অনলাইনে অপপ্রচার রোধই ছাত্রলীগের বড় চ্যালেঞ্জ: গোলাম রাব্বানী
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে অনলাইনে অপপ্রচার রোধ করাই ছাত্রলীগের বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এসব অপপ্রচার রোধ ও ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
বৃহস্পতিবার (৯ আগস্ট) বার্তা২৪.কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এই মুহূর্তে ছাত্রলীগের বড় চ্যালেঞ্জ অপপ্রচার রোধ করা। কারণ বর্তমানে রাজপথে ছাত্রলীগের একাধিপত্য। ছাত্রলীগকে কখনও কেউ দমিয়ে রাখতে পারেনি। এজন্য অপশক্তিগুলো অনলাইনে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই অপপ্রচার রোধে সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু সাইবার ব্রিগেড’ নামে সাইবার সেল ও একটি মিডিয়া সেল গঠন করা হবে। যেখানে সারাদেশের নেতাকর্মীদের যুক্ত করা হবে। দেশের ১৬ কোটি জনগণের মধ্যে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহার করেন। যাদের মধ্যে দুই কোটির বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করেন। তাই ছাত্রলীগের ৫০ লাখ নেতা-কর্মী এখন থেকে অনলাইনে অপপ্রচার রোধে কাজ করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রায়ই তথ্য ও কলম সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই ছাত্রলীগই জাতিকে স্বাধীন বাংলাদেশ, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উপহার দিয়েছে। অপপ্রচারকারীরা মনে করে, ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করা গেলে শেখ হাসিনার হাত দুর্বল হয়ে যাবে। আর তখনই তারা বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করবে। এজন্য সবসময় তাদের টার্গেট ছাত্রলীগ।’
এ সময় কারও প্ররোচণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগকে নিয়ে গৎবাঁধা সংবাদ পরিবেশন না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইমেজ রক্ষায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে বাবা-মা গর্ব করে বলতে পারেন তার ছেলে বা মেয়ে ছাত্রলীগ করে। এ জন্য আমাদের কিছু দায়বদ্ধতা আছে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে, চলার পথে আমাদেরও কিছু ভুল হয়। সেই ভুলগুলো কাটিয়ে আমরা ছাত্রলীগের হারানো গৌবর ফিরিয়ে আনবো। আমরা জাতিকে এমন এক ছাত্রলীগ উপহার দিতে চাই, যার নেতাকর্মীদের দেখে বয়স্করা বলবেন বেঁচে থাকো, এমন ছাত্রলীগই আমরা চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনে নির্বাচন, হাতে সময় কম। তাই ছাত্রলীগ যে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে সেটা সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে, বুঝাতে হবে।’
সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘নেত্রী আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছেন, এ জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা চেষ্টা করবো তিনি আমাদেরকে যে আমানত রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন, তা যথাযথভাবে পালন করার।’
তিনি বলেন, ‘যারা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে নেতা হতে পারেননি, তারাও যৌক্তিক প্রয়োজনে ও মানুষের অধিকার আদায়ে সব সময় বন্ধুর মতো আমাদের পাশে থাকবে। তারাও আমাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নানার বাড়িতে থেকে বড় হয়েছি। ছোটবেলায় নানা আমাকে কোলে নিয়ে উঠানে হাঁটতে হাঁটতে বঙ্গবন্ধুর নীতি, উদারতা ও সাহসিকতা এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনাতেন। নানার মুখে বঙ্গবন্ধুর কথা শুনে তার প্রতি আমি আকৃষ্ট হই। যখনই জানতে পারি ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্র সংগঠন, তখন থেকেই আমি ছাত্রলীগ করি। এখনও পর্যন্ত যতো গৌরবান্বিত আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, তার সম্মুখভাগে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। তাই আমাদেরকেই ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাসকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে।’
মাঝে ছাত্রলীগ নিজ আদর্শ থেকে কিছুটা বিচ্যুত হয়েছিল স্বীকার করে গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমরা মনে করছি, ছাত্রলীগকে অতীতের চেয়ে বহুগুণ ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্যই সভানেত্রী আমাদের হাতে দায়িত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, কিন্তু আমাদের সময় কম, কাজ বেশি। তবে বর্তমান কমিটি সব নেতাকর্মীর যোগ্যতা মূল্যায়ন করবে।’
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সংগঠনের মধ্যে যদি কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠে তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নেতাকর্মীদের মতামত নেবো, যেখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। এই চর্চা কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত নিশ্চিত করা হবে। তবে নেতাকর্মীদের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য একটি আর্থিক ফান্ড গঠনের ইচ্ছা আছে। সেই ফান্ড থেকে দুর্ঘটনায় আহত এবং দরিদ্র ও মেধাবী নেতাকর্মীদের বৃত্তি দেওয়া হবে।’
ডাকসু নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হলে তিনি ডাকসুসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিপি ও জিএস নির্বাচন উপহার দেবেন।’