জাদুর বাক্সে টাকা দিলে বের হয় ডলার!
বাংলাদেশি টাকা একটি বাক্সের ভেতরে রেখে বিদ্যুৎ লাইনের সঙ্গে যুক্ত করার কিছু সময় পর তা ডলারে রূপান্তরিত হয়! ১০০ টাকার নোটকে ২৪ ঘণ্টা পর ১০০ ডলার বানিয়ে দিতে পারে এমন একটি বাক্স আছে ক্যামেরুনের ৩ নাগরিকের কাছে। আর সেই বাক্স দিয়ে প্রতারণা করে এই বিদেশি চক্র ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আটক ৩ বিদেশি প্রতারক সম্পর্কে এসব তথ্য দেন র্যাব-৪ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
এ ঘটনায় আটকরা হলেন— টিচিকাম্যান রড্রিগো (৩১), ডোনগম্যাজা এনগুইগনি (৩২) ও আলেক্সজেন্ড্রা মাফেজা (৪৮)। তাদের আটকের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামাধিসহ ওই বাক্সটিও জব্দ করা হয়।
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, টুরিস্ট ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসে আর ফেরত যাননি এই তিন বিদেশি। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। সাধারণ মানুষ তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা নিজেদের বিদেশি খেলোয়াড় বলে পরিচয় দেন। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য হল প্রতারণা।
র্যাব জানায়, গুলশান, বারিধারা, বনানী এলাকায় বাসা ভাড়া নেয় এই চক্র। তাদের টার্গেট থাকে শিল্পপতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা। প্রথম দিকে ৮০ টাকার ডলার ২০ টাকায় বিক্রি করে লোভ দেখান তারা। সেই ডলার বাইরে বিক্রি করলে ব্যাপক লাভবান হন ব্যবসায়ীরা। প্রতারক চক্রের টার্গেট থাকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ইনভেস্ট করা। একটা পর্যায়ে এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের ভালো সম্পর্ক হয়। অধিক লাভের আশায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ডলার পেতে চান। এই পর্যায়ে বিদেশি এই প্রতারক চক্র আরও বড় লোভ দেখায়।
মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতারক চক্র বলে আমরা ডলার তৈরি করতে পারি, সেটাই আপনাদের দেই। আপনি চাইলেও সেটা করতে পারেন। আমরা করিয়ে দেব। এই জন্যই আমরা ৮০ টাকা ডলার ২০ টাকায় দিতে পারি। এতে মুনাফালোভী বিনিয়োগকারীরা রাজি হয়ে যান। এমন সময় একটি বিশেষ বাক্স বের করে প্রতারক চক্র। যার ভেতর দুইটা ভাগ আছে। ১ লাখ টাকার একটা বান্ডিল টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে রাখা হয় প্রথম উপরের অংশে। নিচের অংশে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সমান ওজনের আরেক বান্ডিল সাদা নোট রাখা হয়। এবার বাক্সটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। ভেতরে ভো ভো শব্দ হয়। চোখের পলকে বাক্সটি উল্টে দেন প্রতারকরা। নিচ থেকে একইরকম দেখতে সাদা বান্ডিল বিনিয়োগকারীর হাতে ধরিয়ে দেন। ২৪ ঘণ্টা পরে খুলতে বলেন ওই বান্ডিল। ততক্ষণে তারা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন।
র্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, প্রতারক চক্র বেশির ভাগ সময় বিনিয়োগকারীর বাসায় গিয়ে টাকাকে ডলারে পরিবর্তন করে দিয়ে আসেন। তাই তারা নিরাপদেই অনেক মানুষকে আলাদা আলাদাভাবে ঠকাতে পারেন। তাদের নিজেদের বাসাও পরিবর্তন করতে হয় না।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাজধানীর ধানমণ্ডি ও বসুন্ধরা এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক এই তিন বিদেশিকে আটক করে র্যাব-৪।