বাংলাদেশে প্রথম রেল ও রেলস্টেশন



কাজী মাহবুবুর রহমান, কন্ট্রিবিউটর
১৮৬২ সালে স্থাপিত জগতি স্টেশন

১৮৬২ সালে স্থাপিত জগতি স্টেশন

  • Font increase
  • Font Decrease

সভ্যতার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে জর্জ স্টিফেনসনের নাম। ঊনিশ শতকের গোড়া থেকেই তার অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলে ১৮২৫ সালে যুক্তরাজ্যে সর্বপ্রথম চালু হয় পাবলিক রেল যোগাযোগ। স্টকটন থেকে ডার্লিংটন পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই ধাতব রেললাইন তৎকালীন যোগাযোগ ব্যবস্থার বাজারে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দেয়। স্টিফেনসনের এই আবিষ্কার ইংল্যান্ডের সীমানা অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা ও জার্মানিতে। তারপর ইতালি, ফ্রান্স ও সুইডেনেও জনপ্রিয়তা পায় রেল যোগাযোগ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562587777258.jpg
জর্জ স্টিফেনসন

 

মজার ব্যাপার হলো, আমেরিকা ও জার্মানীর মতো উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপনে ব্রিটিশ শাসিত বাংলাও পিছিয়ে ছিল না। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় ঔপনিবেশিক বাংলায় রেলওয়ে স্থাপনের জন্য যুক্তরাজ্যে প্রাথমিকভাবে চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা হতে থাকে। এরূপ পরিকল্পনার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত সুবিধাদিসহ বাণিজ্যিক স্বার্থ বিবেচনা। ভারতের ভাইসরয় লর্ড ডালহৌসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পরিচালক পর্ষদের কাছে ভারতবর্ষে রেলওয়ে স্থাপন কাজ শুরু করার জন্য অনেকগুলি প্রস্তাব পাঠান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562587853529.jpg
স্টকটন থেকে ডার্লিংটন রেলরুট

 

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৪৪ সালে আর.এম স্টিফেনসন কলকাতার কাছাকাছি হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার কয়লাখনি সমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, এর পুরোটাই ছিল উপমহাদেশের মাটিতে ব্রিটিশ শাসনকে মজবুত করার একটি নতুন পদক্ষেপ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562587946064.jpg
ভাইসরয় লর্ড ডালহৌসি

 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562588081589.jpg
আর.এম স্টিফেনসন

 

ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করার পরেও প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে ও সরকারের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে বেশ কয়েক বছর লেগে যায়। ইতোমধ্যে ১৮৫০ সালে গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুয়েলার রেলওয়ে নামক কোম্পানি মুম্বাই থেকে থানা পর্যন্ত ৩৩ কিমি দীর্ঘ রেললাইন স্থাপন করতে থাকে। লাইনটি উদ্বোধন করা হয় ১৬ এপ্রিল ১৮৫৩ সালে। এটিই ছিল ব্রিটিশ ভারতে রেলওয়ের প্রথম যাত্রা। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি কর্তৃক নির্মিত হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিমি রেললাইনের উদ্বোধন হয় ১৮৫৪ সালে এবং এর মাধ্যমে চালু হয় বাংলার প্রথম রেললাইন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562588200589.jpg
গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুয়েলার রেলওয়ে

 

বর্তমান বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ব্রিটিশ আমলেই বিবেচনা করা হয়েছিল। ১৮৫২ সালে কর্নেল জে.পি কেনেডি গঙ্গা নদীর পূর্বতীর ধরে সুন্দরবন হয়ে ঢাকা পর্যন্ত রেললাইন বসানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু এর মধ্যেই ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশ সরকার বার্মা দখল করে। বার্মাকে সরাসরি ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত করার রাজনৈতিক এবং কৌশলগত কারণেই কলকাতা ও বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনের মধ্যে দ্রুত যোগাযোগের প্রশ্নটি প্রকট হয়। ফলে বাংলাদেশে রেললাইন বসানোর আগেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাথে বার্মাকে যুক্ত করতে নির্মিত হয় রেঙ্গুন-কলকাতা রেলরুট।

তারপর ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করে। পরবর্তীতে এই লাইনকেই বর্ধিত করে ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর বর্তমান চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিমি ব্রডগেজ রেললাইন শাখা উন্মোচন করা হয়। এটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম রেললাইন।

সে সময় কুষ্টিয়া ছিল প্রান্তিক স্টেশন, কিন্তু ১৮৬৭ সালে পদ্মা ভাঙনের কারণে তা স্থানান্তরিত হয় গড়াই নদীর পাড়ে এবং পরবর্তী বছরে আদি কুষ্টিয়া স্টেশন পরিত্যক্ত হয়। কুষ্টিয়া থেকে পদ্মার পাড়ে অবস্থিত অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৭৫ কিমি দীর্ঘ রেললাইন উদ্বোধন করা হয় ১ জানুয়ারি ১৮৭১ সালে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562588406536.jpg
নির্জন জগতি স্টেশন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562588450941.jpg

 

ইতিহাসমতে, বাংলাদেশের সর্বপ্রথম রেলওয়ে স্টেশন হলো কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশন। অথচ এই ঐতিহাসিক স্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি কখনো। সংস্কার না থাকায় পুরাতন বিল্ডিংগুলো ধসে পড়েছে। সরকারি জায়গাগুলোও বেহাত হয়ে গেছে। ১৮৬২ সালে স্থাপিত হবার পর জগতি এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ওঠা-নামার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল। স্টেশনটি ইঞ্জিনের জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। দুই পাশে দুটি বড় ইঁদারা আর দিঘি আজও রয়ে গেছে। লোকজনের ভিড় সামাল দিতে একসময় সেখানে ২৬ জন রেলওয়ে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োজিত ছিল। এখন সেখানে মাত্র ৩ জন রয়েছে। লোকবলের অভাবে এখন স্টেশনের কার্যক্রমও ভেঙে পড়েছে। সংস্কারের অভাবে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। যাত্রীরাও সুযোগ সুবিধার অভাবে জগতিমুখী হচ্ছে না।

এদিকে যাতায়াতের জন্য রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশন।

   

ব্যাঙের চিৎকার যে কারণে শুনতে পায় না মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাঙ অন্য প্রাণীদের মতো চিৎকার করলেও শ্রবণ শক্তির চেয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা শুনতে পায় না।

ব্রাজিলের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের এক দল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাজন জঙ্গলে ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। তারা দেখেন যে, স্মল লিফ লিটার ব্যাঙগুলি তাদের মাথা পিছনে ফেলে তাদের মুখ প্রশস্ত করে রেখেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা চিৎকার করছে। কিন্তু তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

যখন বিজ্ঞানীরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করে রেকর্ড করেছিল, তখন তারা উভচর প্রাণীদের ‘প্রতিরক্ষামূলক আল্ট্রাসাউন্ড’ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। 

যখন তারা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা দেখতে পান যে, এটির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ছিল ৭ কিলোহার্টজ থেকে ৪৪  কিলোহার্টজ। মানুষ ২০ কিলোহার্টজ এর বেশি ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে না।

এ গবেষক দলের মতে, ব্যাঙের চিৎকারটি শিকারিদের প্রতিক্রিয়া। শিকারিকে আক্রমণ করার জন্য বা অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি তাদের কৌশল হতে পারে।

দলের একজন গবেষক মারিয়ানা রেতুসি পন্টেস বলেছেন, তিনি ভিন্ন গবেষণা ট্রিপে ব্যাঙকে একই আচরণ প্রদর্শন করতে দেখেছেন, কিন্তু তার কাছে এ শব্দ রেকর্ড করার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ছিল না।

বাদুড়, তিমি, গন্ডার, কুকুর, কবুতর, কাটলফিশসহ সব ধরনের প্রাণী যোগাযোগের জন্য ইনফ্রাসোনিক এবং আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং মানুষ এর কিছুই শুনতে পায় না।

আপনি যখন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা উপভোগ করছেন, তখন হয়তো আপনার চারপাশে একটি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থাকতে পারে, যা আপনি শুনছেন না।

;

মাটির নিচে প্রাচীন দুর্গের সন্ধান, অর্থের অভাবে বন্ধ কাজ



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক এক একডালা দুর্গের সন্ধান মিলেছে। এর পর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় খনন কাজ। কিছুটা দৃশ্যমান হয় দুর্গ। তবে সরকারি অর্থায়ন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস খনন করে সামনে আসলে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তার দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।

দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে সেখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই খননকাজ শুরু করেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

এক সময় লোকমুখে গল্প শোনা যেত, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে রয়েছে ‘রানির বাড়ি’। সেই মধ্যযুগের ইতিহাস এতদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। বাস্তবে তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া গেছে। বহুদিনের চেষ্টায় একদল গবেষক ‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়া দুর্গ আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ আবিষ্কার মধ্যযুগের ইতিহাস মানুষের বাস্তবে দেখার বাসনা পূরণ হবে। আংশিক খনন করা দুর্গটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনের ভিড় করেছেন। তবে বর্তমানে অনুদানের অভাবে দুর্গটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়ায় সরজমিনে দেখা যায়, বালির বস্তা দিয়ে দুর্গের দুই পাস ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশে খোলা রয়েছে। দুর্গের চারপাশে মলি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখা রয়েছে। পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে।

পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অনেক দিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রেখে তারা চলে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে এসে দুর্গ থেকে ইটের গাঁথুনি থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে দুর্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে দুর্গের খননের অংশটুকুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুদ্দিন (৬০) বলেন, ছোট থেকে শুনে আসছি এই রানির ভিটার কথা৷ কিন্তু এটার সঠিক ইতিহাস জানতাম না। সবটুকু খনন করা হলে ইতিহাস উন্মোচন হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র টোক নগর ভেংগুরদী গ্রামের আশিক রব্বানী জিহান বলেন, এটি আমাদের কাপাসিয়ার জন্য বিশাল এক সম্পদ৷ এটি খনন করা হলে আগে কি ছিলো বা এখন কি আছে সেটা জানা যাবে৷ এটি দৃশ্যমান হলে গাজীপুর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থাপনা হতে পারে৷ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

 লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের সন্ধান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিজ খরচে খননকাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। তিনি ছিলেন বেনীয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। এই কৃষি জমির পাশে উঁচু অংশ খননের পর বর্তমানে দুর্গের কিছু অংশের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যতটুকু খনন করা হয়েছে তা নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ফান্ড পেলে খননকাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

 

;

বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে সিক্ত রাজধানী



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রুদ্র বৈশাখ তার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই সূর্যের পূর্ণ তাপে জ্বলছিল। ভরদুপুরে ঘরের বাইর হওয়াই দায়! মাথার উপর প্রচণ্ড উত্তাপ যেন ঘামের জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

‘দুপুরের ভেপসা গরম, ঘেমে শরীর তীর-ঘাম/তবু ধানকাটায় ব্যস্ত কৃষক, নেই কারো বিশ্রাম/এমন ক্ষণে ঈশান কোণে মেঘ-বিজলীর গর্জন/অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস নামলো প্রতিক্ষার বর্ষণ।’ অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র তাপদাহের পর কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর বুকে নামল ঝুম বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টিফোঁটায় সিক্ত হলো রাজধানীর মাটি।     


আর সেই সঙ্গে ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম বৃষ্টিতে উল্লাসে মেতে উঠল নগরবাসী। 

বৃষ্টির ঝুম ঝুম ফোঁটায় যেন এক অনন্য নূপুরধ্বনির তরঙ্গ তুলেছে প্রকৃতি। ঘাম, গরম, অস্বস্তি যে খরায় পুড়ছিল মানুষের মন, তাতে শান্তির অমৃতধারা নেমেছে সূদুর আকাশ থেকে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, সঙ্গে জোড় বেঁধেছে দমকা হাওয়া। বৈশাখের এক অনস্বীকার্য অংশ হলো কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখে আসন্ন সেই ঝড়ের ইঙ্গিতই বয়ে আনলো পাগলাটে বাতাস।


এর আগে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;