মেজর হায়দার এবং ৭ নভেম্বরের নির্মম হত্যাযজ্ঞ



ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
মেজর হায়দার

মেজর হায়দার

  • Font increase
  • Font Decrease

 

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, বিজয়ের মুহূর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর হায়দার। যুদ্ধজয়ী মেজর হায়দার পরাজিত পাক বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা দিয়ে আত্মসমর্পণ মঞ্চে নিয়ে যান।

কিন্ত স্বাধীন দেশে নিজের সেনাসদস্যদের কয়েকজনই তাকে হত্যা করেছিলো ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। যিনি ছিলেন একজন “বীর উত্তম”। সেদিন আরও দুইজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল নাজমুল হুদা নির্মমভাবে নিহত হন।

বিজয়রথে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সর্বাগ্রে ঢাকায় প্রবেশ করেছিলেন বীরযোদ্ধা মেজর হায়দার। ছিলেন হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে। স্বাধীন ও মুক্ত বাংলাদেশের টেলিভিশন যার ছবি ও কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে প্রথম জীবন্ত হয়েছিল, তিনি মেজর হায়দার।

একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাঁর কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি। কিন্তু স্বাধীন ও সার্বভৌম সেই রাষ্ট্রেই তাঁকে হত্যা করা হয়, যে রাষ্ট্র অর্জনের জন্য তিনি প্রবল বিক্রমে লড়েছিলেন ও লড়াই করিয়েছিলেন অগণিত দুঃসাহসী গেরিলা যোদ্ধাকে। অবরুদ্ধ ঢাকা শহরকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল তাঁর নেতৃত্বাধীন অকুতোভয় যোদ্ধারা।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/07/1541562768574.jpg

মেজর আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দার (এ,টি,এম, হায়দার) সকলের কাছে মেজর হায়দার নামেই সমধিক পরিচিত।কিশোরগঞ্জ শহরের খড়মপট্টি এলাকার

মো. ইসরাইল মিয়া ও হাকিমুন্নেসার পুত্র এটিএম হায়দারের জন্ম কলকাতা শহরের দক্ষিণাংশের ভবানীপুরে, ১৯৪২ সালের ১২ জানুয়ারি। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হায়দারের স্থান দ্বিতীয়। তাঁদের আদিবাড়ি করিমগঞ্জ উপজেলায়।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন মেজর হায়দার। অভিজ্ঞতায় ছিলেন ভরপুর। পাবনা জেলার বীণাপানি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর ১৯৫৮ সালে কিশোরগঞ্জ রামানন্দ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৬১ সালে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৬৩ সালে লাহোর ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন তিনি।

লাহোরের পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে পরিসংখ্যানে এমএসসি প্রথম পর্ব সমাপ্তির পর সামরিক বাহিনীতে অফিসার পদে মনোনীত হন হায়দার। তিনি ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন।

হায়দার প্রথমে কাকুলে ট্রেনিং নেন এবং কমিশন প্রাপ্তির পর গোলন্দাজ বাহিনীর অফিসার হিসেবে নিয়োজিত হন। চেরাটে এমএসজি (স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ) ট্রেনিংয়ে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে একজন দক্ষ গেরিলা কমান্ডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কমান্ডো ট্রেনিংয়ে ৩৬০ জনের মধ্যে মাত্র দুজন বাঙালি অফিসার ছিলেন, যার একজন হায়দার।

কমিশন প্রাপ্তির পর ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতান ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তৃতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁকে কুমিল্লা সেনানিবাসে পাঠানো হয়। ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। ১৫-২০ দিন পর পুনরায় কুমিল্লায় নিয়োগ করা হয়।

দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধের আহ্বানে তিনি

১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস ত্যাগ করেন এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অফিসারদের সঙ্গে মিলিত হন। সেখান থেকে তিনি তেলিয়াপাড়া যান এবং কিছু সংখ্যক সৈন্যসহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তিনি ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কসহ মুসল্লী রেলওয়ে সেতু বিস্ফোরকের সাহায্যে উড়িয়ে দেন।

এরপর তিনি মেলাঘরে সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের অধীনে সেকেন্ড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ক্যাপ্টেন হায়দার মেলাঘরে ছাত্রদের নিয়ে একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং গেরিলাদের কমান্ডো ও বিস্ফোরক বিষয়ক প্রশিক্ষণ দানের দায়িত্ব পালন করেন। সেক্টর-২ এর অধীনে পরিচালিত গেরিলা অপারেশনগুলো এবং তাঁর হাতে গড়া গেরিলাগণ উজ্জ্বলতম অবদানের সাক্ষ্য হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জাজ্বল্যমান।  

১৯৭৫ সাল। স্বাধীন দেশের বয়স তখনো ৪ বছর হয়নি। ৬ নভেম্বর (১৯৭৫) বাবার টেলিগ্রাম পেয়ে পারিবারিক কাজে কর্মস্থল বান্দরবানের রামু থেকে ঢাকায় এসেছিলেন হায়দার। সেদিন সকালে পারিবারিক কাজের পর দুপুরে তিনি জেনারেল ওসমানী ও সেনাবাহিনীর কয়েকজন বন্ধুর সাথে দেখা করেন।

একই দিন সন্ধ্যায় তাঁর প্রিয় সেক্টর কমান্ডার এবং নতুন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়। সে রাতে তাঁর সাথে বঙ্গভবনে যান তিনি। চেষ্টা করেন দেশের সঙ্কটময় পরিস্থিতির উত্তরণ করতে এবং হত্যা ও যড়যন্ত্রে চলমান ধারা থামাতে। কিন্তু কে জানতো, যড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁকে ও তাঁর সহযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হবে!

৭ নভেম্বর চরম বিশৃঙ্খলা ও পরস্পর-বিরোধী বিদ্রোহের সৃষ্টির খবর পেয়ে জেনারেল খালেদ পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্নেল হুদা ও কর্ণেল হায়দারকে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামানের বাসায় যান। সেখান থেকে ভোর প্রায় ৩ টায় জেনারেল খালেদ, কর্নেল হুদা ও কর্ণেল হায়দার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত ১০ বেঙ্গল রেজিমেন্টে যান। এই রেজিমেন্টের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল নওয়াজিস। 

৭ নভেম্বর ভোরবেলা, কথিত বিদ্রোহের প্রবল ঢেউ ১০ বেঙ্গলে এসে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে। ঘোলাটে পরিস্থিতিতে শত্রু আর মিত্রের পার্থক্য করাও ছিল কঠিন। চারদিক থেকে স্রোতের মতো তীব্র বেগে নানা মাত্রার গোপন চক্রান্ত ও যড়য়ন্ত্র প্রকাশ্যে ধেয়ে আসতে থাকে।

১০ বেঙ্গলের অফিসার মেসে ছিলেন খালেদ মোশাররফ, হায়দার  এবং হুদা। এক সময় কিছু অফিসার কয়েকজন উত্তেজিত সৈনিক নিয়ে মেসের ভিতর প্রবেশ করেন। সে দলে একজন হাবিলদারও ছিল।

তারা চিৎকার দিয়ে জেনারেল খালেদকে বলল- "আমরা তোমার বিচার চাই"!

জেনারেল খালেদ শান্তকণ্ঠে জবাব দিলেন," ঠিক আছে , তোমরা আমার বিচার করো। আমাকে জিয়ার কাছে নিয়ে চলো।"

স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললো-"আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।"

ধীর স্থির জেনারেল খালেদ বললেন, " ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো"

খালেদ দু'হাত দিয়ে তার মুখ ঢাকলেন।

একটি ব্রাস ফায়ার।

মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন সেনাবাহিনীর চৌকস অফিসার বীর মুক্তিযোদ্ধা জেনারেল খালেদ মোশাররফ, যাঁর ললাটে ছিল বীরযোদ্ধার জয়টিকা, মাথায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম-এর শিরোপা আর মাথার বাম পাশে ছিলো পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর কামানের গোলার গভীর ক্ষতচিহ্ন।

কামরার ভেতরেই গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী, মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার  কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম ।

কর্নেল হায়দার ছুটে বেরিয়ে যান কিন্তু সৈনিকদের হাতে বারান্দায় ধরা পড়েন । উত্তেজিত সৈনিকদের হাতে তিনি নির্দয়ভাবে লাঞ্ছিত হন। তাঁকে সিপাহীরা কিল ঘুষি লাথি মারতে মারতে দোতলা থেকে নিচে নামিয়ে এনে গুলি করে হত্যা করে।

কঠোর সামরিক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মেজর হায়দারের মরদেহ কিশোরগঞ্জ শহরে সমাহিত করা হয়। অন্য নিহতদের শেষযাত্রার ছবিটিও ছিল একই রকম। স্বজনদের কেউ কোনও কথা বলতে পারেন নি। জানতে পারেন নি, কেন তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো?

এইসব নির্মম হত্যাকাণ্ডের কোনও বিচার আজও হয়নি। এমন জঘন্য ও ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের দায় কার?

[পাদটীকা: ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের ঘটনাবলি নিয়ে অনেক বই রচিত হয়েছে। সেদিনের হত্যা, পাল্টা-হত্যা, ক্যু, কাউন্টার-ক্যু নিয়েও অনেক গবেষণা এবং প্রত্যক্ষদর্শির বিবরণ গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেয়েছে। এই লেখার তথ্যসূত্র হিসাবে মূলত তিনটি বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো: জহিরুল ইসলাম রচিত 'মুক্তিযুদ্ধে মেজর হায়দার ও তার বিয়োগান্ত বিদায়',  নিলুফার হুদা রচিত 'কর্নেল হুদা ও আমার যুদ্ধ' এবং কর্ণেল এম এ হামিদ রচিত 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা'।

 

   

৪ লাখ বছর আগে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু



ফিচার ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

ছবি: সংগৃহীত, নিউ সায়েন্টিস্ট থেকে

  • Font increase
  • Font Decrease

৪ লাখ বছর আগে রাশিয়ার সাইবেরিয়া থেকে আদিম মানুষের যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে নতুন এক গবেষণা থেকে জানা গেছে। এখান থেকে যাত্রা শুরু করে এই গোত্রের মানুষ পরে উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায়।

নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, সাইবেরিয়ায় নতুন একটি এলাকার সন্ধান পাওয়া গেছে, যেখানে ৪ লাখ ১৭ হাজার বছর আগে হোমিনিনস (Hominins) গোত্রের মানুষের উপস্থিতি ছিল। এই গোত্রের মানুষ ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বাস করতেন। সেখান থেকে তারা উত্তর আমেরিকায় পৌঁছে যায় বলে জানিয়েছেন চেক প্রজাতন্ত্রের এক গবেষক।

১৬ এপ্রিল চেক অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষক জন জেনসেন এক সংবাদ সম্মেলন করে নতুন এ তথ্য প্রকাশ করেন। গবেষণাবিষয়ক সংবাদ সাময়িকী নিউ সায়েন্সটিস্ট এ বিষয়ে একটি খবর প্রকাশ করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জন জেনসেন বলেন, আমরা আগে যে ধারণা করতাম, তারও আগে থেকে হোমিনিনস গোত্রের মানুষ সাইবেরিয়ার ডিরিং ইউরিআখ এলাকায় বসবাস করতেন। ৪ লাখ ১৭ বছর আগে থেকেই তারা এই এলাকায় বসবাস করতে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের অবস্থান ছিল উত্তর অক্ষাংশে।

তিনি বলেন, আরেকটি আদিম গোত্রের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা আর্কটিক অঞ্চলে বাস করতেন। ৪৫ হাজার বছর আগে তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

 

;

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা



মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

উদাল: রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা

  • Font increase
  • Font Decrease

উদাল, সোনালি হলুদ সৌন্দর্যে মুগ্ধতা ছড়ানো মাঝারি সাইজের বৃক্ষ। পত্রঝরা উদাম শরীরে পুরো গাছজুড়ে শুধুই সোনালি হলদে রঙের ফুল। বসন্তে হলদে পাপড়ি ঝরে রাস্তায় বিছিয়ে দেয় ফুলের গালিচা। প্রকৃতির এক অপর সৌন্দর্য উদাল বৃক্ষ ও তার ফুল।

উদাল আমাদের দেশীয় উদ্ভিদ। এদের প্রিয় আবাস পাহাড়ি এলাকা হলেও আগে সারাদেশেই কমবেশি দেখা যেত। নির্বিচারে গাছ উজাড় হতে থাকায় অন্য গাছের সাথে এ দেশী গাছটিও বিপন্ন। ঢাকার মিরপুর জাতীয় উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, বাংলা একাডেমি, ঢাকার রমনা পার্ক, ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কসহ সমতলের অনেক স্থানে উদাল দেখা যায়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজারের মিশ্র চিরসবুজ বন এবং গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলের পাতাঝরা শালবনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে উদাল গাছ দেখা যায়।


উদালের বৈজ্ঞানিক নাম স্টারকুলিয়া ভেলোসা। ইংরেজিতে এটিতে হেয়ারি স্টারকুলিয়া বা এলিফ্যান্ট রোপ ট্রি নামে ডাকা হয়। এ গাছের বাকল থেকে এক প্রকার উন্নতমানের তন্তু পাওয়া যায়। এ তন্তু দিয়ে হাতি বেঁধে রাখার দড়ি বানানো হতো বলেও ইংরেজিতে এমন নামকরণ। আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এটি চান্দুল নামেও পরিচিত। এই উদ্ভিদ মগ ও মারমাদের কাছে ফিউ বান, গারোদের কাছে উমাক এবং ম্রোদের কাছে নাম সিং নামে পরিচিত।

উদাল ২০ মিটার বা ততোধিক লম্বা হয়। এদের বাকল সাদাটে রঙের। এদের পাতার বোঁটা লম্বা, ফলক বড় ও পাতা খাঁজকাটা, পাতার প্রশাখার আগায় পাতা ঘনবদ্ধ। ফুলগুলি সোনালি হলুদ রঙের, ফুলের ভেতর বেগুনি। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকলে গাঢ় লাল রঙের হয়। বীজের রং কালো। বীজ স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাবার। তবে মানুষও এর ফল খেয়ে থাকে। বাকল থেকে আঁশ পাওয়া যায়। এ আঁশ দিয়ে দড়ি তৈরি হয়। কাঠ বাদামি রঙের, সাধারণত নরম ও হালকা হয়। এই গাছের কাঠ দিয়ে চায়ের বাক্স বানানো হয়।

উদাল ফল খাচ্ছে ইরাবতী কাঠবিড়ালি। ছবি: তবিবুর রহমান

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, এ গাছ দেশের বন-জঙ্গলে প্রচুর হতো। এ গাছের পাতার বোঁটা দিয়ে শরবত বানানো হয়। উঁচু গাছ থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়। এরপর এর গোড়া থেকে অনেক নতুন নতুন ডালপালা গজালে সেখান থেকে পাতার বোঁটা সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও উদাল গাছ থেকে স্বচ্ছ আঠা পাওয়া যায়। যা দিয়ে কনফেকশনারিসহ নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, এ উদ্ভিদ বর্তমানে বিপন্ন প্রজাতির। গত বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ তিনশ উদাল গাছের চারা বিভিন্ন স্কুল কলেজে বিতরণ করেছে। এবারও প্রায় পাঁচশ চারা বিতরণ করা হবে।


ড. জসীম বলেন, উদলের বাকলের শরবত খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। ফুলের বৃন্ত ছেঁচে জলের সঙ্গে চিনি দিয়ে শরবত করে খেলে প্রস্রাবের সমস্যা ও বাতের ব্যথা দূর হয়। তবে খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রাঙ্গামাটি বনবিভাগের এসিএফ তবিবুর রহমান জানান, উদালের বীজের স্বাদ অনেকটা বাদামের মতো হওয়ায় কাঠবিড়ালির খুব প্রিয়। তবে এ বীজ মানুষও খেয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের তফসিল ৪ অনুযায়ী উদালকে বাংলাদেশের ‘মহাবিপন্ন’ প্রজাতির তালিকাভুক্ত উদ্ভিদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

;

বরিশালের শত বছরের ঐতিহ্যের স্মারক শীতলপাটি



এস এল টি তুহিন, করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরিশাল
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের পাটিকররা তাদের নিপুণ হাতের তৈরি শীতলপাটির জন্য বিখ্যাত।

উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের কাজলাকাঠী গ্রাম, রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া, রাজাপুর গ্রাম ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো তৈরি হয়, ঐতিহ্যের অনন্য স্মারক দেশ বিখ্যাত শীতলপাটি।

এই উপজেলায় এখন এক হাজারের বেশি পরিবার শীতলপাটি তৈরি করে সংসার চালাচ্ছে।

উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে প্রবেশ করে যতদূর দু’চোখ যায়, দেখা মেলে পাইত্রাগাছের বাগান। গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে দেখা মেলে বড় বড় পাইত্রা বা মোর্তাগাছের ঝোপ। বাড়ির আঙিনা, পরিত্যক্ত ফসলি জমি, পুকুর পাড়, সব জায়গাতেই বর্ষজীবী উদ্ভিদ তরতাজা পাইত্রাগাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে। গ্রামীণ জনপদের আভিজাত্যের স্মারক শীতলপাটি তৈরি হয়, এই পাইত্রাগাছের বেতি দিয়ে।

জানা গেছে, এসব গ্রামে পাইত্রাগাছের আবাদ হয়ে আসছে শত শত বছর ধরে। পাটিকরদের পূর্বপুরুষেরা যে পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, আজও সেই পেশা ধরে রেখেছেন বাকেরগঞ্জের পাটিকররা।

এখনো এই সব গ্রামে ‘পাটিকর’ পেশায় টিকে আছে প্রায় এক হাজার পরিবার। আর তাদের সবার পেশাই শীতলপাটি বুনন। ফলে, উপজেলার এসব গ্রাম এখন ‘পাটিকর গ্রাম’ নামে পরিচিত।

সরেজমিন দেখা যায়, কাঁঠালিয়া, রাজাপুর ও গারুড়িয়া ইউনিয়নের সুখী নীলগঞ্জ ও হেলেঞ্চা গ্রামে এখনো গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই ছোট ছোট টিনশেড ও আধাপাকা ঘরগুলোর বারান্দায় নারী-পুরুষ ও শিশুরা মিলে নানান রঙের শীতলপাটি বুনতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কাঁঠালিয়া গ্রামের সবিতা রানীর পরিবারের সবাই মিলে দিনরাত ব্যস্ত সময় কাটান শীতলপাটি তৈরি করতে। একটু সামনে এগুতেই কথা হয়, প্রিয়লাল পাটিকরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্য মিলে একটি পাটি তৈরি করতে কয়েকদিন চলে যায়। প্রতিজনের দৈনিক মজুরি ১০০ টাকা করেও আসে না। তারপরেও কিছু করার নেই। বাপ-দাদার পেশা হিসেবে এখনো শীতল পাটি বুনে যাচ্ছি। একদিকে, এখন গরম বেড়েছে, অপরদিকে, বৈশাখ মাস চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বৈশাখী মেলায় শীতলপাটির চাহিদা থাকে। তাই, পাইকাররা এসে আমাদের এলাকা থেকে পাটি কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রি করেন।

স্থানীয় পাটিকররা জানান, এখানকার তৈরি শীতলপাটি আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু প্লাস্টিক পাটির কারণে বাজারে শীতলপাটির চাহিদা কমে গেছে। সে কারণে সরকারিভাবে বিদেশে শীতলপাটি রফতানির কোনো ব্যবস্থা করা হলে পাটিকরদের জীবন-জীবিকা ভালো চলতো।

পাশাপাশি শীতলপাটি টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা। নয়ত এই পেশায় টিকে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।

এ বিষয়ে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাসহ জাইকা সংস্থার মাধ্যমে উপজেলার পাটিকরদের মধ্যে বিভিন্ন রকম প্রশিক্ষণ প্রদান অব্যাহত রয়েছে। ফলে, নতুন নতুন ডিজাইনের শীতলপাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি আমরা তাদের সরকারি বিভিন্ন রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

;

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক



নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

মস্তিস্কেও ঢুকে যাচ্ছে প্লাস্টিক

  • Font increase
  • Font Decrease

বর্তমান পৃথিবী প্লাস্টিকময়। ছোট বড় থকে প্রায় সবরকম কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহারের আধিক্য। তবে এই প্লাস্টিক অজৈব পদার্থে তৈরি হওয়ার কারণে সহজে পচনশীল নয়। বিভিন্ন স্থানে জমে থাকার কারণে এসব পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।  শুধু পরিবেশ নয়, হার্ট, মগজ, সব জায়গাতেই নাকি ঢুকে রয়েছে প্লাস্টিক। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনটাই জানা গিয়েছে। শুধু তাই নয়, হার্টের নানা রোগ, মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার পিছনেও এই প্লাস্টিকগুলির অবদান রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

সময়ের বিবর্তনে প্লাস্টিক বিভিন্ন আঘাতের কারণে ক্ষয় হয়ে ক্ষুদ্র আকার ধারণ করে। ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট আকারের প্লাস্টিককে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলে। দিন দিন পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে সমুদ্রে বিপুল পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ সৃষ্টি করেছে। পরিবেশের বিভিন্ন প্রাণী তাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে দিন দিন এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের আধিপত্য বেড়েই চলেছে। এমনকি মানব শরীরেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। এক গবেষণায় মস্তিস্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিউ ম্যাক্সিকোর এনভয়রনমেন্টাল হেলথ পারসপেক্টিভ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয় খাদ্য, পানি এমনকি বায়ুর মাধ্যমেও শরীরে প্রবেশ করে। এসব ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা আমাদের স্নায়ুবিক নানান অনুভূতির উপরেও মাইক্রো প্লাস্টিক প্রভাব ফেলে।

রক্ত প্রবাহের কারণে তা শরীরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে বেড়ায়। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে তা জমা থেকে স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা প্রদান করে। বৃক্ক, লিভার, হৃদপিণ্ডের রক্তনালি ছাড়াও সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। মাইক্রোপ্লাস্টিক এসব অঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। 

ডাক্তার ইয়াতিন সাগভেকার বলেন দৈনন্দিন নানা কাজের মধ্যেই শরীরে মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। তবে পারে তা ত্বক, প্রশ্বাসের বায়ু বা ইনজেশনের মাধ্যমে।     

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ২০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিক শরীরে প্রবেশ করতে পারার কথা। এছাড়া ১০ মাইক্রোমিটার আকারের গুলো মস্তিষ্কের সুক্ষ্ম কোষের ঝিল্লির অতিক্রম করতে সক্ষম হওয়া উচিত।

প্লাস্টিক পরিবেশ্ম প্রানি এমনকি মানুষের জন্যও অনেক ক্ষতিকর। তাই সকলের উচিত যতটা সম্ভব প্লাস্টিক বর্জন করা। পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি জিনিসের ব্যবহার বাড়ানো।

;