নাগরিক পেশাজীবী স্বপ্ন তার.



সৈয়দ রানা মুস্তফী
ছবি: বার্তা২৪

ছবি: বার্তা২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সেই কবে মার বুক খালি করে ছেড়ে এসেছিলাম প্রাণের শহর যশোর।

মোচওয়ালা মামার ঘন জংগলে, ঝমঝমিয়ে নামা বৃষ্টির মধ্যে, পচা কাঁদামাটিতে খালি গা, খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ভিজে চুপচুপে হওয়া, গোড়ালী থেকে হাঁটুর নিচে কটা জোঁক লেগে রক্ত চুষেছে তাও টের পাইনি বর্ষার ঘোরে! কালু মামার লম্বা সিঁড়ি বাঁধানো পুকুরে গুনে গুনে ৫ হাজার ডুব দিয়ে; চোখ যখন টকটকে লাল, শরীর পুড়ছে সারা দিনমান পানিতে ডুবানোর ফল জ্বরে; সন্ধ্যার আগে নানী সৈয়দা রহিমা হকের কড়া শাসনে গোসল-উৎসব ভঙ্গ।

মসজিদের মেঝে পরিচ্ছন্ন করেছি পরম মমতায়। মসজিদের মেঝের মোজাইকের উপরের আস্তর ঘষতে ঘষতে হাতের আস্তর উঠে রক্ত ঝরেছে। এইচআর সিল্কের রাজ্জাক মামা বলতেনঃ শাহীন (আমার ডাক নাম) আজান দিলে বেশ কিছু মুসল্লি বেশি দেখি, উনারা কি মানুষ না জিন!

একুশের ভোর রাতে ওয়াপদা বাগানের ফুল আনতে গিয়ে কুঁচকিতে (ইনার থাই) তারকাঁটা বিঁধে ঝুলে থেকেছি সকাল পর্যন্ত! সে আকুলতা তো ছিল সৌরভের জন্যই!

যশোর ইন্সটিটিউট লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাঠে মগ্ন থাকা; রবিবাসরীয় সাহিত্য আসর জমিয়ে রাখা; টাউন হল মাঠে আজীজুল হক স্যারকে ঘিরে বসে ছন্দের আলোচনায় রাত গভীর। বেশ দেরি করে বাড়ি ফেরা। রাতের গোপন পিকনিকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মোরগ সংগ্রহের থ্রিল...

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/13/1536837283952.jpg

তারপর সব ছেড়ে একদিন পা বাড়িয়েছিলাম পৃথিবীর পথে। ঢাকা, নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস, ঢাকা হয়ে দুবাই, আবার ঢাকা এবং আবার কয়েকবার নিউ ইয়র্ক; এভাবেই কেটে গেছে চার চারটি দশক! সময় কিভাবে নদীর মত বয়ে যায়!

এখন আর দূরের জীবন ভালো লাগেনা। মনে হয় ছুটে যাই কারবালা গোরস্তানে। মা শুয়ে আছেন সেখানে সেই ১৯৮৮ সাল থেকে। কিছুক্ষণ কাটাতে মন চায় মায়ের শিয়রে। নীরবে কথা বলতে ইচ্ছে করে মার সঙ্গে। সারাজীবন ঢাকা-যশোর করে শেষে চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ক্ষেত্রপালায় গিয়েই চিরবিশ্রামে গেছেন আব্বা, সেখানে যেতেও মন টানে।

ইচ্ছে করে জলকল-এর জোড়া দীঘির কাকচক্ষু জলে নেমে দাঁড়িয়ে থাকি কিশোর বেলার মত, দীর্ঘক্ষণ; সারাজীবনের দাহ ধুয়ে শীতল হোক দেহ-মন-প্রাণ! ঘন সবুজ শ্যাওলা-ধরা জলকল দীঘির চির রহস্যময় তলদেশের ভয় লাগা স্ফটিকস্বচ্ছ জলের আহ্বান যেন ডাকে ইদানীং ঘুমের ঘোরেও। ভোরের শিশির ভেজা ঘাসের গালিচা ডাকে পার্ক মাঠের বিস্তীর্ণ চরাচর। কাঁধে একগাদা বইখাতা নিয়ে ভোরের কুয়াশা ভেদ করে জেলা স্কুলের পথ ধরে হেঁটে যাই কিশোর আমি!

সম্প্রতি এক মোহন স্বপ্নে বিভোর হয়েছে মন। আল্লাহ হায়াৎ দান করলে এবং সুস্থ রাখলে ২০১৮'র শেষে কিংবা ২০১৯-এর শুরুর দিক থেকে মাত্র তিন/সাড়ে তিন ঘণ্টায় ধুলি ধুসরিত, ট্রাফিক জ্যামে মৃতপ্রায়, জনভার জর্জরিত ঢাকা থেকে প্রাণের শহর যশোরে পৌঁছতে পারবো! ইদানিং মাঝে মধ্যেই রাতের খাবার টেবিলে জীবনসঙ্গী নুসরাতের (Nusrat Jahan) সঙ্গে এই স্বপ্ন নিয়ে নানা ছবি আঁকি। কিভাবে সাজাবো সপ্তাহের কাজের দিনগুলো তা বলি স্ত্রীকে। আমার খুব ইচ্ছে-বৃহস্পতিবার বিকেলে বাক্স-পেটরা গুছিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেবো যশোরের পথে। হাইওয়ে টু হ্যাভেন! স্বপ্নের পদ্মা সেতু পার হয়ে মাত্র তিন/সাড়ে তিন ঘণ্টায় স্বপ্নশহর যশোর!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/13/1536837302875.jpg

পরদিন, অর্থাৎ শুক্রবার বেলা করে ঘুম থেকে ওঠার ইচ্ছে, যদিও যশোরে, বাড়িতে গেলে, যত রাতেই শুই না কেন, ঘুম ভাঙে খুব সকালে। জুম'য়া আদায় করতে যাবো শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিময় ওয়াপদা মসজিদে। একসময়ের তুখোড় ফুটবলার সাথী ভাই (Mashuk Sathi) মিষ্টি করে হেসে বলবেঃ আয় কাছে বস। শহীদ ভাই বুকে বুক মেলাতে মেলাতে কপট শ্লেষ মেশানো কণ্ঠ বলবে, কি আমাদের কথা মনে পড়ল? জুম'য়া শেষে কারবালা গিয়ে মা'র কবর যিয়ারা। বাসায় ফিরে দুপুরের খাবার। তার আগে, অনেক সাধ্যি-সাধনা করে সঙ্গে খানা খাবার জন্যে বাল্যবন্ধু বাবুকে (Shahid Babu) রাজী করানো। মহাব্যস্ত বাবু, যার নাম আমি দিয়েছি 'ওয়াক অ্যান্ড টক' বলে! বিকেলে চার খাম্বার মোড়ে নিজেদের প্রাসাদোপম বাড়ির সামনে বসে চায়ে চুমুকরত Pavel Choudhury ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হবে। কি রানা কখন এলে? এসো চা খাই, পাভেল ভাইয়ের আমন্ত্রণ থাকবে সাবলীল...

গত বেশ ক' বছর ধরে প্রতি শুক্রবার সন্ধ্যায় ষষ্টিতলা পাড়ায় বাল্যবন্ধু ডা. বাবু'র বাড়ির নিচতলায় আড্ডার জমজমাট আসর বসায় স্কুলের বন্ধুরা। এ আড্ডায় যেতে মন আনচান করে! বাল্যবন্ধুদের প্রায় অশ্লীল খিস্তি-খেউড় শুনতে মন চায়; মনে হয় ওসব অশ্রাব্য ভাষার কথোপকথনই অমিয় বচন। শুক্রবার সন্ধ্যায় ডা. বাবু'র বাসার বৈঠকখানায় বসবে 'সেইরাম আড্ডা'। ভাত ঘুম দিয়ে, চেহারায় মান্জা মেরে একে একে আসবে সাদী, বাদল, লিমন, সাগর, খসরু, শাহীন, ডাবলু, প্রফেসর, বিডিআর, মাস্টার, লিটন, মোস্তসহ আরো কত বন্ধু। কবু ওর হাসপাতালে এমডির দায়িত্ব করে আসতে নির্ঘাত একটু দেরি করবে! চোখের পলকে কয়েক ঘন্টা কখন পার হয়ে যাবে তার কোনো হিসাব পাওয়া যাবে না। এর মধ্যেই প্রাণকন্যা আয়েশা আরিয়ানা (Ayesha Aariana) ওর মা'র ফোন থেকে কল করবে কয়েকবারঃ বাবা, এখনো আসছো না কেন! আল্লাহ করলে ততদিনে আরেক প্রাণকন্যা আলভীনা ফিওনা'রও (Aalveena Fiona) কল করা শিখে যাওয়ার কথা। সেও হয়তো কল করে বড় বোনের মত গুনগুন করবে বাসায় ফিরতে দেরি হবার অনুযোগে!

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Sep/13/1536837321061.jpg

বাবু'র বাসার আড্ডা শেষে হোয়াইট প্যালেসে (The White Palace হোয়াইট প্যালেস আমাদের বাড়ীর নাম) ফিরে নামাজ সম্পন্ন করে রাতের খানা শেষ করতে না করতেই খোলা আকাশের নিচে দোতলার 'জোসনা-বৃষ্টি' নামের মার্বেল খচিত ওভারহেড লনে শুরু হয়ে যাবে গভীর রাতমুখী আড্ডার এক্সটেন্ডেড সেশন। রাত বেশ গভীর হলে, যখন আমরা ভাববো আজ রাতে হয়তোবা আর কেউ আসবে না; ঠিক তেমন সময়ে আমাদের অবাক করে গাড় পিংক পাঞ্জাবি গায়ে চড়িয়ে হাজির হবে আমাদের স্নেহভাজন সংসদ সদস্য Monir! ফল, মিষ্টি এসব তো ট্রলি ভরে আসবেই, সঙ্গে ওখান থেকেই ভেসে আসবে মনিরসহ আরও কয়েকজনের আব্দার মেশানো দাবি: 'ভাবী, পুদিনা চা লাগবে'। এভাবেই রাত ২/৩টায় গিয়ে ঠেকবে আমাদের প্রাণের কথার বারামখানা! কিন্তু এ কথামালা কি শেষ হবার? না মৃত্যুর আগে শেষ হবে কখনো!

শনিবার হোয়াইট প্যালেসের টুকিটাকি কাজ করিয়ে বিকেল বিকেল রওনা দেবো পোড়া জীবিকার শহর ঢাকার দিকে। মোহন এই স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়েছেন জেদী প্রধানমন্ত্রী, জাতিরজনক কন্যা শেখ হাসিনা। বিশ্বব্যাংক নামক সাম্রাজ্যবাদী প্রতিষ্ঠানটির ভুয়া অভিযোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাষ্ট্রের নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শুধু শুরুই করেননি, ইতোমধ্যে সে সেতুর ৫০ ভাগ কাজ শেষও হয়ে গেছে! সব কিছু অনকুল থাকলে ২০১৯-এ ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে জন্মশহর যশোর যেতে বা যশোর থেকে ঢাকা আসতে তিন/সাড়ে তিন ঘন্টার বেশি লাগার কথা না। ভাবা যায়!

তারপর...

তারপর আর কি? যতদিন ভালো লাগবে, শরীরে কুলোবে ততদিন ঢাকা-যশোর করবো। এমন এক সময় আসবে, যখন আর ঢাকা ফিরতে মন চাইবে না। একদিন যে শহরে জন্মেছিলাম, যে শহরের ১১ নম্বর স্মিথ রোডের বাড়ীর জমিনে পোতা আছে আমার নাড়ি, সেই শহর ছেড়ে আর ফিরবো না কোলাহলের হলাহল মেগাসিটি ঢাকায়। একদিন সেই ঘুঘু ডাকা, ফুলের সৌরভময় যশোরে ভূমিশয্যা নেবো, এ স্বপ্নই দেখি, পরম করুণাময় আল্লাহ যেন তা মাঞ্জুর করেন, আমিন...

 সৈয়দ রানা মুস্তফী, সম্পাদক, অর্থকথা। জাতীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

   

রাষ্ট্রপতির আদেশে ১৭ বিচারককে বদলি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের ১৭ জন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি করা হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শক্রমে এ বদলির ঘোষণা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রশাসন-১ মোহাম্মদ ওসমান হায়দার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের এসব সদস্যকে ১১ ডিসেম্বর বর্তমান কর্মস্থলের দায়িত্ব অর্পণ করে অবিলম্বে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হলো। এ ছাড়া উল্লিখিত ক্রমিক ৪ ও ৬ নম্বরের বর্ণিত বিচারককে দেওয়ানি অবকাশ শেষে আগামী বছরের ১ জানুয়ারি বদলি করা কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হলো।

যাদের বদলি করা হলো:

১. কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শাবনী সুলতানা পলিকে মেহেরপুরের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

২. কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিট্রেট মো. জুয়েল রানাকে একই পদে মেহেরপুরের বদলি করা হয়েছে।

৩. নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সাঈদকে বদলি করে পঞ্চগড়ের জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার করা হয়েছে।

৪. নাটোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোসলেম উদ্দীনকে শেরপুরের একই পদে বদলি করা হয়েছে।

৫. লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মোছাম্মৎ নুসরাত জামানকে সিনিয়ার সহকারী জজ হিসেবে ঢাকার আইন ও বিচার বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।

৬. লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারেক আজিজকে হবিগঞ্জের সিনিয়ার সহকারী জজ হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

৭. মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল-আমীনকে সহকারী সচিব (সহকারী জজ) হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বদলি করা হয়েছে।

৮. পাবনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল ইসলামকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একই পদে বদলি করা হয়েছে।

৯. নেত্রকোনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহাদাত হোসেনকে ময়মনসিংহের একই পদে বদলি করা হয়েছে।

১০. হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে মো. জাকির হোসাইন নোয়াখালীতে একই পদে বদলি করা হয়েছে।

১১. খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অনাব নয়ন বিশ্বাসকে সাতক্ষীরায় একই পদে বদলি করা হয়েছে।

১২. শেরপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল ইসলাম খানকে একই পদে রাজশাহীতে বদলি করা হয়েছে।

১৩. বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট খোকন হোসেনকে বরিশালে বদলি করা হয়েছে।

১৪. কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুস্তাফিজুর রহমানকে পাবনায় বদলি করা হয়েছে।

১৫. ফরিদপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারুক হোসাইনকে ভোলায় বদলি করা হয়েছে।

১৬. সাতক্ষীরার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলামকে পিরোজপুরে বদলি করা হয়েছে।

১৭. ঝিনাইদহের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম মেঘা গুপ্তাকে একই পদে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়েছে।

;

ভাবিয়া করিও কাজ



সৈয়দ রানা মুস্তফী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কল্যাণ রাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক শর্ত হচ্ছে, নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে সে বাধ্য থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে এমনসব বিষয়ে হাত দেয়া হচ্ছে যেগুলো খুব স্পর্শকাতর। যেমন মসজিদে এসি চালানো যাবে না! (পরে মসজিদ সংক্রান্ত নির্দেশনা সংশোধন করেছেন প্রতিমন্ত্রী) সারা দিনে একটি মসজিদে সর্বোচ্চ দেড়/দুই ঘণ্টার বেশি এসি চলে না। প্রাথমিকভাবে সরকারের ১১টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার একেকটিতে ২ হাজার টনের বেশি এসি চলে! এর মধ্যে পানি ভবনের কথা আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই ভবনে টয়লেটই আছে ১১৮টি! এ ধরণের আরো অসংখ্য ভবন রয়েছে। এসব ভবনের এসি নিয়ন্ত্রণ করলেই দেশে ১ সেকেন্ডও লোডশেডিং করা লাগবে না এবং দোকানপাটও রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। মানুষের জীবনস্পন্দন সচল থাকবে।

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা করা হয়েছে ২৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি! ঘোড়ার আগে লাগাম জোগাড়ের এই আইডিয়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে জানা নেই। ফসিল ফিউল বার্নড বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোল ফায়ার্ড বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চেয়ে অনেক বেশি খরুচে। আমরা আমাদের নিজস্ব কয়লার বিশাল মজুদ তুলছি না! বাংলাদেশের কয়লার মান উঁচু, মজুদ এতটাই বিশাল যে তা দিয়ে বর্তমানে চালু কয়ালাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতো বটেই, এমনকি ভবিষ্যতে যে ক’টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আসছে সেগুলোও চলবে দীর্ঘদিন। এই জুনে অস্ট্রেলিয়া তাদের কয়লার দাম অনেক কমিয়েছে, সেখান থেকে আমদানিও করছি না। অথচ ডিজেলের দাম বাড়ানোর কথা বলে এই নারকীয় গরমের মধ্যে কষ্ট দিচ্ছি দেশের মানুষকে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ১লা মার্চ থেকে ৩১শে অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্যে স্যুট পরা বন্ধের নির্দেশ দিন। তালপাকা গরমের মধ্যে স্যুট পরে ডাবল এসি দিয়ে সরকারের উপ সচিব থেকে মন্ত্রী পর্যন্ত লোকজন বসে থাকে! স্যুট পরিধান বন্ধ হলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। এসি ব্যবহারে এলিজেবল্ নন এমন হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী এসি ব্যবহার করে চলেছেন। এগুলো বন্ধে এই মুহূর্তে ব্যবস্থা নিন। ফাইভ স্টার হোটেলগুলোকে নির্দেশ দিন হোটেলের অপ্রয়োজনীয় প্রতিটি অংশে যেন বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়। ভালো সময় ফিরে এলে হলে নর্মস/কমপ্লায়েন্স এসব আবার দেখা যাবে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু’র বক্তব্য থেকে জানা গেছে, গত ১০ বছরে সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়েছে ৫২ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। মনে হতে পারে এত বড় অংকের টাকা, যা দিয়ে আরো ২টি পদ্মা সেতুর মত জিডিপিতে অবদান রাখায় সক্ষম স্থাপনা নির্মান করা যেত, তা ভর্তুকি গেছে দেশের মানুষের কল্যাণে। আসল ঘটনা মোটেই তা নয় বলে জানা গেছে ইংরেজি দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের ৭ই ডিসেম্বর ২০১৯ সংখ্যায় প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর তথ্যে। বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদক কোম্পানিগুলো গত ১০ বছরে নিয়ে গেছে ৫১ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা! অলস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে এই বিপুল অংকের টাকা দেয়া হয়েছে তথাকথিত ‘সার্ভিস চার্জ পরিশোধ’ করার নামে। সত্যিকার স্বাধীন দুদক যদি সঠিক তদন্ত করে তবে এই টাকা কার কার পকেটে গেছে তা বেরিয়ে আসবে।

পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারে তার জন্যে শীত আসার আগ পর্যন্ত লোডশেড না করার ভর্তুকির যোগান দেয়া কোনো ব্যাপার নয়। শীত আসতে বাকী মাত্র ৩ মাস। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কমে ১০০ ডলারের নিচে নেমেছে, এমন সময় তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত নাগরিকরা গ্রহণ করছেন না।

রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার পারদর্শীতা ও সাফল্য এখন সারা বিশ্বে সমাদৃত ও সম্মানিত। তাঁকে ভুল তথ্য দিয়ে পারিষদবর্গ যদি দেশে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তার জন্যে আখেরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই বিব্রত হতে হয়…

লেখক: সৈয়দ রানা মুস্তফী, জাতীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

;

নবী ভাইয়ের জন্যে শোকগাঁথা



সৈয়দ রানা মুস্তফী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

মেজর টি. আই. এম. নূরুন নবী ও মেজর জাহাঙ্গীর তখন রাজউক অ্যানেক্স বিল্ডিং-এ গালফ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। তা বছর পয়ত্রিশেক আগে তো বটেই। তখন থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের সখ্য। বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে ‘অর্থকথা’ বহু প্রথমের পথিকৃৎ, অর্থকথা কার্যালয়ে ২X৮ লাইনের পিএবিএক্স এক্সচেঞ্জ স্থাপনের কাজটি সহজ করে দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর ভাই। কোনো ম্যাগাজিন অফিসে পিএবিএক্স সিস্টেম সেটিই প্রথম! ৩২ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯১ সালের ঘটনা সেটি।

মাঝে দীর্ঘ সময় চলে গেছে। জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে মাঝে মাঝে দেখা হলেও নবী ভাইয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া খুব ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত এই দুই মেজর সাহেবের ব্যবসায়ীক পার্টনারশিপও খুব দীর্ঘ হয়নি। পরবর্তী সময়ে নবী ভাই একক মালিকানায় ব্যবসা গ্রুপ গড়ে তোলেন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে।


হঠাৎ আলোর ঝলকানির মত ফেসবুকের কল্যাণে নবী ভাইয়ের সাথে সংযোগ পুনঃস্থাপিত হলো, মাঝে মাঝে কথা শুরু হলো, কথা ছিল এর মধ্যেই হয় উনি আসবেন আমাদের গুলশানের বাসায় অথবা আমি যাবো ওঁদের বারিধারার বাসগৃহে। কিন্তু মানুষ ভাবে এক হয় আরেক। হঠাৎ খবর পেলাম নবী ভাই ওপেন হার্ট সার্জারির জন্যে ব্যাংকক যাচ্ছেন। আমার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে ২০১৫ সালে, তখন থেকেই কারো সিএবিজি’র খবর আমাকে কিছুটা হলেও উচ্চকিত করে, তার উপর এবারকারটা প্রিয় নবী ভাইয়ের!

পরশু খবর পেলাম ব্যাংককে নবী ভাইয়ের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে। গতকাল তেমন কোনো আপডেট ছিল না, রুটিন প্রসিডিওর অনুযায়ী ওকে সিসিইউ অর্থাৎ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর ছাড়া। ৪ জুলাই সকালে সবচেয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত সংবাদটি এলো, নবী ভাই ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজীউন।


জীবনের পরিসমাপ্তি মৃত্যুতে, একথা সর্বজনবিদিত, তারপরও মন মানতে চায় না। মানুষের চলে যাওয়ায় আমরা ব্যথিত হই, কাঁদি, জীবনের সৌন্দর্য সম্ভবতঃ এখানেই। নবী ভাই সবদিক থেকে একজন অভিজাত ব্যক্তি ছিলেন। সেনাবাহিনীর চৌকশ অফিসার থেকে পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ী, সবজায়গায় ছিল নবী ভাইয়ের রূচির ছোঁয়া।

পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানআহু ওয়া তা’আলা নবী ভাইকে জান্নাত নসীব করুন, তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে এই বেদনাভার বহনের ও ধৈর্য ধারণের শক্তি দিন। আমীন, সুম্মাহ্ আমীন...

লেখক: সৈয়দ রানা মুস্তফী, জাতীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

;

আসা যাওয়ার পথের ধারে...



সৈয়দ রানা মুস্তফী
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স। প্রতি শুক্রবার আমরা বেরিয়ে পড়তাম। কথাসাহিত্যিক, বিশ্ব সাহিত্যের নিষ্ঠ অনুবাদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও আমার একান্ত আপনজন নুরুল করিম নাসিম ভাই, অতি প্রিয় অনুজপ্রতিম সিফাত আহমেদ চৌধুরী, আমি ও আমার ব্যক্তিগত গাড়িচালক সুজাতুর রহমান বকুল। এই ছিল মূল টিম, তবে অতি আগ্রহ বিবেচনায় কোনো কোনো শুক্রবার একজন বন্ধুকে সাথে নিতাম। কবি ফেরদৌস সালামও বোধহয় দু’একবার ভীড়েছিলেন আমাদের সে পাগলামিতে। একেক শুক্রবার নতুন এক জেলা, নতুন গন্তব্য। সকালে রওনা, পথে জুম’আ সময় হলে সেখানেই নামাজে অংশগ্রহণ, দুপুরের আহার, দর্শনানন্দ শেষ করে ঘরে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যেত। সিফাত তখন সবে বিয়ে করেছে, ওর নবপরিণীতা স্ত্রী অভিমানে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে যখন সিফাতের দেরির জন্যে অনুযোগ করতো, সিফাত তখন খাঁটি সিলেটিঃ আইরাম আন্নি, আইরাম! অথচ আমরা হয়তো তখনো ঢাকা থেকে বেশ দূরে! নাসিম ভাবীর ঝাড়ি খেয়েও নাসিম ভাই তাঁর সুন্দর ব্যবহারের আড়ালে ঢেকে রাখতে চাইতেন সংসার সমুদ্রের ঝড়।

নুরুল করিম নাসিম ভাই তাঁর অনন্ত যাত্রা শুরু করেছেন দেড় বছরের বেশি সময় আগে (৫ই নভেম্বর ২০২০)। নাসিম ভাইকে আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন এই মুনাজাত করি। ‘সৈয়দ সাহেব, বেরুবেন নাকি আবার?’ নাসিম ভাইয়ের কাছ থেকে আর কখনো এমন কল আসার সব পথ বন্ধ হয়ে গেছে, হায়রে জীবন।

সিফাত এখন মহাব্যস্ত ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে। ওর সন্তানরা এখন বেশ মাথাধরা হয়ে উঠেছে!

জীবন-সময় খুব দ্রুত ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে যায়, সে সবসময় চির নতুন থাকে, আমরা মানুষেরাই শুধু পুরনো, ন্যুব্জ ও অক্ষম হয়ে যাই। একসময় মৃত্যু এসে ঢেকে দেয় জীবনের সব আনন্দ আয়োজন...

লেখক: সৈয়দ রানা মুস্তফী, জাতীয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব

;