হন। তৎকালীন সময়ে এই ঘটনাকে একটি বিদ্রোহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।     

১৯৬৩ সালে ব্রিটেনে রেললাইন কম ব্যবহৃত হওয়ার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল ক্ষতি হয়। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মোট রেলব্যবস্থার এক-চতুর্থাংশ সেবা কমিয়ে দেওয়া হবে। এই নিয়ে সুদূরপ্রসারী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল ২৭ মার্চ।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

;