আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

দাসপ্রথার বিস্তার ও বিলোপের ইতিহাস



শেহজাদ আমান, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট
দাসপ্রথার মতো অমানবিক পন্থা বিশ্বজুড়ে টিকে ছিল আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত

দাসপ্রথার মতো অমানবিক পন্থা বিশ্বজুড়ে টিকে ছিল আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত

  • Font increase
  • Font Decrease

একসময় গবাদী পশুর মতোই হাটে-বাজারে কেনাবেচা হতো মানুষ। দাস হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হতো তাদের। ঊনিশ শতকের শেষার্ধ্ব থেকে পুরো দুনিয়ায় দাস ব্যবসা বিলুপ্ত হতে শুরু করলেও, দাসপ্রথার ইতিহাস অতি প্রাচীন। এই বর্বর প্রথাকে উচ্ছেদ করার জন্য আন্দোলন-সংগ্রামও চলে এসেছে অনেকদিন ধরে। সেই আন্দোলন ও সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে, দুনিয়া থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি ঘটে দাসপ্রথার। এই অমানবিক প্রথার অবসানকে চিহ্নিত করতে এবং প্রথাটির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের নায়কদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৮ থেকে প্রতিবছর ২৩ আগস্ট পালিত হয় আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479459852.jpg
◤ সম-অধিকার, মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলোকে ত্বরান্বিত করেছে দাস প্রথার বিলোপ ◢


আজকের দিনে সারা দুনিয়াজুড়ে যে সম-অধিকার, মানবাধিকারের মতো ব্যাপারগুলো এত আলোচিত বিষয়, সেই পথে বিশ্ববাসীকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছিল দাস প্রথার বিলোপের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি। আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবসের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে—মানবপাচার, যৌনদাস, জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রম, বলপ্রয়োগে বিয়ে ও যুদ্ধে শিশুদের ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা বাড়ানো। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, ১৭৯১ সালে বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিকান অঞ্চলে প্রথমে দাসপ্রথার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। এরপর যুক্তরাজ্য ১৮৩৩ সালে, ফ্রান্স ১৮৪৮ সালে এবং যুক্তরাষ্ট্র ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে। তারপরেও এখনো বিশ্বের এক কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী রয়েছে। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479489579.jpg
◤ পিরামিডের মতো সুবিশাল স্থাপত্যগুলো গড়ে উঠেছে দাসদের ঘাম, রক্ত ও ত্যাগে ◢


প্রাচীন দাসপ্রথাটি এখনো বিভিন্ন নামে ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীতে এবং বিভিন্ন পরিবারে। মানবসভ্যতার ইতিহাস অনুযায়ী, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ সালে মেসোপটেমিয়ায় প্রথম ক্রীতদাস প্রথা চালু হয়। এর হাজারখানেক বছর পর থেকে এই প্রথা মিসর হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ভারতবর্ষে। মিশরের গ্রেট পিরামিডের মতো সুবিশাল স্থাপত্যও তৈরি করা হয় দাসদের কাজে লাগিয়েই। এর অনেক পরে চীনে এই কু-প্রথাটি জেঁকে বসে। পিরামিডের মতোই চীনের মহাপ্রাচীরও নির্মিত দাসদের ঘাম, রক্ত ও কষ্টের ইতিহাস দিয়েই। ৮০০ হতে ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে গ্রিস এবং ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমে শুরু হয় ক্রীতদাস প্রথার মারাত্মক বিস্তার। এভাবে প্রায় বিশ্বজুড়েই একসময় ছড়িয়ে পড়ে এই ভয়াবহ কু-প্রথাটি।

কুখ্যাত ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা

দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে প্রচলিত ছিল দাস ব্যবসা। দাস ব্যবসার খুবই মন্দ রূপটি দেখা গিয়েছে মধ্যযুগে ‘ট্রান্স আটলান্টিক দাস ব্যবসা’য়। ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর মানবজাতির ইতিহাস বদলে দেওয়া একটা দিন বলা যেতে পারে। ওইদিন ভারতের মাটিতে পৌঁছেছেন মনে করে আমেরিকা মহাদেশের মাটিতে পা রাখেন নাবিক কলম্বাস ও তাঁর সঙ্গীসাথীরা। এরপর থেকেই, ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের মতো ইউরোপীয়রা ছুটে আসতে শুরু করল সদ্য আবিষ্কৃত এই মহাদেশে। স্থানীয় আদিবাসীদের একটু একটু করে সরিয়ে দিয়ে দখল করতে লাগল তাদের জমি। ইউরোপে অভাব ছিল প্রচুর পরিমাণে আবাদযোগ্য জমির। তাই, বিপুল পরিমাণে ফাঁকা আবাদী জমি পেয়ে যেন হাটে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেল তারা। শুরু হলো ব্যাপক কৃষিকাজ, কিন্তু বাড়ল স্থানীয়দের ওপর অত্যাচার। কিন্তু সমস্যা হলো উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো বিশাল দুটি মহাদেশের হাজার হাজার মাইল অনাবাদি জমি আবাদ করার মতো জনবল তাদের ছিল না। সেই সমস্যা সমাধানে আফ্রিকা থেকে লাখ লাখ কালো মানুষ ধরে আনা হলো কৃষি জমিতে কাজ করানোর জন্য। আফ্রিকা থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পার হয়ে আমেরিকায় দাস ধরে আনা হতো বলে ইতিহাসে তা পরিচিত ‘ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেড’ হিসাবে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479521413.jpg
◤ দাস ব্যবসার ঘৃণিত ও ভয়াবহতম রূপ দেখা গিয়েছে ‘ট্রান্স আটলান্টিক স্লেভ ট্রেড’-এ ◢


ইউরোপ থেকে দাসভর্তি প্রথম জাহাজটি আমেরিকায় পৌঁছায় ১৫০২ সালে। সেটি ছিল এক স্প্যানিশ জাহাজ। শুরুর দিকে দাস ব্যবসা পুরোপুরি ছিল পর্তুগিজ এবং স্প্যানিশদের হাতে। সময়ের সাথে সাথে সমানতালে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও ফ্রান্স। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে আরম্ভ হওয়া দাস ব্যবসা উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ধরে চলতে থাকে। এই সময়ে দাস বানিয়ে ধরে আনা হয়েছিল আফ্রিকার প্রায় দেড় কোটি থেকে দুই কোটির মতো নারী, পুরুষ ও শিশুকে। যাদের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগই মারা পড়েছিল সমুদ্র পথে নিয়ে আসার সময়, তাদের ওপর করা অত্যাচারে কিংবা ক্ষুৎপিপাসা ও রোগ শোকে। প্রায় ৮০ লক্ষের মতো দাস আনা হয়েছিল শুধু ব্রাজিলেই। ৪০ লক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে। বাকিদের পাঠানো হয়েছিল হাইতি ও অন্যান্য ক্যারিবীয় দ্বীপগুলোতে।

মূলত দাস ব্যবসার কেন্দ্রস্থল ছিল পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল যেটা বিস্তৃত ছিল সেনেগাল থেকে অ্যাঙ্গোলা পর্যন্ত। দাস ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো ছিল বেনিন, টোগো এবং নাইজেরিয়ার পশ্চিম উপকূলে। তাই এলাকাগুলোকে স্লেভকোস্ট বা দাসের উপকূল বলা হতো। যুদ্ধবন্দী, অপরাধী, ঋণগ্রস্ত ও বিদ্রোহীদেরকে স্থানীয় আফ্রিকানদের কাছ থেকে দাস হিসেবে কিনে নিত ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষকেও দাস ব্যবসায়ীরা অপহরণ করে দাস হিসাবে বেচে দিত। মোট ৪৫টি ছোট বড় জাতিগোষ্ঠি থেকে দাস ধরে আনা হতো। এদের বেশিরভাগই ছিল আদিবাসী বা আফ্রিকার স্থানীয় সংস্কৃতির অনুসারী।

দাসদের ধরে আনা হতো জোর করে। তাই তাদের বাধ্য করার জন্য বিভিন্ন রকম অত্যাচার করা ছিল দাস ব্যবসায়ীদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তার ওপর বিপুল সংখ্যক মানুষ মারা পড়ত সমুদ্র পথে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময়। জাহাজগুলোতে খরচ বাঁচানোর জন্য গাদাগাদি করে মানুষ ওঠানো হতো। থাকত না স্যানিটেশনের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত খাবার। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিত হতো আমেরিকায় নিয়ে আসার পর। সেখানকার সিজনিং ক্যাম্পগুলোতে মারা পড়ত ডায়রিয়া ও আমাশয়ে প্রায় এক তৃতীয়াংশ দাস। অনেকে এই অপমানের গ্লানি থেকে বাঁচতে পালানোর সময় মারা পড়ত, কেউবা করত আত্মহত্যা। দাসরা বিবেচিত হতো প্রভুর সম্পত্তি হিসাবে। যদিও সুদূর অতীত থেকেই দাসপ্রথা চলে আসছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে, তবে কোথাও এর অমানবিকতা আমেরিকান দাসপ্রথাকে অতিক্রম করতে পারেনি। আমেরিকান ভূমি মালিকদের কাছে দাসরা ছিল কেবল কৃষি কাজের মাংসল যন্ত্র।

শিল্প বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ইউরোপীয় উপনিবেশগুলোর অর্থনীতি ছিল দাস নির্ভর। উত্তর আমেরিকার তুলা এবং ব্রাজিল ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের চিনি ছিল ইউরোপের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রধান অর্থকড়ি ফসল। ভারত থেকে আনা চা পান করার জন্য ক্যারিবীয় অঞ্চলের চিনির কদর তখন সারা ইউরোপ জুড়ে। চিনির বৈশ্বিক বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য তখন ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের মধ্যে তুমুল প্রতিযোগিতা। বলা হয়ে থেকে আমেরিকার কার্পাস তুলা থেকেই নাকি সূচনা হয়েছিল ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের। আর সেই তুলা থেকে বানানো সাদা কাপড়ের নীল জোগান দেওয়া হতো আমাদের দেশ থেকেই। সে আরেক নিষ্ঠুরতার ইতিহাস। তবে শিল্প বিপ্লবের পর থেকে দাস ব্যবসার অর্থনৈতিক আবেদন কমে যেতে থাকে। তাই উনবিংশ শতক থেকে বিভিন্ন জায়গায় দাবি উঠতে থাকে দাস প্রথা বিলোপ করার।

দাসপ্রথা উচ্ছেদে আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা

রাষ্ট্রীয়ভাবে দাস প্রথা সর্বপ্রথম বিলুপ্ত ঘোষণা করে ইংল্যন্ড ১৮০৭ সালে। তারপর একে একে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হতে থাকে দাস ব্যবসা। সর্বশেষ দেশ হিসাবে দাস ব্যবসা নিষিদ্ধ করেছিল ব্রাজিল ১৮৩০ সালে। তবে অবৈধ দাস ব্যবসা বন্ধ হতে ১৮৬০ এর দশক পর্যন্ত সময় লাগে। আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ও দাসপ্রথা গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ১৮৬১ সালে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরই আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে, দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে আমেরিকার উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলমান বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি ছিল এই গৃহযুদ্ধ। লিংকনের জন্য তখন চ্যালেঞ্জ—এই যুদ্ধ যত দ্রুত সম্ভব নিষ্পত্তি করা, কিন্তু প্রধান সমস্যাটি ছিল চাইলেই দাসপ্রথা দূর করতে পারতেন না তিনি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479550757.jpg
◤ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা উচ্ছেদে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ভূমিকা হয়ে আছে চির-স্মরণীয় ◢


শত শত বছর ধরে চলে আসা দাসপ্রথা আমেরিকার সংবিধান প্রণয়ণের সময় পৃষ্ঠপোষকতা পায় এবং লিংকনের আগে কোনো প্রেসিডেন্টই সংবিধান সংশোধনের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেননি। অন্যদিকে আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যের যেহেতু স্বাধীনতা রয়েছে নিজস্ব আইন প্রণয়নের, তাই ধীরে ধীরে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি রাজ্য থেকে দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘটে। কিন্তু কট্টর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উগ্র শ্বেতাঙ্গবাদ এত বেশি ছিল যে তারা দাসপ্রথা বিলুপ্তিতে কোনো ভূমিকা নেয়নি, যা এই গৃহযুদ্ধ সৃষ্টিতে প্রধান ভূমিকা রাখে।

গৃহযুদ্ধের শুরুর দিকে লিংকনের প্রাধান্য ছিল বিদ্রোহ দমন করা। তার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে এমনটিই প্রতীয়মান হয়। ৬ আগস্ট, ১৮৬১ সালে তিনি একটি আইন পাশ করেন যা পরিচিত ‘কনফিসকেশন অ্যাক্ট’ নামে। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্রোহে যারা সমর্থন জুগিয়েছিল তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। যেহেতু দাসদেরকেও সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হতো, তাই এই আইন পাশের এক বছরের মধ্যে দশ হাজারেরও বেশি দাস ছাড়া পায়। কিন্তু এসব দাসেরা তাদের মালিকের কাছ থেকে ছাড়া পেলেও তারা আদৌ মুক্ত ছিল কিনা এবং পরবর্তীতে অন্য কোনো মালিকের দাসে পরিণত হতে পারত কিনা তা এই আইন ব্যাখ্যা করতে পারেনি। তাই এই আইন তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু দাসপ্রথা বিলুপ্তিতে যে রাজনৈতিক সমর্থনের দরকার ছিল তা এটি আদায় করতে সক্ষম হয়।

তাই বলা যায় যে, যুদ্ধ যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছিল আব্রাহাম লিংকনের প্রভাব। প্রথমে তিনি শুধুমাত্র আমেরিকাকে একত্র করতে চাইলেও যখন তার কাছে সুযোগ এসেছে দাসদের মুক্ত করে এতদিনের ইচ্ছার বাস্তবায়ন করার, তিনি কাজে লাগিয়েছেন সেই সুযোগ। এই রাজনৈতিক দূরদর্শিতাই তাকে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। এভাবে, ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করা হয় দাসপ্রথা।

উপমহাদেশে দাসপ্রথা

দাসপ্রথা বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল এই বাংলা তথা উপমহাদেশেও। ১৮৬২ সালের হিসাবে আসামে ছিল ২৭,০০০ ও চট্টগ্রামে ছিল ১,২৫,০০০ দাস। দাম ছিল গড়ে কুড়ি টাকা। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দাস ছিল এখানকারই নিজস্ব অধিবাসী। কিছু বিদেশি ক্রীতদাসও আসত। কলকাতাতে প্রতিবছর আসত প্রায় ১০০ ভিনদেশি দাস। ১৮৩০ সালের এক সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, অযোধ্যার নবাব চড়া দামে কিনেছিলেন ৫ জন সুন্দরী বিদেশি মেয়ে আর ৭ জন ভিনদেশী পুরুষ। দাম পড়েছিল কুড়ি হাজার টাকা। পলাতক ক্রীতদাস ধরে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষণারও নজির রয়েছে অনেক। ব্রিটিশ ওয়ারেন হেস্টিংস তো রীতিমতো নিয়ম করে দিয়েছিলেন কোনো দাস কেনার সময় আদালতে রেজিস্ট্রি করাতে হবে। কলকাতায় এই ফি ছিল দাসপ্রতি ৪ টাকা ৪ আনা। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ দাসই হয় দুর্ভিক্ষের কারণে নিজেদের বিক্রি করে দিয়েছিল অথবা ছিল নিচু শ্রেণীর মানুষ, কিংবা ছেলে ধরার হাতে ধরা পড়া বাচ্চারা। বাংলার সুলতানেরা অবশ্য আফ্রিকা, তুর্কিস্তান, পারস্য আর চীন থেকেও কিনে আনাতেন দাস। ১৮৩০-এর শতকের শেষভাগে আফ্রিকা থেকে আনা ‘হাবসী’ আর ‘কাফ্রি’ ক্রীতদাসদের দাম ছিল সবচেয়ে বেশি। হিন্দু সমাজে টাকা দিয়ে কেনা দাসদের ডাকা হতো ‘ক্রীতদাস’ বা ‘দাস’ নামে আর মেয়ে ক্রীতদাসের নাম ছিল ‘দাসী’। মুসলিম সমাজে পুরুষ ক্রীতদাসদের নাম ছিল ‘গোলাম’ বা ‘নফর’ আর মেয়ে ক্রীতদাসের পরিচয় ছিল ‘বাঁদী’ নামে। তাছাড়া সুন্দরী বাঁদীদের দাম আর চাহিদাও বেশি। মহাজনদের দেনা শোধ করতে না পেরেও অসংখ্য মানুষ নিজেদের বিক্রি করে দিত দাস হিসেবে। সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম আর ঢাকা অঞ্চলে ১৮৩৯ সালের আইন কমিশনের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ওখানকার এক-পঞ্চমাংশ মানুষই ছিল ক্রীতদাস। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে এসে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধ হতে থাকে। আমাদের এই অঞ্চলে ১৮৪৩ সালের পাঁচ নম্বর অ্যাক্টের মধ্য দিয়ে ক্রীতদাস প্রথা বন্ধের পথটি সুগম হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/22/1566479583055.jpg
◤ দাসপ্রথা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হলেও বাস্তবে এখনো বিভিন্নরুপে মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যবহৃত হতে করা হচ্ছে বাধ্য ◢


‘দাসত্ব’ বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করা এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের ‘অস্থাবর সম্পত্তি’ হিসেবে গণ্য করা। এই দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ ব্যক্তিদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই স্থান বা মালিকানা পরিবর্তন হয়ে যায়। তাদের শ্রমের কোনো মজুরীও নেই। অতীতে কোনো কোনো সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করাও আইনসঙ্গত ছিল। সেইসব বর্বরতা থেকে মানবজাতি বেরিয়ে এসেছে। তবে ক্রীতদাস প্রথার যে আধুনিক রূপান্তর, দরকার তার থেকে মুক্তির উপায় বের করা। মানব-সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সুসভ্য জাতিগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোও সেই অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই। এই প্রেক্ষাপটে যে কোনো ধরনের দাসপ্রথাই যাতে জাতির সেই অগ্রযাত্রার পথকে কলঙ্কিত না করতে পারে, প্রত্যাশা হোক এমনটাই।

   

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;

খাবারের পর প্লেট ধোয়া কষ্ট? তাহলে এই কৌশল আপনার জন্য!



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

খাওয়ার বিষয়ে সবাই পটু। কিন্তু খাওয়ার পর থালা বাসন ধোয়াকে অনেকেই কষ্টকর কাজ মনে করেন। তাই দেখা যায় খাওয়ার পর অপরিষ্কার অবস্থায়ই থেকে যায় থালা বাসনগুলো। এবার এই কষ্ট কমাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন এক ব্যক্তি।

সম্প্রতি এমন এক ভিডিও নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি। 

হর্ষ গোয়েনকা নামে ভারতের এক শিল্পপতি তাঁর এক্স হ্যন্ডেলে (সাবেক টুইটার) ভিডিওটি শেয়ার করেন। এতে দেখা যায়, থালাবাসন পরিষ্কারের কাজ এড়াতে এক ব্যক্তি মজার এক কৌশল নিয়েছেন। এতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি খাবার রান্না করছেন। খাবার আগে তিনি প্লাস্টিক দিয়ে প্লেট, চামচ ও পানির গ্লাস মুড়িয়ে নিচ্ছেন।

শেয়ার করে তিনি মজাচ্ছলে লিখেছেন, "যখন আপনার থালা-বাসন ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানি থাকে না..."।

ভিডিওটি শেয়ার করার পর মুহূর্তেই সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি অনেক বিনোদনের জন্ম দিয়েছে। যদিও কেউ কেউ প্লাস্টিকের মোড়ককে হাস্যকর মনে করেন এবং এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

এক্স ব্যবহারকারী একজন লিখেছেন, 'পানি সংরক্ষণ ও পুনর্ব্যবহার করা হল মন্ত্র হল এমন কৌশল! তবে প্লাস্টিকের ব্যবহার নতুন করে ভাবাচ্ছে।'

অন্য একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, 'আমি আমার হোস্টেলের দিনগুলিতে এটি করেছি। আমাদের পানি সরবরাহ ছিল না এবং বারবার ধোয়ার কষ্টে এমন কৌশল নিয়েছি।'

আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘মনে হচ্ছে বেঙ্গালুরুতে পানি–সংকটের সমাধান হয়ে যাচ্ছে।’

;