২০০ আসনও পাবে না বিজেপি : মমতা
ভারতে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) শুরু হয়েছে লোকসভা নির্বাচন। প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গের তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার এবং জলপাইগুড়িতে নির্বাচনের চলাকালীন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার কৃষক বাজার ময়দানে জনসভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
মুর্শিদাবাদের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানের সমর্থনে সেখানে প্রচারণাও চালান তিনি। তৃতীয় দফায় আগামী ৭ মে মুর্শিদাবাদে ভোট রয়েছে। শুক্রবার হরিহরপাড়ার জনসভা শেষ করে মমতা যাবেন জঙ্গিপুরে। সেখানে দলের প্রার্থী খলিলুর রহমানের সমর্থনে প্রচার করবেন তিনি। এর পর শনিবার যাবেন মালদহে।
এদিকে, লোকসভা নির্বাচনের যে সমীক্ষাগুলোতে বিজেপিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে, সেগুলোকে ভুয়া বলে উল্লেখ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘দেশে ২০০টি আসনও পাবে না বিজেপি। সব সমীক্ষা ভুয়া। লাখ লাখ টাকা ঢেলে সমীক্ষা করেছে। ওতে কান দেবেন না। মানুষের চোখ বলছে, বিজেপি জিতবে না।’
এনডিটিভি জানিয়েছে, শুক্রবারের সভায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘যার বিয়ে সে-ই পুরোহিত-এটা প্রথম দেখছি। কী করে রাজ্যের পুলিশকে পুরো বাদ দিয়ে আপনারা শুধু কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছেন? যাতে লোকে ভোট দিতে না পারে?’
‘ইন্ডিয়া’ প্রসঙ্গে মুর্শিদাবাদের সভায় মমতা বলেন, ‘কেউ কেউ বলছে, আমরা ইন্ডিয়া, আমাদের ভোট দিন। ইন্ডিয়া এখানে নেই, ওটা দিল্লির। আমিই তৈরি করেছি। কংগ্রেস, সিপিএম এখানে ইন্ডিয়া নয়। ওরা বিজেপি করে। ওদের একটা ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে দুটো ভোট দেওয়া। একটা ভোটও দেবেন না।’
এ ছাড়াও মুর্শিদাবাদের সভায় ১০০ দিনের কাজের বিকল্প হিসাবে রাজ্যে ৫০ দিনের কাজের গ্যারান্টি দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না। আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি। ৫০ দিনের কাজ করতে পারবেন। কেউ চাইলে ৬০ দিনও করতে পারেন।’
ইরানে হামলার পর বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়া
ইরানের ইসফাহান শহরে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে ইসরায়েলি বিস্ফোরণের ঘটনা একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তবে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, কয়েকটি মিনি ড্রোন হামলা হয়েছে এবং সেগুলোকে প্রতিহত করতে সেখানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়। এর ফলেই দেশের কয়েকটি অঞ্চলে প্রচণ্ড শব্দ শোনা গেছে।
এদিকে, ইরানে বিস্ফোরণের পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিশ্বনেতারা। সেই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে আল জাজিরা। নিম্নে সেই প্রতিক্রিয়া তুলে ধরা হলো:
ওমান
ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইসফাহানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করছে ওমান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ অঞ্চলে ইসরায়েলের বারবার সামরিক হামলার নিন্দা জানাচ্ছে মাসকাট।’ প্রসঙ্গত, উপসাগরীয় দেশটি দীর্ঘদিন ধরে ইরান ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করে আসছে।
মিশর
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন মিশর। এ অঞ্চলে সংঘাত ও অস্থিতিশীলতা প্রসারিত করার পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করেছে মিশর।
ইতালি
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছেন ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি। ইতালির দ্বীপ ক্যাপ্রি থেকে তিনি আরএআই নিউজকে বলেন, ‘আমরা সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ক্যাপ্রিতে ইতালি সাতটি দেশের গ্রুপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেছে।
যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেছেন, ‘ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তেজনা বৃদ্ধি কারও স্বার্থে নয়। আমরা যা দেখতে চাই তা হলো, পুরো অঞ্চলজুড়ে শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা এড়াতে সংযম থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ফিনল্যান্ড সফরকালে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করতে হবে। তাই, সব পক্ষ যেন ওই অঞ্চলে উত্তেজনা থেকে বিরত থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অঞ্চলটির স্থিতিশীলতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সব পক্ষই পরবর্তী পদক্ষেপ থেকে যেন বিরত থাকে।’
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাঙ্কে ব্রুইনস স্লট বলেছেন, নেদারল্যান্ডস ইরানের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ব্রুইনস স্লট এক্স-এ যোগ করেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী গভীর উদ্বেগজনক। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, এই উত্তেজনার যেন বৃদ্ধি রোধ করা যায়।’
চীন
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, চীন প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদনগুলো নোট করেছে এবং উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে এমন কোনও পদক্ষেপের বিরোধিতা করে।
জাপান
জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়োশিমাসা হায়াশি বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এবং পরিস্থিতির বৃদ্ধি ঘটায় এমন যেকোনো পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায় জাপান।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতির আরও অবনতি রোধে প্রয়োজনীয় সব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে টোকিও।’
কানাডা
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি এক্স-এ বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা ইতালিতে জি-৭ অধিবেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করব।’
ফ্রান্স
ফ্রান্সের ডেপুটি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোট বলেছেন, ‘ফ্রান্সের অবস্থান হলো উভয় পক্ষকে উত্তেজনা হ্রাস এবং সংযমের জন্য আহ্বান জানানো।’
ইসরায়েলকে যে হুমকি দিল ইরান
ইরানের ভূখণ্ডে আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ ঘটনার পর ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরায়েলকে হুমকি দিয়ে জানায়, যদি ইসরায়েল পরমাণু স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে কোন হামলা চালায় তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দেশটির গণমাধ্যম তেহরান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
পারমাণবিক স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইআরজিসি টিমের প্রধান জেনারেল আহমেদ হাকতালাব এক বার্তায় বলেছেন, যদি ইসরায়েল আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায় তাহলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে এবং আমরা তার প্রতিক্রিয়া জানাব। এতে ইরান পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহারও করতে পারে।
জেনারেল হকতালাব আরও জানান, ‘ইসরায়েলের ভুয়া জায়নবাদী গোষ্ঠী যদি ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য পারমাণবিক স্থাপনা ও প্রকল্প কার্যালয়ে হামলা করে, তাহলে ইরানও তার পারমাণবিক ডকট্রিন ও নীতি সংশোধন করবে এবং পূর্বঘোষিত বিবেচন্য বিষয়গুলো থেকে সরে আসবে।’
উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে একজন কমান্ডারসহ ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের সাত কর্মকর্তাকে হত্যা করে ইসরায়েল। এ হামলার জবাবে রোববার ভোরে ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তারপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা।
ইসরায়েলের হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই ইরানের
ইরানের ইসফাহান শহরে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার দাবিটি নাকচ করে দিয়ে ইরান জানিয়েছে, ইরানে কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা হয়নি, তিনটি ড্রোন হামলা হয়েছিল; সেগুলো আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। হামলার প্রতিশোধের বিষয়ে ইরান জানিয়েছে, অবিলম্বে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা নেই তাদের।
শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ইসরায়েলের হামলার খবর প্রকাশের কয়েক ঘণ্টা পর জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ড্রোন ধ্বংসের ভিডিও ধারণ করেন ইরানের এক নাগরিক যা পরবর্তীতে বিবিসি প্রকাশ করে। এর আগে ইসরায়েলকে পাল্টা হামলার বিষয়ে কঠিন হুঁশিয়ারি দিলেও হামলা পরবর্তী সময়ে ইরানের কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিশোধের পরিকল্পনা নেই।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ইরানি কর্মকর্তা বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই ইরানের। এই ঘটনাটি বিদেশি কোন উৎস থেকে হয়েছে কি না নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আমরা বাইরে থেকে কোনও আক্রমণের সম্মুখীন হইনি এবং চলমান আলোচনা হামলার চেয়ে অনুপ্রবেশের দিকেই বেশি ঝুঁকছে। তবে এখন পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি ইসরায়েল।
এদিকে একজন ইরানি বিশ্লেষক দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেছেন, ইসফাহানে বিমান প্রতিরক্ষা দিয়ে যে মিনি ড্রোনগুলোকে গুলি করা হয়েছিলো, সেগুলো ইরানের ভেতর থেকেই অনুপ্রবেশকারীরা উড়িয়েছিলো।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে ইরানের ইসফাহান শহরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসফাহান শহরের কাছে বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার পর বিভিন্ন প্রদেশে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করেছে ইরান। একই সঙ্গে তেহরান, ইসফাহান এবং শিরাজের ফ্লাইট স্থগিতও করা হয়। কিন্তু তার পরপরই আবার চালু করে দেওয়া হয়েছিল আকাশপথ।