রাশিয়ায় গোল্ডেন বুটের দাবিদারেরা
ঢাকা: আর এক মাসও নেই, মস্কোতে শুরু হতে যাচ্ছে ফুটবল রণ। এবার শীতের দেশ রাশিয়ায় ১৭ জুন থেকে শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে নামবে ৩২ টি দল। তবে দল ৩২ টি হলেও সবমিলিয়ে ৮ থেকে ১০ টি দলেরই ফুটবল লড়াই। আর প্রতি ৪ বছর পরেই কিন্তু ফুটবল দুনিয়াকে অবাক করে দিয়ে নতুন কোন ফুটবলায় ছিনিয়ে নেন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার, গোল্ডেন বুট।
দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ভক্ত মানেই প্রধানত আর্জেন্টিনা আর ব্রাজিল সমর্থনে বিভক্ত। মেসি আর নেইমারের দ্বৈরথ। সমর্থকদের বাকযুদ্ধ। তবে জার্মানির টমাস মুলারকেও কিন্তু এই যুদ্ধের শক্ত প্রতিদ্বন্ধী ভাবতে হবে। ফুটবল সেনসেশন পর্তুগীজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো লা-লিগায় রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে মাঠ কাঁপালেও বিশ্বকাপে দেশের হয়ে নিষ্প্রভ থাকেন সেটা এখন মোটামুটি ফুটবল অনুরাগীদের জানা। তাই সিআর সেভেনকে এই দ্বৈরথে রাখতে চান না বোদ্ধারা।
ইউরোপিয়ান লীগে এবার সকলের নজর কেড়েছে লিভারপুলের মিশরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ। তবে গ্রুপ পর্বে আয়োজক দেশ রাশিয়া আর শক্তিশালী উরুগুয়েকে টপকে দ্বিতীয় রাউন্ড বা কোয়ার্টার ফাইনালে মিশর যেতে পারলেই সালাহ'র গোল্ডেন বুটের স্বপ্ন ছোঁয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। গেলো মৌসুমে লিভারপুরের এই বেস্ট সাইনিং প্লেয়ার ৩০ ম্যাচে ২৮ গোল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন সবাইকে।
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে মাঠে ৬৯৩ মিনিট লড়াই করে ৪ টি গোল দিয়েছিলেন ফুটবল জাদুকর মেসি। আর্জেন্টাইন এই তারকা ৭ ম্যাচে টার্গেটে ২০ টি শট করে তার ৪০ শতাংশ কাজে লাগাতে পেরেছেন। তবে এবারের বিশ্বকাপে আরো পরিনত আরো গোছানো দল নিয়ে মাঠে নামবে মেসি এবং তার আর্জেন্টিনা। ইউরোপিয়ান লীগের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে, মেসির হাতেই উঠবে গোল্ডেন বুট।
গত বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ইনজুরিতে ছিটকে পড়া ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয় নেইমার কিন্তু পিএসজিতে পাড়ি জমানোর পর এখন আরো আক্রমনাত্মক। গেলো বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচ খেলেই দিয়েছেন ৪ গোল। ৪৫৭ মিনিট মাঠে থেকে গোল বারে টার্গেট করেছেন ১৪ বার। যার ৬৪ শতাংশই সফলতা এনেছে। এবার যদি দলকে ফাইনালে নিয়ে যেতে পারেন নেইমার তবে আরো দুই বা তিনটি গোল করে গোল্ডেন বুট ছিনিয়ে নেয়াটাই স্বাভাবিক।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের টটেনহ্যামের ইংলিশ স্ট্রাইকার হ্যারি কেনকে কিন্তু এবার গোল্ডেন বুটের অন্যতম দাবিদার মানতেই হবে। ইউরোপিয়ান লিগে হয়তো ইনজুরির কারনে মাঝ পথে বিদায় না নিতে হলে মেসি-সালাহর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারতো। হ্যারি কেনের সামনে বিশ্বকাপে সুযোগ এসছে নিজেকে মেলে ধরার।
পর্তুগিজ লীগের বেনফিকাতে খেলা ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার জোনাসকে কিন্তু এবার গুনতেই হচ্ছে। পর্তুগীজ লিগে ৩১ গোল করে গোল্ডেন বুটে স্বদেশী নেইমারের প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছেন তিনি।
পোল্যান্ড যদি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্তও চলে যায় তবে বায়ার্ন মিউনিখের গোল মেশিন পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেওয়ান্ডভস্কি হয়ে উঠতে পারেন রেসের প্রথম ঘোড়া।
ম্যানসিটির আর্জেন্টাইন সুপারস্টার সার্জিও আগুয়েরো আর বার্সেলোনার উরুগুইয়ান সুপারস্টার লুইস সুয়ারেজকে পেছনে ফেলেই যে কাউকে জিততে হবে গোল্ডেন বুট। কারন নিজেদের দিনে দেশের জন্যে সেরাটা খেলতে এই দুই স্ট্রাইকারের জুরি নেই।
ফিরে যাই জেমস রড্রিগেজের কাছে। ২০১৪ বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটজয়ী এই ফুটবলার সেবার প্রতি ৬৭ মিনিটে একটি করে গোল করেছেন। ৪০০ মিনিট মাঠে থেকে গোল পোস্টে শট করেছেন ৯ টি। যার মধ্যে ছয়টিতেই গোল পেয়েছেন। তাই এটাতো দেখাই যাচ্ছে এই গোল মেশিন শিউর শটে একজন ওস্তাদ। গতবারের ফর্ম ফিরে পেলে রড্রিগেজ দ্বিতীয়বারের মতো এই সুযোগ হাত ছাড়া করবেন না।
পাঠকরা হয়তো এখনো যে নামটি না দেখে এখনো অবাক হচ্ছেন, সেটি বায়ার্ন তারকা টমাস মুলার। বিশ্বকাপে এবং জাতীয় দলে যে এই জার্মান স্ট্রাইকার এক ক্ষুণে চেহারা নিয়ে হাজির হন, সেটা প্রতিপক্ষ ভালভাবেই জানে। গত বিশ্বকাপে ৬৮২ মিনিট মাঠে থেকে টার্গেটে ১৪ টি শট করে ৫৭ শতাংশ সফলতা পেয়েছেন তিনি। যার বদৌলতে ৫ গোল পেয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেরা গোলদাতা তিনি। এবারো যে মাঠে প্রতিপক্ষের ঘাড়ে কামড় বসিয়ে গোল আদায় করে নিবেন মুলার সেটি জানা আছে সবারই।
এখন দেখার পালা জাতীয় দলের হয়ে এই ক্লাব তারকারা নিজেদের কতটুকু মেলে ধরতে পারে আর প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারে। সেই হিসেবই বলে দিবে কে পেতে যাচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট।
এমএন