উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ যত ঈদগাহ



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
ঈদগাহ সংস্কৃতি বেশি সুপরিচিত এই ভারতীয় উপমহাদেশে

ঈদগাহ সংস্কৃতি বেশি সুপরিচিত এই ভারতীয় উপমহাদেশে

  • Font increase
  • Font Decrease

বিশাল ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করা ইসলামী সংস্কৃতিতে বিশেষ একটি ব্যাপার। অন্তত উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করার ব্যাপারটি বেশ জনপ্রিয় ও মর্যাদার একটি ব্যাপার। ঈদের নামাজ কেবল জামাতেই আদায় করা যায়। মসজিদে ঈদের জামাত আদায় করা গেলেও ঈদগাহে নামাজ আদায় উপমহাদেশের মানুষের মধ্যে খুবই পছন্দনীয় একটি রীতি।

বছরের অন্যান্য সময়ে সাধারণত এই জায়গায় নামাজ পড়া হয় না। তবে, ঈদগাহে ঈদের নামাজ পড়ার ব্যাপারটি একটি ‘সুন্নাত’। সে অনুযায়ী, ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, পারতপক্ষে নতুন পোশাক পরে ঈদগাহে জমায়েত হন।

ঈদগাহ সংস্কৃতি বেশি সুপরিচিত এই ভারতীয় উপমহাদেশে; বেশি হলে তা বিস্তৃত এশিয়ার আরো কিছু দেশে। উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে এমন কিছু ঈদগাহ, যেগুলো বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এগুলোর নাম ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়; দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সেখানে নামাজ পড়তে আসেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

শুরুতেই বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ কিছু ইদগাহ’র ওপর আলোকপাত করা যাক—

গোর-এ-শহীদ ঈদগাহ, দিনাজপুর

বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ময়দান। ২০১৯-এর ঈদ-উল-ফিতরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম ঈদের জামাতটি, যেখানে প্রায় ৬,০০,০০০ মানুষ উপস্থিত ছিল বলে অনুমান করা হয়।

গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565576104509.jpg
◤ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ ময়দান ◢


ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরো ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বা ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার নির্মাণ করা হয়েছে সিরামিক দিয়ে।

শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান, কিশোরগঞ্জ

জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রতিবছর এ ময়দানে ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদুল আযহা নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। কালের স্রোতে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানটি পরিণত হয়ে উঠেছে একটি ঐতিহাসিক স্থানে। এ ময়দানের বিশাল জামাত গৌরবান্বিত ও ঐতিহ্যবাহী করেছে কিশোরগঞ্জকে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে তিন লক্ষাধিক মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বে নরসুন্দা নদীর তীরে এর অবস্থান।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565576425086.jpg
◤ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতের দৃশ্য ◢


এই ঈদগাহ মাঠটি চারপাশে উঁচু দেয়ালে ঘেরা হলেও মাঝে মাঝেই ফাঁকা রাখা হয়েছে যাতে মানুষ মাঠে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারে। এছাড়া এই মাঠের প্রাচীর দেয়ালে কোনো দরজা নেই। শোলাকিয়া মাঠে ২৬৫ সারির প্রতিটিতে ৫০০ করে মুসল্লি দাঁড়াবার ব্যবস্থা আছে। ফলে মাঠের ভেতর সবমিলিয়ে এক লাখ বত্রিশ হাজার ৫০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ঈদুল ফিতরের সময় দেখা যায়, আশপাশের সড়ক, খোলা জায়গা, এমনকি বাড়ির উঠানেও নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এভাবে সর্বমোট প্রায় তিন লাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ পড়ে থাকেন। 

সিলেট শাহী ঈদগাহ, সিলেট

শহরের উত্তর সীমায় শাহী ঈদগাহ মাঠের অবস্থান। ১৭০০ সালের প্রথম দিকে নির্মিত সিলেটের শাহী ঈদগাহকে বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহাসিক স্থাপনা সমূহের মধ্যে গণ্য করা হয়। ১৭ শতকের প্রথম দশকে সিলেটের তদানীন্তন ফৌজদার ফরহাদ খাঁ নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগ, তদারকি ও তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণ করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565576606021.jpg
◤ সিলেট শাহী ঈদগাহ'র অভ্যন্তরভাগ ◢


প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে এখানে বিশাল দুটি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লি একসাথে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন।

ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ, ঢাকা

ঢাকার ধানমন্ডি থানায় অবস্থিত এই প্রাচীন ধর্মীয় স্থাপনাটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ১৬৪০ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুবাদার সম্রাট শাহজাহানের পুত্র শাহ সুজার প্রধান অমাত্য মীর আবুল কাসেম ধানমন্ডির শাহী ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। ঢাকায় অবস্থিত মুঘল স্থাপত্য নিদর্শনসমূহের অন্যতম এই ঈদগাহ। ঈদগাহটি বর্তমানেও ঈদের (২০১৬ নাগাদ) নামাজের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৮১ সাল থেকে ঈদগাহটি সংরক্ষণ করছে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565576784291.jpg
◤ মুঘল আমলে নির্মিত ধানমন্ডি শাহী ঈদগাহ, বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্মিক স্থানও বটে ◢


ধানমন্ডি ঈদগাহ দৈর্ঘ্যে ১৪৫ ফিট ও প্রস্থে ১৩৭ ফিট। ৪ ফিট উঁচু করে ভূমির ওপরে এটি নির্মিত হয় যাতে বন্যার ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এর চারকোণে অষ্টাভূজাকৃতির বুরুজ রয়েছে। তিন ধাপের মিম্বর ঈদগাহের উত্তর পাশে রয়েছে, যেখানে দাঁড়িয়ে ইমামরা নামাজ পড়ান। ঈদগাহটি চারদিকে ১৫ ফিট উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। তবে বর্তমানে কেবল পশ্চিম দিকের প্রাচীরটিই মোঘল আমলের। পশ্চিম প্রাচীরের মাঝ বরাবর প্রধান মেহরাব। প্রধান মেহরাবের দুই দিকে আছে বহু খাঁজবিশিষ্ট নকশা করা প্যানেল। এছাড়া ছোট আকারের দুইটি মেহরাব আছে এর দুই পাশে। মেহরাবগুলো দেওয়ালের আয়তাকার ফ্রেমের ভেতরে অবস্থিত।

এছাড়া ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও রয়েছে বেশ কিছু প্রসিদ্ধ ঈদগাহ—

মোরাদাবাদ ঈদগাহ, উত্তর প্রদেশ, ভারত

ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও সুপ্রসিদ্ধ ঈদগাহ এটি। অবস্থিত দেশটির উত্তর প্রদেশে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565577047446.jpg
◤ ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও সুপ্রসিদ্ধ মোদারাবাদ ঈদগাহ ◢


লাখখানেক মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন এই ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহটিতে। 

পুরানি ঈদগাহহায়দারাবাদ, ভারত

এটিও ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি ঈদগাহ। অবস্থিত তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দারাবাদে। এটির নির্মাণ কাল ১৭ শতক।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565577178396.jpg
◤ পুরানি ঈগগাহ’র অন্যতম নান্দনিক অংশ হচ্ছে এর সুবিশাল দুটো পিলার ◢


এটি রয়েছে শহরের ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার তালিকায়। ঈদগাহটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর দুটো বিশাল পিলার, যেটার সাথে মিল রয়েছে চারমিনারের পিলারগুলোর।

ঈদগাহ মসজিদ, কাবুল, আফগানিস্তান

ঈদগাহ মসজিদ আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। একে দেশটির ধর্মীয় মর্যাদার ধারক মসজিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে প্রতি বছর দুবার করে ১০ লাখ লোক ঈদের নামাজ আদায় করে থাকে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565577430328.jpg
◤ পাহাড়ের কোলে সুদৃশ্য ঈদগাহ মসজিদ ◢


কাবুল শহরের পশ্চিম প্রান্তে মাহমুদ খান ব্রিজ ও জাতীয় স্টেডিয়ামের কাছে অবস্থিত এটি। অনেক ঐতিহ্যের ধারক সুপ্রাচীন এই মসজিদ ও ঈদগাহটি। ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, এটির নির্মাণ হয়েছে মুঘল আমলে। 

ঈদ কাহ মসজিদ, ঝিনজিয়ান প্রদেশ, চীন

চীনের ঝিনজিয়ান প্রদেশের কাশগরে অবস্থিত এই মসজিদটি একই সাথে মসজিদ ও ঈদগাহ হিসেবে সুপরিচিত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565577656051.jpg
◤ সুপ্রাচীন ঈদ কাহ মসজিদ চীনের উইঘুর মুসলিমদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা ◢


চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ১৪৪২ সালে স্থানীয় মুসলিম নেতা সাকসিজ মির্জা মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদ ও ঈদগাহটির মোট আয়তন ১৬,৮০০ বর্গফুট।

খেরি ঈদগাহ, উত্তর প্রদেশ, ভারত

খেরি ঈদগাহ অবস্থিত ভারতের উত্তর প্রদেশের লক্ষিপুর জেলায়। লক্ষিপুর ও খেরির রেলওয়ে লাইনের মাঝখানে এটি অবস্থিত।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/12/1565577839704.jpg
◤ নান্দনিক খেরি ঈদগাহ ◢


এই ঐতিহাসিক ঈদগাহের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল খেরি শহরের উত্তর পশ্চিমে। আবাসিক এলাকার বাইরে। মসজিদপ্রাঙ্গণে ঢোকার পথ রয়েছে তিনটি। ঈদের দিন, ঈদগাহের বাইরের দিকগুলো ব্যবহৃত হয় ফুড স্টল, দোকানপাট ও বিনোদনের পসরার কাজে।

আরো পড়ুন ➥ ঈদ-উল আযহা দেশে দেশে

   

ব্যাঙের চিৎকার যে কারণে শুনতে পায় না মানুষ



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ব্যাঙ অন্য প্রাণীদের মতো চিৎকার করলেও শ্রবণ শক্তির চেয়ে ফ্রিকোয়েন্সি বেশি হওয়ার কারণে মানুষ তা শুনতে পায় না।

ব্রাজিলের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব ক্যাম্পিনাসের এক দল গবেষকের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

আমাজন জঙ্গলে ব্যাঙ নিয়ে গবেষণা করার সময় তারা অদ্ভুত কিছু লক্ষ্য করেছিলেন। তারা দেখেন যে, স্মল লিফ লিটার ব্যাঙগুলি তাদের মাথা পিছনে ফেলে তাদের মুখ প্রশস্ত করে রেখেছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, তারা চিৎকার করছে। কিন্তু তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না।

যখন বিজ্ঞানীরা উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি অডিও রেকর্ডার ব্যবহার করে রেকর্ড করেছিল, তখন তারা উভচর প্রাণীদের ‘প্রতিরক্ষামূলক আল্ট্রাসাউন্ড’ রেকর্ড করতে সক্ষম হন। 

যখন তারা বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে শব্দ বিশ্লেষণ করেন, তখন তারা দেখতে পান যে, এটির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ছিল ৭ কিলোহার্টজ থেকে ৪৪  কিলোহার্টজ। মানুষ ২০ কিলোহার্টজ এর বেশি ফ্রিকোয়েন্সি শুনতে পারে না।

এ গবেষক দলের মতে, ব্যাঙের চিৎকারটি শিকারিদের প্রতিক্রিয়া। শিকারিকে আক্রমণ করার জন্য বা অন্য প্রাণীকে আকৃষ্ট করার জন্য এটি তাদের কৌশল হতে পারে।

দলের একজন গবেষক মারিয়ানা রেতুসি পন্টেস বলেছেন, তিনি ভিন্ন গবেষণা ট্রিপে ব্যাঙকে একই আচরণ প্রদর্শন করতে দেখেছেন, কিন্তু তার কাছে এ শব্দ রেকর্ড করার জন্য সঠিক প্রযুক্তি ছিল না।

বাদুড়, তিমি, গন্ডার, কুকুর, কবুতর, কাটলফিশসহ সব ধরনের প্রাণী যোগাযোগের জন্য ইনফ্রাসোনিক এবং আল্ট্রা ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং মানুষ এর কিছুই শুনতে পায় না।

আপনি যখন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা উপভোগ করছেন, তখন হয়তো আপনার চারপাশে একটি কোলাহলপূর্ণ পরিবেশ থাকতে পারে, যা আপনি শুনছেন না।

;

মাটির নিচে প্রাচীন দুর্গের সন্ধান, অর্থের অভাবে বন্ধ কাজ



ছাইদুর রহমান নাঈম, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কাপাসিয়া (গাজীপুর) থেকে ফিরে: গাজীপুরের কাপাসিয়ায় লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক এক একডালা দুর্গের সন্ধান মিলেছে। এর পর নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয় খনন কাজ। কিছুটা দৃশ্যমান হয় দুর্গ। তবে সরকারি অর্থায়ন না পাওয়ায় বন্ধ রয়েছে খনন কাজ। মাটির নিচে চাপা পড়া ইতিহাস খনন করে সামনে আসলে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রানি ভবানী বানিয়া রাজাদের শেষ বংশধর ছিলেন। তার দরদরিয়া দুর্গ ছিল গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে, বানার নদের পারে। দুই দশক আগেও সেখানে দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ভালোভাবে দৃশ্যমান ছিল। ক্রমান্বয়ে দৃশ্যমান ধ্বংসাবশেষ সব বিলীন হয়ে যায়।

দরদরিয়া দুর্গের ইতিহাসের গল্পগুলো মানুষের মুখে মুখে। তবে সেই ইতিহাসের অস্তিত্ব ছুঁয়ে দেখতে সেখানে শুরু হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান খননকাজ শুরু করেন। তার সঙ্গে কাজ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী। সামনে আরও অনেকেই এই কাজে যুক্ত হবেন। নিজস্ব অর্থায়নে এই খননকাজ শুরু করেছেন সুফি মোস্তাফিজুর রহমান।

এক সময় লোকমুখে গল্প শোনা যেত, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে রয়েছে ‘রানির বাড়ি’। সেই মধ্যযুগের ইতিহাস এতদিন মানুষের মুখে মুখে ছিল। বাস্তবে তার অস্তিত্বের খোঁজ পাওয়া গেছে। বহুদিনের চেষ্টায় একদল গবেষক ‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়া দুর্গ আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ আবিষ্কার মধ্যযুগের ইতিহাস মানুষের বাস্তবে দেখার বাসনা পূরণ হবে। আংশিক খনন করা দুর্গটি দেখতে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজনের ভিড় করেছেন। তবে বর্তমানে অনুদানের অভাবে দুর্গটির খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

‘রানির বাড়ি’ বা দরদরিয়ায় সরজমিনে দেখা যায়, বালির বস্তা দিয়ে দুর্গের দুই পাস ঘিরে রাখা হয়েছে। পূর্ব দিকের অংশে খোলা রয়েছে। দুর্গের চারপাশে মলি বাঁশ দিয়ে বেষ্টনী দিয়ে রাখা রয়েছে। পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে।

পাশের কৃষি জমিতে সেচের পানি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করেছে

কয়েকজন এলাকাবাসী জানায়, অনেক দিন ধরে খননকাজ বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় রেখে তারা চলে গেছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন দেখতে এসে দুর্গ থেকে ইটের গাঁথুনি থেকে ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় থাকলে দুর্গের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি জরুরি ভিত্তিতে দুর্গের খননের অংশটুকুর নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দা মঈনুদ্দিন (৬০) বলেন, ছোট থেকে শুনে আসছি এই রানির ভিটার কথা৷ কিন্তু এটার সঠিক ইতিহাস জানতাম না। সবটুকু খনন করা হলে ইতিহাস উন্মোচন হবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র টোক নগর ভেংগুরদী গ্রামের আশিক রব্বানী জিহান বলেন, এটি আমাদের কাপাসিয়ার জন্য বিশাল এক সম্পদ৷ এটি খনন করা হলে আগে কি ছিলো বা এখন কি আছে সেটা জানা যাবে৷ এটি দৃশ্যমান হলে গাজীপুর তথা বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক এক স্থাপনা হতে পারে৷ পর্যটন কেন্দ্র হলে এলাকার উন্নয়ন হবে।

 লাল মাটি ও ঝোপ-ঝাড়ের ভেতর ঐতিহাসিক একডালা দুর্গের সন্ধান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নিজ খরচে খননকাজ শুরু করেছেন। এই কাজে যুক্ত আছেন তার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ঐতিহ্য অন্বেষণ’ এর বেশ কয়েকজন প্রত্নতাত্ত্বিক।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কাপাসিয়ার রায়েদ ইউনিয়নের দরদরিয়া গ্রামে বানার নদের পূর্ব পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রানি ভবানীর দুর্গের ধ্বংসাবশেষ। তিনি ছিলেন বেনীয়া রাজার শেষ বংশধর। তার দুর্গের সবচেয়ে বেশি অবস্থান দরদরিয়া গ্রামের উত্তর অংশে। এই কৃষি জমির পাশে উঁচু অংশ খননের পর বর্তমানে দুর্গের কিছু অংশের নিদর্শন দৃশ্যমান হয়েছে। এখনো পর্যন্ত যতটুকু খনন করা হয়েছে তা নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। ফান্ড পেলে খননকাজ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

 

;

বৈশাখের প্রথম বৃষ্টিতে সিক্ত রাজধানী



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রুদ্র বৈশাখ তার নিয়ম অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই সূর্যের পূর্ণ তাপে জ্বলছিল। ভরদুপুরে ঘরের বাইর হওয়াই দায়! মাথার উপর প্রচণ্ড উত্তাপ যেন ঘামের জলপ্রপাত সৃষ্টি করে।

‘দুপুরের ভেপসা গরম, ঘেমে শরীর তীর-ঘাম/তবু ধানকাটায় ব্যস্ত কৃষক, নেই কারো বিশ্রাম/এমন ক্ষণে ঈশান কোণে মেঘ-বিজলীর গর্জন/অতঃপর স্বস্তির নিঃশ্বাস নামলো প্রতিক্ষার বর্ষণ।’ অবশেষে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র তাপদাহের পর কবিতার এই লাইনগুলোর মতোই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই রাজধানীর বুকে নামল ঝুম বৃষ্টি। শান্তির বৃষ্টিফোঁটায় সিক্ত হলো রাজধানীর মাটি।     


আর সেই সঙ্গে ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম বৃষ্টিতে উল্লাসে মেতে উঠল নগরবাসী। 

বৃষ্টির ঝুম ঝুম ফোঁটায় যেন এক অনন্য নূপুরধ্বনির তরঙ্গ তুলেছে প্রকৃতি। ঘাম, গরম, অস্বস্তি যে খরায় পুড়ছিল মানুষের মন, তাতে শান্তির অমৃতধারা নেমেছে সূদুর আকাশ থেকে। তবে শুধু বৃষ্টি নয়, সঙ্গে জোড় বেঁধেছে দমকা হাওয়া। বৈশাখের এক অনস্বীকার্য অংশ হলো কাল বৈশাখী ঝড়। বৈশাখে আসন্ন সেই ঝড়ের ইঙ্গিতই বয়ে আনলো পাগলাটে বাতাস।


এর আগে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, ঢাকা, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া এবং কুমিল্লা অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এসব এলাকার নদীবন্দর সমূহকে ২ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

;

কুরচি ফুল, দেশি হয়েও আজ ভিনদেশি



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি: বার্তা ২৪.কম

ছবি: বার্তা ২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সন্ধ্যার আবছা আলোয় ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তীব্র একটা সুগন্ধে মনটা ভাল হয়ে গেল। বুঝতে পারলাম এটি একটি ফুলের গন্ধ, যারা রাত্রে সুগন্ধ ছড়ায়। অন্যান্য ফুলের গন্ধের চেয়ে এর গন্ধটা একটু যেন বেশি তীব্র। খুঁজতে লাগলাম গাছটিকে। অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে গাছটিকে খুঁজে পেলাম। গাছটিকে চিনে রাখলাম।

পরদিন দিনের আলোয় গাছটিকে ভাল করে লক্ষ্য করলাম। একটু অপরিচিত ঠেকলো। ভাবলাম বিদেশি কোনো ফুল গাছ হবে হয়তো। গাছটি সনাক্ত করতে গাছ, ফুল আর পাতার ছবি তুলে পাঠালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে। তিনি দেখে সাথে সাথেই জানালেন গাছটির নাম কুরচি। আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ।

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে কোর্টস গার্ডেনে কুরচি গাছ

উইকিপিডিয়াতে গাছটির আদি বাসস্থান মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় উপমহাদেশ, ইন্দোচীন এবং চীনের কিছু অংশের নাম লেখা রয়েছে।

ড. জসীম বলেন, কুরচি আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। আমরা এটি রিপোর্ট করার আগেই হয়তো আফ্রিকা কিংবা অন্য কোনো স্থান হতে রিপোর্টিং হয়ে গেলে সেটি ওই স্থানের আদি উদ্ভিদ হয়ে যায়। শুধু কুরচি নয় এমনিভাবে আমাদের অনেক দেশীয় উদ্ভিদ বিদেশি হয়ে গেছে। অথচ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্রে ও সাহিত্যে কুরচির উল্লেখ আছে।

তিনি আরও বলেন, কুরচি গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০ থেকে ২০ ফুট। ফুল অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো, নিচের অংশ নলাকৃতি এবং উপরের অংশ মুক্ত পাপড়িতে ছড়ানো। পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত অংশ ঈষৎ বাঁকানো, বর্ণ দুধসাদা এবং তীব্র সুগন্ধি কিন্তু মধুর।

ড. জসীম আক্ষেপ করে বলেন, দেখতে সুন্দর ও তীব্র সুগন্ধিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাগানীদের কাছে শোভাবর্ধনকারী উদ্ভিদ হিসেবে তেমন কদর পায়নি। ফলে একসময় এ গাছ যত্রতত্র চোখে পড়লেও এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মধুপুরের শালবনে প্রচুর কুরচি গাছের দেখা মেলে। ঢাকায় রমনা উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানেও কুরচি গাছ আছে।

সুগন্ধে ভরা কুরচি ফুল গাছ

কুরচির ঔষধিগুণ সমন্ধে তিনি বলেন, পুরো কুরচি গাছটিই ঔষধি গুণে ভরা। কুরচি গাছের বাকল ডায়রিয়া ও পাতলা পায়খানার মহৌষধ। হাঁপানি রোগে শিকড়ের রস দারুণ উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, কৃমি রোগ ও মুখের ঘায়ে এর শিকড়, পাতা ও বাকল খুব কার্যকর। তবে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন তিনি।

কুরচি অ্যাপোসাইনেসি পরিবারের একটি ক্ষুদ্র পত্রমোচী মাঝারী বৃক্ষ। পাহাড়-পর্বতে এই গাছ হরহামেশাই দেখা যায় বলে হয়তো এর অন্য নাম গিরিমল্লিকা। এ ছাড়া কুরচি গাছটি কুটজ, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, মহাগন্ধ, কোটিশ্বর নামেও পরিচিত। এর নরম কাঠ থেকে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়।

;