তারেক মাসুদ: আমাদের সেলুলয়েডের কবি



মরিয়ম সুলতানা, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
তারেক মাসুদ

তারেক মাসুদ

  • Font increase
  • Font Decrease

ঋত্বিক ঘটকের কিন্তু সিনেমা বানানোর কথা ছিল না। তবুও কেন তিনি সব ছেড়েছুঁড়ে কেবল সিনেমা বানাতে নেমেছিলেন, তা কি আমরা জানি? তিনি সিনেমা বানিয়েছিলেন কারণ সিনেমাই হলো একসাথে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার একমাত্র মাধ্যম। অন্য কোনো মাধ্যমে যদি এরচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা যেত তাহলে সিনেমা ছেড়ে সেই মাধ্যমেই স্থানান্তরিত হতে রাজি ছিলেন ঋত্বিক ঘটক।

একজন ঋত্বিক ঘটকের মতো আমাদেরও একজন তারেক মাসুদ ছিলেন, যাকে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম নক্ষত্র হিসেবে ধরা যায়। তিনি সিনেমার নেশায় পড়ে সিনেমা বানিয়েছিলেন কিনা জানি না, তবে তিনি তাঁর নিজের সমগ্র জীবন যে শুধুমাত্র সিনেমার জন্যই উৎসর্গ করে গিয়েছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের যখন মৃতপ্রায় দশা, নামকাওয়াস্তে বাণিজ্যিক ছবির প্রবল দাপটে সত্যিকারের চলচ্চিত্র শিল্প যখন রীতিমতো গাঢ় অন্ধকারের মাঝে ধুঁকছে; তখন এই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা একটা আলোর মশাল হাতে জ্বেলে অক্লান্তভাবে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। তিনি চেয়েছিলেন আবাল বৃদ্ধা বণিতা সকলের মাঝে মুক্তির আলো ছড়িয়ে দিতে। তাইতো জীবনের শেষ দিন অবধি চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করে গেছেন সেলুলয়েডের এই কবি, আমাদের তারেক মাসুদ।

যদিও তিনি পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ের আগে লিখে গিয়েছেন, “চলচ্চিত্রকার না হলে লেখক হওয়ার চেষ্টা করতাম।” কেন তবে তিনি লেখক না হয়ে সিনেমাওয়ালা হলেন? তবে কি ঋত্বিকের মতো তাঁরও উদ্দেশ্য ছিল, নিজের চিন্তা-ভাবনা এবং দর্শনকে সিনেমার মধ্যদিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে পৌঁছে দেওয়া? উদ্দেশ্য যেটাই হোক, তিনি যে সিনেমাকে নিছক একটা বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেননি; তা আজ আমরা তাঁর রেখে যাওয়া কাজগুলির মধ্যদিয়ে উপলব্ধি করতে পারি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565706104240.jpg
◤ তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ পরিচালিত অন্তর্যাত্রা সিনেমার পোস্টার ◢


আবু তারেক মাসুদ, পরবর্তীকালে যিনি আমাদের কাছে তারেক মাসুদ হিসেবে ধরা দিয়েছেন, ১৯৫৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে, বাংলাদেশ) ফরিদপুর মহকুমার নূরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম নুরুন নাহার মাসুদ ও বাবার নাম মশিউর রহমান মাসুদ। তাঁর বাবা ছিলেন কলকাতার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট, সত্যিকারের একজন আধুনিক মনের মানুষ। কিন্তু তারেক মাসুদের নানির মৃত্যুর পর তার পিতার মাঝে এক আমূল পরিবর্তন আসে এবং নিমিষেই তিনি হয়ে ওঠেন একজন কট্টরপন্থী মুসলমান। ফলস্বরূপ তাঁর পিতা তাদের বাড়িতে মহিলাদের পর্দা করার বিধান চালু করে। সেই সাথে তারেককে একজন ‘আলেম’ বানানোর ইচ্ছেও পোষণ করেন। অতঃপর শিশু তারেকের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় একটি আলিয়া মাদ্রাসা।

এরপর পুরো ষাটের দশক তারেক মাসুদ তাঁর পিতার নির্দেশে ছুটে চলেছেন এক মাদ্রাসা থেকে আরেক মাদ্রাসায়। তার বর্ণনানুযায়ী তিনি প্রায় প্রায় পাঁচ-ছয়টি মাদ্রাসায় পড়েছেন যেগুলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত। কোনোটি ওই ফরিদপুরের ভাঙ্গায়, কোনোটি ঢাকার লালবাগে, কোনোটি ঢাকার কাকরাইলে, কোনোটি আবার যশোরের মধুমতি নদীর পাড়ের বাহিরদিয়ায় অবস্থিত। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার লালবাগের একটি মাদ্রাসা থেকে মৌলানা পাস করেন।

জীবনের প্রথম মাদ্রাসা দর্শনের অভিজ্ঞতা তারেক মাসুদ দিয়েছেন এভাবে, “আমার প্রথম ভর্তি হওয়া ভাঙ্গার মাদ্রাসাসংলগ্ন একটি বিরাট দিঘি ছিল। যেটি আমরা ব্যবহার করতাম। আমি যখন প্রথম মাদ্রাসায় গেলাম সেদিন রাত ৩টা সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে তুলে সেই বিরাট দিঘির ঘাটে নিয়ে যাওয়া হলো। কুয়াশার মধ্যে সামান্য আলো-আঁধারিতে দেখা যাচ্ছিল সবাই মেসওয়াক করছে। আমাকেও মেসওয়াক করা শিখানো হলো। আসলে একটি শিশুর ওই ধরনের অভিজ্ঞতা একরকম ইন্দ্রজালিক অভিজ্ঞতা।”

এরপর এলো ১৯৭১ সালের সেই অমানবিক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ক্ষণ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তারেক মাসুদ এবং তার পরিবার প্রত্যক্ষ করলেন যুদ্ধের ভয়াবহতা। কিন্তু ১৯৭১ সালের ওই নয় মাসের যুদ্ধের পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে যেন তারেক মাসুদের জীবনেও স্বাধীনতা ফিরে এলো। কারণ ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁর মাদ্রাসা শিক্ষার পরিসমাপ্তি ঘটে। তাঁর কট্টরপন্থী মুসলিম বাবার হাত ধরেই তিনি ফের প্রবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার জগতে। বাবার উদ্যোগে তিনি ১৯৭৩ সালে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং প্রথম বিভাগে পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কো-এড কলেজ ‘আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ’-এ ভর্তি হন। কিন্তু তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে মাত্র ছয় মাস পড়াশোনা করার পর নটরডেম কলেজে বদলি হয়ে যান এবং সেখান থেকে মানবিক বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565706254284.jpg
◤ তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র-যাত্রায় স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ছিলেন বড় অনুপ্রেরণা ◢


তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার সময় থেকেই ঢাকার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে থাকেন। চাচাত ভাই কামাল মাহমুদের বন্ধু স্থপতি প্রিন্সের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ ফিল্ম সোসাইটির অফিসে যান এবং ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র সংসদের নিয়মিত কর্মী হয়ে ওঠেন। ১৯৭৪ সালের পর থেকেই তিনি চলচ্চিত্র চর্চার পরিধিতে নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে তোলেন। চলচ্চিত্র ছাড়াও তারেক মাসুদ আগ্রহী ছিলেন সংগীত, চিত্রকলা, স্থাপত্য, নৃতত্ত্ব এবং মনঃস্তত্ত্ব বিষয়ে। সব বিষয়ের সঙ্গে চলচ্চিত্রের আন্তঃসম্পর্ক বিষয়ে তিনি বুঝতে চাইতেন। সেজন্যই পরবর্তীতে বিভিন্ন বিষয়ের মেধাবী সমবয়সীদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে এবং পারস্পরিক লেনদেনের মধ্য দিয়ে প্রস্তুতি চলে চলচ্চিত্রে নেতৃত্বদানের।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই তিনি বাম আন্দোলন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলন প্রভৃতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। চলচ্চিত্র আন্দোলনের মাধ্যমেই পরিচয় হয় মোরশেদুল ইসলাম, তানভীর মোকাম্মেল, শামীম আখতার প্রমুখের সাথে। তিনি চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ করেছিলেন। শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছিলেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ প্রয়াত আলমগীর কবীরকে।

এরপর তিনি পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ফিল্মের ওপর পড়তে যেতে চাইলেন কিন্তু হঠাৎ করে সেখান থেকে স্কলারশিপ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেলে সে আশায় গুড়েবালি পড়ল। তারপর ১৯৮২ সালে তিনি ফের আমেরিকায় ফিল্মের ওপর পড়তে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে ফেললেন, এমনকি পারিবারিকভাবে অর্থও যোগাড় করে ফেলেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705853091.jpg
◤ তারেক মাসুদের শিক্ষাগুরু ছিলেন বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ আলমগীর কবীর ◢


তার এই আমেরিকায় যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “১৯৮২ সালে আমি আমেরিকায় ফিল্মের ওপর পড়াশোনার জন্য প্রস্তুত হয়েছিলাম এবং পারিবারিকভাবে অর্থ জোগাড় করেছিলাম। এদিকে সুলতান তখন আমাদের মতো যুবকদের কাছে কিংবদন্তি। তার ওপর আহমদ ছফার একটি লেখা আমাদের সুলতানের ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা তখন বিচ্ছিন্নভাবে বেশ কয়েকজন সুলতানের ওপর প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করার কথা ভাবছিলাম। আমরা যারা বিকল্পধারা নিয়ে ভাবছিলাম তাঁরা সুলতানের ওপর ছবি করাটা খুবই জরুরি মনে করছিলাম। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন আমার সুলতানের প্রতি এই আগ্রহের বিষয়টি জানতেন। তখন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ফিল্ম অ্যাপ্রিসিয়েশন কোর্স করেছি। আনোয়ার ভাই আমাদের ক্যামেরার শিক্ষক ছিলেন। তিনি সবসময় উৎসাহ দিতেন ছবি বানানোর জন্য। আমি একদিন তাঁর জিগাতলার বাসায় গিয়ে যখন বললাম যে আমি তো পড়াশোনার জন্য বিদেশ চলে যাচ্ছি। উনি বললেন, আজকের কাগজ দেখেছো? আমি বললাম, না। উনি আবার বললেন, ইত্তেফাক খুলে দেখো, ব্যাক পেইজে বড় করে নিউজ শিল্পী সুলতান হাসপাতালে, মারাত্মকভাবে অসুস্থ। মনে আছে তুমি বলেছিলে সুলতানের ওপর ডকুমেন্টারি করবে। তুমি যদি এখন পড়তে বাইরে চলে যাও, ফিরে এসে দেখবে শিল্পী নেই। তোমার মনের মধ্যে কিন্তু একটা বিরাট আফসোস থেকে যাবে। আমি আনোয়ার ভাইকে বললাম, আমি বাইরে যাবার যাবতীয় কাজ সেরে ফেলেছি, আমি চলে যাব। তারপর জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে ছয় নাম্বার বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। অনেক সময় নিচ্ছে সেদিন বাসটা, এটাও একটা কাকতালীয় ঘটনা। বাসটা এত দেরি না করলে হয়তো মাথার মধ্যে এত উল্টো বুদ্ধি আসত না। বাস আসছে না, আসছে না। এ সময় আমার মাথায় উল্টো বুদ্ধিটা এলো, আমি বিদেশে যাব না। ওই টাকা দিয়েই ইমিডিয়েটলি আমি সুলতানের ওপর ছবি বানানো শুরু করে দেব। দ্যাটস হাউ আই গট্ ইনটু ফিল্ম মেকিং।”

তারেক মাসুদ ‘আদম সুরত’ নির্মাণ শুরু করেন ১৯৮২ সালে। তার মূলধন ছিল পৌনে দুই লাখ টাকা। কিন্তু সুলতানের খামখেয়ালী, ভুলোমনা, উদাসীন স্বভাবের কারণে ওই ছবি নির্মাণ করতে লেগে যায় সুদীর্ঘ ৭ বছর। ছবির ব্যয় বেড়ে যায় বহুগুণ। সে সময় ছবির এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ চলতে থাকে তার প্রতি। বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতে থাকেন, তারেক মাসুদ নতুন চলচ্চিত্র আন্দোলনের জন্ম দিচ্ছেন, যার নাম ‘সিনেমা-দেরীতে’। কারণ তখন বিশ্বব্যাপী নতুন সিনেমা আন্দোলনের নাম ছিল ‘সিনেমা-ভেরীতে’।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705343466.jpg
◤ ১৯৮৪ সালে আদম সুরত চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে তারেক মাসুদ ◢


কিন্তু এই দীর্ঘ ৭ বছর সুলতানের সাথে থেকে থেকে তিনি লাভ করেন নতুন এক জীবনদৃষ্টি, সুলতানের চোখ দিয়ে আবিষ্কার করেছেন যেন নতুন বাংলাকে। সুলতানের জীবনদর্শনও তাকে গভীরভাবে আলোড়িত করে, যা তার পরবর্তী কাজগুলিতে লক্ষ্যণীয়। চেতনে হোক কিংবা অবচেতনে, তারেকের কাজে সুলতানের প্রভাব বিদ্যমান। এ প্রসঙ্গে তারেক মাসুদ বলেন, “আদম সুরত বানাতে গিয়ে আমি যতই ইমপ্রাকটিক্যাল কাজ করি না কেন, এমন এক আলোকপ্রাপ্ত মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার ও চলার ফলে আমার একটা আত্মোন্নয়ন ঘটেছে বলে আমি মনে করি। শুধু গ্রামবাংলা নয়, শিল্প সম্পর্কে, জীবন সম্পর্কে কিছু ধারণা আমার মধ্যে বিকশিত হয়েছে।”

এই ছিল তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র যাত্রার প্রারম্ভিক ভাগ। কিন্তু কে ভেবেছিল যে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার এক সাধারণ মাদ্রাসা ছাত্র কালক্রমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বরপুত্র হয়ে উঠে উঠবে?

তারেক মাসুদ তার সমগ্র জীবনে যা যা দেখেছেন, যে যে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন; সেগুলিকেই তিনি পরবর্তী সময়ে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি তার শিল্পকর্মের মধ্যদিয়ে তার সময়কার সময়টিকে ধরতে চেয়েছেন। চিত্রায়িত করেছেন পেছনে ফেলে আসা সময়কেও। তার সময়কার বর্তমান এবং আবহমান বাংলার ইতিহাসকে তিনি ছুঁতে চেয়েছিলেন তার সৃষ্টিকর্মের মধ্যদিয়ে।

তারেক মাসুদ মৃত্যুর আগ অবধি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের অন্যতম নীতিনির্ধারক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীন-ধারার চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সুপরিচিত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ। তিনিই একমাত্র বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার যাঁর চলচ্চিত্র পৃথিবীর প্রায় ৪৪টি দেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে। এমন নজির বাংলা ভাষার চলচ্চিত্রকারদের মধ্যে একমাত্র সত্যজিৎ রায় ছাড়া আর কারোই নেই।

অস্কার পুরস্কার প্রতিযোগিতায় তারেক মাসুদের মাটির ময়না (২০০২) একমাত্র চলচ্চিত্র যা বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছে। ভুবনবিখ্যাত ‘কান’ চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর ছবি মাটির ময়না ‘আন্তর্জাতিক সমালোচক’ পুরস্কার লাভ করেছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565705022586.jpg
◤ তারেক মাসুদ পরিচালিত মাটির ময়না সিনেমার পোস্টার ◢


এছাড়াও ২০১১ সাল পর্যন্ত তারেক মাসুদের চলচ্চিত্রকর্মসমূহের মধ্যে প্রামাণ্য চিত্রগুলো হচ্ছে : সোনার বেড়ি (১৯৮৭), আদমসুরত (১৯৮৯), আহ আমেরিকা (১৯৮৯), গণতন্ত্র মুক্তি পাক (১৯৯০), ইউনিসন (১৯৯২), মুক্তির গান (১৯৯৫), শিশুকণ্ঠ (১৯৯৭), মুক্তির কথা (১৯৯৯), নিরাপত্তার নামে (১৯৯৮), অন্য শৈশব (২০০২) এবং কানসাটের পথে (২০০৮)।

আর কাহিনীচিত্রসমূহ হচ্ছে : শামীম আখতারের সঙ্গে যৌথভাবে স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি সে (১৯৯৩), মাটির ময়না (২০০২), ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গে যৌথভাবে অন্তর্যাত্রা (২০০৬), স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি নরসুন্দর (২০০৯) এবং রানওয়ে (২০১০)।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট ‘কাগজের ফুল’ নামক চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের লোকেশন ঠিক করার জন্য তারেক মাসুদ তার সহকর্মীদের নিয়ে পাবনার ইছামতী নদীর তীরে যান। লোকেশন-নির্বাচন শেষে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে তারেক মাসুদ তার গাড়িবহর নিয়ে রওনা দেন এবং খানিক পরে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে তারেক মাসুদের সঙ্গে ছিলেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাংবাদিক, সম্প্রচার কিংবদন্তি, টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট চিত্রগ্রাহক মিশুক মুনীর। তিনিও একই দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের সাথে মারা যান। প্রাণ হারায় আরো ৩ জন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/13/1565704665207.jpg
◤ দুর্ঘটনায় নিহত হন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর (ডানে) ◢


কাগজের ফুল ছাড়াও তারেক মাসুদের অনেকগুলো ছবি নির্মাণাধীন ছিল। এর মধ্যে বাংলাদেশের লোকজ উৎসব, মেলা দিবস ইত্যাদি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র এবং বাংলাদেশের সিনেমা হলের বেহাল অবস্থা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের নির্মাণপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছিল। আর, তার স্বপ্নের ছবি কাগজের ফুলের প্রেক্ষাপট এবং ব্যাপ্তি ছিলো বিশাল। ছবির বিষয়বস্তু ছিল ১৯৪৭ সালের দেশভাগ। এবং এই ছবিই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেটের ছবিতে পরিণত হতে যাচ্ছিল।

এই কিংবদন্তির প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র :
১. তারেক মাসুদের দেয়া সাক্ষাৎকার
২. উইকিপিডিয়া
৩. বাংলাপিডিয়া ও অন্যান্য

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;