নিকলী হাওর নৌভ্রমণ

হাওরের হাতছানি-৪



মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর
নিকলী হাওরের মাঝ থেকে দূরনদীতে নৌকা চলাচল

নিকলী হাওরের মাঝ থেকে দূরনদীতে নৌকা চলাচল

  • Font increase
  • Font Decrease

নাস্তা সেরে ইকো রিসোর্ট থেকে আমাদের বের হওয়ার কথা সকাল আটটায়। আগেভাগেই উঠে পড়লাম। কারণ আজ হাওর দর্শনে যাওয়ার কথা। হাওর এক দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি। নদীবাহিত বিস্তীর্ণ চরাচর ভরবর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফুলফেঁপে এক অপরূপ রূপ ধারণ করে। যাদের সমুদ্র দেখার ফুরসত মেলেনি, তাদের জন্য হাওরে যাওয়া এক আকর্ষণ। আমাদের ভ্রমণদলের সবাই সমুদ্রদর্শনের সৌভাগ্য অর্জন করলেও হাওর দেখেনি। আমাদের কাছেও হাওরের আকর্ষণ কম নয়। কিন্তু, একি! জানালার পর্দা সরিয়ে দেখি গাছগাছালির ওপর বৃষ্টি পড়ছে। গাছের ফাঁক দিয়ে দিগন্তবিস্তৃত মাঠে যতদূর চোখ যায়, টিপটিপ বৃষ্টির ধোঁয়াশা। বাতাসও আছে। আজ হাওরে নৌভ্রমণ হবে কিনা তা নিয়ে দ্বন্দ্বের মধ্যেই নিচে নেমে নাস্তা সেরে নিলাম। ভ্রমণ তালিকা থেকে হাওরে নৌকায় ঘোরাঘুরি যদি বাদ হয়, তাহলে ঢিলেঢালাভাবে বের হলেও ক্ষতি নেই। তবে সবাই অনড়—হাওরে নামা হোক বা না হোক অবশ্যই যেতে নিকলীর হাওরপাড়ে। নয়টায় সবাইকে নিয়ে আমাদের রিজার্ভ মাইক্রোবাসের ড্রাইভার কটিয়াদী-কিশোরগঞ্জ সড়কে উঠে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল।

হাওর ও গ্রামপর্যটন বিস্তারে জালালপুর ইকো রিসোর্ট

সময় এলো গুগল চাচার সহায়তা নেওয়ার। এই এক আশ্চর্য পদ্ধতি, যাকে বারবার জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে হয় নিজের হদিস—আমি এখন পৃথিবী নামের এই গ্রহটির ঠিক কোন জায়গায় আছি, গন্তব্যেই বা যাব কিভাবে? গুগল কটিয়াদী থেকে নিকলী যাওয়ার দুটি অপশন দেখাল। একটিতে পৌনে একঘণ্টা, আরেকটিতে একঘণ্টা। কোন রাস্তার অবস্থা ভালো তা কিন্তু গুগল দেখাতে পারল না, রাস্তায় জট আছে কিনা তা ভালোই দেখাল। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, সড়ক ধরে কিশোরগঞ্জের দিকে এগিয়ে কালিয়াচাপড়া চিনিকল পার হয়ে ডানের পথ ধরব। এই বৃষ্টি বাদলার মধ্যে গ্রামের সরু রাস্তায় বড় গাড়ি ঢোকানো ঠিক হবে না।

কটিয়াদি-কিশোরগঞ্জ সড়কের পুলের ঘাট থেকে ডান দিকে নিকলীর রাস্তা। এই সড়ক গচিয়াহাটা হয়ে চলে গেছে নিকলী। যাওয়ার পথে বনগ্রাম ও গচিয়াহাটায় মাছের পোনার বাজার দেখে উল্লসিত হলাম। গাড়ি ছুটে চলল নিকলী। এরই মধ্যে একটি দৈনিকে কর্মরত এক সিনিয়র সাংবাদিক, আমার সাবেক সহকর্মীর ফোন। ফেসবুকের কল্যাণে তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে আমরা নিকলীতে হাওর ভ্রমণে যাচ্ছি। অনুজপ্রতিম সাংবাদিক ফোনে বলল, ‘ভাই, নিকলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার স্ত্রী। কোনো সমস্যা হলে ফোন দিয়েন’। জিজ্ঞেস করলাম, নিকলী হাওর ভ্রমণে প্রশাসনের সহযোগিতার কোনো প্রয়োজন আছে কিনা। জবাব এলো, ‘তা নেই, তবে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনের সহায়তা যদি লাগে’। নম্বরগুলো টুকে রেখে দিলাম।

আঁকাবাঁকা রাস্তা গ্রামের পর গ্রাম পেরিয়ে চলে গেছে। নিকলী পৌঁছার বেশ কয়েক কিলোমিটার আগে থেকেই হাওরের আমেজ চোখ জুড়িয়ে দিল। রাস্তার দু’পাশেই জলরাশির দিগন্তবিস্তার। পানির মধ্যে ছোপ ছোপ গ্রাম। আমরা বিশাল জলরাশি দেখে বারবারই উল্লসিত হয়ে পড়ছি ‘নিকলী হাওরে এসে গেছি, এসে গেছি’ বলে। গাইড ডালিয়া হোসেন অভিজ্ঞ। আমাদের শান্ত করছেন নিকলী আরো সামনে। রাস্তার দু’পাশের জলরাশির সঙ্গে মিতালী করতে করতেই একসময় একটি বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করল। বাঁয়ে সমতল আর ডানে তুমুল জলরাশি। কিছুক্ষণ পর নিকলী হাসপাতালসহ নানা স্থাপনার সাইনবোর্ড দৃষ্টিগোচর হলো। বাঁধের নিচে হাওরের পানিতে গ্রামের মেয়েরা সারবেঁধে পাটের আঁশ ছড়াতে বসেছে। পুরুষরা হাওরে মাছ ধরে তীরে এসে নৌকা ভিড়িয়েছে। আমরা একই পথে হাসপাতাল মোড়ের দোকানপাট-হোটেল পেরিয়ে বাঁধের মাথায় পৌঁছালাম। সারি সারি পর্যটন নৌকা বাঁধা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/12/1562920693628.jpg
পর্যটকদের জন্য অপেক্ষমাণ ট্যুরিস্ট বোট

 

হাওরের ঘাটে গাড়ি থেকে নেমেই আমাদের সবার চক্ষু ছানাবড়া। সামনে দিগন্তছোঁয়া পানি। বিশাল জলরাশির মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবুজ গ্রাম চোখে পড়ে। দূরে আষাঢ়ের মেঘের পেছনে নীল আকাশ পানির সঙ্গে মিতালী করেছে। নিরন্তর বাতাস বইছে। হাওরের পানি ছুঁয়ে আসা শীতল বাতাস প্রাণমন জুড়িয়ে দেয়। বাতাসের তোড় খুব বেশি নয় আর হাওরেরও পানি বেশি নয় বলে পানিতে ঢেউয়ে খুব উত্তাল নয়। যতটুকু আছে তা এক কুল কুল শব্দ করে আছড়ে পড়ে বাঁধের কিনারে।

ঘাটে ইকো রিসোর্টের নিয়মিত মাঝি ফারুক হাজির। আমাদের আসার পথে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় ফারুক মাঝিকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই সে নৌকাঘাটে উপস্থিত। গাড়িতে নামতেই হাত বাড়িয়ে পরিচিত হয়ে তার নৌকায় নিয়ে গেল। মাঝি না বলে ফারুককে নৌকার মালিক বলা যেতে পারে। আরো দুজন মাঝি আছে নৌকায়। আমি মাঝির পাশের দোকানে লাইফ জ্যাকেট খোঁজ করে পেলাম না। মাঝিরা জানাল, পর্যটকরাই নিয়ে আসে এই জীবনতরী। তবে হাওরে নৌকাডুবির ভয় তেমন নেই বলেও অভয় দিল।

শহুরের গ্রাম দরশন

বিলম্ব না করে আমাদের ভ্রমণ দলের সবাই নৌকার ছাদে উঠে গেল। ইঞ্জিনচালিত নৌকার ছাদেই বেশিরভাগ মানুষ বসে। রোদ-বৃষ্টির সময় নিচের পাটাতনেও বসে, সেখানে ঢুকতে হলে হামাগুড়ি দিয়ে মাথা নিচু করে যেতে হয়। নৌকা হাওরের পানি পেরিয়ে ঘোরাউত্রা নদীর দিকে চলতে শুরু করল। নিকলীর ওপারপাড়ে ছাতিয়ার চর। আমরা নদী পেরিয়ে চরে যেতে চাইলেও মাঝিরা সেদিকে যেতে অনীহা প্রকাশ করল। কারণ অজানা। তারা বলল, ওই চরে সমস্যা আছে, ঘাট নেই, নৌকা চরে আটকে যাবে, যেতে আসতে অনেক সময় চলে যাবে ইত্যাদি। আমরা মূল নদীর তীর দিয়ে নিকলী হাওরের মাঝখানে একটি কাশবনের দ্বীপে গিয়ে পৌঁছালাম। মাঝিরা নেমে বেড়ানোর পীড়াপীড়ি করলেও আমরা নামলাম না। বেশিরভাগ পর্যটকের নাকি কাশবন এক আকর্ষণ বলেও তারা জানাল। দলের কামরুল ভাই, মাঝিরা সময়ক্ষেপণ করার বাহানায় আমাদের কাশবন দ্বীপে নিয়ে এসে নৌকা ভিড়িয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/12/1562920602805.jpg
নৌকার অভ্যন্তর

 

আমরা নদীর পাশ দিয়ে ঘুরে আবার হাওরের ঘাটের দিকে যেতে বললাম। হাওরের চারদিকে যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। মাঝিরা বলল, বর্ষার সময় নদীর পানি ফুলে ফেঁপে হাওর তৈরি হয়। অন্যসময় নদীতেই শুধু পানি থাকে, মাঠে ধানভুট্টার চাষ হয়। তারা বর্ষা মৌসুমে নৌকা চালায়, অন্যসময়ে চাষাবাদ করে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/12/1562920667172.jpg
নৌকার ছাদে বসে হাওর পর্যটন

 

নৌকা চলছে। তবে ইঞ্জিনের শব্দে আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়ে। মনে পড়ে ছোটবেলায় পালতোলা নৌকায় কত চড়েছি। কালের বিবর্তনে নৌকার সেই পাল হারিয়ে স্থান নিয়েছে ইঞ্জিন। আমরা কখনো নৌকার নিচের পাটাতনে কখনো টিন দিয়ে তৈরি ছাদে উঠে আড্ডা আলোচনা আর হাওর সৌন্দর্য দেখে সময় পার করছি। ছবি, ভিডিও, সেলফি তোলা সমানে চলছে। আষাঢ়ের ঘনঘটার মধ্যে মেঘের ফাঁকে সূর্য উঁকি দিচ্ছে কখনো কখনো। নিরন্তর গা জুড়িয়ে যাওয়া বাতাসে রোদের মধ্যেও প্রশান্ত দিচ্ছে বলে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না। চারদিকে যতদূর চোখ যায়, জলরাশির বিস্তার। কবি কামরুল হাসান বললেন, পৃথিবী যে গোল এখান থেকেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ক্ষেতসমুদ্রে সান্ধ্য ভ্রমণআড্ডা

হাওর ভ্রমণের অন্যতম মজা, হাওরতীরের হোটেল থেকে হাওরের তাজা মাছের তরকারি দিয়ে উদরপূর্তি। স্থানীয় মানুষ পর্যটকদের এই আকর্ষণ বুঝতে পেরে হোটেল ব্যবসা খুলেছে। নিকলী হাওরের হাসপাতাল মোড়ে অনেকগুলো খাওয়ার হোটেল। আশি টাকায় যে কোনো একটা মাছের তরকারি আর ভাত, ডাল, সবজি খাওয়া যায়। আমরা সেখানকার সেতু হোটেলটি পছন্দ করলাম। আইড়, পাঁচমিশালী, হুতুম, হাওরের কই মাছের তরকারি লাচ্চু মাছ ভাজা দিয়ে উদরপূর্তি করলাম। আমাদের সঙ্গীরা একেকজন একেক ধরনের মাছের তরকারি পছন্দ করে উদরপূর্তি করে মহাখুশি। দিনের পরবর্তী গন্তব্য কিশোরগঞ্জ শহর। গাড়ি সেদিকে ছুটে চলল।

   

সাজেদুর রহমান শাফায়েত ঘুরে দেখতে চায় দুনিয়া



বেলায়েত হুসাইন
ভ্রমণপিপাসু তরুণ সাজেদুর রহমান শাফায়েত, ছবি : সংগৃহীত

ভ্রমণপিপাসু তরুণ সাজেদুর রহমান শাফায়েত, ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

ভ্রমণপিপাসু তরুণ সাজেদুর রহমান শাফায়েত। জন্ম চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানায় রহিমানগরের সাত বাড়িয়া গ্রামে। সে ছোট থাকতেই ঢাকায় চলে আসে তার পরিবার। সেই থেকে ঢাকায় থাকা হচ্ছে। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, তার বাবাও ঘুরতে বেশ পছন্দ করেন, সেই অভ্যাসটা শাফায়েত পেয়েছেন। ভ্রমণ তার বেশ প্রিয়, পড়াশোনার পাশাপাশি বেড়ানোটা তার নেশা। ভ্রমণের নেশা থেকেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে চলেছেন বাংলাদেশি এই তরুণ।

পাহাড় তার বেশ প্রিয়, তাই অবসর পেলেই ছুঁটে যান খোলা আকাশের নীচে পাহাড়ের বুকে; যেখানে গেলে ছোঁয়া পাওয়া যায় মেঘেদের। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত তাজিংডং থেকে নিয়ে কেওকারাডং, মেরাইথং ও বান্দরবানের থানচিসহ আরও বহু জায়গা ঘুরে দেখেছেন।

ট্রেইলও করেছে বহু জায়গা। হরিণমারা ট্রেইল, হামহাম ঝর্ণা, বাঁশবাড়িয়া বিলাসী ট্রেইল, মধুখাইয়া ট্রেইল, বোয়ালিয়া ট্রেইল, ছোটো কমলদেহ ট্রেইল, বড় কমলদেহ ট্রেইল, মেলখুম ট্রেইলসহ আরও অনেকগুলো- যেগুলো নেট দুনিয়ায় খুব কমই দেখা যায়, সেসব জায়গাগুলোতেও বেশ ট্রেইল করেছেন।

দেখেছেন নানারকমের ঝর্ণা, আরও গিয়েছেন বহু জায়গায়। যেমন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, খুলনা, ভোলা, বাগেরহাট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, বান্দরবান, নাটোর, যশোর, ঝিনাইদহ, বরিশাল, সিলেট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, ফেনী ও কুমিল্লাহসহ আরও অনেকগুলো জেলা ঘুরে দেখেছেন এই তরুণ।

দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখনও তার ভ্রমণ করা হয়নি, তবে তার ইচ্ছা দেশের বাইরে ভ্রমণে। সেক্ষেত্রে প্রথম গন্তব্য হবে বায়তুল্লাহ। প্রাণভরে দেখা মক্কা-মদিনার অলি-গলি, যে মাটির পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাসের নানা উপাদান।

শাফায়েতের ফেইসবুকে একটা পেইজ আছে, নাম ট্রাভেল বাই শাফায়েত। সেখানে সে ভ্রমণের স্মৃতিগুলো শেয়ার করে বন্ধুদের সঙ্গে। ভ্রমণের পাশাপাশি সাজেদুর রহমান শাফায়েত ব্যবসা করেন। লিবাসুস সুন্নাহ নামে রয়েছে তার একটি পাঞ্জাবির ব্র্যান্ড, সঙ্গে রয়েছে ইলেভেন নামে আরও একটি ব্র্যান্ড। এগুলো সব তার স্বপ্নের ব্র্যান্ড, অনলাইন এক্টিভিস্ট শাফায়েতের বেশ পরিচিতি রয়েছে।

ভ্রমণ আর নিজের ব্র্যান্ডগুলো সামলে বাবার ব্যবসাও দেখাশোনা করেন। তবে তার সঙ্গে কথা বলার পর মনে হবে, মানুষটি জন্ম নিয়েছেন শুধুই ঘুরাঘুরির জন্য। তার মন-মানসিকতা সবকিছুতেই ভ্রমণের নেশা। তার ঝুঁলিতে রয়েছে ভ্রমণকালীন সময়ের নানা রোমাঞ্চকর গল্প। জয়ের নেশায় ভ্রমণের কষ্ট জয় করা এই তরুণের জীবনে সব থেকে সেরা ট্রেইল ছিলো- নিষিদ্ধ আন্ধারমানিক। যেটা বান্দরবানে অবস্থিত। যেখানে ছিলো না কোনো নেটওয়ার্ক না ছিলো কোনো ইঞ্জিন চালিত গাড়ি। পাহাড় আর জিরি পথ সেখানে। ভ্রমণপিপাসু এই মানুষটির জন্য শুভ কামনা, এগিয়ে যাক বহুদূর। শাফায়েত ঘুরে দেখতে চায় দুনিয়া নিজের চোখে।

;

ইবনে বতুতার উক্তির প্রতিচ্ছবি দুসাই রিসোর্ট!



সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

মৌলভীবাজার থেকে ফিরে: ইবনে বতুতার সেই বিখ্যাত উক্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে- ‘দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’! ইবনে বতুতা বাঙলাকে ‘ধনসম্পদে পরিপূর্ণ নরক’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

‘দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ এলাকায় অবস্থানকালে বারবার ইবনে বতুতার সেই বিখ্যাত উক্তির কথা মনে পড়েছে। প্রাকৃতিক প্রাচুর্যে ভরা নরকের সঙ্গে তুলনা করেছেন অনেকেই।

মৌলভীবাজারে অবস্থিত পাঁচতারকা মানের দুসাই রিসোর্ট বলতে গেলে এককাঠি সরেস! কতকগুলো টিলার সমন্বয়ে গড়া রিসোর্টটির নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নান্দনিক ডিজাইনের স্থাপনা মুদ্ধতায় মেড়ানো। পরতে পরতে লুকিয়ে রয়েছে নানান উপভোগ্য উপাদান।

নিরিবিলি পরিবেশ, পাখির কলতান বাহারি বৃক্ষরাজি, সত্যিই মোহনীয় করে তুলেছে রিসোর্টটি! কিন্তু সেবার মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে যারপর নাই হতাশ ভ্রমণ পিপাসুরা! ক্ষেত্র বিশেষে তিন-তারকার চেয়েও খারাপ সেবার মান। আর স্টাফদের আচরণ এবং শব্দচয়ন বলাই বাহুল্য!

১৮ ফেব্রুয়ারি (২০২৪) রাত ৯টায় যখন রুমে ঢুকছি, পিছু পিছু হাজির রুম সার্ভিসের লোক। তার হাতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সাইজের কাগজ। বললেন, এখানে স্বাক্ষর দিয়ে দিতে হবে। হাতে নিয়ে দেখি, তাতে রুমের মধ্যে থাকা টাওয়েলের সংখ্যা তুলে ধরা হয়েছে। অনেকটা চুক্তিনামার মতোই কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া-

- চেক আউটের সময় টাওয়েল বুঝিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন অবস্থানকারী অতিথি

টাওয়েল হারিয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য, সে কথাও স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই কাগজে।

আমাদের দলে প্রায় ৪০ জনের মতো সদস্য ছিলেন। প্রায় সবাই খুবই বিরক্তি প্রকাশ করলেন। এটিএন বাংলার বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বী খানিকটা ক্ষোভের সঙ্গে বললেন, ‘দুনিয়ার আর কোথাও কোনো হোটেলে এমন দেখিনি’!

হোটেল বয়টি জবাব দিলেন, ‘আমাদের কিছুই করার নেই! কর্তৃপক্ষ যেভাবে বলেছে, আমরা শুধু হুকুমের গোলাম’! রুম সার্ভিসের ছেলেটি নাছোড়বান্দা, স্বাক্ষর না নিয়ে ছাড়লেন না। ফজলে রাব্বী খানিকটা মজা করার জন্য বললেন, ‘আপনারা কোথায় টাওয়েল রেখেছেন এনে দেখান; তারপর আমি স্বাক্ষর দেবো। না দেখে তো স্বাক্ষর দিতে পারি না’! তখন হোটেল বয়টি বাথরুম থেকে টাওয়াল এনে দেখিয়ে স্বাক্ষর নেন।

বিষয়টি নিয়ে একচোট হাস্যরস হয়ে গেল। একজন তো টিপ্পনি কেটে বললেন, ‘ভাই, সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে কী লাভ হবে! স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তখন কেউ অস্বীকার করলে, আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারবেন’।

বিষয়টি নিয়ে এজিএম (ফুড অ্যান্ড বেভারেজ) নাজিম সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে, তিনি প্রথমে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করলেন। এখানে নানান ধরনের লোকজন আসে তো, তাই!

ভদ্রলোকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশের বাইরে বিশাল অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। এবার তার কাছে প্রশ্ন ছিল, বিশ্বের আর কোনো হোটেলে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় কিনা! জবাবে বললেন, আমার জানামতে কোথাও নেই। এখানে মালিকপক্ষ মনে করেছে, তাই বিষয়টি রেখেছে। আমাদের কিছুই করার নেই!

দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার স্বপ্না চক্রবর্তী ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার জিন্নাতুন নূর সিনথিয়া ছিলেন সেই ট্যুরের সহযাত্রী।

সিনথিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ওদের স্টাফদের ম্যানার শেখানো উচিত।

কথিত 'পাঁচতারকা' মানের 'দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা'-র জরাজীর্ণ ছাদ 

স্বপ্না চক্রবর্তীর ব্যাগে রুমের চাবিটি পাওয়া না গেলে স্টাফদের সাহায্য নিয়ে তালাটি ভাঙা হয়। রুমের তালা ভেঙে নিয়ে নিচে গিয়ে সে কী হাসাহাসি তাদের! একজন আরেকজনের সঙ্গে চর্চা শুরু করে দেন। তাদের সেই তাচ্ছিল্য কথাবার্তা রুম থেকেই কানে আসছিল। একবার মনে হয়ে, নিচে গিয়ে কষে থাপ্পড় দেওয়া উচিত!

সিনথিয়া বললেন, রুম থেকে খাবার অর্ডার দিতে যাবো। তাদের যে শব্দ চয়ন, কোনো পাঁচতারকা হোটেলের সঙ্গে যায় না! তাদের কথাবার্তায় কোনোরকম সৌজন্যতাবোধ পাইনি। রুমের মধ্যে যে আয়না রয়েছে, সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকা উচিত। এখানে সেটি অনুপস্থিত।

বাথরুমের স্পেস কোনোভাবেই পাঁচতারকা কোয়ালিটির নয়। কমোডে বসলে কনুই ঠেকে যাবে বেসিনের ফিটিংসে!

পাঁচতারকা মানের হোটেলের কমোডে দুই কনুই পর্যন্ত ফ্রি আর গোসলের সময় দুই হাত প্রসারিত করার মতো পর্যাপ্ত স্পেস থাকতে হবে। যদি কমোডো বসে কনুই পর্যন্ত ফ্রি স্পেস এবং গোসলে দুই হাত প্রসারিত না করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, তাহলে সেটিকে ‘পাঁচতারকা’ সনদ দেওয়া হয় না।

লাগেজ পেতে অনেককেই অপেক্ষা করতে হয়। লাগেজ রুমে দিয়ে যাওয়ার কথা।

লাগেজ না-পেয়ে ২০ মিনিট পরে ফোন করলে রিসিপশন থেকে উত্তর এলো- ‘একটু সময় লাগতেই পারে। এতে অস্থির হওয়ার কিছু নেই’!

পরদিনও লাগেজের ক্ষেত্রে একই ধরনের অভিজ্ঞতা শিকার হতে হলো, কাউকে কাউকে। দুপুর পৌঁনে ১২টার সময় চেক আউটের পর বলা হলো, ‘আপনি লাগেজ রেখে যান। আমরা রিসিপশনে পৌঁছে দেবো’।

দেড়টার দিকেও লাগেজ পৌঁছার নাম নেই। রিসিপশনে বলেও কাজ না হওয়ায় কেউ কেউ ফিরে গিয়ে লাগেজ নিয়ে এলেন। রিসিপশন ও কক্ষগুলো ভিন্ন ভিন্ন টিলায় হওয়ায় এগুলো টেনে নেওয়া কিছু কষ্টকর। গলফকারে যাত্রী ও তাদের লাগেজ আনা নেওয়া করা হয় এক টিলা থেকে অন্য টিলায়।

মনে হলো, দেখি তো অন্য ভ্রমণকারীরা কেমন রিভিউ দিয়েছেন, নাকি আমার কপালেই মন্দ ছিল।

কথিত 'পাঁচতারকা' মানের 'দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা'-র সোফা! গা ঘিন ঘিন করা নোংরা সোফা

মো. মোতাল্লেব নামের একজন গুগলে রিভিউয়ে লিখেছেন- তাদের সার্ভিসগুলো খুবই বাজে! খুবই খারাপ! যে আকারে হোটেলটা আছে, সেই আকারে কোনো সার্ভিস পাওয়া যায় না! অনেক টাকা নেয়, সেই টাকা অনুযায়ী খাবার-দাবার একদম বাজে! খাবারের ভেতরে কোনো সুস্বাদু না। এই হোটেলের স্টাফ যারা আছে, তারা একবারও ভালো খাবার দেয় না। রুমে অন্ততপক্ষে এক জোড়া স্যান্ডেল থাকা দরকার…’

সেই রিভিউয়ে কর্তৃপক্ষ যে রিপ্লাই দিয়েছে, তাতে আরও বেশি অবাকই হতে হলো। লেখা হয়েছে- আপনার হোটেলের অতিথি হওয়ার কোনো রেকর্ড নেই। তবে আপনার নামের একজন অতিথির ড্রাইভার আমাদের রেকর্ডে রয়েছে। আমরা অতিথি ড্রাইভারের মন্তব্যকে আমলে নিই না!

কী সাংঘাতিক! একজন ড্রাইভারকে তারা মানুষ হিসেবেই গণ্য করছেন না!

লুৎফুন নাহার লিখেছেন- রিসোর্টটা ভালো। রিসিপশনের কর্মচারীদের আচরণ খুবই খারাপ! গেস্টদের সঙ্গে বাচ্চা দেখলে তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। ছোট বাচ্চাদের জন্য আলাদা পেমেন্ট দিতে হয়। পছন্দের রুম চাইলে তারা দেয় অন্য রুম।

ডা. মো. আহসান হাবিব লিখেছেন- প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভালো দেখার মতো কিন্তু রুম থেকে টাকা চুরি হয়, যেটা মেনে নেওয়া যায় না! তাই যারা দুসাইতে যাবেন, একটু চিন্তা করে যাবেন অথবা টাকা-পয়সা বাসায় রেখে যাবেন! খুবই জঘন্য অভিজ্ঞতা হইয়াছে দুসাইতে বেড়াতে এসে… জঘন্য, জঘন্য…!

আরেকজন লিখেছেন- সিলেট অঞ্চলে একটি চমৎকার সম্পত্তি (অপেক্ষাকৃত ছোট এলাকায়)। পরিবেশ ভালো। খুব স্বাভাবিক। বুফে আইটেম সীমিত (দ্য প্যালেস, গ্র্যান্ড সুলতানের মতো কাছাকাছি অন্যান্য সম্পত্তির তুলনায়)। পুলের মধ্যে নোংরা জল এবং পোকামাকড় পাওয়া গেছে। আরো সতর্ক হওয়া দরকার। স্টাফ এবং এক্সিকিউটিভদের আরো শিখতে হবে। ভালো প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। দাম প্রত্যাশার সাথে মেলে না। আমরা উপভোগ করেছি, শুধু প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে। ব্যবস্থাপনার অনেক উন্নতি প্রয়োজন। আবার দেখার আশা করি এবং উন্নতি আশা করছি।

খাবারের দাম নিয়ে অনেক আপত্তি রয়েছে। দামও আবার বেশ চড়া। রুমে থাকা খাবারের মূল্য তালিকার ওপর কাগজ কেটে নতুন মূল্য বসানো হয়েছে। বারবিকিউ চিকেন অ্যান্ড চিজ আগে ছিল ৬৬০ টাকা। তার ওপরে কাগজ কেটে ৭৯৫ টাকা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি খাবারের ওপরেই এভাবে নতুন দরের ট্যাগ বসানো। সঙ্গে দিতে হবে, ২০ শতাংশ সারচার্জ, ১০ শতাংশ সার্ভিস চার্জ এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট।

হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে মানুষ কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করেন। শুধু পরিবেশে উপভোগ্য হলেই পেট ভরে না; পরিবেশের পাশাপাশি প্রয়োজন মানসম্মত ও আন্তরিক সেবা। সেখানে ঘাটতি হলে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেন।

দীর্ঘ মেয়াদে ভালো করতে হলে সেবার মান বাড়ানো জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন ভ্রমণকারীরা।

;

চট্টগ্রামে এক টুকরো ‘চায়ের রাজ্য’



সাফিনাতুন জাহান
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সবুজ পাহাড় আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পর্যটকদের কাছে। চায়ের রাজ্য বলতে আমরা শুধু সিলেটের শ্রীমঙ্গলের কথাই বুঝি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম ও অন্যতম চা-বাগান আছে রাঙ্গুনিয়ার কোদালা ইউনিয়নে। 

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সফরভাটা গোডাউন বাজার ধরে সোজা ১০ কিলোমিটার দক্ষিণাংশে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেষা এই চা বাগানের দেখা মিলবে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসু মানুষ প্রতিদিন ছুটে আসছে এই চা বাগানে। সারি সারি উঁচু নিচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে লাগানো আছে সব চায়ের গাছ। যেদিকে চোখ যায় শুধুই সবুজ। সেইসাথে চা শ্রমিকদের কর্মতৎপরতা, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, ব্রিটিশ বাংলো, সবুজ বনায়ন আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে। বর্ষায় ঝিরি বৃষ্টির দিনে চা-বাগান যেন হয়ে ওঠে আরও সবুজ। প্রকৃতি নিজেকে সাজিয়েছে আপন মহিমায়। 


এসময় চা বাগান দেখতে আরও নান্দনিক লাগে। বর্তমানে শীতেও চা-বাগানে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের আনাগোনা রয়েছে। বর্তমানে ফটোগ্রাফি, প্রি ওয়েডিং ও পোস্ট ওয়েডিং শ্যুটের জন্যও দিন দিন মানুষের পছন্দের কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে এই চা বাগান।

কোদালা চা বাগান প্রতিষ্ঠিত করা হয় ১৮৯৪ সালে। জানা যায়, ব্রিটিশরা কর্ণফুলী নদী দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা চা বাগানের বিস্তীর্ণ জায়গা দেখে চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়। পাহাড় বেষ্টিত ঘন সবুজে ঘেরা ৪২০০ একর জায়গা জুড়ে কোদালা চা বাগান অবস্থিত। কোদালা চা বাগানের মধ্যে কিছু জায়গা জুড়ে রাবার বাগান রয়েছে। এবং এই চা বাগানের বিশেষত্ব হচ্ছে এখানে রয়েছে একটি কৃত্রিম লেক। এবং একই সাথে পর্যটকরা দেখতে পাবে চা ও রাবার প্রক্রিয়াকরণ কারখানা।বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বমোট ১৬২টি চা বাগানের মধ্যে গুণে মানে ও আয়ে কোদালা চা বাগানের অবস্থান তৃতীয়। বর্তমানে সিটি গ্রুপের মালিকানায় চা-বাগানটি পরিচালিত হচ্ছে।


যেভাবে যাবেন:

চট্টগ্রাম শহরের কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে লোকাল কিংবা রিজার্ভ সিএনজি চালিত ট্যাক্সি করে কোদালা চা বাগান যাওয়া যায়। তবে লোকাল সিএনজি যোগে গেলে রাঙ্গুনিয়ার সফরভাটা গোডাউন বাজারে নেমে আবার সিএনজি চালিত ট্যাক্সি করে পোঁছাতে হবে চা বাগানের গেইটে৷ এছাড়া চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে ইঞ্জিন চালিত বোট ভাড়া করে নদীপথেও চা বাগানে যাওয়া সুযোগ আছে৷

যারা সময়ের অভাবে সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ঘুরে আসতে পারছেন না। চা বাগান প্রিয় মানুষরা খুব সহজেই চট্টগ্রামের এই নৈসর্গিক চা-বাগান দেখে আসতে পারেন। সবুজ বনায়ন ও চা পাতার গাছে ঘেরা এই কোদালা চা বাগানের অপূর্ব সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

;

বন্ধুর থেকে সাইকেল শেখা সাকিব বের হয়েছেন ৬৪ জেলা ভ্রমণে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কক্সবাজার
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সাইদুল ইসলাম সাকিব (২১)। চট্টগ্রামের পোর্টসিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী অষ্টম শ্রেণিতে থাকাকালীন সাইকেল চালানো শিখেছে বন্ধুদের কাছ থেকে। এরপর সাইকেলে ৬৪ জেলা ভ্রমণের নেশা জাগে তার। একা একা বেরিয়ে পড়েন ৬৪ জেলা ভ্রমণে।

মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) কক্সবাজারের সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের জিরো পয়েন্ট থেকে সাইকেলে ৬৪ জেলা ভ্রমণের যাত্রা শুরু করেন তিনি। "জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ হোক, সুরক্ষিত থাকুক ধরণীর লোক’'-এ প্রতিপাদ্যে ভ্রমণে বের হন তিনি। এছাড়া ৬৪ জেলায় গিয়ে ৬৪টি গাছ লাগাবেন বলে জানান সাকিব। কিন্তু এটি তার সাইকেলে দ্বিতীয় ৬৪ জেলা ভ্রমণ। তিনি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার কলাউজান এলাকার বাসিন্দা।

সাইদুল ইসলাম সাকিব বার্তা২৪.কম-কে বলেন, "অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন বন্ধুদের সাইকেল চালানো দেখে উদ্বুদ্ধ হই সাইকেলের প্রতি। এরপর বন্ধুদের কাছ থেকে সাইকেল চালানো শিখি। কিন্তু দশম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময় পর্যন্ত রাস্তায় সাইকেল চালাতে ভয় পেতাম। এরপর ২০২৩ সালের ১৬ জানুয়ারি একা একা বেরিয়ে পড়ি সাহস করে। টেকনাফ থেকে শুরু করে ৩৯ দিনে প্রথমবারের মতো সাইকেলে ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষে ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে পৌঁছেছি"।

সাকিব জানান, "এবারে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ হোক, সুরক্ষিত থাকুক ধরণীর লোক এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বের হয়েছি। এছাড়া ৬৪ জেলায় ৬৪ টি গাছ লাগাবো। যেহেতু আমরা সবাই পরিবেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছি সেহেতু জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করে পৃথিবীর মানুষকে সুরক্ষিত রাখার বার্তা জানাবো"।

সাইদুর রহমান সাকিব প্রথম দিন টেকনাফ জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে উখিয়া হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৮১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনে কক্সবাজার-রামু-আলীকদম হয়ে ১১৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বান্দরবান পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। তৃতীয় দিন বান্দরবান থেকে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-পটিয়া-চট্টগ্রাম হয়ে রওয়ানা দিবেন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি-খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে। ৪৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে ৬৪ জেলা ভ্রমণ করে চট্টগ্রামে এসে শেষ করার ইচ্ছে তার।

;