নেটফ্লিক্সের আদ্যোপান্ত



তৌহিদ শরীফ, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
সারা বিশ্বে নেটফ্লিক্স এখন পরিচিত নাম

সারা বিশ্বে নেটফ্লিক্স এখন পরিচিত নাম

  • Font increase
  • Font Decrease

বিমানবন্দরে এলিজাবেথ চলে যাচ্ছে হয়তো কোনো কারণে অভিমান করে। চেক পোস্ট পেরিয়ে তার পিছু পিছু ছুটে আসতে দেখা যায় স্টিফেনকে। সে যখন এলিজাবেথের সামনে এসে দাঁড়ায় তখনই এলিজাবেথ অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে চমকে ওঠে, আবার আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে ওঠে—“আমি জানতাম তুমি আসবে।”
তখনই স্টিফেন বলে, “আমি আসছি একটা প্রশ্ন করতে।”
এলিজাবেথ বলে, “তুমি আমাকে যে কোনো প্রশ্ন করতে পারো।”
স্টিফেন বলে, “নেটফ্লিক্সের পাসওয়ার্ড কী বলো।”


২০১৫ সালের দিকে এরকম একটা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারা বিশ্বে নেটফ্লিক্সের প্রয়োজনীয়তা, ক্রেইজ ও প্রায়োরিটি মুভি লাভারদের কাছে তুলে ধরে হয়—যা ধীরে ধীরে এখন মোটামুটি সবারই বোধগম্য।

নেটফ্লিক্স সম্পর্কে বলার আগে অনলাইন স্ট্রিমিং কী জিনিস সেটা একটু ক্লিয়ার থাকা ভালো। অনলাইন স্ট্রিমিং বলতে মূলত সে সার্ভিসকে বোঝায় যেটা ক্যাবল এবং স্যাটেলাইটের বদলে শুধুমাত্র অনলাইনে দেখার ব্যবস্থা আছে। যেখানে গ্রাহক কিছু অর্থের বিনিময়ে বা অর্থ ছাড়া সার্ভিসটি উপভোগ করতে পারে। পেমেন্টের ধরন একেক দেশে একেক রকমের হয়ে থাকে। অনলাইন স্ট্রিমিংয়ে যত ধরনের এন্টারটেইনমেইন্ট আছে যেমন ফিল্ম, ডকুমেন্টারি, টিভি শো, ওয়েবসিরিজ ইত্যাদি সব দেখতে পারবে গ্রাহক তার ইচ্ছে মতো যে কোনো সময় যে কোনো মুহূর্তে। এই সার্ভিস প্রভাইড করা হয় ক্লাউড বেইজ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।

নেটফ্লিক্সের নাম কিন্তু শুরুতে নেটফ্লিক্স ছিল না। এর নাম ছিল “কিবল”, শুরুতে তারা ডিভিডি ভাড়া দিত। কোম্পানিটি ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিস শুরু করে নেটফ্লিক্স নাম জনপ্রিয় হয়ে ওঠার পর থেকে।

১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রা শুরু করে নেটফ্লিক্স। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লোশ গ্যাটস শহরে নেটফ্লিক্সের সদর দপ্তর। তারা তাদের ডিভিডি রেন্টালের কাজ শুরু করে ১৪ এপ্রিল, ১৯৯৮ সালে। মাত্র ৩০ জন কর্মচারী দিয়ে কার্যক্রম শুরু করে ২০০০ সালের দিকে প্রায় ৩ লাখ গ্রাহক হয়ে যায় নেটফ্লিক্সের। ১০ বছর পরে অর্থাৎ ২০০৭ সাল থেকে নিবন্ধনকৃত গ্রাহকদের জন্য ভিডিও অন ডিম্যান্ড অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু করে নেটফ্লিক্স। এই সেবা পাওয়ার জন্য গ্রাহককে নেটফ্লিক্স সাইটে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। ওই ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেই এর সেবার ফি পরিশোধ করতে হয়। নেটফ্লিক্স ছাড়া আর কারো এর থেকে আয় করার কোনো সুযোগ নেই। 

বর্তমানে বাংলাদেশসহ মোট ১৯০টি দেশে জনপ্রিয় অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং সেবা চালু করেছে নেটফ্লিক্স। এই দেশগুলোতে নিবন্ধিত গ্রাহকেরা যে কোনো স্থান থেকে খুব সহজে টিভি শো, মুভি অথবা সিরিজ উপভোগ করতে পারছেন। মাসিক ৮ থেকে ১২ ডলার সাবস্ক্রিপশন চার্জ হলেও বাংলাদেশে এটি কম জনপ্রিয় নয় বরং বিনোদনের যে বিশাল সাম্রাজ্য আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে সেই তুলনায় অনেকের বিবেচনায় এ খরচ কমই। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, অনুষ্ঠান দেখার মাঝখানে অযথা বিজ্ঞাপন হজম করতে হবে না কাউকে। চীন, উত্তর কোরিয়া, ক্রিমিয়া, সিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে নেটফ্লিক্সের সেবা নিষিদ্ধ থাকলেও নিষেধাজ্ঞা যে কেউ ভাঙছে না ব্যাপারটা এরকম নয়। এগুলো ডিজিটাল দুনিয়ার দৈনন্দিন ঘটনা।

২০১৬ সালে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নেটফ্লিক্স বাংলাদেশসহ আরো বিভিন্ন দেশে তাদের বিজনেস ছড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশে বিগত দুই বছরের অধিক সময় ধরে ব্যবসা করে যাচ্ছে নেটফ্লিক্স যার গ্রাহক সংখ্যা ইতোমধ্যে দুই লক্ষাধিক। এই দুই লক্ষ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি মাসে অন্তত ১৮ কোটি টাকা যা এক বছরের হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ২৫০ কোটি টাকা, দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে এবং আটকানোর কোনো উপায়ও নেই।
সারা বিশ্বে তাদের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১৫৮ মিলিয়ন। যার মধ্যে ৬১.৯৭ মিলিয়ন গ্রাহকের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রে। ২১টি দেশে অনুষ্ঠান নির্মাণের সাথে জড়িত নেটফ্লিক্স। সারা বিশ্বে নেটফ্লিক্সের গ্রাহকরা প্রতি সেকেন্ডে বিশ্বের ১৫ ভাগ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ নেটফ্লিক্সের জন্য ব্যবহার করে থাকে।

অনেকে মনে করেন নেটফ্লিক্সের প্রযোজিত প্রথম প্রোগ্রাম “হাউজ অব কার্ডস”, আসলে কিন্তু তা নয়, এটি তাদের প্রথম বাণিজ্যিক প্রোগ্রাম হলেও তাদের অরিজিনিয়াল প্রথম প্রোগ্রাম ছিল “এক্সাম্পল শো”। ২০১০ সালে নেটফ্লিক্স “এক্সাম্পল শো” নামে একটা প্রোগ্রাম করে। এটি তাদের প্রথম প্রযোজিত প্রোগ্রাম। এগার মিনিটের এই প্রোগ্রাম ছিল অনেকটা কমেডি ঘরানার। 

নেটফ্লিক্স কিভাবে সিনেমা হল বা টেলিভিশন বিজনেস কেড়ে নিচ্ছে? একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে নেটফ্লিক্স গ্রাহকেরা প্রতি বছরে গড়ে ৮২টি করে ফিচার ফিল্ম দেখতে পান। আর হলিওডের ওয়ারনার ব্রাদারস একই সময়সীমার মধ্যে মুক্তি দিতে পারে মোট ২৩টি সিনেমা। সবচেয়ে ব্যবসাসফল স্টুডিও হিসেবে পরিচিত ডিজনি সিনেমা হলে দেয় আরো কমসংখ্যক সিনেমা, মাত্র ১০টি।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ—এই তিন মাসে নেটফ্লিক্সের বিশ্বব্যাপী গ্রাহক বেড়েছে ৭৪ লক্ষ। নতুন গ্রাহকরা এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে দিচ্ছে ১২ কোটি ডলার। বিখ্যাত ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর ভাষ্যমতে, ২০২২ সালের মধ্যে নেটফ্লিক্স অনুষ্ঠান বাবদ খরচ করতে পারে বছরে ২ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। তবে দিনে দিনে তাদের প্রোগ্রামের সংখ্যা বেশ বেড়ে যাচ্ছে তাছাড়া বাড়ছে গ্রাহক, তাতে করে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করতে হচ্ছে নতুন নতুন সব প্রোগ্রাম।

তবে নেটফ্লিক্সের সুদিনের জোয়ারে দিন দিন ভাটার টানও দেখা দিচ্ছে। কারণ এতদিন ধরে খালি মাঠে গোল দিয়ে আসছিল নেটফ্লিক্স, ছিল না কোনো জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বী। এবার মাঠে আসছে অ্যামাজন, অ্যাপল, ফেসবুক, ইউটিউব, ডিজনিসহ সব বড় বড় রথী-মহারথী ও টেক জায়ান্টরা। এরই মধ্যে নেটফ্লিক্সের সঙ্গে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা করার মতো সক্ষমতায় পৌঁছে গিয়েছে অ্যামাজন। অন্তত যেসব জায়গায় নেটফ্লিক্স দেখা যায় সেসব জায়গায় অ্যামাজনও তার উপস্থিতি মোটামুটি নিশ্চিত করছে। অনুষ্ঠান নির্মাণের পেছনে গত বছর ৪০০ কোটি ডলার খরচ করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। হুট করে প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়ে যায় নেটফ্লিক্স। যেসব সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্সের জন্য ভিডিও নির্মাণ করত, তারাই এখন প্রতিদ্বন্দ্বী রূপে দেখা দিয়েছে। হলিউডের কিছু স্টুডিও গ্রুপ নেটফ্লিক্স থেকে তাদের সিরিজ বা সিনেমা সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এরা যদি আরো আক্রমণাত্মক আচরণ করে তবে তা সামাল দেওয়া নেটফ্লিক্সের জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে। 

স্বাভাবিকভাবেই এই বাজার-প্রতিযোগিতায় খুশি অনুষ্ঠান নির্মাতারা কারণ আগে যেখানে একটি মাত্র প্ল্যাটফর্ম ছিল এখন সেখানে দর কষাকষির সুযোগ রয়েছে। নেটফ্লিক্সের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছে অ্যামাজন কারণ এই প্রতিষ্ঠানের বাজার মূল্য নেটফ্লিক্সের তুলনায় ৬ গুণ বেশি। ধারণা করা হচ্ছে ২০১৯ সালের মধ্যেই বাজারে নামবে টেক জায়ান্ট অ্যাপল, যা চলতি প্রতিযোগিতায় যোগ করবে অন্য মাত্রা।

এমন অবস্থায় মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার জিতে গ্রাহকদের ধরে রাখতে চাইছে নেটফ্লিক্স। একই সঙ্গে নতুন নতুন গ্রাহক টেনে আনতে এসব পুরস্কারকে ব্যবহার করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।

২০১৮ সালে কান উৎসবে নেটফ্লিক্সের ফিল্ম নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হয়। কান কর্তৃপক্ষ মনে করছে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি ছাড়া কোনো সিনেমা তারা গ্রহণ করবে না। ফলে ওই উৎসবে নেটফ্লিক্সের কোনো সিনেমা কানে যেতে পারেনি। অথচ বড় বড় পরিচালকেরা এখন নেটফ্লিক্সের অর্থায়নে ফিল্ম বানাচ্ছে। পরবর্তীতে কান কর্তৃপক্ষ নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়। ফলে আলফানসো কোয়ারনের মতো ডিরেক্টদের নেটফ্লিক্সের মুক্তি দেওয়া সিনেমা “রোমা” কানে পুরস্কৃত হয় এবং অস্কারও পায়। শুধু তাই নয় মার্টিন স্করসিসের মতো ডিরেক্টররা পর্যন্ত এখন নেটফ্লিক্সে তাদের সিনেমা মুক্তি দিচ্ছে। 


২০১৭ সালের এপ্রিলে নেটফ্লিক্স মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর “পিঁপড়াবিদ্যা” ও “টেলিভিশন” সিনেমা দুটি কিনে নেয়। ২০১৭ সালের ১৫ মে সিনেমা দুটি প্রকাশ করে নেটফ্লিক্স। সিনেমা দুটি কিনে নেওয়ার সময় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার মতামত দেন এইভাবে—“শুধু প্রদর্শনই নয়, চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করছে নেটফ্লিক্স। দুনিয়াজোড়া এন্টারটেইনমেন্ট ওয়ার্ল্ডের মোঘল হয়ে উঠছে তারা। তাদের সর্বশেষ বিগ বাজেট প্রোডাকশন হচ্ছে মার্টিন স্করসেসি’র পরবর্তী ছবি এবং এবারের কান উৎসবে প্রতিযোগিতা বিভাগে নির্বাচিত বং জুন হো’র ‘ওকজা’! তো এই নেটফ্লিক্স ভারতের ছবি কিনছে বেশ কিছুদিন ধরে। ভারতে প্রযোজনাও করছে। আমি ভাবতাম, তারা বাংলাদেশের কনটেন্ট নেবে কবে। অবশেষে বলতে পারছি, নেটফ্লিক্স বাংলাদেশের দুইটা ছবি নিয়েছে। ছবি দুটি এই অধমের বানানো ‘টেলিভিশন’ এবং ‘পিঁপড়াবিদ্যা’।”

এই বছর নেটফ্লিক্স কিনে নেয় নূর ইমরান মিঠুর “কমলার রকেট”।

একটা মজার ঘটনা দিয়ে শেষ করতে পারি। ডিভিডি ও ভিডিও রেন্টাল সার্ভিস ব্লকবাস্টারকে ৫০ মিলিয়ন ডলারে নেটফ্লিক্স কিনে নেওয়ার অনুরোধ করেছিল কো-ফাউন্ডার রিড হ্যাসটিংস। কিন্তু ব্লকবাস্টারের কাছে এটাকে তেমন সম্ভাবনাময় মনে হয়নি। তখন আসলে সম্ভাবনাময় মনে না হওয়ারই কথা কিন্তু পরবর্তীতে এই নেটফ্লিক্স যখন ব্লকবাস্টার থেকে অনেকগুণ এগিয়ে আছে তখন ব্লকবাস্টার অনেকটাই ডুবন্ত অবস্থায়।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;