দুর্নিবার সুজনের গুচ্ছকবিতা



দুর্নিবার সুজন
অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ

  • Font increase
  • Font Decrease

পৃথিবীর পিঠে বসে

চুম্বকীয় আকর্ষণ বিকর্ষণেই অভিকর্ষ-বল আমাকে নক্ষত্রদের দিকে
টানে না। পৃথিবী একটা বর্তুলাকার চুম্বক হয়ে প্রদক্ষিণ করে তোমাকে
নিয়ে। পৃথিবীর পিঠে বসে, তুমি আমিও জড়িয়ে থেকে কিংবা দূরত্ব
নিয়ে ঘুরি একই কক্ষপথে। পিঁপড়েদের কক্ষপথ একই হলেও কে কার
ভাষা বোঝে বলো! সকালের ব্রেকফাস্টে ব্ল্যাক কফি বানাতে গেলে
দেখি, চিনির বয়ামে হাজারো পিঁপড়া তাদের খাবার নিয়ে মত্ত।

ডাস্টবিন থেকে ছয়জন পিঁপড়া একটা ভাত নিয়ে উঠে যাচ্ছে পাইপ
বেয়ে। তাদের প্রতি আমার মায়া লাগে। তাদের যুথবদ্ধ চলাচল দেখি,
তাদের চুরি দেখি, ঘুষ দেওয়া দেখি, দুর্বলের প্রতি অত্যাচার দেখি
কর্মী পিঁপড়েদের নিরন্তর সংগ্রাম দেখি, পুরুষ পিঁপড়েদের অলস
বসে থাকা দেখি। ঘোর নিয়ে দেখি তাদের আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম।
অতঃপর আমি, আমি হয়ে যাই; খুনী হয়ে যাই! ব্ল্যাক কফি বানানোর
সংগ্রামে শত পিঁপড়েকে ভাসিয়ে দেই পানিতে। মৃত পিঁপড়েদের শরীর
ড্রেন বেয়ে চলে যায় তাদের নিজস্ব কবরে, সৎকারহীন!

তাদের সন্মিলিত শোকের ভাষা আমার বোঝা হয় না। তাদের সন্মিলিত গালি
মানুষ জাতের প্রতি আমি বুঝতে পারি না। তারাও কি একে অন্যকে
ধর্ষণ করে, খুন করে বলে‘আহা, কী মানবিক অত্যাচার!’

মৌমাছি, উঁইপোকা, মশা, ছারপোকা, ভীমরুল, তেলাপোকাদের সাথে
সহবাসে আমি প্রায়ই খুনি হয়ে যাই, আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে যাই।
সবার উপরে মানুষ সত্য হয়ে যাই! আমার প্রবৃত্তিতে আছে নিজেকে
শ্রেষ্ঠ বলার প্রবণতা। তাই আমি আর সব প্রাণীদের ভালোবাসার মহত্ত্ব
দেখাই; ভালোবেসে খেয়ে ফেলি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল সব। ঘৃণায়
মেরে ফেলি ছারপোকা, তেলাপোকা! তারপর আমি অহিংসবাদী হয়ে যাই!
আমি মহত্ত্বকে ছুঁতে চাই। মুরগি না খেলে আমাকে পাঙ্গাস, রুই খেতে হয়
তার চেয়ে বেশি অহিংস হলে কচকচে পুঁই ডাঁটাদের, লাউ ডাঁটাদের
সন্মিলিত ক্রন্দনে, বিরহে জগদীশ বসু উদ্ভিদের প্রাণে সংগীতের খোঁজ পায়।
তাদের ড্যান্স-ফেস্টে যে সংগীত বাজে তার ভাষা না বুঝে
পার করে দিচ্ছি একটা জীবন!

প্রিয় মাকড়সা,
তোর অদ্ভুত ঘরের মতো আমার ঘরও কি তোর কাছে অদ্ভুত লাগে?
এতসব অট্টালিকায় তুই সবখানে শুনতে পাশ কি মানুষদের শীৎকার,
চিৎকার? লোভ, ঘৃণা, হিংসা, ভয়? তুই আমার সব কথা বুঝিস?
বুঝিস, আমার দ্বিচারি চরিত্র? আমি মানুষ; আমি এরকমই। আমি আমার
প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগারে বন্দী! আমি বুঝতে পারি,
চুম্বকীয় আকর্ষণ বিকর্ষণেই অভিকর্ষ-বল আমাকে নক্ষত্রদের দিকে টানে না!

কোলাজ গল্প - ৪

তুমি আমাকে পাত্তা না দিলে একটা নিরুদ্দেশের নিঃসঙ্গ বিবাগী নৌকায়
বেড়িয়ে পড়ব। পরিবারকে, সমাজকে, দলকে, দেশকে ভালোবেসেছি
অনেক। সময়ে এরা সকলেই পরিচয়ের হিংস্রতায় উগ্র হয়ে ওঠে দ্বেষ যেন
মানব-প্রবৃত্তির মজ্জায়, এসবে রাজনীতি নির্মোহ, নির্লিপ্ত, নিশ্চল;
ফ্রয়েড আইনস্টাইনকে চিঠি লিখল অসহায়ত্বের। বিবেকহীন প্রবৃত্তির
প্রতিষেধক নেই; যুদ্ধ অনিবার্য; জাতি সাম্রাজ্যের ভেদ রেখার লাগাম
কে টানবে! তাই যুদ্ধ তোমার আমারও; সহবাসে, মতবাদে-মতভেদে
আইডেন্টিটিকে ছুড়ে ফেলে অহিংসার গঙ্গাস্নান নিই চলো।

আহা, বীর্যময় গঙ্গা। আহা, মহাভারত! গঙ্গাকেও বিয়ে করলো শিব!
কপোতাক্ষ আর ব্রহ্মপুত্র নদ গঙ্গার মানবায়নে ক্ষেপে ওঠেনি কি?
ব্রহ্মপুত্রের ক্রাশ ছিল গঙ্গা? সেই থেকে নদী ও মানুষের দ্বন্দ্ব?
পাড়ভাঙ্গা মানুষের আহাজারিতে শিবের লাম্পট্যের বিরুদ্ধে লড়াই নেই!
অবিবাহে-বিবাহের পুনঃপৌনকিতায় শিব জড়িয়েছেন প্রফেটাইজ কবি যিশু মুহাম্মদে
তিনি যাচ্ছেন কুম্ভমেলায়; নাঙ্গাসাধুর ঘামের ঘ্রাণেই মোদিজির
আতর কারখানার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে রিলায়েন্স! গুজরাট ছড়িয়ে পড়ছে
কানেকটিকাটে। উন্মাদ তরুণের মুহুর্মুহু গুলিতে নিউটাউন স্কুলের
অর্ধশত শিশু নিহত। ওবামা গেছেন সান্ত্বনার মণ্ডা নিয়ে। পাশেই গুজরাটি
গ্রোসারিতে গান্ধীজির নিকুচি করছেন মোদির বেনিয়া সাঙ্গত। অহিংসার
পক্ষ নিলে হিংস্রভাবে আমার মুসলমানিত্বে আঘাত দিলেন। সেদিন খৎনা
শিশ্নের শিরদাঁড়া কেঁপে কেঁপে উঠলে ড্যানভারি যুদ্ধের গাজী হয়ে সিরিয়ায়
হিজরত করতাম। আইসিস ভাইদের গনিমতে ঝাল মিটত লাফাঙ্গা শিশ্নের।
আহা আইডেন্টিটি!

দেশকে ভালোবসি; তবু দেশগুলো সব উগ্র স্বাদেশিক।
গ্রামকে ভালোবাসি; তবু গ্রামান্ধ মারামারি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
ধর্মকে ভালোবাসি; তথাপি ধর্মান্ধ হিংস্র নখর মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে চলেছে
এ শতাব্দীতেও! দলকে ভালোবাসি; তবু আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্বের অন্তর্ঘাত বধ
করে রাজনীতির মূলমন্ত্র। মানুষকে ভালোবাসি; যদিও মানবিক হিংস্রতা আর
অহং ভড়ংয়ের ‘পাশবিক’ গালিতে লজ্জা পাই। পৃথিবীকে ভালোবাসি;
তিনিও ছায়াপথ-চ্যুতিতে চুর্ণ বিচুর্ণ মানুষের ইমারতের মণ্ড নিয়ে পৌঁছে যাবেন
কৃষ্ণগহব্বরে।

কেয়ামত সে কেয়ামত!
তুমিই আমার সাধনভজন প্রিয়,
চলো নৌকায় উঠি, নুহের নৌকা বাঁধা রাখা ঘাটে।

মুহূর্ত

মুহূর্তবাদী হতে হলে মুহূর্তকে কামড়ে কামড়ে আস্বাদন নিতে হবে।
খেতে হবে মুহূর্তের নীল গরল কামড়!
ভাবো, মুহূর্তের জন্য বাঁঁচছো তুমি। এরপর হয়তো কিছু থাকবে না;
কোনো কল্পিত স্বর্গ কি নরক। নীল সাগরের কুয়াশা মিলিয়ে যাবে দিগন্তে।
ভাবো, মানুষের প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগার ভেঙে দেবে মনোবিজ্ঞানের
কোনো আবিষ্কার। লোভ, ঘৃণা, হিংসা থাকবে না কোথাও। ভেদাভেদ
থাকবে না ধর্ম,বর্ণ, ভাষা, পেশা, ধনী, গরিব, উচ্চ, নীচ কোনো কিছুরই।
সম্পত্তি-লিপ্সা, ক্ষমতানুরাগ, খ্যাতিলিপ্সা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুই থাকবে না।
পরিচয়ের হিংসা থেকে, জীবনের ক্ষুধা থেকে খাদ্য আহরণে অপরাপর
প্রাণী ও উদ্ভিদের অনিবার্য হত্যার পাপ থেকে নিস্তার পাবে মানুষ। ভাবো;
যা ঈশ্বরও ভাবেনি, সে মুহূর্তটির কল্পনা কত সুন্দর! ভাবো প্রিয়তম
তুমি আমার চেয়েও অনেক বেশি পৃথিবীর ছিলে!

তোমার অনুভুতিগুলি দিয়ে তালপিঠা, ঝালপিঠা আর ফ্রুট কেক বানিয়ে
খেয়ে ফেলতে পারি। তোমার নিশানাকে নিশিন্দা তিতার মতো লাগছে!
পৃথিবীর নিশীথে মুহূর্ত থেমে গেলে একটা কালো শূন্যতার গর্তে পড়ে যাবে
তুমিও! এত বৃষ্টি এই অন্ধকারে অনেক জীবনের শব্দ এখানে বৃষ্টির মতো
পড়ে যাচ্ছে, স্রোত হয়ে ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রে।
পৃথিবীর সূর্যকে কোন কক্ষপথে পাঠালে ভিন্ন ছায়াপথের সূর্যদের সাথে
হলুদ প্রেমের ঘষাঘষি করবে না! হে সূর্য, জ্বলে যাচ্ছো তুমি।
জ্বালিয়ে যাচ্ছো লোকালয়, বিরাণ প্রান্তর। তোমার তেজ আরেকটু
বাড়িয়ে এন্টার্কটিকা, হিমালয় আর আল্পস গলিয়ে সব নদীকে এক করে
সব সমুদ্রকে এক করে একক জলজ পৃথিবী বানিয়ে থৈ থৈ ঢেউয়ে
ঢেউয়ে সব প্রাণীদের ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারো; অনন্ত নির্বাণের ঘুম।

ডেড সি’র মতো একটা একক মৃত সাগর পড়ে থাকবে পৃথিবী হয়ে!
একটা পৃথিবীময় বজ্রপাতের আলো দিনের আলোর চেয়েও বেশি
আলো দিতে পারে। ভিন্ন নক্ষত্রের ভিন্ন গ্রহে চলে যেতে পারলে ৩৬০
ডিগ্রি ক্যামেরার সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে ছেড়ে আসা একটা ব্যর্থ
খেয়োখেয়ি পৃথিবীর সিনেমা বানিয়ে একটা করুণ সুর জড়িয়ে দিতাম!
যে মুহূর্তে এই কল্পনা, স্বপ্ন, উদগ্র প্রত্যাশায় মেতে থাকছি এটিই আমার
সেরা মুহুর্ত। আমি মুহুর্তবাদী।

আমার মতে নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে মানুষের সব প্রত্যাশা, চেষ্টা, সব।
অতএব কল্লনা করে হলেও মুহূর্তের জন্য বাঁচো।

বৃক্ষদের কনসার্টে

পৃথিবীই প্রবাসক্ষেত্র। সকলেই
অভিবাসী। অভিযোজনের বেগে বেড়ে উঠি।
হাওয়ার তালে পাল টেনে রাখি। তবুও
প্রবল ঝড়ে উলটে যায় নৌকা। ধানের
সোনালি ক্ষেত ভিজে বেঁকে দোলে..
নদীর কিনারায় সোনালু গাছে ফিঙ্গে
কেঁপে যায়। আহা শীত! আষাঢ়ের ভিজে
বিকেলের টুপটুপ ঝরে পড়া শীত।

এমন ঘটনাও ঘটে যাবে; পুরাঘটিত
কালের ইতিহাসে, যাইতেছির কালে
প্রবাহিত বাতাসের স্রোতে হৈ হৈ
আনন্দরবে তুমিরাও ছিলে। চরমপুলকের
ঘোরে অপার্থিব স্বর্গকে ডেকে আনি
সমাজের সংসদে। ধর্মঘোরের শব্দরে
সংগীতে নামাই। হু হু বাতাস বইছে
হাওয়ার রাতে। ঝিলপাড়ের বৃক্ষদের
কর্নসাট বসিয়ে দিই এক্সপেরিমেন্টাল
কিংবা ক্লাসিকাল ড্যান্স-ফেস্টে।

সেখানে পাতা-প্রপাতাদের নৃত্যমুদ্রার
পুরস্কারে মোহর তুলে দেবেন
বিশেষ অতিথি আবুল মাল!

এতসব ইনভিজিবল সিনেমাটোগ্রাফির
রেকর্ড বর্জ্যে ব্ল্যাকহোল ভরে গেলে
নতুন গ্রহ নক্ষত্রের সিনেমার কাজে
নেমে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণাকারী
আমিই আগামী পার্লামেন্টে স্বতন্ত্র
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।

হঠাৎ শেখ হাসিনা বুঝলেন পরম্পরায়
মহামানবদেরই প্রধানমন্ত্রী হতে হয়!
তিনি তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে
আমাকে সমর্থন জানালেন।

পড়ে দেখবেন। ‘আমার ইস্তেহার’
আসছে বাজারে!

প্রধানমন্ত্রীর ট্রাডিশনাল শপথের
সাথে সংগোপন শপথ হবে
‘আমি শপথ করিতেছি যে,
আমি বিশ্বসরকার আর বিশ্বনাগরিক গঠন
আন্দোলনে সারা পৃথিবীকে কমরেড
বানিয়ে তুলব আর পৃথিবীর
নাম দেব মাইগ্রেন্টল্যান্ড।

পরবর্তী শপথানুষ্ঠানে প্যালেস্টাইন, রোহিঙ্গা
আর সিরিয়ানদের সাথে হুগো, টুটসি,
জিউস, সাঁওতালি, মুরংদেরদের
মার্চপাস্টে আমাকে অভিবাদন জানাবে
রাশান, চাইনিজ, ব্রিটিশ, আমেরিকান
কিংবা জানাতে বাধ্য হবে নব্য আর্যরাও।
আই হ্যাভ এ ড্রিম, আই হেভ অডাসিটি!
প্লিজ ভোট ফর মি...

গাছগুলো সব রাগি চোখে তাকিয়ে আছে

হও, হয়ে যাও। গাও, গেয়ে ওঠো। হাসো উল্লাস করো। কড়া তামাকের
মিষ্টি ঘোর নাও হেসে ওঠো।

জ্যাক, ড্যানিয়েলকেও আসতে বলো। মার্গারিটার ককটেল পাওয়া গেলে
নিউজক্যাফের সংবাদ নিউজ হয়ে যায়। কফি হাউজে ধর্মঘট, কাটলেট
আর ফিস ফিঙ্গারের দাম দু টাকা বেড়েছে। ওয়েস্টগেটে বোমাহামলায়
দুজন ইন্ডিয়ান কেনিয়ান নিহত গাছগুলো সব রাগী চোখে তাকিয়ে আছে
মানুষগুলোর কামড়াকামড়ি আর পিঁপড়েমি একইরকম লাগছে।

সে দাঁড়িয়ে থাকে স্থির। কে যেন তাকে ভাবাচ্ছে তার শাখা-প্রশাখায়
পাতা-প্রপাতায় নৃতকম্পনের দোলা যৌনসাফল্যের স্বপ্ন তারও আছে।
নিন্দার কামিনী, নন্দনে নরম হয়ে ঘ্রাণের গভীর চেতনাটি দিয়ে যায়
মগজে। তোমার সমস্ত দ্যুতির আলোয় মাখামাখি হয়ে হাঁড়িয়া নাচন
দিই চা বাগানের হোলিতে।
ভালোবাসি।
তোমার লম্পঝম্প কোলে ওঠা শৃঙ্গারের অভিনয় কিংবা গভীর গোপন
মমতা দেখে ফ্যালে আকাশমণি। বৃক্ষতলে থাকা না থাকা সাপেদের ভয়ে
ভাই ভাই বলে হাঁক দিলে চুদিয়াপাতা ফণা তুলে লজ্জাবতীর বাগানে
হামলা করে। দশজন মল্লিকবংশীয় লজ্জা নিহত হন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে
পড়লে ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে ফোন দেয় জাস্টিন ট্রুডো।

লজ্জা চৌধুরী বংশের অধিকারের বিল পাশ করে ওবামা প্রশাসন। ওদিকে
সুন্দরবন আন্দোলনের নেতারা লজ্জা বংশের লজ্জাকে রোগ বলে ফতোয়া
দ্যায়। বনের ভারসাম্য নষ্টের অপরাধে ফরহাদ মজহার রক্তাত্ব সংগ্রামের
ডাক দিলে ওহাবিয়া বংশের সব কুড়াল, গ্রেনেড, ককটেল ক্ষেপে ওঠে
৫৩ জেলার বিস্ফোরণে মতিঝিল কেঁপে ওঠে
পুড়ে যায়, ফলত লুই আইকানের অনিন্দ্যসুন্দর বাস্টার্ড চাইল্ড একা হয়ে যায়!

‘মাই আর্কিটেক্ট’
উত্তরপাড়ায় ক্যাপিটাল চলে গেল!

তবুও; যা তাই হও, গাও, হাসো, উল্লাস করো
ভিজিবল, ইনভিজিবল সব মৌল-মিলিটারি শাসন ধ্বসে যাবে কালে।

সবকিছু বোঝা যাচ্ছে

চারদিক থেকে শব্দ আসছে নগরের বারান্দায়। কানকুহরের পথে মগজ কাঁপানো
ঝিরঝির। কথা বলে যাচ্ছে সবাই, গেয়ে যাচ্ছে সবাই; মানুষ, বৃক্ষ, কীটপতঙ্গ সবাই।
শব্দকে বাক্য বানিয়ে সুরেলা হাওয়ার তালে কারা যে কোরাস গায়! একটা গভীর
স্তরে যেয়ে ভাবা যায়; তুমি কে? আমি কে? একটা অন্যরকম বাস্তব পৃথিবীতে
আমাদের লেনদেন।

তাই, ‘হাতে নাইরে কড়াকড়ি’ গায় তারা। সবকিছু বুঝে ফেলি আমি; বুঝতেও কষ্ট
হয় মাঝেমাঝে। হাসাহাসির চিলেকোঠা ছেড়ে গম্ভীর হয়ে চলে যাওয়া যায় বাহিরের
পৃথিবীতে। সেখানেও অনেক বৃক্ষদের দাঁড়িয়ে থাকায়, অনেক পিঁপড়েদের চলাচলে
অনেক মশাদের ওড়াউড়িতে আছে হাসাহাসি, বিরহ রোদন।

যদিও পৃথিবীর গতির মতো নয় কারো গতি। সবকিছু এত ধীরভাবে চলে। ধীর হয়ে
গেলে তাড়াহুড়ো থাকে না। দোকানি সিগারেট না দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখলেও
রাগ লাগে না। একটা পাঁচশো সত্তর সাবান চাচ্ছে লোকটা ৪৩ বছর ধরে!

একজন জাতির পিতার শোক বয়ে বেড়াচ্ছে একজন দিনমজুর। ভিক্ষুক রমিজার
স্বামী হাসমত আলীও বঙ্গবন্ধু কন্যার নামে জমি কিনে মরে যায়!
এখনো উদাসীন মানুষেরা হাওয়ায় পুরনো প্রেমিকার প্রেত হয়ে ওড়া দেখে হাসে
রমেশের মতো। রমেশের ভালোবাসার বৃক্ষটি তার জন্য কাঁদে, মানুষের জন্য কাঁদে।
আর বাকি মানুষেরা বৃক্ষটিকে কেটে নিয়ে করাতে দেবে একদিন! কার ঘরের
আসবাব হবে সে কে জানে! আসবাবকে কেউ কি ভালোবাসে প্রেমিকার মতো?

শুনেছি, একটা ট্রাককে ভালোবাসে একজন কবি। ট্রাক দেখলেই নাকি তার শিশ্ন
উত্থিত হয়! বটগাছ দেখলেই আরেকজনের বিশ্বচরাচর লুপ্ত হয়ে ঘোরপ্রেম আসে।
পৃথিবীর মানুষেরা তাদের অন্ধরাহুর মতো ভাবে। কোনো নর নরকেও ভালোবাসে
কোনো নারী নারীকে। কোনো ক্লীব সমান্তরাল জীবনের ক্লেদ নিয়ে ইশ্বরকে ছুঁড়ে
দ্যায় প্রশ্নবাণ!

তবু তারা তো এরকমই! প্রচল ভাবনার বাইরের মানুষেরা, প্রাণীরা, বৃক্ষেরাও বেঁচে
বেঁচে মরে যায়! চর-ভৈরবী ঘাটে কত কত ইলিশ শেষ কান্না কেঁদে মরে গেছে, দেখেছি।
পৃথিবীর কোন গুদারাঘাটে, কোন বন্দরে যাচ্ছো তুমি? এডেন, মোম্বাসা, হেরাক্লিয়ন
না আলেকজান্দ্রিয়ায়? সবাই সবার মতো জীবন চালিয়ে যাচ্ছে, তবু সবাই সবাইকে
টিটকারি দিচ্ছে! যুগ যুগ ধরে এরকমই চিরায়ত জীবন!

পৃথিবী একটা মহাশূন্য-যানের মতো প্রবল গতিতে ভেসে যাচ্ছে। প্রতিদিন একবার
প্রদক্ষিণ করছে সে সূর্যকে। একটা বিশাল গোল মহাশূন্য-যান উড়ছে; যার চতুর্দিকে
মানুষ অন্যান্য প্রাণীকুল ও তৃণ-বৃক্ষেরা।

এত গতির মধ্যে মানুষেরাও নিজস্ব গতিতে কিলবিল করে কেঁচোদের মতো।
জানে না কেঁচোরাও গান করে নেচেনেচে তাদের সংসারে। কি সুন্দর পৃথিবী!
অদৃশ্য চিত্রগ্রাহক হয়ে তুমি এর সব মুহূর্ত রেকর্ড করে রাখতে পারো৷ মুহূর্ত
এগিয়ে যাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে। মানুষের মনে কত কত মুহূর্ত গেঁথে যাচ্ছে। পৃথিবীর
গঞ্জগুলো অনেক বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে শহর থেকে নগর মহানগর হয়ে
গেছে, যাচ্ছে, চারদিক থেকে শব্দ আসছে।

   

দুই দেশের রং মিলেছে এক দেয়ালে



মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

রংয়ের শহর, হাসির শহর ব্যাংকক। দুনিয়ারসবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা শহর ব্যাংকক। ব্যাংককের প্রাণকেন্দ্র সিয়ামেই রয়েছে ব্যাংকক র্আট এন্ড কালচারাল সেন্টার (বিএসিসি)। বাংলাদেশ থেকে যারা ব্যাংককে বেড়াতে যান, তারা যদি এমবিকে মলের পাশ দিয়ে স্কাই ওয়াক হয়ে তৃতীয় তলায় প্রবেশ করেন তাহলে হাতের ডানে চোখ ফেললেই দেখতে পাবেন বাংলাদেশের রংয়ের খেলা আর জীবনযাত্রার চিত্র।

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে গত ২৬ র্মাচ থেকে ব্যাংককের র্আট এন্ড কালচারাল সেন্টারে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও থাই চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘ড্রীম অব কালারস’ বা ‘রংয়ের স্বপ্ন’ র্শীষক চিত্র প্রর্দশনী। ‘কানেক্টিং টু ল্যান্ডস এন্ড টুপিপলস’স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের নিমিত্তেই এই আয়োজন।


তৃতীয় তলার করিডোর ধরে হাঁটতেই চোখে পড়বে শিল্পী মুস্তাফিজুল হকের নিহঙ্গ। ওয়াসি পেপারের ওপর জাপানি ধরনের চিত্রকর্মের জন্য প্রসিদ্ধ তিনি। ক্যানভাসের ওপর আর্কিলিকের চিত্রকর্ম ‘হর্স’ মনযোগ আকর্ষন করছিল দর্শনার্থীদের। তার চিত্রকর্মের বড় বৈশিষ্ঠ নাটকীয়তা এবং বিষয়ের গভীর উপস্থিতি।

নগরের জীবনযাত্রার প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে শিল্পী কামাল উদ্দিনের জুড়ি নেই। তবে এখানে ব্যক্তির প্রোট্রেট নয় বরং পেস্টেলে তবলার রং ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।

আবার থামাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলার শিক্ষক খাজোনসাক মাহাকুন্নাওয়ানের তুলিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের নগরের জীবন। রিকশার সঙ্গে যাত্রীদের ছুটে চলা। সময়কে যেন পাশ কাটিয়ে ছুটে চলছে তার চিত্রকর্ম।


ঢাকার গ্যালারি চিত্রকের ১৮ জন শিল্পী এবং থামাসাত ইউনিভার্সিটির ফাইন এন্ড এপ্লাইড আর্টস বিভাগের ৪ জন শিল্পীর যৌথ অংশগ্রহণে চলছে এই আয়োজন। চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। গত ২৬ মার্চ চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন থাইল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহা. আব্দুল হাই।

চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, দুটি দেশের ভূমি আর মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে এনেছে এই আয়োজন। চিত্রকর্মের মাধ্যমে যে যোগাযোগ সেটা শুধু বাহ্যিক নয়, বরং আত্মার যোগাযোগ। শুধু দেশকে চেনায় না, বরং সেখানকার জীবনযাত্রার ধারণা দেয়, মানুষকে কাছে নিয়ে আসে।


ব্যাংককের বাংলাদেশ দূতাবাসের এই চিত্রপ্রদর্শনীতে রফিকুন্নবী, আব্দুস সাকুর শাহ, সৈয়দ আবুল বার্ক আলভি, শেখ আফজাল, মাহফুজুর রহমান, সুমনা হক, মুনিরুজ্জামান, জহির উদ্দিন, কনক চাপা চাকমা, বিপাশা হায়াত, মোহাম্মদ ইউনুস, সুলেখা চৌধুরী, রেজাউন নবী, কামাল উদ্দিন, পারভীন জামান, সুমন ওয়াহিদ, মোস্তাফিজুল হক, আহমেদ সামসুদ্দোহার চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে।

এছাড়াও থাইল্যান্ডের চিত্রশিল্পী খাওজনসাক মাহাকুন্নাওয়ান, ওয়ারাপান সামপাও, জিরাতচায়া ওয়ানচান, প্রারুনরপ প্রিউসোপির চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে।

ব্যাংকক আর্ট এন্ড কালচারাল সেন্টারে সকাল থেকেই বিভিন্ন বয়সী শিল্প প্রিয় মানুষের আনাগোনা থাকে। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারছেন দর্শনার্থীরা।

;

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান



ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম
মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান

  • Font increase
  • Font Decrease

ইতিহাসবিদ-দার্শনিক মুঈন উদ-দীন আহমদ খান জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চায় নিমগ্ন এক মনীষীর নাম। বাংলাদেশের বিদ্যাবৃত্তে ক্লাসিক্যাল চরিত্রের শেষ দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) ৩য় মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। 

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান (১৮ এপ্রিল, ১৯২৫-২৮ মার্চ, ২০২১) নির্জলা তথ্যভিত্তিক ইতিহাসের খোঁজে সুদীর্ঘ জীবনব্যাপী জ্ঞানচর্চার কষ্টসাধ্য দিনগুলো অতিবাহিত করেন নি। তিনি মনে করতেন, ইতিহাসের সত্য সন্ধান শুধু তথ্য আর যুক্তি ভিত্তিক নয়। প্রকৃত ইতিহাস মূলত ইতিহাসের দর্শন, ইতিহাসের পুনর্গঠন, কল্পনা, সমকালীন পর্যালোচনা ও ইনটুইশনের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাঁর সান্নিধ্যে এলে সবাই এই সত্য টের পেতেন যে, ইতিহাস প্রধানত দর্শন ও সাহিত্যের সমধর্মীতায় বর্তমানের জ্ঞানতাত্ত্বিক ও বাস্তবতা ভিত্তিক সমস্যাগুলোকে বিশ্লেষণের এবং দিকনির্দেশনা দেওয়ার অপরিহার্য মাধ্যম। তাঁর স্বকীয় চিন্তার দ্যুতিতে তিনি বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা চর্চা ও গবেষণায় একটি বিশিষ্ট ধারার প্রতিভূ রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এবং একটি পুরো জীবন সম্পূর্ণভাবে বিদ্যাচর্চার ধ্যানজ্ঞানে যাপন করেছেন। আর চট্টগ্রামের নিরিখে তিনি ছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাচর্চা কাঠামোর আদি নির্মাতাদের অন্যতম। যেমনভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র ড. আবদুল করিম ছিলেন ইতিহাসচর্চার প্রতিষ্ঠাতা, প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ইংরেজির, ড. আর. আই চৌধুরী রাজনীতি বিজ্ঞানের, তেমনিভাবে তিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোবদ্ধ বিদ্যাচর্চা ধারার সূচনাকারী। চট্টগ্রামের আধুনিক উচ্চশিক্ষা বিস্তারের আদি মুঘলদের একজন ছিলেন তিনি।  

তিনি ছিলেন আড়ম্বরহীন জ্ঞানসাধক। নিজস্ব বিদ্যাবলয়ের বাইরে তাঁর কোনও আত্মপ্রচার বা আত্মগরিমা ছিল না। যদিও তাঁর জ্ঞানের পরিধি ও গভীরতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়ার মতো যোগ্য লোকের সংখ্যা তাঁর আশেপাশে খুব বেশি ছিল না, তথাটি যারা তাঁর রচনা খেয়াল করে পড়েছেন এবং তাঁর সঙ্গে শ্রেণিকক্ষে কিংবা অনানুষ্ঠানিক পরিসরে আলাপ, আলোচনা, সংলাপ ও বিতর্কের সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানতেন, কত ভাষা, কত বিষয়, কত তত্ত্ব ও তথ্যাদি সম্পর্কে অনায়াস দক্ষতা ও পা-িত্য ছিল প্রাচ্যদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তের এই জ্ঞানতাপসের। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী চুনতী গ্রামের আদিবাস আর পুরনো চট্টগ্রাম শহরের রুমঘাটা থেকে এই মান্যবর জ্ঞানবৃদ্ধের কাছ থেকে বিচ্যুরিত দীপ্তি কিছু কিছু অনুভব স্পর্শ করেছে দেশে-বিদেশে তাঁর কর্ম ও গবেষণা ক্ষেত্র এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

তাঁর জ্ঞান, গবেষণা, মনীষা, বুদ্ধির দীপ্তি, বহু ভাষায় পারঙ্গমতা তাঁর সমকালে অন্য কারও মধ্যে বিশেষ পরিলক্ষিত হয় নি। বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চায় প্রবাদপ্রতীম ড. আহমদ হাসান দানি যে তিনজন ছাত্রকে গবেষণায় প্রণোদিত ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন, মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান তাঁদের একজন। অন্য দুইজন হলেন আবদুল করিম ও মোহর আলী। এই তিনজনই বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চায় সত্যিকারের মৌলিক অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে, মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান প্রাথমিক থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষাজীবনে প্রথম বিভাগ, স্বর্ণপদক, ফেলোশিপ ও বৃত্তি লাভ করেন একজন মেধাবী ছাত্র রূপে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক স্টাডিজে অনার্স ও মাস্টার্স করার পর তিনি মোটেই থেমে থাকেন নি। ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে কানাডার বিখ্যাত ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। ফিরে এসে খ্যাতনামা ইতিহাসবিদ ড. আহমদ হাসান দানির তত্ত্বাবধানে ‘ফরায়েজি আন্দোলন’ বিষয়ে পথপ্রদর্শনকারী পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেন। তারপর পোস্ট গ্রাজুয়েট ফেলোশিপ লাভ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলের ‘ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ’-এ রাজনীতি বিজ্ঞানের ‘সেমিনার ইন ফিল্ড ওয়ার্ক কোর্স’ অধ্যয়ন করেন। তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের প্রখ্যাত প-িত, ইসলামিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথের সান্নিধ্যে এসে বহুবিদ্যায় পারদর্শী হন। যে কারণে, পরবর্তী জীবনে তিনি ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাসকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন, বিজ্ঞান, বিশেষত এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্সের ক্ষেত্রেও নিজের অবদান রাখেন এবং তাঁর গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীদের ছাড়াও তাঁর মূল-বিষয়ের বাইরের লোকজনকেও প্রবলভাবে আকর্ষণ করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন নেতৃস্থানীয় শিক্ষক যথাক্রমে মর্শন বিভাগের প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান বদিউর রহমান এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন শব্বির আহমদ তাঁর অধীনে পিএউচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

গবেষণা তত্ত্বাবধানে তিনি ছিলেন প্রচ- রকমের শুদ্ধতাবাদী। একটি প্রকৃষ্ট গবেষণার জন্য ¯œাতকোত্তর ও এমফিল পর্যায়ের গবেষকদেরও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে নিয়োজিত করতেন, যাতে তারা ভবিষ্যতে গবেষক হিসাবে স্বাধীনভাবে কাজ করার দক্ষতা অর্জন করতে পারেন। তাঁর সাথে গবেষণার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ড. আফম খালিদ হোসেন জানিয়েছেন, “তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তাঁর অনুমোদন নিয়ে কলকাতা, লক্ষেœৗ, দিল্লি, তুঘলকাবাদ, করাচি, লাহোর, ইসলামাবাদ, মক্কা ও মদিনা সফর করি।” কোনও মতে একটি ডিগ্রি দিয়ে দেওয়ার অসৎ পন্থার বিপরীতে গবেষণাকে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যনির্ভর করতে তিনি ছিলেন একজন দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী শুদ্ধতম তত্ত্বাবধায়ক। শেষজীবনে তাঁর সঙ্গে বা পরামর্শে যারা গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন, তাদের মানস গঠনে ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নির্মাণে তিনি শ্রমবিমুখ ছিলেন না। ঘন্টার পর ঘণ্টা তিনি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা কিংবা বই-পুস্তক পর্যালোচনায় লিপ্ত হতেন। এমন চিত্র আমি নিজে তাঁর বাসভবনে উপস্থিত কালে লক্ষ্য করেছি। কখনও নবাগত গবেষকদের তিনি অন্যান্য শিক্ষক ও গবেষকদের কাছে পাঠাতেন। তাঁর রেফারেন্সে একাধিক তরুণ গবেষক আমার কাছে এসে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং তাঁর রেফারেন্সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরিতে কাজ করেছেন। একটি বস্তুনিষ্ঠ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ গবেষণা সম্পন্ন করতে তিনি তত্ত্বাবধায়ত ও প্রণোদনাদাতা রূপে ছিলেন নিরলস।   

কঠোর তথ্যনিষ্ঠা ও শুদ্ধতার প্রতিফলন ঘটেছে মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের প্রতিটি রচনায়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচিত তাঁর গবেষণা গ্রন্থ ও প্রবন্ধগুলো যে কারণে একই সাথে পাঠকপ্রিয় এবং অ্যাকাডেমিক জ্ঞান ভা-ারে মণি-মুক্তা তুল্য। তাঁর সবচেয়ে আলোচিত গ্রন্থ ‘হিস্ট্রি অব ফরায়েজি মুভমেন্ট ইন বেঙ্গল’ একটি পথিকৃৎ গবেষণা, যা ‘বাংলায় ফরায়েজি আন্দোলনের ইতিহাস’ নামে ইংরেজি থেকে অনূদিত হয়েছে। যে ফরায়েজি আন্দোলনকে ওয়াহাবি আন্দোলন বা তরিকা-ই-মুহাম্মদীয়া নামেই সবাই জানতো, তিনি তাঁর বহুমাত্রিক চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও প্রভাব গবেষণার মাধ্যমে উন্মোচিত করেন।  ফারায়েজি আন্দোলন যে কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলনেই সীমাবদ্ধ ছিল না, ছিল বাংলার মুসলমানদের রাজনৈতিক সচেতনতা, সামাজিক গতিশীলতা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রথম ও আদি প্রচেষ্টা, তিনিই সর্বপ্রথম তা প্রমাণ করেন। বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে উত্থিত এই আন্দোলনের গণমুখী চরিত্র, ঔপনিবেশিকবাদ বিরোধী বৈশিষ্ট্য, সামাজিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার বিরোধী মনোভাব এবং সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াকু মানসিকতার বিষয়াবলী তিনি ঐতিহাসিক তথ্য ও ধর্মতাত্ত্বিক মাত্রায় আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পটভূমিতে উপস্থাপন করেন। বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ ও বৃহৎ ক্যানভাসে গবেষণার কৃতিত্বে তিনি এই বিষয়ে এবং ঔপনিবেশিক বাংলার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস বিনির্মাণের পথিকৃৎ প্রাণিত স্বরূপে সর্বমহলে সম্মানীত হয়েছেন। 

পরবর্তীতে প্রকাশিত মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের গ্রন্থ ও প্রবন্ধে তিনি তাঁর মৌলিকত্বের ছাপ রেখেছেন। প্রতিটি লেখাতেই তিনি নিজস্ব চিন্তা ও বিশ্লেষণের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর লেখায় দর্শন, বিজ্ঞান, ধর্মতত্ত্ব, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস ইত্যাদি বহুবিদ্যার প্রকাশ ঘটেছে। শ্রেণিকক্ষের পাঠদান ও গবেষণার বাইরে তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাধারাকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত করার প্রয়াস। তিনি ছিলেন ধ্রুপদী দার্শনিকদের মতো সংলাপ-প্রবণ ব্যক্তিত্ব। কেউ আগ্রহী হলে কিংবা কারো প্রতি তিনি আগ্রহী হলে তাঁকে বা তাঁদেরকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হতেন। তিনি তথাকথিত অ্যাকাডেমিশিয়ানদের মতো বইয়ের পাতার শুকনো অক্ষরে বন্দি ছিলেন না, জ্ঞানবৃত্তের মানুষের সঙ্গে প্রাণবন্ত সংলাপ ও সংশ্লেষের মাধ্যমে সদা জীবন্ত ছিলেন। চট্টগ্রামে তো বটেই, বৃহৎ বঙ্গদেশে খুব কম সংখ্যক প-িতই এমন ছিলেন, যারা জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায় অন্যকে প্রণোদিত করার ক্ষমতা ধারণ করতেন। ঢাকায় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এবং চট্টগ্রামে ড. আবদুল করিম, ড. আর. আই. চৌধুরী ছাড়া কম প-িতই ছিলেন, যারা শিক্ষার্থীদের প্রাণিত করার ক্ষেত্রে মনীষী মুঈন উদ-দীন খানের সঙ্গে তুলনাযোগ্য।

জ্ঞানের সঞ্চার ও বিস্তারে তাঁর অসীম কষ্ট সহিষ্ণুতা, আগ্রহ ও বিনয় তাঁকে ক্লাসিক্যাল যুগের প্রাচীন জ্ঞানতাপসের আধুনিক প্রতিচ্ছবিতে পরিণত করেছিল। ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সান্নিধ্যে এসে আমি তা স্পষ্টভাবে অনুভব করি। আমি তাঁর সরাসরি ছাত্র ছিলাম না। এবং বয়সের দিক থেকে তিনি ছিলেন আমার চেয়ে কয়েক প্রজন্ম অগ্রগামী। তথাপি অশীতিপর বয়সে এসেও তিনি আমার কোনও লেখার প্রতি আগ্রহী হলে নিজে ফোন করে জানিয়েছেন। ডেকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বিষয়টিকে তত্ত্ব ও তথ্যগতভাবে আরও সমৃদ্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেসব আলোচনায় জ্ঞানতত্ত্ব ও তুলনামূলক দর্শন সম্পর্কে তাঁর অতলস্পর্শী পা-িতের দীপ্তিমান প্রভার আঁচ পাওয়ার বিরল সুযোগ আমার হয়েছে। আমি লক্ষ্য করে দেখেছিল, বহু তরুণকে তিনি গবেষণার দিক-নির্দেশনা ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিতে আগ্রহী ছিলেন। তাঁর মধ্যে পথ প্রদর্শনের একটি বিরল গুণ ছিল। আর ছিল জ্ঞানকে অকাতরে ছড়িয়ে দেওয়ার উদার মানসিকতা, যা আজকের অ্যাকাডেমিক প্রতিযোগিতার পঙ্কিল ও সঙ্কীর্ণমনা ধারার প্রেক্ষিতে অকল্পনীয় বিষয়। বড় মন ও মুক্ত মানসিকতার কারণে তিনি ‘বাংলাদেশের লিলিপুট প-িতদের সমাবেশে’ মহীরূহ-সম ব্যক্তিত্বে অধিষ্ঠিত হয়ে রয়েছেন।   

মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খানের মতো বিটপী ব্যক্তিত্বকে দৃশ্যপটে রেখে আজকের ক্ষুদ্রতর পরিসরে আলোচনা করা মোটেও সম্ভব নয়। কারণ, বর্তমানের ঊন-মানুষ ও ঊন-মানসিকতার পরিম-লে তাঁর মতো বড় মানুষের দেখা পাওয়াও দুষ্কর। তিনি এবং তাঁর সমগোত্রীয়রা শেষ মুঘলের মতো দৃশ্যপট থেকে চলে গিয়েছেন। কিন্তু রেখে গিয়েছেন ধ্রুপদী ঐতিহ্য, ব্যক্তিত্বের দীপ্তি ও বিভা। তিনি ছিলেন প্রথম প্রজন্মের আধুনিক বাঙালির হিন্দু ও মুসলিম নির্বিশেষে সকল অগ্রণী প-িত, গবেষক ও শিক্ষাব্রতীগণের শ্রেষ্ঠতম ও উজ্জ্বল প্রতিনিধি, যারা  জাগতিক প্রাপ্তির আশায় জ্ঞানের সাধনা করেন নি। জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাচর্চার নিতান্ত আবশ্যক পরিসীমার বাইরেও তাঁরা সচরাচর যান নি। তাঁদের নিতান্ত আবশ্যক বস্তুর তালিকায় সর্বাগ্রে ছিল জ্ঞানচর্চা, বিদ্যার্জন ও গ্রন্থপাঠ। বিষয় ভিত্তিক প্রয়োজনীয় বইয়ের বাইরেও অন্য বিষয় সংক্রান্ত রচনা তাঁরা পড়তেন আনন্দ ও কৌতূহল নিবৃত্তির সুতীব্র আকর্ষণে। কারও কারও পুস্তক সংগ্রহ আর রোজগারের মধ্যে কোনও ভারসাম্য থাকতো না। জাগতিক উন্নতির বিষয়গুলোকে তাঁরা তুচ্ছ বিবেচনা করে অবজ্ঞা করেছেন। ইতিহাসবিদ তপন রায়চৌধুরীর মতে, “যে জীবনে বৈষয়িক উন্নতির সম্ভাবনা বিরল, তার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু বিখ্যাত মানুষ সত্যিই সারস্বত-কর্মে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বর্তমানের বিশ্লেষণপ্রবণ গবেষণার ধারা তখনও প্রবল হয় নি। কিন্তু অনেক গবেষণাই গভীর পা-িত্যের ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত হতো।” মনীষী মুঈন উদ-দীন আহমদ খান সম্পর্কে এই বক্তব্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। আত্মমগ্ন ধ্যানীর মতো সারা জীবন তিনি জ্ঞানচর্চায় নিয়োজিত থেকে গভীর পা-িত্যের পরিচয় দিয়েছেন। শুধু নিজেই নন, প্রণোদিত করেছেন পরবর্তী বেশ কিছু প্রজন্মের উৎসাহী তরুণদের, যাদের অনেকেই বিদ্যাচর্চায় লিপ্ত রয়েছেন।

তাঁর সঙ্গে ইতিহাসের আরেক মহান সাধক যদুনাথ সরকারের কিছু কিছু বিষয় তুলনীয়, যার মধ্যে রয়েছে প্রবল পরিশ্রম, জ্ঞান তৃষ্ণা এবং অনুসন্ধান। যদুনাথের বিশ্লেষণের নিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বিতর্ক থাকার পরেও ইতিহাসচর্চায় তিনি সর্বজনমান্য আচার্য। তিনি নিজের কর্ম ও জীবন আলোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে উদ্ধৃতি করতেন: “পথের প্রান্তরে করি নাই খেলা/শুধু বাজায়েছি বসি সারাবেলা/ছিন্নতন্ত্রী বীণা।” মনীষী প্রফেসর ড. মুইন উদ-দীন আহমদ খানও সারাজীবন জ্ঞানচর্চার বাঁশরী বাজিয়েছেন। একটি আস্ত জীবনকে উৎসর্গ করেছেন জ্ঞানের সাগরে অবগাহনের মাধ্যমে। বিদ্যার্চচাকে পেশাগত পরিম-লে জিম্মি না করে জীবন ও যাপনের মূলমন্ত্রে পরিণত করেছিলেন তিনি। আর সব কিছুই তিনি করেছেন নিজের সুমৃত্তিকা ও মানুষকে কেন্দ্র করেই। জীবনের পর্বে পর্বে নানা দেশে, নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও তিনি অবশেষে ফিরে এসে আলোকিত করেছেন প্রিয় মাটির প্রিয় মানুষদের, প্রিয় জনপদকে। জীবনের দিনগুলোর মতোই মৃত্যুর পরেও তিনি আলোর দিশারী হয়ে দেদীপ্যমান রয়েছেন জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যামুখী অভিযাত্রীদের চৈতন্যের মর্মমূলে।  

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; নির্বাহী পরিচালক, চট্টগ্রাম  সেন্টার ফর রিজিওন্যাল স্টাডিজ, বাংলাদেশ (সিসিআরএসবিডি)।

;

জাফরানি



শরীফুল আলম । নিউইয়র্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ।
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ভাবছি এই বৈশাখের প্রথম পলাশটা আমি তোমাকেই দেবো
প্রথম চুম্বনটাও তোমাকে।
একটা দীর্ঘ শীত পাড়ি দিয়ে এসেছি,
তোমার খোঁপায় লাল গোলাপ দেবো বলে
চোখে কাজল, কপালে কাল টিপ
এই সব দেয়ার আগে কিছুটা খুনসুঁটি তো হতেই পারে ,
তুমি অনন্যা বলে কথা
তোমাকে উৎকণ্ঠা ও বলা যায়
কিম্বা সুনীলের কবিতা, অসমাপ্ত শ্রাবণ
তুমি আমার ওয়াল্ড ভিউ
তুমি আস্ত একটা গোটা আকাশ
চুরমার করা তুমি এক পৃথিবী ,
কখনো তুমি মুক্ত বিহঙ্গ, সুদূরের মেঘ
তুমি কখনো শান্ত মোহনা, কখনো মাতাল স্রোত
ভরা শ্রাবণ, শরতের স্তব্ধতা তুমি ,
তুমি কখনো আমার সুখের আর্তনাদ ।

আমি সমুদ্র, আমি ক্ষণে ক্ষণে শিউরে উঠি
দিগন্ত রেখায় আমি তোমার অপেক্ষায় থাকি
আমি অপেক্ষায় থাকি তোমার ফোনের গ্যালারিতে
ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে ,
আমি প্রলেপ বানাতে জানিনা
তাই ফাগুণের রঙকে আমি টকটকে লাল বলি
সিজোফ্রেনিক কে পুরোনো রেকাবি বলি
মূলত তুমি এক হরিয়াল ছানা
আড়ালে চিঁ চিঁ ডাক, উঁকি মার জাফরানি ।

আমার ভাললাগার টুনটুনি
এই শ্রাবণ ধারায় স্নান শেষে
চল ঝিলিমিলি আমরা আলোয় ঢেউ খেলি
ভালোবাসলে কেউ ডাকাত হয় কেউবা আবার ভিখারি ।

;

আকিব শিকদারের দু’টি কবিতা



আকিব শিকদার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

যোগ্য উত্তর

‘তোমার চোখ এতো ডাগর কেন?’
‘স্বর্ণ দিনের স্বপ্নঠাসা দুচোখ জুড়ে।’

‘তোমার বুকের পাঁজর বিশাল কেন?’
‘সঞ্চয়েছি স্বদেশ প্রীতি থরেথরে।’

‘তোমার আঙুল এমন রুক্ষ কেন?’
‘ছদ্ধবেশীর মুখোশ ছেঁড়ার আক্রোশে।’

‘তোমার পায়ের গতি তীব্র কেন?’
‘অত্যাচারীর পতন দেখে থামবে সে।’

অনন্তকাল দহন

ঝিঝির মতো ফিসফিসিয়ে বলছি কথা আমরা দুজন
নিজেকে এই গোপন রাখা আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

বাঁশের শুকনো পাতার মতো ঘুরছি কেবল চরকী ভীষণ
আমাদের এই ঘুরে ঘুরে উড়ে বেড়ানো আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তপ্ত-খরায় নামবে কবে প্রথম বাদল, ভিজবে কানন
তোমার জন্য প্রতিক্ষীত থাকবো আমি আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

তোমার হাসির বিজলীরেখা ঝলসে দিলো আমার ভুবন
এই যে আগুন দহন দেবে আর কতোকাল?
: অনন্তকাল।

;