ভিটামিন ‘এ’

সরবরাহ কম, ঢাকার শিশুরা পাবে নীল ক্যাপসুল



সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত সাংবাদিক অরিয়েন্টেশন কর্মশালা

ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ আয়োজিত সাংবাদিক অরিয়েন্টেশন কর্মশালা

  • Font increase
  • Font Decrease

আগামী ২২ জুন সারাদেশে ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পালিত হবে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সারাদেশে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী সব শিশুদের একটি করে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১,০০,০০০ আইইউ) এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী সব শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২,০০,০০০ আইইউ) খাওয়ানো হবে।

তবে সরবরাহ কম থাকায় ঢাকায় শুধু নীল ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে। এক্ষেত্রে ৬ মাস থেকে ১১ মাস বয়সীদের একটি এবং ১২ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সীদের জন্য দুটি করে নীল ক্যাপসুল খাওয়ানো হবে।

কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) পাঁচটি অঞ্চলের আওতাধীন ৩৬টি ওয়ার্ডে জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন পরিচালিত হবে। ক্যাম্পেইন সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে এ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১৯ জুন) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. মোমিনুর রহমান মামুন, ডিএনসিসির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমদাদুল হক, প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মামুন প্রমুখ।

ডিএনসিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডিএনসিসি এলাকায় ৬ মাস থেকে ১১ মাস বয়সী ৮২ হাজার ১৫ শিশুকে এবং ১২ মাস থেকে ৫৯ মাস বয়সী ৪ লাখ ৪৮ হাজার ২৩৫ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। মোট ১৪৯৯টি কেন্দ্রের (স্থায়ী কেন্দ্র ৪৯টি ও অস্থায়ী কেন্দ্র ১৪৫০) মাধ্যমে এ ক্যাম্পেইন চলবে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। ওই দিন সকাল ১০টায় মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি সেন্টারে ক্যাম্পেইনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

এর আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসের ক্যাম্পেইনে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় বলে জানিয়েছে ডিএনসিসি। এছাড়া ১২ থেকে ৫৯ বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে ৯৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।

কার্যক্রমে মোট স্বাস্থ্যকর্মী-স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন ২ হাজার ৯৯৮ জন, সেখানে প্রথম সারির সুপারভাইজার থাকবেন ১৮৩ জন আর তদারককারী থাকবেন ১০ জন। এছাড়া দ্বিতীয় সারির ১০৩ জন সুপারভাইজার কার্যক্রমে অংশ নেবেন।

সভায় জানানো হয়, শিশুর সুস্থভাবে বেঁচে থাকা, স্বাভাবিক বৃদ্ধি, দৃষ্টি শক্তির জন্য ভিটামিন ‘এ’ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ‘এ’ চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ও শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে রাতকানাসহ চোখের অন্যান্য রোগ, শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, রক্তশূন্যতা এমনকি শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য নীতিমালা অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব পূরণে বছরে দুই বার সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

   

তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে করণীয়



অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া
অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

অলঙ্করণ: মামুনুর রশীদ

  • Font increase
  • Font Decrease

সারাদেশে তীব্র দাবদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত। দেশজুড়ে চলমান এই তাপপ্রবাহের কারণে এরই মধ্যে হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে এবং দেশের সকল কলেজ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তীব্র গরমে মানুষের অতিরিক্ত ঘাম, অস্বস্তি ও ত্বক পোড়ানো অনুভূতিতে হাঁসফাঁস এবারের গ্রীষ্মে বাংলাদেশের জনজীবনে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কয়েক গুণ।

একদিকে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ ও কোন কোন স্থানে সুপেয় পানির তীব্র সংকটে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। এই পরিস্থিতিতে গুরুতর অসুস্থ, শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ পুরো স্বাস্থ্য বিভাগ নড়েচড়ে বসেছে। তীব্র গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলোর মধ্যে পানি শূন্যতা, ত্বকের নানা রকম রোগ, যেমন-ঘামাচি, ফুসকুড়ি, ছাত্রাক ইত্যাদি, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘুরানো, মাথা ব্যাথা, মানসিক চাপ-খিটখিটে মেজাজ, এলোমেলো কথা, অস্থিরতা, অবসাদগ্রস্থতা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা, মাংসপেশীতে টান অনুভব করা, বুকে ধড়ফড়, পেটের পীড়া-ডায়ারিয়া, জ্বর-ঠাণ্ডা-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিবাহিত রোগ, টাইফয়েড-জণ্ডিস, খিচুনি, হিট-স্ট্রোক, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত সমস্যাগুলো অন্যতম। কিছু নিয়ম মেনে চললে বা সাবধানতা অবলম্বন করে চললে তীব্র গরমেও ভালো ও নিরাপদ থাকা সম্ভব।

অতিমাত্রার তাপ থেকে রক্ষায় করণীয়

এক. প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করা।

দুই. যাঁরা হৃদরোগ, লিভার, কিডনী, ক্যান্সার ও স্ট্রোকের রোগী-খুব প্রয়োজন ছাড়া সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

তিন. ঘরে থাকলে দরজা-জানালা খুলে দিন, যাতে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, তবে জানালার পর্দা টেনে দিন যাতে রোদ সরাসরি ঘরে প্রবেশ না করে।

চার. ঘরে থেকে বের হলে ছায়াপথ অনুসরণ করুন এবং মাথায় ক্যাপ, টুপি, গামছা, স্বার্ফ, কাপড় ব্যবহার করুন।

পাঁচ. ভারী-কালো কাপড় পরিহার করে হালকা-পাতলা ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের সুতি কাপড় পরিধান করুন।

ছয়. বাড়ির বাইরে বেরুবার সময় অবশ্যই ছাতা নিয়ে বের হবেন।

সাত. বেরুবার সময় অবশ্যই এক বোতল খাবার পানি বা স্যালাইনযুক্ত খাবার পানি সঙ্গে নিন।

আট. বাড়ির বাইরে সুযোগ মত পানির ঝাপটা মুখে দিন এবং ঘাড়ে ঠাণ্ডা পানি দিন।

নয়. ত্বকে ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষায় প্রয়োজনে সানস্ক্রিণ ক্রিম ব্যবহার করুন।

দশ. চোখে রোদ থেকে রক্ষায় প্রয়োজনে সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

এগারো. শরীরে পানি স্বল্পতা এড়াতে অতিরিক্ত নিরাপদ পানি, শরবত, লেবু পানি, ডাবের পানি, ফলের জুস, লাচ্ছি, খাবার স্যালাইন, লবন মিশ্রিত পানি পান করুন এবং টক দই, স্যুপ ও তরল খাবার গ্রহণ করুন।

বারো. পানি ও রসালো গ্রীষ্মকালীন ফল শসা, তরমুজ, বাঙ্গি, ডালিম ইত্যাদি বেশি পরিমাণ খাবার চেষ্টা করুন।

তেরো. প্রয়োজনে দিনে দু’বার গোসল করুন।

চৌদ্দ. প্রয়োজনে হাতপাখা, সামর্থ্য অনুযায়ী ফ্যান ও এসি ব্যবহার করুন।

পনেরো. আপনার ফ্রিজে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা পানি ও বরফ মজুদ করুন।

ষোলো. দিনমজুর বা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে কিছুক্ষণ পর পর ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রামের সুযোগ সৃষ্টি করা, মানবিক কারণে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত।

সতেরো. ডাই ইউরেটিক্স, বিটা ব্লাকার জাতীয় ওষুধ ও অ্যালকোহল খাবেন না।

আঠারো. গরমে ব্যায়াম থেকে বিরত থাকুন।

গরমে কি কি খাওয়া উচিত আর কি উচিত নয় তা জানা অত্যন্ত জরুরি।

যেসব খাবার পরিহার করা বাঞ্ছনীয়

গরু-খাসি ও হাঁশের মাংস, ডিম, বেশি মসলাযুক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার, পোলাও-বিরিয়ানি-কাচ্চি, তেহারী, স্টেক, ফাস্টফুড, ফুচকা, চা-কফি, বাইরের খাবার, বোরহানী, আইসক্রিম ও কোমলপানীয় ইত্যাদি।

খাদ্য তালিকায় যা রাখবেন

শাক-সবজি, শসা, টমোটো, লাউ, ডাল, আম-ডাল, ভিটামিন ‘সি’ সম্বৃদ্ধ খাবার, পাতলা স্যুপ, রসযুক্ত ফল, নিরাপদ পানি, ডাবের পানি, লেবু পানি, স্যালাইন পানি, লবন সরবত, ফলের জুস, কাঁচা আমের শরবত, ডিটক্স ওয়াটার (পানি, লেবু, গাজর ও পুদিন রস সমন্বয়ে তৈরী) ও মাছ।

হিট স্ট্রোক: কিভাবে বুঝবেন

যদি শরীরে তাপমাত্র ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারচেয়ে বেশি ও সঙ্গে তীব্র মাথা ব্যাথা, মাথা ঘোরা, অতিমাত্রায় ঘাম, প্রচণ্ড তৃষ্ণা, পানি শূণ্যতা অনুভব করা, ডিহাইড্রেশন, দ্রুত হৃদস্পন্দন, বমি বমি ভাব হওয়া, প্রলাপ বকা, কথা জড়িয়ে যাওয়া, মাংসপেশীতে টান পড়া, ঘাম না হওয়া, ক্লান্তি ও চরম দুর্বল হয়ে যাওয়া, গাঢ় রঙের প্রশ্রাব, চামড়া ফ্যাকাসে হওয়া, চামড়ার রঙ লালচে হওয়া, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া, খিচুনী ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।

হিট স্ট্রোকে করণীয়

হিট স্ট্রোকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রয়োজন। সময় মত চিকিৎসা না করলে হিট স্ট্রোকে মস্তিষ্ক, মাংসপেশী, হৃদপিণ্ড, কিডনীর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। চিকিৎসার দীর্ঘসূত্রিতায় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সাধারণত বয়স্কদের এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এটি বেশী ঘটে থাকে। এছাড়াও যাঁরা প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করে থাকেন-যেমন-কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সাচালকরা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

হিট স্ট্রোক হলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে। তবে তার আগে আক্রান্ত ব্যক্তির যতটুকু সম্ভব গায়ের কাপড় খুলে ফেলুন। দ্রুত শীতল স্থানে নিয়ে যান। রোগীর আশেপাশে ভিড় না থাকাই বাঞ্ছনীয়। হাত পাখায় বাতাস করুন। সম্ভব হলে ফ্যান বা এসি রুমের মধ্যে নিতে হবে। ঠাণ্ডা পানিতে সারা শরীর ভিজিয়ে মুছে ফেলুন। অজ্ঞান হলে দুই পা উপরের দিকে রাখুন।

জ্ঞান থাকলে ঠাণ্ডা পানি, খাবার স্যালাইন-শরবত খাওয়ান, সম্ভব হলে বগলে, কুচকিতে, কাঁধে ও কপালে বরফের প্যাক দিন। খেয়াল রাখা প্রয়োজন, আক্রান্ত রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস ও নাড়ীর স্পন্দন চলছে কিনা। মাথায় ঠাণ্ডা পানি ঢালতে পারেন। উন্নতি না হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। শিশু, বয়স্ক ও দুরারোগ্য রোগীদের প্রতি সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন। একমাত্র সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বন করলেই হিট স্ট্রোকসহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে নিরাপদ থাকা সম্ভব।

লেখক: বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, সাবেক পরিচালক; সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।

;

তীব্র গরমে কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান তাপদাহে কুষ্টিয়ার হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। তীব্র গরমে এ অঞ্চলের শিশুরা ডায়রিয়া ও সর্দি-জ্বরে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শনিবার রাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ও ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শয্যায় দুজন করে রোগী রয়েছেন। বারান্দা ও ওয়ার্ডের মেঝেতেও বিছানা করে আছেন অনেক রোগী। বেডে জায়গা নেই। ঠাঁই হচ্ছে মেঝে ও বারান্দায়।

এদিকে, শনিবার বিকেলে কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৩ শতাংশ। চলতি মাসের শুরু থেকেই কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এক সপ্তাহ আগে থেকে এ তীব্র তাপদাহ শুরু হয়।

তীব্র গরমে হাসপাতালে রোগীর চাপ অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এতে করে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। শয্যা খালি না থাকায় মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। তবে গরমে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদেরও বেগ পেতে হচ্ছে হাসপাতালের গরমের কারণে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ৪ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ২০টি শয্যা। তবে এখানে এখন রোগী থাকছেন ২শ ১৫ জন। একটি বেডেই দুই থেকে তিনজন করে রোগী এবং ১৫ শয্যা বিশিষ্ট ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছেন ৭১ জন। এসব অতিরিক্ত রোগীদের অনেককে রাখা হচ্ছে, হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায়।

হাসপাতালের ৪ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স রূপালী খাতুন বলেন, গত সপ্তাহ থেকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। প্রচণ্ড দাপদাহের কারণে ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শহরের হাউজিং থেকে দুই বছরের শিশু রহমানকে হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করেছেন তা মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, চারদিন ধরে ভর্তি আছি। বেড পাইনি। ডায়রিয়াও ভালো হয়নি। গরমের কারণে বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। হাসপাতালের গরমের মধ্যেও গাদাগাদি করে থাকতে গিয়ে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

মিরপুর থেকে আমেনা বেগম তার ছোট ছেলেকে নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। ভালো হচ্ছে না। পাঁচদিন ধরে ভর্তি রয়েছে।

চৌড়হাস এলাকার হাবিবা চারদিন হাসপাতালের মেঝেতে ছিলেন তার ছেলে হাবিবুর রহমানকে নিয়ে। তিনি বলেন, বেড পাইনি। রোগীর অনেক চাপ।

শিশু হুমায়রাকে নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় চারদিন ধরে ভর্তি আছেন, শহরের কাটাইখানা এলাকার সুরভী বেগম। তিনি বলেন, প্রচণ্ড গরম! গরমে বাচ্চার ডায়রিয়া হয়েছে। এখনও ভালো হচ্ছে না। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। প্রচুর রোগী। সবাই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালে কোনো জায়গা নেই।

হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান ডা. নাজিম উদ্দীন বলেন, প্রচণ্ড গরমে শিশুদের ডায়রিয়া ও সর্দি-জ্বর বেড়ে গেছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়ায়। এ রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। তাদের কোনোভাবেই রোদে যেতে দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে সকাল ৯টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একদম রোদে যাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, শীতল জায়গায় তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বেশি বেশি পানি ও বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। গোসল করাতে হবে। এছাড়া সুতির হালকা জামা-কাপড় পরাতে হবে। ফ্রিজের ঠান্ডা পানি বা খাবার শিশুকে দেওয়া যাবে না। গরমে হঠাৎ ঠান্ডা পানি বা খাবার খেয়ে বাচ্চারা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. তাপস কুমার সরকার বলেন, গত কয়েকদিনের গরমে শিশুরা নানান ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই গরমের কারণে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

এক্ষেত্রে অন্যান্য বয়সীদের তুলনায় শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। বর্তমানে আমার হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। শিশু ওয়ার্ডে ২০টি শয্যা হলেও এখানে এখন রোগী আছে ২শ ১৫ জন এবং ১৫ শয্যা বিশিষ্ট ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি আছে ৭১ জন।

এসব অতিরিক্ত রোগীদের অনেককে রাখা হচ্ছে হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায়। এছাড়া জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়ার রোগী তো আছেই। অন্যান্য সময়ের তুলনায় আক্রান্তের এ হার আমরা অস্বাভাবিক বলছি।

;

ঈদের ছুটিতেও স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব পড়েনি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ঈদের লম্বা ছুটিতেও দেশের কোনো হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবায় প্রভাব পড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর মুগদা হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঈদে লম্বা ছুটিতে দেশ। এর মধ্যেও দেশের কোনো হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার ব্যাঘাত ঘটেনি। মন্ত্রী হিসেবে এটা আমার প্রথম ঈদ। আমি আশা করছি দেশের মানুষ খুব সুন্দরভাবে ঈদ পালন করছেন।

তিনি বলেন, আমি বুধবারও কয়েকটা হাসপাতালে গিয়েছি। আজকে আরও কয়েকটি হাসপাতালে যাব। বুধবার দুটি হাসপাতালে গিয়েছি, দুই জায়গায়ই আমি পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স পেয়েছি। আমি সন্তুষ্ট। রোগীদের সঙ্গেও আমি কথা বলেছি। কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।

হাসপাতাল পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশিদ আলমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং পয়লা বৈশাখের ছুটি চলাকালে দেশের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিজে মনিটরিং করার ঘোষণা দেন। এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসাসেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে জন্য ছুটির সময় নিজে মনিটরিং করব। না জানিয়ে হাসপাতালে যাব। শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরের হাসপাতালেও মনিটরিং করা হবে বলেও জানান তিনি।

;

‘দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে’



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু আশঙ্কাজনকহারে বাড়লেও তা মোকাবেলায় বাজেট বরাদ্দ খুবই কম। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে শনিবার (৬ এপ্রিল) গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বাজেট বরাদ্দ: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেছে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আমার স্বাস্থ্য, আমার অধিকার’।

ওয়েবিনারে জানানো হয়, সাধারণভাবে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত সোডিয়াম বা লবণ গ্রহণ, তামাকের ব্যবহার, কায়িক শ্রমের অভাব, বায়ুদূষণ প্রভৃতি কারণে বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে, যা বর্তমানে দেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে এসব রোগ মোকাবিলায় বাজেট বরাদ্দ খুবই সামান্য, মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশিমিক ২ শতাংশ।

ওয়েবিনারে আরও জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জাতীয় বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখার পরামর্শ দিলেও, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাজেট বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিওএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে কম।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউটের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, কেবল উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানোর মাধ্যমেই অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ প্রদানের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের মধ্যে লবণ গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে হবে।

জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে উচ্চ রক্তচাপের পরীক্ষা ও ওষুধের পিছনে ১ টাকা ব্যয় করলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া সম্ভব। কাজেই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. লায়লা আখতার। ওয়েবিনারে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞা’র সমন্বয়ক সাদিয়া গালিবা প্রভা এবং সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এই ওয়েবিনারে অংশ নেন।

;